প্রবাসী আয়ে অন্ধকার!

- সময় ০৭:৫৯:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ জুন ২০২৪
- / 339
দেশে গত কয়েক দশকে মধ্যবিত্তদের জীবন বদলানোর প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে শ্রমবাজার। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ও সুখের জন্য প্রতিবছর লাখ-লাখ মানুষ বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। যাদের বড় একটি অংশ দালাল ও এজেন্সির খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। বাংলাদেশের শ্রমবাজার মূলত মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ওপরই অনেকটা নির্ভরশীল। দেশের প্রবাসী আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশই আসে এই অঞ্চলগুলো থেকে। তবে দিন দিন এই দেশগুলো প্রবাসীদের জন্য অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
দেশগুলোর নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে কিছু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের সিন্ডিকেট ও দালালদের দৌরাত্ম শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। প্রতিবছর যে সংখ্যক প্রবাসী যাচ্ছেন, তার বিপরীতে আয় সেভাবে আসছে না। সৌদি আরবের মতো সবচেয়ে বেশি প্রবাসী অধ্যুষিত দেশেও রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে কমছে। আর স¤প্রতি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখান থেকেও আয় কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ ও সৌদি আরর থেকে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে ৩৪১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। দেশে শক্তিশালী সিন্ডিকেট, দালাল ও এজেন্সিগুলোর নানা অনিয়মের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে প্রবাসী আয় ইতিমধ্যেই ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রবাসীদের বড় একটি অংশ অবৈধ হয়ে পড়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে আয় পাঠাতে পারছেন না। এসব দেশে প্রবাসী বাড়লেও হুন্ডি কারবারিদের থাবায় আয়ের বড় অংশই অবৈধভাবে আসছে।
কিছু এজেন্সির দুর্নীতির কারণে গত ৩১ মে বন্ধ হয়েছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। এতে করে ভিসা ও কাজের অনুমতি থাকার পরও প্রায় ৩২ হাজার কর্মীর দেশটিতে যাওয়া আটকে গেছে। এর আগে একই কারণে গত ২২ মে বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয় মালদ্বীপ সরকার।
জনশক্তি রপ্তানিতে দেশের প্রধান শ্রমবাজার সৌদি আরব। যেখানে বর্তমানে ৩৮ লাখ ৮৫ হাজার প্রবাসী রয়েছেন। সেখানেও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। কর্মীসংখ্যা বাড়লেও কমে যাচ্ছে রেমিট্যান্স। ফ্রি ভিসা নামে সিন্ডিকেটের তৈরি এক ভিসায় দেশটিতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন প্রবাসীরা। এই ভিসায় যাওয়ার পর কাজ না পেয়ে লুকিয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। অনেকেই পুলিশের কাছে ধরা দিয়ে সরকারিভাবে দেশে ফিরছেন। ফলে জনশক্তি গেলেও এই শ্রমবাজার থেকে আসা রেমিট্যান্স কমছে।
বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, আয় কমে গেছে মধ্যপ্রাচ্যেও দেশ কুয়েত, কাতার ও বাহরাইন থেকেও। এসব দেশে থাকা প্রবাসীদের একটি বড় অংশই হুন্ডিতে প্রবাসী আয় পাঠাচ্ছেন। মূলত দেশে ব্যাংকিং চ্যানেল ও ডলারের দামের পার্থক্য হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন তারা।
এর আগে মালদ্বীপ সরকারও বাংলাদেশি কর্মী নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এসব শ্রমবাজার বন্ধের মূল কারণ দুর্নীতি। মাত্র সাড়ে ৩ বছরে ৩৫ হাজারের বেশি শ্রমিক পাড়ি জমিয়েছিলেন পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়ায়। সহজে ভিসাপ্রাপ্তি এবং কাজের সুযোগ থাকায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছিল দেশটি। বাংলাদেশে স্থাপিত হয়েছিল রোমানিয়ার অস্থায়ী ভিসা সেন্টারও। তবে কিছুদিনের মধ্যেই হোঁচট খায় সেই উদ্যোগও। ভালো নেই ইতালির শ্রমবাজারও।