পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কোটা পদ্ধতি
- সময় ০১:৩৭:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪
- / 245
দেশে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি রাখার পক্ষে ও বিপক্ষে আন্দোলন চলছে। এ নিয়ে আলোচনা যেমনি আছে, আছে সমালোচনাও।
প্রতি দু-এক বছর পরপরই এই ধরনের আন্দোলন দানা বাঁধে। এবং নিকট অতীতে যতগুলো আন্দোলন হয়েছে; তাতে কোটা রাখার পক্ষের শক্তির জয় হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ৫৬ শতাংশ কোটা বিদ্যমান রয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, কোটা থাকার কারণে মেধার মূল্যায়ন কম হচ্ছে। কম যোগ্যতা সম্পন্নদের চাকরি বেশি হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে – এই কোটা পদ্ধতি কি কেবলই বাংলাদেশে বিদ্যমান ? নাকি পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও রয়েছে। আর কেনই বা কোটা সুবিধা রাখা হয়।
প্রথমেই আসি প্রতিবেশী ভারতের কথায়। দেশটিতে সরকারি চাকরি ও উচ্চশিক্ষায় মোট চার ধরনের কোটা বিদ্যমান। এগুলো হলো- ৭.৫ শতাংশ উপজাতি কোটা, ১৫ শতাংশ বিভিন্ন জাত ভিত্তিক কোটা এবং অন্যান্য অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ও বিভিন্ন রাজ্যের সংখ্যালঘুদের জন্য ২৭ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে।
দেশটিতে ৪৯.৫ শতাংশ কোটা থাকলেও সেটির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় একটি নীতিমালাও রয়েছে। একটি পরিবারের মাত্র একজনই কোটা সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে এবং যদি কেউ উচ্চ শিক্ষার জন্য কোটা গ্রহণ করেন; তবে সে চাকরিতে কোটা সুবিধা পাবে না।
পাকিস্তানে কোটা পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে, বিভিন্ন অঞ্চলের জনসংখ্যার ভিত্তিতে। বিভিন্ন অঞ্চলে জনসংখ্যার উপর নির্ভর করে সেই অনুপাতে কোটা সুবিধা প্রদান করা হয়।
দেশটিতে কোটা পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যৌক্তিক পরিমাণ মানুষ যাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। পাকিস্তানে সরকারি চাকরিতে সমগ্র দেশ থেকে মাত্র ৭.৫ শতাংশ চাকরি মেধা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞাতার ভিত্তিতে হয়।
বাকি ৯২.৫ শতাংশ চাকরি বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য সংরক্ষিত। সরকারি চাকরি সবচেয়ে বেশি কোটা বরাদ্দ রয়েছে পাঞ্জাব প্রদেশের জন্য। পাঞ্জাবের ৫০ শতাংশ, সিন্ধ প্রদেশের জন্য ১৯ শতাংশ, খাইবার-পাখতুনওয়ার জন্য রয়েছে ১১.৫ শতাংশ, বালুচিস্তানের জন্য ৬ শতাংশ আর গিলটের জন্য রয়েছে ৪ শতাংশ আর আজাদ কাশ্মীরের জন্য ২ শতাংশ।
উন্নত রাষ্ট্র কানাডায়ও রয়েছে কোটা পদ্ধতি। দেশটিতে মূলত নারী, প্রতিবন্ধী, আদিবাসী এবং সংখ্যালঘুদের জন্য। চারটি শ্রেণীর মোট কত শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা সুস্পষ্টভাবে কানাডার এমপ্লয়মেন্ট ইকুইটি অ্যাক্টে নির্দিষ্ট ভাবে বলা না হলেও সেটা কখনোই মেধার চেয়ে বেশী নয়।
নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশগুলো ২০১২ সালে এক পরিকল্পনা গ্রহণ করে যার মাধ্যমে ২০২০ সালের মধ্যে নন-এক্সিকিউটিভ চাকরিগুলোতে যেন ৪০ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন।
এবার দেখা যাক বাংলাদেশের চিত্র। দেশে সরকারি চাকরি ও উচ্চশিক্ষার জন্য মোট ৫৬ শতাংশ কোটা বিদ্যমান। এগুলো হলো মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, উপজাতি কোটা ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী কোটা ১ শতাংশ।
কোটা বিরোধীদের অভিযোগ, কোটা পদ্ধতি থাকার কারণে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতা নিয়েও অনেকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল হওয়ার সুযোগ পায়। তারা দীর্ঘদিন ধরে কোটা সংখ্যা কমানোর দাবি জানিয়ে আসলেও সরকার তা সংস্কার করেনি। দীর্ঘদিনের দাবি থেকে সেটি ক্ষোভে পরিণত হয়েছে।