চিহ্নিত শত্রুরা সক্রিয়
বসুন্ধরাকে চপেটাঘাত, গ্রুপ বলছে অন্য কথা!

- সময় ১১:৫০:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪
- / 286
দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চাকরি ছাড়লেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদের দুই ভাই রমজান আলী ও আবু হোসেন। তাঁরা তাঁদের পদত্যাগপত্র ই-মেইল ও ডাকযোগে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছেন বলে দাবি করলেও বসুন্ধরা গ্রুপ দায়িত্ব নিয়েই সেটি অস্বীকার করেছে।
এ সংক্রান্ত তথ্য প্রমাণও বাংলা অ্যাফেয়ার্সের হাতে সংরক্ষিত রয়েছে। চাকরি প্রাপ্তির পরও কেন চাকরি ছাড়ছেন আবু সাঈদের দুই ভাই, এর পেছনে আসলে কোনো রহস্য লুকিয়ে রয়েছে কিনা? তা নিয়ে চলছে নানামূখী জল্পনা-কল্পনা। তবে বাংলা অ্যাফেয়ার্সের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আত্মমর্যাদার জায়গা থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে চপেটাঘাত করেছে আবু সাঈদের পরিবার। বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (মিডিয়া) এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা -৪ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ইয়াসিন পাভেল বলেছেন, আবু সাঈদের পরিবার পুরোপুরি মিথ্যাচার করছে।
তবে উত্তরবঙ্গের অনেকেই এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরণের মন্তব্য করেছেন। সুস্পষ্টভাবে বসুন্ধরা গ্রুপের নাম উল্লেখ না করেও বাংলা অ্যাফেয়ার্সের এ প্রতিবেদককে বলেছেন, উত্তরবঙ্গের মানুষ হিসাবে আবু সাঈদের দুই ভাই যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সঠিক। কেননা, ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপের চাকরি করার চেয়ে না করাই ভালো। এতে করে উত্তরবঙ্গের মানুষ খুশি হয়েছে।

উত্তরবঙ্গের অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী আছেন, তারাই আবু সাঈদের পরিবারে চাকরির ব্যবস্থা করতে পারেন। সেখানে বেসরকারি চাকরি জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের কাছ থেকেই কেন চাকরি নিতে হবে? এমন প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।
ঢাকায় সাংবাদিকতা করেন উত্তরবঙ্গের একজন গণমাধ্যম কর্মী/ সাংবাদিক নেতা বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তারা মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। আবু সাঈদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে যে গণঅভ্যুত্থান হলো, সেটির ফায়দা লুটার জন্যই বসুন্ধরা নিহত আবু সাঈদের পরিবারে দুজনকে চাকরি দিয়েছিল।

অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ওই সাংবাদিক নেতা দাবি রেখেই বলেন, আবু সাঈদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি দিতে চাইলে তার দুই ভাইকে অবশ্যই সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার আহ্বানও জানানো হয়।
একই সাথে ব্যাংক লুটেরা এস আলম গ্রুপের মতো বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধেও কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এই সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে। যদিও এই সরকার ইতিমধ্যেই বসুন্ধরা গ্রুপের কয়েকজন কর্ণধারের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। যেগুলোতে নাম মাত্র অর্থ রয়েছে। সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।
উল্লেখ্য, চাকরি ছাড়ার কারণ হিসেবে নিহত আবু সাঈদের দুই ভাই ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যার কারণে কর্মস্থলে উপস্থিত হতে পারছেন না বলে উল্লেখ করেছেন।
বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রমজান আলী ও আবু হোসেনের সঙ্গে মুঠোফেনে যোগাযোগ করলে তাঁরা চাকরি ছাড়ার কথা নিশ্চিত করেন। বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন কালের কণ্ঠের খবর অনুযায়ী, গত ৯ অক্টোবর গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পক্ষে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মো. ইয়াসিন হোসেন পাভেল পীরগঞ্জের বাবনপুরে শহীদ আবু সাঈদের গ্রামের বাড়িতে তাঁর দুই ভাই আবু হোসেন ও রমজান আলীর নিয়োগপত্র দেন। এর এক দিন পর ১০ অক্টোবর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পান শহীদ আবু সাঈদের বোন সুমি খাতুন।
রমজান আলী বলেন, গত ৯ অক্টোবর তাঁদের বাড়িতে এসে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ইয়াসিন হোসেন পাভেল তাঁদের দুই ভাইয়ের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন। তাঁকে করা হয়েছিল বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার এক্সিকিউটিভ কর্মকর্তা ও তাঁর ছোট ভাই আবু হোসেনকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরের এক্সিকিউটিভ কর্মকর্তা। তাঁদের কর্মস্থল বলা হয়, রংপুরে; কিন্তু কী কাজ, তাঁরা জানেন না। তাই তাঁরা কর্মস্থলে যোগদান করেননি। ৮ নভেম্বর তাঁরা বসুন্ধরা গ্রুপের ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। যদিও পাভেল রমজান আলীর কথার সাথে পরিপূর্ণভাবে দ্বিমত পোষণ করেছেন।
আবু হোসেন বলেন, তাঁরা ৮ নভেম্বর বসুন্ধরা গ্রুপের ই-মেইলে পাঠালেও ১০ নভেম্বর কর্তৃপক্ষের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও পদত্যাগপত্র পাঠান। মঙ্গলবার রেজিস্ট্রি করে ডাকযোগেও পদত্যাগপত্র পাঠানো হয়।
চাকরি ছাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আবু হোসেন বলেন, তাঁরা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যার কারণে কর্মস্থলে উপস্থিত হতে পারছেন না। তাই কাজ ছাড়া বেতন নিয়ে আবু সাঈদের আত্মত্যাগের মহিমাকে তাঁরা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান না।
৬ নভেম্বর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদের দুই ভাই রমজান আলী ও আবু হোসেন ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। আবু সাঈদের মৃত্যুর পর তাঁর মা মনোয়ারা বেগম আহাজারি করে বলেন, ‘তুই মোর ছাওয়াক চাকরি না দিবু না দে।’ মনোয়ারা বেগমের এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

উল্লেখ্য, বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ও নানা সুযোগ সুবিধা আদায়ে সিদ্ধহস্ত ছিল বসুন্ধরা গ্রুপ।
দেশত্যাগী শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন দায়িত্ব নিয়ে গ্রুপের চেয়ারম্যান শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প শুধু শেখ হাসিনাই’। গত বছর ১৫ জুলাই ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত ব্যবসায়ী সম্মেলনে যোগ দিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে দেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনা যে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন; সে বিবেচনায় আগামী দিনে তাকেই প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছিলেন আহমেদ আকবর সোবহান। এ সময় ব্যবসায়ীরা শেখ হাসিনার সঙ্গে রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে দেশত্যাগী প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের ম্যান্ডেট পেয়ে গেছেন বলে মন্তব্যও করেন বসুন্ধরা চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এখানে যে কজন ব্যবসায়ী আছেন- তারা এ দেশের মেরুদণ্ড-চাবিকাঠি বলেন তারা এ দেশ পরিচালনা করেন। এখন তো আপনার ম্যান্ডেট সম্পর্কে আমার মনে হয় না কারও কোনো সংশয় আছে।
ওই অনুষ্ঠানে দেশের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শেখ হাসিনা কী কী করেছেন তা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেন। এ সময় আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘উনার সম্পর্কে বলতে গেলে আগামী সাত দিনেও শেষ হবে না। উনি প্রথমেই কাজ করেছেন আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতি নিয়ে। সবাই বলেছে শেখ হাসিনা বার বার। আমি বলবো, আমরা যেমন বঙ্গবন্ধুর কোনো বিকল্প পাইনি। আজকে শেখ হাসিনার বিকল্পও শুধু শেখ হাসিনা।
আহমেদ আকবর সোবহান বলেছিলেন, ‘আমাদের সব রাজনীতির মূল লক্ষ্য অর্থনীতি। এ দেশের কোটি মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি করতে হবে। এক সময় বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ বলতো, এখন বঙ্গবন্ধু প্লাস শেখ হাসিনার বাংলাদেশ বলে। সি ইজ এ ব্র্যান্ড ওব দ্য ওয়ার্ল্ড। সারা দেশ আজকে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে কী এমন জাদুর কাঠি আছে সেটা দিয়ে সারা বিশ্বকে তিনি আকর্ষণ করেন। সারা বিশ্বের মানুষের কাছে আজকে কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী।’

ওই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বসুন্ধরা চেয়ারম্যান আরও বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন, সে অনুযায়ী যদি আমরা এগিয়ে যাই তাহলে এদেশে গরিব মানুষ বলে কোনো শব্দ থাকবে না। আমাদের ১৭ কোটি মানুষ একটা শক্তি। এখানে একশভাগ মানুষ বর্তমান সরকার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ম্যান্ডেট দিয়েছেন। আমরা ব্যবসায়ীরা আছি। আজীবন আপনার সঙ্গে থাকবো, আমৃত্যু আপনার সঙ্গে থাকবো। কারণ, আপনার ব্যতিক্রম তো আপনি। আজ সারা দুনিয়ার চমক শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা সারা দুনিয়াকে আকৃষ্ট করতে পারেন। ইউরোপ-আমেরিকা-ভারত এবং কূটনীতির দিকে তিনি আমাদের দেশকে একটা মিডল অবস্থানে রাখছে। আমাদের সঙ্গে সবার ভালো সম্পর্ক। কারও সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক নেই। তার যে একটা অভিজ্ঞতা, ২০-২৫ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যে অভিজ্ঞতা, এটা আরেক জনের ২০ বছর লাগবে। সুতরাং আমাদের সার্বক্ষণিক উনার সেবা নিতে হবে।’
এসব বিষয়ে প্রথমে বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া উইংয়ের মোহাম্মাদ সালাউদ্দিনকে ফোন করা হলে তিনি দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। পরবর্তী সময়ে তিনি মোহাম্মদ ইয়াসিন হোসেন পাভেলের নাম্বার দেন।
বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (মিডিয়া) মোহাম্মদ ইয়াসিন হোসেন পাভেলকে ফোন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি কয়েক ধাপে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেছেন।
বাংলা অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গে আলাপকালে ইয়াসিন পাভেল বলেন, আবু সাঈদের দুই ভাইকে বসুন্ধরা গ্রুপ চাকরি দিয়েছিল মানবিক দিক বিবেচনায়। বাংলাদেশের আর কোনো শিল্পগ্রুপ সেটি করেনি। আমাদের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোহবান নিজ থেকেই তাদের চাকরির ব্যবস্থা করার জানিয়েছিলেন। আমরা সে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেছি। আমাদের কাছে আবু সাঈদের দুই ভাইয়ের নিয়োপত্র এবং জয়েনিং লেটার রয়েছে। কিন্তু ৪০ দিন কাজ করার পর তারা পদত্যাগ করেছেন বলে আমরা গণমাধ্যমে জানতে পেরেছি। বসুন্ধরা গ্রুপ কোনো মেইল পায়নি। এমনকি, ডাক যোগেও কোনো পদত্যাগ পত্র পাওয়া যায়নি। অনেকেই এখন বলছেন, আবু সাঈদের পরিবারের দুই সদস্যকে পিয়নের চাকরি দেয়া হয়েছে। সেটা মোটেও সত্য নয়। বেসিক বেতন ২০ হাজার টাকা হলেও অন্যান্য ভাতাদি মিলে ৫৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরি দেয়া হয়েছে। সেটি পরিপূর্ণভাবে মানবিক দিক বিবেচনায় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের সরাসরি নির্দেশেই করা হয়েছে।
পাভেল আরো বলেন, পুলিশ বাদী হয়ে রংপুরে মামলা হয়েছে। সেকারণে আবু সাঈদের পরিবার এখনো নিরপত্তাহীনতায় ভুগছে। সে কারণে হয়তো তারা পদত্যাগ করতে পারেন। যদিও আমাদেরকে অফিসিয়ালি বিষয়টি নিশ্চিত করেনি আবু সাঈদের পরিবার। মূলত রংপুরের ব্যুরো অফিসে প্রশাসন বিভাগে তারা যোগদান করেছিলেন। সব তথ্য প্রমাণাদি আমাদের অফিসে সংরক্ষিত আছে। যা আমি আপনাকে আগামীকাল সকাল ১১ টার মধ্যে পাঠাবো। তিনি সেগুলো পাঠিয়েছেন শনিবার সকালের ১০ টা ৫৪ মিনিটে। এরপর তার কাছে ই-মেইল যে পাঠায়নি সেটির প্রমাণ চাওয়া হলে বলেন, আমি যদি আপনাকে স্ক্রিনশট দিই, সেটা দিয়ে তো আমার অফিস পলিসির সাথে যায় না। এরপর ডিলিট করারও সুযোগ থাকে। কিন্তু আবু সাঈদের দুই ভাই যে দাবি করেছেন, তারা রেজিস্ট্রি করে ডাকযোগে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন, সেটাও সত্য নয়। কেননা এখন সারা বাংলাদেশেই রেজিস্ট্রিকৃত চিঠি একদিনের মধ্যেই চলে আসে। বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে কোনো পদত্যাগ পত্র এসে পৌঁছায়নি। এমনকি তারা রংপুর অফিসেও পদত্যাগ পত্র জমা দেননি। মূলত তারা এখন বসুন্ধরা গ্রুপের চিহ্নিত শত্রুদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই এসব করছেন বলেও মন্তব্য করেন পাভেল।
তিনি আরো বলেন, সর্বশেষ ৩ চার দিন ধরে তারা নিয়মিত অফিস করেছেন না। তারপরও তাদেরকে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে কোনো শোকজ করা হয়নি। বিষয়টি যেহেতু মানবিক বিবেচনায় করা হয়েছিল, তাই চেয়ারম্যার স্যারের নির্দেশে আমরা সেই সুযোগটুকু দিয়েছিলাম। ৪০ দিন কাজ করার ফলে তাদের এক মাসের বেতন ইতিমধ্যেই প্রস্তুত করে আমাদের রংপুর অফিসে চেক পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
পাভেল বলেন, বিভন্ন গণমধ্যমে প্রকাশিত নিউজে জেনেছি, তারা অফিসে যেতে পারছেন না। মানসিকভাবে ভেঙে পরার কথাও শুনেছি। তবে আত্নমর্যাদাবোধের জায়গা থেকে চাকরি ছেড়েছেন, এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক দাবি করেন বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া উইংয়ের নিবার্হী পরিচালক। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ৪০ দিন চাকরি করার পর কেন তাদের আত্মমর্যাদাবোধ জাগ্রত হলো? এ বিষয়ে কোনো ব্যাখা চাওয়া হবে কিনা আবু সাঈদের দুই ভাইয়ের কাছে, সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট উত্তর দেননি পাভেল।
গত বছরের ১৫ জুলাই বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, সেখান থেকে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে পাভেল বলেন, আমরা ব্যবসায়ী শিল্প গোষ্ঠী। আমাদের অবস্থান অবশ্যই পরিবর্তন হয়েছে। আপনাকে অনেক কিছু বলা হয়নি বলেই তিনি বলতে শুরু করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে সরাসরি ছাত্র ও আন্দোলনকারীদের সহায়তা করা হয়েছে। বেসরকারি চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের আবাসিক এলাকায় লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থার পাশাপাশি, আহতদের রাজধানীর অভিজাত হাসপাতাল ইভার কেয়ারেও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল। শুধু যে ঢাকাতেই আন্দোলনকারীদের চিকিৎসা করা হয়েছে তেমনটা নয়, ময়মনসিংহ, রংপুরেও চিকিৎসাসহ নানা সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে।
কেন এখন নতুন করে কথা উঠেছে এই প্রশ্নের জবাবে পাভেল বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ বাংলাদেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী। আমাদের গ্রুপের চিহ্নিত শত্রু রয়েছে। তারা কোনোভাবেই বসুন্ধরা গ্রুপের উন্নতি চায় না। তাই নানা সময়ে যেভাবে ষড়যন্ত্র করেছিল, এবারও তাই করছে। তিনি দাবি করে বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বসুন্ধরা গ্রুপ যা করেছে তা আর কোনো গ্রুপ করেনি। আমাদের প্রুপের চাকরির পর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু সাঈূদের পরিবারের সদস্য হিসাবে তার বোনকে চাকরি দেয়া হয়েছে।
মানুষের উপকার করতে গিয়েও আবারও সমালোচনার শিকার হতে হচ্ছে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী বসুন্ধরা গ্রুপকে। যা কখনোই কাম্য হতে পারে না। সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে বসুন্ধরা গ্রুপ সারাদেশেই জনহিতকর কাজ করে যাচ্ছে। যেমনটা আজও (শুক্রবার) ৬০ জন নারীকে সেলাই মেশিন উপহার হিসাবে দেয়া হয়েছে।