০৩:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সামরিক কবরস্থানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ তিন বাহিনীর প্রধান

প্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে শহীদ সেনা দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সময় ১০:৪১:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 53

শহীদ সেনা দিবস

প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর বনানীতে সামরিক কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এরপর সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় বনানীর সামরিক কবরস্থানে শায়িত পিলখানায় শহীদ সামরিক কর্মকর্তা ও সদস্যদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

শোকাবহ ২৫ ফেব্রুয়ারি, জাতীয় শহীদ সেনা দিবস, যা এবারই প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানায় ভয়াবহ বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা, ১৭ জন বেসামরিক ব্যক্তি এবং আরও কয়েকজন নিরীহ সদস্যসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান।

সরকার ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা এক পরিপত্রে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। উপসচিব তানিয়া আফরোজ স্বাক্ষরিত পরিপত্রে জানানো হয়, দিবসটি ‘গ’ শ্রেণিভুক্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং যথাযথভাবে পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শহীদ সেনা দিবস
শহীদ সেনা দিবস

২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের সামরিক ইতিহাসে এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডি হিসেবে বিবেচিত। সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা এটিকে দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর অন্যতম বড় আঘাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অনেক বিশ্লেষকের মতে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধেও বাংলাদেশ একসঙ্গে এতসংখ্যক সেনা কর্মকর্তাকে হারায়নি।

এই হত্যাকাণ্ডের পর লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়, যা পরে নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকা মহানগর তৃতীয় বিশেষ আদালত মামলার রায় ঘোষণা করে, যেখানে বিডিআরের সাবেক ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। ২৭৭ জনকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেওয়া হয়।

সর্বশেষ, চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি আদালত ২৫০ জন বিডিআর সদস্যকে জামিন দেন এবং ২৩ জানুয়ারি ১৭৮ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়।

পিলখানা হত্যাকাণ্ড শুধু সেনাবাহিনীর জন্য নয়, পুরো জাতির জন্যই এক হৃদয়বিদারক অধ্যায়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ ঘটনায় অসংখ্য মেধাবী ও দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাকে হারায়, যা সশস্ত্র বাহিনীর মনোবলে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

শেয়ার করুন

সামরিক কবরস্থানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ তিন বাহিনীর প্রধান

প্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে শহীদ সেনা দিবস

সময় ১০:৪১:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর বনানীতে সামরিক কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এরপর সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় বনানীর সামরিক কবরস্থানে শায়িত পিলখানায় শহীদ সামরিক কর্মকর্তা ও সদস্যদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

শোকাবহ ২৫ ফেব্রুয়ারি, জাতীয় শহীদ সেনা দিবস, যা এবারই প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানায় ভয়াবহ বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা, ১৭ জন বেসামরিক ব্যক্তি এবং আরও কয়েকজন নিরীহ সদস্যসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান।

সরকার ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা এক পরিপত্রে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। উপসচিব তানিয়া আফরোজ স্বাক্ষরিত পরিপত্রে জানানো হয়, দিবসটি ‘গ’ শ্রেণিভুক্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং যথাযথভাবে পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শহীদ সেনা দিবস
শহীদ সেনা দিবস

২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের সামরিক ইতিহাসে এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডি হিসেবে বিবেচিত। সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা এটিকে দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর অন্যতম বড় আঘাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অনেক বিশ্লেষকের মতে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধেও বাংলাদেশ একসঙ্গে এতসংখ্যক সেনা কর্মকর্তাকে হারায়নি।

এই হত্যাকাণ্ডের পর লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়, যা পরে নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকা মহানগর তৃতীয় বিশেষ আদালত মামলার রায় ঘোষণা করে, যেখানে বিডিআরের সাবেক ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। ২৭৭ জনকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেওয়া হয়।

সর্বশেষ, চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি আদালত ২৫০ জন বিডিআর সদস্যকে জামিন দেন এবং ২৩ জানুয়ারি ১৭৮ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়।

পিলখানা হত্যাকাণ্ড শুধু সেনাবাহিনীর জন্য নয়, পুরো জাতির জন্যই এক হৃদয়বিদারক অধ্যায়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ ঘটনায় অসংখ্য মেধাবী ও দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাকে হারায়, যা সশস্ত্র বাহিনীর মনোবলে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।