বাংলাদেশের মাটির নিচে যতো সম্পদ | Bangla Affairs
০৩:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের মাটির নিচে যতো সম্পদ

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০৭:৫০:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪
  • / 317

বাংলাদেশ, একটি নদীমাতৃক দেশ, যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি রয়েছে অমূল্য খনিজ সম্পদের ভাণ্ডার। এদেশের মাটির নিচে লুকিয়ে আছে প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, চুনাপাথর, বালু এবং আরও অনেক সম্পদ। কিন্তু খনির কার্যক্রমে জড়িত বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি কোম্পানির কার্যকলাপ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যেখানে টেকসই ব্যবস্থাপনা ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ।

প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ। সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ও নোয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানে প্রাকৃতিক গ্যাসের খনি রয়েছে। প্রায় ২৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে। বর্তমান উত্তোলন হার অনুযায়ী, এই গ্যাসের মজুদ প্রায় ১০-১৫ বছর চলতে পারে। নতুন খনি আবিষ্কারের মাধ্যমে এই সময়কাল বাড়ানো সম্ভব।

সেভরন, যুক্তরাষ্ট্রের এই বৃহত্তম তেল ও গ্যাস কোম্পানি, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে অন্যতম প্রধান ভ‚মিকা পালন করছে। বিবিয়ানা, জালালাবাদ এবং মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রে তারা সক্রিয়। এছাড়াও আয়ারল্যান্ডের তুলো অয়েল এবং ভারতের ওএসজিসি ভিদেশ বঙ্গোপসাগরে প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানে কাজ করছে।

বাংলাদেশের কয়লা খনিগুলি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দিনাজপুর বড়পুকুরিয়া খনিতে প্রায় ১ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদন করা হয়। এছাড়াও ফুলবাড়ী, জামালগঞ্জ এবং কুন্দুলী এলাকায় কয়লার মজুদ রয়েছে। আনুমানিক ৩.৩ বিলিয়ন টন কয়লা মজুদ রয়েছে। যা ৫০-১০০ বছর চলতে পারে।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি পরিচালনা করে সরকারি প্রতিষ্ঠান বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড। এই কোম্পানি নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কয়লা উত্তোলনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই খনিতে সরকার নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উত্তোলনের কার্যক্রম বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

সিলেটের তামাবিল এবং জাফলং এলাকায় প্রচুর পরিমাণে চুনাপাথর পাওয়া যায়। আনুমানিক ১০০-১৫০ মিলিয়ন টন চুনাপাথরের মজুদ রয়েছে, যা সিমেন্ট এবং নির্মাণ শিল্পে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন এই চুনাপাথর খনি পরিচালনা করে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন নদ – নদী এবং সমুদ্র উপক‚লীয় এলাকায় প্রচুর পরিমাণে বালুর মজুদ রয়েছে। বালু নির্মাণ শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বান্দরবান জেলায় জিপসামের খনি রয়েছে, যার মজুদ আনুমানিক ১-২ মিলিয়ন টন।

চুনাপাথর এবং জিপসাম দেশের স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যা স্থানীয় বাজার এবং দেশের অন্যান্য স্থানে সরবরাহ করে।

কক্সবাজার এবং পতেঙ্গা সমুদ্র উপক‚লীয় এলাকায় হেভি মিনারেল স্যান্ড পাওয়া যায়, যার মজুদ আনুমানিক ১-১.৫ মিলিয়ন টন। এছাড়াও পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর এবং ময়মনসিংহ জেলায় ক্যাবল স্টোনের খনি রয়েছে। যার মজুদ আনুমানিক ২০০-৩০০ মিলিয়ন টন।

জাপানের মিৎসুই অ্যান্ড কোং, অস্ট্রেলিয়ার ইলুকা রিসোর্স বাংলাদেশের হেভি মিনারেল স্যান্ড এবং ক্যাবল স্টোন অনুসন্ধান এবং উত্তোলন কার্যক্রমে জড়িত। এই খনিজের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা অত্যন্ত উচ্চ।

বাংলাদেশের খনিজ সম্পদের মজুদ ও উত্তোলনের সময়কাল নির্ভর করে বর্তমান উৎপাদন হার, নতুন খনি আবিষ্কার এবং টেকসই ব্যবহারের ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে মজুদ এবং উত্তোলন ক্ষমতা আরও বাড়ানো সম্ভব।

শেয়ার করুন

বাংলাদেশের মাটির নিচে যতো সম্পদ

সময় ০৭:৫০:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪

বাংলাদেশ, একটি নদীমাতৃক দেশ, যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি রয়েছে অমূল্য খনিজ সম্পদের ভাণ্ডার। এদেশের মাটির নিচে লুকিয়ে আছে প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, চুনাপাথর, বালু এবং আরও অনেক সম্পদ। কিন্তু খনির কার্যক্রমে জড়িত বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি কোম্পানির কার্যকলাপ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যেখানে টেকসই ব্যবস্থাপনা ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ।

প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ। সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ও নোয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানে প্রাকৃতিক গ্যাসের খনি রয়েছে। প্রায় ২৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে। বর্তমান উত্তোলন হার অনুযায়ী, এই গ্যাসের মজুদ প্রায় ১০-১৫ বছর চলতে পারে। নতুন খনি আবিষ্কারের মাধ্যমে এই সময়কাল বাড়ানো সম্ভব।

সেভরন, যুক্তরাষ্ট্রের এই বৃহত্তম তেল ও গ্যাস কোম্পানি, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে অন্যতম প্রধান ভ‚মিকা পালন করছে। বিবিয়ানা, জালালাবাদ এবং মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রে তারা সক্রিয়। এছাড়াও আয়ারল্যান্ডের তুলো অয়েল এবং ভারতের ওএসজিসি ভিদেশ বঙ্গোপসাগরে প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানে কাজ করছে।

বাংলাদেশের কয়লা খনিগুলি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দিনাজপুর বড়পুকুরিয়া খনিতে প্রায় ১ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদন করা হয়। এছাড়াও ফুলবাড়ী, জামালগঞ্জ এবং কুন্দুলী এলাকায় কয়লার মজুদ রয়েছে। আনুমানিক ৩.৩ বিলিয়ন টন কয়লা মজুদ রয়েছে। যা ৫০-১০০ বছর চলতে পারে।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি পরিচালনা করে সরকারি প্রতিষ্ঠান বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড। এই কোম্পানি নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কয়লা উত্তোলনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই খনিতে সরকার নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উত্তোলনের কার্যক্রম বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

সিলেটের তামাবিল এবং জাফলং এলাকায় প্রচুর পরিমাণে চুনাপাথর পাওয়া যায়। আনুমানিক ১০০-১৫০ মিলিয়ন টন চুনাপাথরের মজুদ রয়েছে, যা সিমেন্ট এবং নির্মাণ শিল্পে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন এই চুনাপাথর খনি পরিচালনা করে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন নদ – নদী এবং সমুদ্র উপক‚লীয় এলাকায় প্রচুর পরিমাণে বালুর মজুদ রয়েছে। বালু নির্মাণ শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বান্দরবান জেলায় জিপসামের খনি রয়েছে, যার মজুদ আনুমানিক ১-২ মিলিয়ন টন।

চুনাপাথর এবং জিপসাম দেশের স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যা স্থানীয় বাজার এবং দেশের অন্যান্য স্থানে সরবরাহ করে।

কক্সবাজার এবং পতেঙ্গা সমুদ্র উপক‚লীয় এলাকায় হেভি মিনারেল স্যান্ড পাওয়া যায়, যার মজুদ আনুমানিক ১-১.৫ মিলিয়ন টন। এছাড়াও পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর এবং ময়মনসিংহ জেলায় ক্যাবল স্টোনের খনি রয়েছে। যার মজুদ আনুমানিক ২০০-৩০০ মিলিয়ন টন।

জাপানের মিৎসুই অ্যান্ড কোং, অস্ট্রেলিয়ার ইলুকা রিসোর্স বাংলাদেশের হেভি মিনারেল স্যান্ড এবং ক্যাবল স্টোন অনুসন্ধান এবং উত্তোলন কার্যক্রমে জড়িত। এই খনিজের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা অত্যন্ত উচ্চ।

বাংলাদেশের খনিজ সম্পদের মজুদ ও উত্তোলনের সময়কাল নির্ভর করে বর্তমান উৎপাদন হার, নতুন খনি আবিষ্কার এবং টেকসই ব্যবহারের ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে মজুদ এবং উত্তোলন ক্ষমতা আরও বাড়ানো সম্ভব।