ঢাকা ১১:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুলিশ নয়, বিএনপি নেতা ইমরানের নিরাপত্তায় মিরপুরে মেলা!

আব্দুস সালাম মিতুল
  • সময় ০৪:১৫:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 440

মিরপুরে গোলারমাঠে মেলা

রাজধানীর মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী গোলারটেক (ইদগাহ) মাঠে মাসব্যাপী নগর কৃষি ও কুটিরশিল্প বাণিজ্য মেলার আয়োজন চলছে। এখনো পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি না পেলেও মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছেন দারুস সালাম থানা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী পরিচয়ে এম ইমরান হোসেন। ‘রক্সি ফুটবল একাডেমী’ এ মেলার আয়োজক হলে নিজেই নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন বিএনপি নেতা এম ইমরান হোসেন। তবে পুলিশ নয়, বিএনপি নেতার নিরাপত্তায় মেলা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টরা।

বাংলা অ্যাফেয়ার্সের প্রতিবেকদের সাথে নিজের বক্তব্য জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, এ মেলার আয়োজক রক্সি ফুটবল একাডেমী, আমাকে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য তারা আমার নাম ব্যবহার করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকতে আপনি কেন নিরাপত্তা দিবেন, এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দেননি তিনি।

এমনকি, এ মেলা আয়োজন নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে নানা সমালোচনা। অভিযোগ করে স্থানীয়রা বলেছেন, মিরপুরের অন্যতম সেরা মাঠ এটি। থানার পাশে হওয়াতে মাঠের একটি বৃহৎ অংশ পুলিশের জব্দকৃত যানবাহনের জন্য ডাম্পিং অংশ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন মাসব্যাপী মেলার নামে প্যান্ডেল তৈরির কাজও চলছে। খেলাধুলার জন্য যে মাঠ রয়েছে, সেখানে কেন মেলা আয়োজন করতে হবে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন করেছেন তারা।

মঙ্গলবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গোলারমাঠের দক্ষিণ পূর্বপাশে মেলার জন্য প্যান্ডেল তৈরির কাজ খুব জোরেশোরেই চলছে। যদিও সেখানে আয়োজক কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তবে উপস্থিত একাধিক ব্যবসায়ী জানয়েছেন, রক্সি ফুটবল একাডেমীর লোকজন এখন ব্যস্ত আছেন স্টল বরাদ্দ দেয়া এবং অগ্রিম আদায়ের কাজে।

একদিকে মাদকের ভয়াল থাবা অন্যদিকে সুস্থ বিনোদনের অন্তরায় মেলার নামে এমন মাঠ দখল কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না এলাকাবাসী।

মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ডিসি মাকসেদুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, মেলার বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি এখনই অফিসার ইনচার্জকে বলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

থানার ১০০ গজ দূরে এ মাঠের এক দিকটা দখল করা আছে থানার জব্দকৃত ডাম্পিংয়ের বিভিন্ন যানবাহন। পাশে রাস্তার কাজের জন্য শ্রমিকদের থাকার নির্ধারিত টিনশেড বানিয়ে মাঠের পশ্চিম অংশ দখল। বাকি অংশটুকুতে মেলা আয়োজন যেন মরার উপরে খারার ঘা। মেলায় বসানো প্রতিটি স্টল থেকে ইতমধ্যে লক্ষ লক্ষ টাকা জামানত হিসেবে গ্রহণ করার কথা ও শোনা যাচ্ছে।

মিরপুরে গোলারমাঠে মেলা
মিরপুরে গোলারমাঠে মেলা

কয়েকদিন পরপরই শহীদ বুদ্ধিজীবী, কবরস্থান ও এ মাঠে মাদক বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত ও মারামারির ঘটনা শোনা যায়। বিগত সময় গুলোতে এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও ভাবে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও দৃশ্যমান দৃষ্টান্ত না থাকায় অবহেলিতই রয়ে গেছে ঐতিহাসিক গোলারটেক মাঠ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন এই মাঠকে ঘিরে একটি চক্র নিয়মিতভাবে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা সহ অনৈতিক কাজকর্ম চালিয়ে আসছে।

সাফজয়ী অধিনায়ক ও মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমিনুল হকের সাথে বিষয়ে কথা বললে তিনি জানান বিএনপি’র নাম ভাঙিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নিব।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেছেন, বিএনপি নেতা ইমরান তো কোনো জনপ্রতিনিধিও নন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও কেউ নন। তিনি আমাদের নিরাপত্তা দিবেন কিভাবে? দেশের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে এ মেলায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দায়ভার তাকেই নিতে হবে।

স্টল বরাদ্দ পাওয়ার আশায় একজন ব্যবসায়ী গিয়েছিলেন ওয়ার্ড বিএনপি নেতা এম ইমরান হোসেনের কাছে। তিনি বলেছেন, মাসব্যাপী এ মেলায় অংশ নিতে হলে তাকেও খুশি করতে হবে। নিজের মুখে কোনো টাকা তিনি দাবি করেননি। তবে অন্যকে দিয়ে বলানোর চেষ্টা করেছেন। এখনো দরদাম চলছে। এক মাস ব্যবসা করে যে আয় হবে, তার অর্ধেকের বেশি যদি নেতাকে খুশি করতেই খরচ হয়ে যায়, তাহলে এখানে স্টল নিয়ে কোনো লাভ নেই বলেও মনে করেন কাপড় ব্যবসায়ী।

তবে, মিরপুর দারুস সালাম থানা পুলিশের পক্ষ থেকে এ মেলা আয়োজনের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটান কমিশনার বরবার অনুমতি চেয়ে জানানো হয়েছে। এখনো চূড়ান্ত কোনো অনুমোদন না পেলেও বিএনপি নেতা এম ইমরান হোসেনের ভরসায় কাজ এগিয়ে নিয়েছেন অনেক দূর। বিষয়টি নিয়ে খোদ মিরপুর জোনের পুলিশ কর্তারাই নাখোশ বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, মিরপুরের গোলারটেক মাঠে খেলেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন আইচ মোল্লা।

শেয়ার করুন

পুলিশ নয়, বিএনপি নেতা ইমরানের নিরাপত্তায় মিরপুরে মেলা!

সময় ০৪:১৫:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

রাজধানীর মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী গোলারটেক (ইদগাহ) মাঠে মাসব্যাপী নগর কৃষি ও কুটিরশিল্প বাণিজ্য মেলার আয়োজন চলছে। এখনো পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি না পেলেও মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছেন দারুস সালাম থানা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী পরিচয়ে এম ইমরান হোসেন। ‘রক্সি ফুটবল একাডেমী’ এ মেলার আয়োজক হলে নিজেই নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন বিএনপি নেতা এম ইমরান হোসেন। তবে পুলিশ নয়, বিএনপি নেতার নিরাপত্তায় মেলা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টরা।

বাংলা অ্যাফেয়ার্সের প্রতিবেকদের সাথে নিজের বক্তব্য জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, এ মেলার আয়োজক রক্সি ফুটবল একাডেমী, আমাকে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য তারা আমার নাম ব্যবহার করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকতে আপনি কেন নিরাপত্তা দিবেন, এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দেননি তিনি।

এমনকি, এ মেলা আয়োজন নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে নানা সমালোচনা। অভিযোগ করে স্থানীয়রা বলেছেন, মিরপুরের অন্যতম সেরা মাঠ এটি। থানার পাশে হওয়াতে মাঠের একটি বৃহৎ অংশ পুলিশের জব্দকৃত যানবাহনের জন্য ডাম্পিং অংশ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন মাসব্যাপী মেলার নামে প্যান্ডেল তৈরির কাজও চলছে। খেলাধুলার জন্য যে মাঠ রয়েছে, সেখানে কেন মেলা আয়োজন করতে হবে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন করেছেন তারা।

মঙ্গলবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গোলারমাঠের দক্ষিণ পূর্বপাশে মেলার জন্য প্যান্ডেল তৈরির কাজ খুব জোরেশোরেই চলছে। যদিও সেখানে আয়োজক কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তবে উপস্থিত একাধিক ব্যবসায়ী জানয়েছেন, রক্সি ফুটবল একাডেমীর লোকজন এখন ব্যস্ত আছেন স্টল বরাদ্দ দেয়া এবং অগ্রিম আদায়ের কাজে।

একদিকে মাদকের ভয়াল থাবা অন্যদিকে সুস্থ বিনোদনের অন্তরায় মেলার নামে এমন মাঠ দখল কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না এলাকাবাসী।

মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ডিসি মাকসেদুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, মেলার বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি এখনই অফিসার ইনচার্জকে বলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

থানার ১০০ গজ দূরে এ মাঠের এক দিকটা দখল করা আছে থানার জব্দকৃত ডাম্পিংয়ের বিভিন্ন যানবাহন। পাশে রাস্তার কাজের জন্য শ্রমিকদের থাকার নির্ধারিত টিনশেড বানিয়ে মাঠের পশ্চিম অংশ দখল। বাকি অংশটুকুতে মেলা আয়োজন যেন মরার উপরে খারার ঘা। মেলায় বসানো প্রতিটি স্টল থেকে ইতমধ্যে লক্ষ লক্ষ টাকা জামানত হিসেবে গ্রহণ করার কথা ও শোনা যাচ্ছে।

মিরপুরে গোলারমাঠে মেলা
মিরপুরে গোলারমাঠে মেলা

কয়েকদিন পরপরই শহীদ বুদ্ধিজীবী, কবরস্থান ও এ মাঠে মাদক বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত ও মারামারির ঘটনা শোনা যায়। বিগত সময় গুলোতে এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও ভাবে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও দৃশ্যমান দৃষ্টান্ত না থাকায় অবহেলিতই রয়ে গেছে ঐতিহাসিক গোলারটেক মাঠ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন এই মাঠকে ঘিরে একটি চক্র নিয়মিতভাবে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা সহ অনৈতিক কাজকর্ম চালিয়ে আসছে।

সাফজয়ী অধিনায়ক ও মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমিনুল হকের সাথে বিষয়ে কথা বললে তিনি জানান বিএনপি’র নাম ভাঙিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নিব।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেছেন, বিএনপি নেতা ইমরান তো কোনো জনপ্রতিনিধিও নন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও কেউ নন। তিনি আমাদের নিরাপত্তা দিবেন কিভাবে? দেশের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে এ মেলায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দায়ভার তাকেই নিতে হবে।

স্টল বরাদ্দ পাওয়ার আশায় একজন ব্যবসায়ী গিয়েছিলেন ওয়ার্ড বিএনপি নেতা এম ইমরান হোসেনের কাছে। তিনি বলেছেন, মাসব্যাপী এ মেলায় অংশ নিতে হলে তাকেও খুশি করতে হবে। নিজের মুখে কোনো টাকা তিনি দাবি করেননি। তবে অন্যকে দিয়ে বলানোর চেষ্টা করেছেন। এখনো দরদাম চলছে। এক মাস ব্যবসা করে যে আয় হবে, তার অর্ধেকের বেশি যদি নেতাকে খুশি করতেই খরচ হয়ে যায়, তাহলে এখানে স্টল নিয়ে কোনো লাভ নেই বলেও মনে করেন কাপড় ব্যবসায়ী।

তবে, মিরপুর দারুস সালাম থানা পুলিশের পক্ষ থেকে এ মেলা আয়োজনের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটান কমিশনার বরবার অনুমতি চেয়ে জানানো হয়েছে। এখনো চূড়ান্ত কোনো অনুমোদন না পেলেও বিএনপি নেতা এম ইমরান হোসেনের ভরসায় কাজ এগিয়ে নিয়েছেন অনেক দূর। বিষয়টি নিয়ে খোদ মিরপুর জোনের পুলিশ কর্তারাই নাখোশ বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, মিরপুরের গোলারটেক মাঠে খেলেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন আইচ মোল্লা।