ঢাকা ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের সবচেয়ে উচ্চভয়ংকর রাস্তা

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ১১:২৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪
  • / 225

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় আড়াই হাজার ফুট উঁচুতে পিচ ঢালা সড়ক। এটিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু সড়ক। যেখান থেকে চলাচল করতে কেবল ভালো মানের ইঞ্জিন নয়; সাথে থাকতে হয় সাহসও।

বান্দরবানের গহীনের থানচি ও আলীকদম উপজেলাকে সংযোগ করেছে এই সড়কটি। ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড় ভেদ করে ১২ ফুট চওড়া ও ৩৫ কিলোমিটার সড়কটি এঁকেবেঁকে চলে গেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, আকাশ ভেদ করে চলে গেছে সড়কটি।

দেশের অন্যতম ভয়ঙ্কর রাস্তা হিসেবে পরিচিত এই রাস্তার জন্য শুধু ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করে না, একইসাথে এটিকে ডাকে সাহসিকতার এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। প্রকৃতির বিশালতা আর ভয়ংকর পাহাড়ি ঢাল দিয়ে ঘেরা এই রাস্তা দেশের রূপময়তা ও চ্যালেঞ্জের মিশ্রণে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা তৈরি করে।

আলীকদম থেকে থানচি যাওয়ার পাহাড়ি আকাবাঁকা ভয়ংকর রাস্তা।
আলীকদম

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মাণ প্রকৌশল ব্যাটালিয়ন ২০০৬ সালে থানচি উপজেলা সদর থেকে আলীকদম উপজেলা সদর পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। প্রায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি যানচলাচলের জন্য ২০১৬ সালে খুলে দেওয়া হয়।

ছোট-বড় ৬০-৭০টি পাহাড়ের ধাপ কেটে সড়কটি নির্মাণ করা হয়। এ সড়কের জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থিত ‘ডিমপাহাড়’। সারাদেশে এ পাহাড়টির সৌন্দর্যের কথা ছড়িয়ে পড়ছে।

থানচি-আলীকদম রোডের নির্মাণের আগে এখানকার মানুষজনকে পাহাড়ি পথ ধরে কষ্ট করে চলাফেরা করতে হতো। দুই উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক পাহাড়ি-বাঙালির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে স্থানীয় উৎপাদিত কৃষিপণ্যের পরিবহন সুবিধাসহ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। একইসাথে পর্যটন শিল্পেও ঘটে ব্যাপক পরিবর্তন।

এই সড়ক থেকে নীচের দিকে তাকালে বুক কেঁপে ওঠে। কিছু কিছু অংশ এতই খাড়া, যে সামান্য ভুলচুক হলেই গাড়ি গড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। বর্ষার সময় পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড় ধসের ঝুঁকি থাকে, রাস্তার পিচ্ছিলতা বিপজ্জনক করে তোলে যেকোনো যাত্রাকে।

তবে এসবের পরেও, এই রাস্তা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য একটি অসাধারণ গন্তব্য। থানচি-আলীকদম রোডকে বাংলাদেশের সবচেয়ে চমকপ্রদ পর্যটন স্পটগুলোর একটি হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক ছুটেন এই সৌন্দর্য উপভোগে। ভ্রমণকারীরা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে মেঘেদের মাঝে হারিয়ে যাওয়ার অনুভূতি পান। বিশেষ করে বাইকাররা।

অবশ্য, যারা এই রাস্তা পাড়ি দেন, তাদের অনেকেই মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত হয়ে যান। রাস্তা পাড়ি দিতে গাড়ির চালকদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক। পর্যটকদেরও থাকতে হয় বিশেষ মনোযোগী। অনেক সময় পথচারী এবং পরিবহন চালকদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে দুর্ঘটনা ঘটে।

শেয়ার করুন

বাংলাদেশের সবচেয়ে উচ্চভয়ংকর রাস্তা

সময় ১১:২৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় আড়াই হাজার ফুট উঁচুতে পিচ ঢালা সড়ক। এটিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু সড়ক। যেখান থেকে চলাচল করতে কেবল ভালো মানের ইঞ্জিন নয়; সাথে থাকতে হয় সাহসও।

বান্দরবানের গহীনের থানচি ও আলীকদম উপজেলাকে সংযোগ করেছে এই সড়কটি। ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড় ভেদ করে ১২ ফুট চওড়া ও ৩৫ কিলোমিটার সড়কটি এঁকেবেঁকে চলে গেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, আকাশ ভেদ করে চলে গেছে সড়কটি।

দেশের অন্যতম ভয়ঙ্কর রাস্তা হিসেবে পরিচিত এই রাস্তার জন্য শুধু ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করে না, একইসাথে এটিকে ডাকে সাহসিকতার এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। প্রকৃতির বিশালতা আর ভয়ংকর পাহাড়ি ঢাল দিয়ে ঘেরা এই রাস্তা দেশের রূপময়তা ও চ্যালেঞ্জের মিশ্রণে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা তৈরি করে।

আলীকদম থেকে থানচি যাওয়ার পাহাড়ি আকাবাঁকা ভয়ংকর রাস্তা।
আলীকদম

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মাণ প্রকৌশল ব্যাটালিয়ন ২০০৬ সালে থানচি উপজেলা সদর থেকে আলীকদম উপজেলা সদর পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। প্রায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি যানচলাচলের জন্য ২০১৬ সালে খুলে দেওয়া হয়।

ছোট-বড় ৬০-৭০টি পাহাড়ের ধাপ কেটে সড়কটি নির্মাণ করা হয়। এ সড়কের জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থিত ‘ডিমপাহাড়’। সারাদেশে এ পাহাড়টির সৌন্দর্যের কথা ছড়িয়ে পড়ছে।

থানচি-আলীকদম রোডের নির্মাণের আগে এখানকার মানুষজনকে পাহাড়ি পথ ধরে কষ্ট করে চলাফেরা করতে হতো। দুই উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক পাহাড়ি-বাঙালির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে স্থানীয় উৎপাদিত কৃষিপণ্যের পরিবহন সুবিধাসহ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। একইসাথে পর্যটন শিল্পেও ঘটে ব্যাপক পরিবর্তন।

এই সড়ক থেকে নীচের দিকে তাকালে বুক কেঁপে ওঠে। কিছু কিছু অংশ এতই খাড়া, যে সামান্য ভুলচুক হলেই গাড়ি গড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। বর্ষার সময় পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড় ধসের ঝুঁকি থাকে, রাস্তার পিচ্ছিলতা বিপজ্জনক করে তোলে যেকোনো যাত্রাকে।

তবে এসবের পরেও, এই রাস্তা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য একটি অসাধারণ গন্তব্য। থানচি-আলীকদম রোডকে বাংলাদেশের সবচেয়ে চমকপ্রদ পর্যটন স্পটগুলোর একটি হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক ছুটেন এই সৌন্দর্য উপভোগে। ভ্রমণকারীরা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে মেঘেদের মাঝে হারিয়ে যাওয়ার অনুভূতি পান। বিশেষ করে বাইকাররা।

অবশ্য, যারা এই রাস্তা পাড়ি দেন, তাদের অনেকেই মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত হয়ে যান। রাস্তা পাড়ি দিতে গাড়ির চালকদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক। পর্যটকদেরও থাকতে হয় বিশেষ মনোযোগী। অনেক সময় পথচারী এবং পরিবহন চালকদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে দুর্ঘটনা ঘটে।