ঢাকা ০৩:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রথম দিনেই যেসব সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ট্রাম্প

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ১১:১১:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫
  • / 49

ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টদের হোয়াইট হাউজে বসার প্রথম দিনেই সাধারণত নির্বাহী আদেশ জারি করার রীতি রয়েছে। এসব আদেশ আইনের সমান হলেও পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বা আদালত তা বাতিল করতে পারেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিনেই এমন কিছু করবেন যা সবাইকে চমকে দেবে। সোমবার (২০ জানুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই তিনি একাধিক নির্বাহী আদেশ জারি করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। খবর বিবিসি’র।

তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, এসব আদেশে অবৈধ অভিবাসন, জলবায়ু নীতিমালা, বৈচিত্র্য নীতি, গোপন নথি সংক্রান্ত বিষয়সহ আরও নানা ইস্যুর সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টদের হোয়াইট হাউজে বসার প্রথম দিনেই সাধারণত নির্বাহী আদেশ জারি করার রীতি রয়েছে। এসব আদেশ আইনের সমান হলেও পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বা আদালত তা বাতিল করতে পারেন।

তবে ট্রাম্প যা পরিকল্পনা করছেন, তা অভূতপূর্ব হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে আইনি চ্যালেঞ্জও আসতে পারে।

ইমিগ্রেশন ও সীমান্ত

নির্বাসন

ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের “সবচেয়ে বড় নির্বাসন কার্যক্রম” শুরু করবেন।

ফক্স নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি জাতীয় সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন এবং দক্ষিণ সীমান্ত রক্ষায় সামরিক বাহিনী নিয়োগ দিতে পারেন।

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এমন একটি দীর্ঘদিনের নীতি বাতিল করবেন, যার ফলে ফেডারেল অভিবাসন কর্তৃপক্ষ চার্চ ও স্কুলে অভিযান চালানো থেকে বিরত থাকে।

তবে যেকোনো গণনির্বাসন কার্যক্রমে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকবে, যেমন: লজিস্টিক সমস্যা, বিপুল খরচ এবং আইনি বাধা।

‘মেক্সিকোতে থাকো’ নীতি

তিনি তার প্রথম মেয়াদের “মেক্সিকোতে থাকো” নীতি আবার চালু করতে পারেন। এ নীতির অধীনে, মেক্সিকান নয় এরকম প্রায় প্রায় ৭০ হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে বিচারিক শুনানির জন্য মেক্সিকোতে পাঠানো হয়েছিল।

জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অবসান

ট্রাম্প ১৫০ বছর পুরোনো সাংবিধানিক অধিকারকে “হাস্যকর” বলেছেন। এই অধিকারের ফলে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া যে কোনো ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। তিনি এটি প্রথম দিনেই বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছেন।

তবে এটি শুধু নির্বাহী আদেশ দিয়ে করা সম্ভব নয়, কারণ জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব মার্কিন সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।

স্বাস্থ্যগত কারণে সীমান্ত বন্ধ

১৯৪৪ সালের আইন “টাইটেল ৪২” অনুযায়ী, জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের সুযোগ রয়েছে। মহামারির সময় এটি ব্যবহার করা হয়েছিল।

মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে, নতুন প্রশাসন মেক্সিকো সীমান্ত বন্ধের জন্য কোনো রোগকে কারণ হিসেবে দেখানোর পরিকল্পনা করছে।

মাদক চক্র

ট্রাম্প মাদক চক্রগুলোকে “বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে পারেন। এতে তাদের আল-কায়েদা, আইএস এবং হামাসের মতো তালিকায় রাখা হবে।

সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণ

২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পর, ট্রাম্প সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন। কিছু অংশ তৈরি করা হলেও, প্রাচীর নির্মাণ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। তিনি এ কাজ শেষ করার চেষ্টা করতে পারেন।

বাণিজ্য ও অর্থনীতি

শুল্ক

ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করবেন, যা আমেরিকার উৎপাদন খাতকে অগ্রাধিকার দেবে।

প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প বিভিন্ন শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যার মধ্যে চীনের ওপর শুল্কও ছিল। জো বাইডেনও এই শুল্ক ধরে রেখেছিলেন।

তবে এবার তিনি আরও বড় পরিকল্পনা করেছেন। আমদানিকৃত সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক, কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি প্রথম দিন থেকেই এসব শুল্ক কার্যকর করার জন্য নির্বাহী আদেশ জারি করবেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব শুল্ক ভোক্তা পণ্যের দাম বাড়াবে এবং মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি, কিছু দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা বিবেচনা করছে।

ক্রিপ্টো মজুদ

ট্রাম্প ক্রিপ্টোকারেন্সির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং তার নির্বাচনের পর বিটকয়েনের মূল্য ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্প দ্রুত একটি ফেডারেল “বিটকয়েন মজুদ” গড়ে তোলার পরিকল্পনা করবেন। এটি হবে সোনা ও তেলের মজুদের মতো একটি কৌশলগত ভাণ্ডার। তিনি বলেছেন, এটি “সব আমেরিকানের উপকারে একটি স্থায়ী জাতীয় সম্পদ হিসেবে কাজ করবে।”

জলবায়ু ও জ্বালানি

জো বাইডেনের জলবায়ু নীতি বাতিল

বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেন পরিবেশবান্ধব কর্মসংস্থান তৈরি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যা তার অন্যতম বড় সাফল্য বলে মনে করা হয়।

ট্রাম্প সেগুলো বাতিল করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তিনি সমুদ্র ও সরকারি জমিতে তেলের খনন নিষেধাজ্ঞা তুলে দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তার লক্ষ্য, “ড্রিল, বেবি ড্রিল” স্লোগান বাস্তবায়ন করে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি উৎপাদন ও স্বনির্ভরতা বাড়ানো।

তিনি নতুন উইন্ড প্রজেক্ট নিষিদ্ধ করার এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির বাধ্যবাধকতা বাতিল করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে আবারও নাম প্রত্যাহার

২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করেন।

২০২১ সালে বাইডেন প্রথম দিনেই এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনেন। তবে ট্রাম্প আবারও এই আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার পরিকল্পনা করেছেন।

ক্যাপিটল দাঙ্গা

৬ জানুয়ারির ‘বন্দিদের’ মুক্তি

২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে দাঙ্গার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া শতাধিক ব্যক্তি ট্রাম্পের ক্ষমায় মুক্তি পাওয়ার আশায় রয়েছেন। সোমবার ট্রাম্প অফিসে ফিরে আসার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

সিএনএন-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “অনেককেই আমি ক্ষমা করতে আগ্রহী। তবে সবার জন্য এটা বলছি না, কারণ কিছু লোক হয়ত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।”

এই ঘটনায় ১ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এর মধ্যে অন্তত ৬০০ জন ফেডারেল কর্মকর্তাদের ওপর হামলা বা কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত।

গোপন নথি

গতকাল (১৯ জানুয়ারি) শপথ পূর্ববর্তী বিজয় সমাবেশে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি ১৯৬৩ সালে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত গোপন নথি প্রকাশ করবেন। এ ঘটনাটি বহু ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কেন্দ্রবিন্দু।

তিনি আরও বলেছেন, ১৯৬৮ সালে সিনেটর রবার্ট কেনেডি ও নাগরিক অধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত নথিও প্রকাশ করবেন।

পররাষ্ট্রনীতি

ইউক্রেন যুদ্ধ

নির্বাচনি প্রচারণায় ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রথম দিনেই ইউক্রেন সংঘাতের অবসান ঘটাবেন। তবে পরে বলেছেন, হয়ত ছয় মাস সময় লাগবে। তার প্রথম দিনগুলোতে এই যুদ্ধ নিয়ে তিনি কী করবেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

কিউবা ও ভেনেজুয়েলা

ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাইডেনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত, যা কিউবাকে সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক দেশের তালিকা থেকে সরিয়েছে, তা বাতিল করতে পারেন।

এছাড়া তিনি ভেনেজুয়েলার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাও পুনর্বহাল করতে পারেন। তার প্রথম প্রশাসনে এই দুই দেশই তার ক্ষোভের প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল।

বৈচিত্র্য ও লিঙ্গনীতি

ডিইআই (বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি)

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নারী ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সহায়তায় বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছে।

এই নীতিগুলোকে সাধারণত “বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি” (ডিইআই) হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। তবে এগুলো অনেক রক্ষণশীলদের ক্ষোভের কারণ হয়েছে এবং আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এসব নীতি বাতিল করবেন। মেটা, ওয়ালমার্ট এবং অ্যামাজনের মতো বড় কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যেই এসব উদ্যোগ গুটিয়ে নেওয়া শুরু করেছে।

ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এমন স্কুল বা প্রতিষ্ঠানকে সরকারি তহবিল দেওয়া নিষিদ্ধ করতে পারেন, যেগুলো ডিইআই প্রোগ্রাম চালায়। তিনি এমন স্কুলগুলোতে তহবিলও বন্ধ করতে পারেন, যারা “ক্রিটিক্যাল রেস থিওরি” (সিআরটি) পড়ায়।

গর্ভপাত

বেশিরভাগ রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের মতোই ট্রাম্প “মেক্সিকো সিটি নীতি” পুনর্বহাল করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ নীতির অধীনে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে গর্ভপাত সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়ার জন্য ফেডারেল সহায়তা নিষিদ্ধ।

তিনি গর্ভপাত সংক্রান্ত একটি নিয়মও পুনর্বহাল করতে পারেন, যা কম আয়ের পরিবারগুলোর জন্য পরিচালিত টাইটেল এক্স স্বাস্থ্য কর্মসূচির অধীনে থাকা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে গর্ভপাতের কথা উল্লেখ করা নিষিদ্ধ করে।

এ পরিবর্তনের ফলে গর্ভপাত বা এর রেফারেল প্রদানকারী সংস্থাগুলো থেকে কোটি কোটি ডলার তহবিল কেটে নেওয়া হয়েছিল।

ট্রান্সজেন্ডার নারীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ

ট্রাম্প বারবার স্কুল ও স্বাস্থ্যসেবায় “ট্রান্সজেন্ডার উন্মত্ততা” বলে অভিহিত বিষয়গুলোর সমালোচনা করেছেন। তিনি স্পষ্টভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নারীদের খেলাধুলায় ট্রান্সজেন্ডার নারীদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করবেন।

টিকটক

রোববার সকালে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি একটি নির্বাহী আদেশ জারি করবেন, যা চীনা মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার আইনের প্রয়োগ স্থগিত করবে।

তিনি বলেছেন, এই আদেশ টিকটকের জন্য সময় তৈরি করবে, যাতে তারা কোনো মার্কিন অংশীদারকে কোম্পানির ৫০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করতে পারে।

আগে ট্রাম্প টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করেছিলেন। তবে সম্প্রতি তিনি তার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন।

তার দাবি, গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় তার ভিডিওগুলো টিকটকে যে বিলিয়ন ভিউ পেয়েছিল, সেটি তার এই সিদ্ধান্তের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।

শেয়ার করুন

প্রথম দিনেই যেসব সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ট্রাম্প

সময় ১১:১১:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টদের হোয়াইট হাউজে বসার প্রথম দিনেই সাধারণত নির্বাহী আদেশ জারি করার রীতি রয়েছে। এসব আদেশ আইনের সমান হলেও পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বা আদালত তা বাতিল করতে পারেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিনেই এমন কিছু করবেন যা সবাইকে চমকে দেবে। সোমবার (২০ জানুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই তিনি একাধিক নির্বাহী আদেশ জারি করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। খবর বিবিসি’র।

তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, এসব আদেশে অবৈধ অভিবাসন, জলবায়ু নীতিমালা, বৈচিত্র্য নীতি, গোপন নথি সংক্রান্ত বিষয়সহ আরও নানা ইস্যুর সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টদের হোয়াইট হাউজে বসার প্রথম দিনেই সাধারণত নির্বাহী আদেশ জারি করার রীতি রয়েছে। এসব আদেশ আইনের সমান হলেও পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বা আদালত তা বাতিল করতে পারেন।

তবে ট্রাম্প যা পরিকল্পনা করছেন, তা অভূতপূর্ব হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে আইনি চ্যালেঞ্জও আসতে পারে।

ইমিগ্রেশন ও সীমান্ত

নির্বাসন

ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের “সবচেয়ে বড় নির্বাসন কার্যক্রম” শুরু করবেন।

ফক্স নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি জাতীয় সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন এবং দক্ষিণ সীমান্ত রক্ষায় সামরিক বাহিনী নিয়োগ দিতে পারেন।

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এমন একটি দীর্ঘদিনের নীতি বাতিল করবেন, যার ফলে ফেডারেল অভিবাসন কর্তৃপক্ষ চার্চ ও স্কুলে অভিযান চালানো থেকে বিরত থাকে।

তবে যেকোনো গণনির্বাসন কার্যক্রমে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকবে, যেমন: লজিস্টিক সমস্যা, বিপুল খরচ এবং আইনি বাধা।

‘মেক্সিকোতে থাকো’ নীতি

তিনি তার প্রথম মেয়াদের “মেক্সিকোতে থাকো” নীতি আবার চালু করতে পারেন। এ নীতির অধীনে, মেক্সিকান নয় এরকম প্রায় প্রায় ৭০ হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে বিচারিক শুনানির জন্য মেক্সিকোতে পাঠানো হয়েছিল।

জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অবসান

ট্রাম্প ১৫০ বছর পুরোনো সাংবিধানিক অধিকারকে “হাস্যকর” বলেছেন। এই অধিকারের ফলে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া যে কোনো ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। তিনি এটি প্রথম দিনেই বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছেন।

তবে এটি শুধু নির্বাহী আদেশ দিয়ে করা সম্ভব নয়, কারণ জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব মার্কিন সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।

স্বাস্থ্যগত কারণে সীমান্ত বন্ধ

১৯৪৪ সালের আইন “টাইটেল ৪২” অনুযায়ী, জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের সুযোগ রয়েছে। মহামারির সময় এটি ব্যবহার করা হয়েছিল।

মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে, নতুন প্রশাসন মেক্সিকো সীমান্ত বন্ধের জন্য কোনো রোগকে কারণ হিসেবে দেখানোর পরিকল্পনা করছে।

মাদক চক্র

ট্রাম্প মাদক চক্রগুলোকে “বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে পারেন। এতে তাদের আল-কায়েদা, আইএস এবং হামাসের মতো তালিকায় রাখা হবে।

সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণ

২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পর, ট্রাম্প সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন। কিছু অংশ তৈরি করা হলেও, প্রাচীর নির্মাণ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। তিনি এ কাজ শেষ করার চেষ্টা করতে পারেন।

বাণিজ্য ও অর্থনীতি

শুল্ক

ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করবেন, যা আমেরিকার উৎপাদন খাতকে অগ্রাধিকার দেবে।

প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প বিভিন্ন শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যার মধ্যে চীনের ওপর শুল্কও ছিল। জো বাইডেনও এই শুল্ক ধরে রেখেছিলেন।

তবে এবার তিনি আরও বড় পরিকল্পনা করেছেন। আমদানিকৃত সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক, কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি প্রথম দিন থেকেই এসব শুল্ক কার্যকর করার জন্য নির্বাহী আদেশ জারি করবেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব শুল্ক ভোক্তা পণ্যের দাম বাড়াবে এবং মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি, কিছু দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা বিবেচনা করছে।

ক্রিপ্টো মজুদ

ট্রাম্প ক্রিপ্টোকারেন্সির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং তার নির্বাচনের পর বিটকয়েনের মূল্য ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্প দ্রুত একটি ফেডারেল “বিটকয়েন মজুদ” গড়ে তোলার পরিকল্পনা করবেন। এটি হবে সোনা ও তেলের মজুদের মতো একটি কৌশলগত ভাণ্ডার। তিনি বলেছেন, এটি “সব আমেরিকানের উপকারে একটি স্থায়ী জাতীয় সম্পদ হিসেবে কাজ করবে।”

জলবায়ু ও জ্বালানি

জো বাইডেনের জলবায়ু নীতি বাতিল

বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেন পরিবেশবান্ধব কর্মসংস্থান তৈরি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যা তার অন্যতম বড় সাফল্য বলে মনে করা হয়।

ট্রাম্প সেগুলো বাতিল করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তিনি সমুদ্র ও সরকারি জমিতে তেলের খনন নিষেধাজ্ঞা তুলে দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তার লক্ষ্য, “ড্রিল, বেবি ড্রিল” স্লোগান বাস্তবায়ন করে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি উৎপাদন ও স্বনির্ভরতা বাড়ানো।

তিনি নতুন উইন্ড প্রজেক্ট নিষিদ্ধ করার এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির বাধ্যবাধকতা বাতিল করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে আবারও নাম প্রত্যাহার

২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করেন।

২০২১ সালে বাইডেন প্রথম দিনেই এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনেন। তবে ট্রাম্প আবারও এই আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার পরিকল্পনা করেছেন।

ক্যাপিটল দাঙ্গা

৬ জানুয়ারির ‘বন্দিদের’ মুক্তি

২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে দাঙ্গার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া শতাধিক ব্যক্তি ট্রাম্পের ক্ষমায় মুক্তি পাওয়ার আশায় রয়েছেন। সোমবার ট্রাম্প অফিসে ফিরে আসার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

সিএনএন-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “অনেককেই আমি ক্ষমা করতে আগ্রহী। তবে সবার জন্য এটা বলছি না, কারণ কিছু লোক হয়ত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।”

এই ঘটনায় ১ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এর মধ্যে অন্তত ৬০০ জন ফেডারেল কর্মকর্তাদের ওপর হামলা বা কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত।

গোপন নথি

গতকাল (১৯ জানুয়ারি) শপথ পূর্ববর্তী বিজয় সমাবেশে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি ১৯৬৩ সালে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত গোপন নথি প্রকাশ করবেন। এ ঘটনাটি বহু ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কেন্দ্রবিন্দু।

তিনি আরও বলেছেন, ১৯৬৮ সালে সিনেটর রবার্ট কেনেডি ও নাগরিক অধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত নথিও প্রকাশ করবেন।

পররাষ্ট্রনীতি

ইউক্রেন যুদ্ধ

নির্বাচনি প্রচারণায় ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রথম দিনেই ইউক্রেন সংঘাতের অবসান ঘটাবেন। তবে পরে বলেছেন, হয়ত ছয় মাস সময় লাগবে। তার প্রথম দিনগুলোতে এই যুদ্ধ নিয়ে তিনি কী করবেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

কিউবা ও ভেনেজুয়েলা

ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাইডেনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত, যা কিউবাকে সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক দেশের তালিকা থেকে সরিয়েছে, তা বাতিল করতে পারেন।

এছাড়া তিনি ভেনেজুয়েলার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাও পুনর্বহাল করতে পারেন। তার প্রথম প্রশাসনে এই দুই দেশই তার ক্ষোভের প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল।

বৈচিত্র্য ও লিঙ্গনীতি

ডিইআই (বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি)

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নারী ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সহায়তায় বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছে।

এই নীতিগুলোকে সাধারণত “বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি” (ডিইআই) হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। তবে এগুলো অনেক রক্ষণশীলদের ক্ষোভের কারণ হয়েছে এবং আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এসব নীতি বাতিল করবেন। মেটা, ওয়ালমার্ট এবং অ্যামাজনের মতো বড় কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যেই এসব উদ্যোগ গুটিয়ে নেওয়া শুরু করেছে।

ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এমন স্কুল বা প্রতিষ্ঠানকে সরকারি তহবিল দেওয়া নিষিদ্ধ করতে পারেন, যেগুলো ডিইআই প্রোগ্রাম চালায়। তিনি এমন স্কুলগুলোতে তহবিলও বন্ধ করতে পারেন, যারা “ক্রিটিক্যাল রেস থিওরি” (সিআরটি) পড়ায়।

গর্ভপাত

বেশিরভাগ রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের মতোই ট্রাম্প “মেক্সিকো সিটি নীতি” পুনর্বহাল করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ নীতির অধীনে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে গর্ভপাত সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়ার জন্য ফেডারেল সহায়তা নিষিদ্ধ।

তিনি গর্ভপাত সংক্রান্ত একটি নিয়মও পুনর্বহাল করতে পারেন, যা কম আয়ের পরিবারগুলোর জন্য পরিচালিত টাইটেল এক্স স্বাস্থ্য কর্মসূচির অধীনে থাকা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে গর্ভপাতের কথা উল্লেখ করা নিষিদ্ধ করে।

এ পরিবর্তনের ফলে গর্ভপাত বা এর রেফারেল প্রদানকারী সংস্থাগুলো থেকে কোটি কোটি ডলার তহবিল কেটে নেওয়া হয়েছিল।

ট্রান্সজেন্ডার নারীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ

ট্রাম্প বারবার স্কুল ও স্বাস্থ্যসেবায় “ট্রান্সজেন্ডার উন্মত্ততা” বলে অভিহিত বিষয়গুলোর সমালোচনা করেছেন। তিনি স্পষ্টভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নারীদের খেলাধুলায় ট্রান্সজেন্ডার নারীদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করবেন।

টিকটক

রোববার সকালে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি একটি নির্বাহী আদেশ জারি করবেন, যা চীনা মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার আইনের প্রয়োগ স্থগিত করবে।

তিনি বলেছেন, এই আদেশ টিকটকের জন্য সময় তৈরি করবে, যাতে তারা কোনো মার্কিন অংশীদারকে কোম্পানির ৫০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করতে পারে।

আগে ট্রাম্প টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করেছিলেন। তবে সম্প্রতি তিনি তার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন।

তার দাবি, গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় তার ভিডিওগুলো টিকটকে যে বিলিয়ন ভিউ পেয়েছিল, সেটি তার এই সিদ্ধান্তের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।