বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছাড়ছেন ধনীরা

- সময় ১১:৫৯:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / 240
গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের জেরে বাংলাদেশে দেখা দিয়েছে নতুন এক প্রবণতা। অভিজাত ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দলে দলে দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী চার মাসে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আগের চার মাসের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশিতে। গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত চার মাসে ৯৯ জন নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলো। অভ্যুত্থানের পর আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই সংখ্যা ২০৭ জন হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছ থেকে তারা নিয়মিত নাগরিকত্ব ত্যাগের আবেদন পাচ্ছেন। প্রতিটি আবেদন যথাযথ যাচাই-বাছাই করা হয়।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, নাগরিকত্ব ত্যাগকারীদের মধ্যে ৭০ শতাংশই ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নতুন নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। সবচেয়ে বেশি গেছেন জার্মানি, তারপর অস্ট্রিয়া ও সিঙ্গাপুর।
এর মধ্যে জার্মানিতে ১৩২ জন, অস্ট্রিয়ায় ৪৫ জন, চীনে ১৪ জন, সিঙ্গাপুরে চারজন, ভারতে দুজন নাগরিকত্বের অনুকূলে বাংলাদেশী নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় অনেকেই এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
তবে শুধু নিরাপত্তার কারণে নয়, অর্থপাচারসহ নানা অনিয়মে অভিযুক্ত ব্যক্তিরাও বিচার এড়াতে নাগরিকত্ব ত্যাগ করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান ও এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সাইফুল আলম মাসুদের মতো প্রভাবশালীরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ছেড়ে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। এরা দুজনই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত।
টিআইবি বলছে, অনেকের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া চলমান, তাই তারা নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নিরাপদে থাকতে চাইছেন। যাতে করে বাংলাদেশে কোন ধরনের সমস্যায় পড়তে না হয়। বাংলাদেশের নাগরিক না হলে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা বা বিচারের মুখোমুখি করা একটু কঠিন এবং লম্বা প্রক্রিয়া।
অনেকেই আবার অন্য দেশের রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ায়; নাগরিকত্ব ত্যাগ করছেন। এদের তালিকায় বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগি, বন্ধুত্বপ্রতীম দলের নেতারা রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি ও বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগের কারণে বাংলাদেশের সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের মধ্যে নাগরিকত্ব ত্যাগের প্রবণতা বাড়ছে।
আপস..বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করতে হলে দেশে অবস্থান করে বা যে দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করা হয়, সেখানে থেকেই বাংলাদেশী দূতাবাসের মাধ্যমে এজন্য আবেদন করা যায়। বর্তমানে যেসব আবেদন আসছে তার সবগুলোই দূতাবাসের মাধ্যমে।