০৪:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন শুধু একটি উৎসব নয়

উৎপল দাস
  • সময় ১১:১১:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫
  • / 48

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ মার্চ। গেল বছরও এই দিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ এর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এবার নেই কোনো রাষ্ট্রীয় আয়োজন।

১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ মুজিব, যিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অগ্রদূত হিসেবে ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে জাতি গভীর শ্রদ্ধা জানায় এবং তাঁর আদর্শ ও সংগ্রামী জীবন থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব কেটেছে টুঙ্গিপাড়ায়। তিনি ছোটবেলা থেকেই নেতৃত্বগুণের অধিকারী ছিলেন। গোপালগঞ্জের মিশন স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর, তিনি গোপালগঞ্জ সরকারি স্কুলে ভর্তি হন। পরবর্তীতে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন এবং ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। শিক্ষাজীবন থেকেই তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানি শাসকদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৪০-এর দশকে। তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকারের কথা বলার জন্য পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ গঠন করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবি, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল অনন্য। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন, যা বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে তোলে। ২৫ মার্চের কালরাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলেও তাঁর নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধ চলতে থাকে এবং ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে।

সাত মার্চ
সাত মার্চ

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি একটি সমাজতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক, ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংবিধান প্রণয়ন করেন। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শিক্ষা বিস্তারে তাঁর নেওয়া নীতি আজও বাংলাদেশের অগ্রগতির ভিত রচনা করে রেখেছে। তবে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।

বঙ্গবন্ধু শুধু একজন নেতা নন, তিনি একটি চেতনার নাম। তাঁর আদর্শ আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং দেশ গঠনে আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে বর্তমান প্রজন্মের উচিত সততা, দেশপ্রেম ও মানবতার আদর্শে নিজেদের গড়ে তোলা।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করা মানে শুধুমাত্র তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো নয়, বরং তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা। তিনি সবসময় গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। তাঁর দেখানো পথে চলতে হলে আমাদের অবশ্যই সুশিক্ষিত, নৈতিকতা ও মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক হতে হবে। জাতীয় উন্নয়নের জন্য বঙ্গবন্ধুর চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনাগুলোকে বাস্তবায়ন করা জরুরি।

বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি, সংকট ও প্রতিকূলতার মধ্যেও কীভাবে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকা যায়। তিনি কখনো আপস করেননি, বরং দেশ ও মানুষের কল্যাণের জন্য সব কিছু ত্যাগ করেছেন। তাঁর সংগ্রামী জীবনের প্রতিটি অধ্যায় আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের মূলমন্ত্র ছিল দেশপ্রেম, সততা, সাহসিকতা ও জনগণের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন শুধু একটি উৎসব নয়, এটি একটি প্রতিজ্ঞা নেওয়ার দিন। তাঁর আত্মত্যাগ, দেশপ্রেম ও নেতৃত্বগুণ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা যদি তাঁর দেখানো পথে চলতে পারি, তবে বাংলাদেশ সত্যিকারের সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তাঁর আদর্শে গড়ে তুলতে হবে।

শেয়ার করুন

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন শুধু একটি উৎসব নয়

সময় ১১:১১:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ মার্চ। গেল বছরও এই দিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ এর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এবার নেই কোনো রাষ্ট্রীয় আয়োজন।

১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ মুজিব, যিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অগ্রদূত হিসেবে ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে জাতি গভীর শ্রদ্ধা জানায় এবং তাঁর আদর্শ ও সংগ্রামী জীবন থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব কেটেছে টুঙ্গিপাড়ায়। তিনি ছোটবেলা থেকেই নেতৃত্বগুণের অধিকারী ছিলেন। গোপালগঞ্জের মিশন স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর, তিনি গোপালগঞ্জ সরকারি স্কুলে ভর্তি হন। পরবর্তীতে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন এবং ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। শিক্ষাজীবন থেকেই তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানি শাসকদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৪০-এর দশকে। তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকারের কথা বলার জন্য পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ গঠন করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবি, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল অনন্য। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন, যা বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে তোলে। ২৫ মার্চের কালরাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলেও তাঁর নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধ চলতে থাকে এবং ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে।

সাত মার্চ
সাত মার্চ

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি একটি সমাজতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক, ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংবিধান প্রণয়ন করেন। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শিক্ষা বিস্তারে তাঁর নেওয়া নীতি আজও বাংলাদেশের অগ্রগতির ভিত রচনা করে রেখেছে। তবে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।

বঙ্গবন্ধু শুধু একজন নেতা নন, তিনি একটি চেতনার নাম। তাঁর আদর্শ আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং দেশ গঠনে আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে বর্তমান প্রজন্মের উচিত সততা, দেশপ্রেম ও মানবতার আদর্শে নিজেদের গড়ে তোলা।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করা মানে শুধুমাত্র তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো নয়, বরং তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা। তিনি সবসময় গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। তাঁর দেখানো পথে চলতে হলে আমাদের অবশ্যই সুশিক্ষিত, নৈতিকতা ও মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক হতে হবে। জাতীয় উন্নয়নের জন্য বঙ্গবন্ধুর চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনাগুলোকে বাস্তবায়ন করা জরুরি।

বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি, সংকট ও প্রতিকূলতার মধ্যেও কীভাবে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকা যায়। তিনি কখনো আপস করেননি, বরং দেশ ও মানুষের কল্যাণের জন্য সব কিছু ত্যাগ করেছেন। তাঁর সংগ্রামী জীবনের প্রতিটি অধ্যায় আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের মূলমন্ত্র ছিল দেশপ্রেম, সততা, সাহসিকতা ও জনগণের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন শুধু একটি উৎসব নয়, এটি একটি প্রতিজ্ঞা নেওয়ার দিন। তাঁর আত্মত্যাগ, দেশপ্রেম ও নেতৃত্বগুণ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা যদি তাঁর দেখানো পথে চলতে পারি, তবে বাংলাদেশ সত্যিকারের সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তাঁর আদর্শে গড়ে তুলতে হবে।