প্রাণহানি ২০০০ ছাড়াল, ৭ দিনের জাতীয় শোক | Bangla Affairs
০১:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রাণহানি ২০০০ ছাড়াল, ৭ দিনের জাতীয় শোক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • সময় ০৮:২৩:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫
  • / 7

ভূমিকম্প

মিয়ানমারে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা ২০০০ ছাড়িয়ে গেছে। আহত হয়েছে ৩,৪০০ জনের বেশি এবং এখনো নিখোঁজ দুই শতাধিক।

এমন ভায়বহ পরিস্থিতিতে দেশটির সামরিক সরকার সোমবার থেকে সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে। এ সময়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম এমআরটিভি।

গত শুক্রবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার তিন দিন পর মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে জীবিতদের সন্ধান আরও জোরদার করা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই মিয়ানমারে নিহতের সংখ্যা ২,০০০ জন ছাড়িয়ে গেছে এবং থাইল্যান্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯।

মিয়ানমারে উদ্ধার অভিযান

এদিকে সোমবার মিয়ানমারের মান্দালয় শহরের ধ্বংসস্তূপ থেকে চারজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। যার মধ্যে একজন গর্ভবতী নারী ও এক শিশু রয়েছে।

এছাড়া চীনা উদ্ধারকারী দল একজনকে থার্মাল কম্বলে মুড়ে বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়।

ড্রোন ফুটেজে দেখা গেছে, একটি বিশাল ভবন স্তরে স্তরে ভেঙে পড়েছে।

মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে অনেক দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো অভিযোগ করে বলছে, সামরিক বাহিনী ভূমিকম্পের পরও বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবিলম্বে মিয়ানমারে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন যেন, ত্রাণ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালিত হতে পারে।

মিয়ানমারে ৭ দিনের জাতীয় শোক
মিয়ানমারে উদ্ধার অভিযান

থাইল্যান্ডে উদ্ধার অভিযান

এদিকে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ভূমিকম্পে ধসে পড়া একটি বহুতল ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে সোমবার আরও একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।ওই ভবন ধসে এখনো ৭৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

উদ্ধারকারী ডগ স্কোয়াড ও স্ক্যানিং মেশিন ব্যবহার করে নিখোঁজদের অনুসন্ধান চলছে।

ব্যাংককের ডেপুটি গভর্নর জানিয়েছেন, ৭২ ঘণ্টা পার হলে জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা কমে যায়। তাই অভিযান দ্রুততর করা হচ্ছে।

মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা

এদিকে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, মিয়ানমারে নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ২,০২৮ জন ছাড়িয়েছে। বিরোধী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (NUG) দাবি করেছে, মৃতের সংখ্যা ২,৪১৮-এ পৌঁছেছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে তিনজন চীনা নাগরিকও রয়েছেন।

ত্রাণ ও আন্তর্জাতিক সহায়তা

এদিকে বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক শাসক জেনারেল মিন অং হ্লাইং রোববার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। দুই নেতা ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি, উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন।

এছাড়া রাশিয়া, ভারত, চীন, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, জাতিসংঘ, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অনেক দেশ মিয়ানমারে উদ্ধারকারী দল ও মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে।

জাতিসংঘ বলেছে, তারা তড়িৎগতিতে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে।যুক্তরাষ্ট্র ২ মিলিয়ন ডলারের মানবিক সহায়তা ঘোষণা করেছে এবং USAID-এর একটি দল মিয়ানমারে পাঠানো হচ্ছে।

ভূমিকম্পের পাশাপাশি চলমান সংকট

মিয়ানমারে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে ত্রাণ বিতরণে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। দেশটির রাস্তাঘাট, সেতু, বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩.৫ মিলিয়নের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

উদ্ধারকর্মীদের প্রতিশ্রুতি

এদিকে চীনের উদ্ধারকারী দলের প্রধান ইউয়ে শিন বলেছেন, ‘আমরা কতক্ষণ কাজ করব তা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা স্থানীয় মানুষের জন্য আশার আলো জ্বালাতে পারছি কিনা।’

শেয়ার করুন

প্রাণহানি ২০০০ ছাড়াল, ৭ দিনের জাতীয় শোক

সময় ০৮:২৩:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫

মিয়ানমারে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা ২০০০ ছাড়িয়ে গেছে। আহত হয়েছে ৩,৪০০ জনের বেশি এবং এখনো নিখোঁজ দুই শতাধিক।

এমন ভায়বহ পরিস্থিতিতে দেশটির সামরিক সরকার সোমবার থেকে সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে। এ সময়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম এমআরটিভি।

গত শুক্রবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার তিন দিন পর মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে জীবিতদের সন্ধান আরও জোরদার করা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই মিয়ানমারে নিহতের সংখ্যা ২,০০০ জন ছাড়িয়ে গেছে এবং থাইল্যান্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯।

মিয়ানমারে উদ্ধার অভিযান

এদিকে সোমবার মিয়ানমারের মান্দালয় শহরের ধ্বংসস্তূপ থেকে চারজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। যার মধ্যে একজন গর্ভবতী নারী ও এক শিশু রয়েছে।

এছাড়া চীনা উদ্ধারকারী দল একজনকে থার্মাল কম্বলে মুড়ে বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়।

ড্রোন ফুটেজে দেখা গেছে, একটি বিশাল ভবন স্তরে স্তরে ভেঙে পড়েছে।

মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে অনেক দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো অভিযোগ করে বলছে, সামরিক বাহিনী ভূমিকম্পের পরও বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবিলম্বে মিয়ানমারে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন যেন, ত্রাণ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালিত হতে পারে।

মিয়ানমারে ৭ দিনের জাতীয় শোক
মিয়ানমারে উদ্ধার অভিযান

থাইল্যান্ডে উদ্ধার অভিযান

এদিকে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ভূমিকম্পে ধসে পড়া একটি বহুতল ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে সোমবার আরও একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।ওই ভবন ধসে এখনো ৭৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

উদ্ধারকারী ডগ স্কোয়াড ও স্ক্যানিং মেশিন ব্যবহার করে নিখোঁজদের অনুসন্ধান চলছে।

ব্যাংককের ডেপুটি গভর্নর জানিয়েছেন, ৭২ ঘণ্টা পার হলে জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা কমে যায়। তাই অভিযান দ্রুততর করা হচ্ছে।

মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা

এদিকে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, মিয়ানমারে নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ২,০২৮ জন ছাড়িয়েছে। বিরোধী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (NUG) দাবি করেছে, মৃতের সংখ্যা ২,৪১৮-এ পৌঁছেছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে তিনজন চীনা নাগরিকও রয়েছেন।

ত্রাণ ও আন্তর্জাতিক সহায়তা

এদিকে বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক শাসক জেনারেল মিন অং হ্লাইং রোববার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। দুই নেতা ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি, উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন।

এছাড়া রাশিয়া, ভারত, চীন, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, জাতিসংঘ, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অনেক দেশ মিয়ানমারে উদ্ধারকারী দল ও মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে।

জাতিসংঘ বলেছে, তারা তড়িৎগতিতে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে।যুক্তরাষ্ট্র ২ মিলিয়ন ডলারের মানবিক সহায়তা ঘোষণা করেছে এবং USAID-এর একটি দল মিয়ানমারে পাঠানো হচ্ছে।

ভূমিকম্পের পাশাপাশি চলমান সংকট

মিয়ানমারে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে ত্রাণ বিতরণে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। দেশটির রাস্তাঘাট, সেতু, বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩.৫ মিলিয়নের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

উদ্ধারকর্মীদের প্রতিশ্রুতি

এদিকে চীনের উদ্ধারকারী দলের প্রধান ইউয়ে শিন বলেছেন, ‘আমরা কতক্ষণ কাজ করব তা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা স্থানীয় মানুষের জন্য আশার আলো জ্বালাতে পারছি কিনা।’