পুলিশের অপেশাদার বক্তব্য, বিব্রত উচ্চপদস্থরা!
- সময় ১২:০৯:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪
- / 205
পুলিশ বাহিনীর কতিপয় অফিসারদের অপেশাদার বক্তব্য নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পরেছেন উচ্চপদস্থরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরা ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অপেশাদার কথাবার্তা জনমনে ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব খানের হুংকারের পর এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে টাঙ্গাইলের মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমরানুল কবির( এমরান)’র একটি ভিডিও সামাজিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। ৪৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে তিনি সরাসরি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জয় বাংলা (ব্যাঙ্গাত্নক অর্থে) করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন।
এর আগে চট্টগ্রামের দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব খান বলেছেন, ‘যারা ৫ আগস্টের আগে বিভিন্ন মানুষের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে, মারপিট করেছে, দখল করেছে, তাদের গণধোলাই দিয়ে আমার কাছে নিয়ে আসবেন। তাদের ঠাঁই হবে না। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঠাঁই হবে না। গণধোলাই দিয়ে থানায় সোপর্দ করবেন। আপনাদের এ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ থাকলে ঠ্যাং ভেঙে দিতো। এটা যদি না পারেন, তবে আর কিছু বলার নেই। এখনও তারা কেমনে হাঁটে।’
টাঙ্গাইলের মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমরানুল কবির( এমরান)’র ভিডিওতে তিনি বলেছেন, ‘আমার মধুপুরে যদি কেউ জয় বাংলা স্লোগান দেয়, তাদের ওই স্লোগান ভরে দিবো। কোনো প্রেতাত্নদের শক্তি বা শ্রমিক সংগঠনের কেউ যদি জয় বাংলা স্লোগান মধুুপুরে দেয়, তাহলে সেই স্লোগান দেয়ার অপরাধে তাদের ওখানেই জয় বাংলা করে দিবে।’ মধুপুরের একাধিক মুক্তিযোদ্ধা বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেছেন, মধুপুরের রাজনৈতিক ইতিহাসে কোনো পুলিশ এমন হুংকার দেয়নি। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এমরানুল কবির যে ভাষায় কথা বলেছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তিনি যে অপেশাদার বাক্য বিনিময় করেছেন, তা পুলিশের কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীর কাছে প্রত্যাশিত নয়।
তবে বাংলা অ্যাফেয়ার্সের সাথে আলাপকালে মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমরানুল কবির( এমরান) তার এই বক্তব্যের ব্যাখা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ধনবাড়ীতে সড়ক অবরোধের সময় ‘জয় বাংলা স্লোগান’ দিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করেছিল। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন এমন কথা। তিনি মধুপুরের আইনশৃঙ্খলা সঠিক রাখার জন্যই এমন কথা বলেছেন বলে দাবি এমরানের।
তবে বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেছেন, সারাদেশেই পুলিশের অতিউৎসাহী কর্মকর্তারা অপেশাদার বক্তব্য দিচ্ছেন। এমন কয়েকটি ভিডিও আমাদের কাছেও এসেছে। বাংলাদেশ পুলিশ একটি পেশাদার ও সুশৃঙ্খল বাহিনী। এখানে কারো অপেশাদার বক্তব্য দেয়ার সুযোগ নেই। আপনার কাছ থেকেই মধুপুরের ওসির বিষয়টি শুনলাম। এর আগে চট্টগ্রামের দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চট্টগ্রাম রেঞ্চকে বলা হয়েছে। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানানো হবে। তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন। তিনি আরো বলেন, পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কর্তকর্তাদের আরো সংযত আচরণ করতে হবে। না হলে পুরো বাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন হবে। জনগনের আস্থা অর্জনে পুলিশের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সংবেদনশীল আচরণ করার পরামর্শও দেন ডিআইজি। কারণ কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার জন্য পুরো বাহিনীকেই বিব্রবতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে।
২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা উচ্চবিদ্যালয়ে ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ওসির ওই বক্তব্যের ৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা গেছে, তিনি পোশাক পরা অবস্থাতেই দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকর্মীরা পাশে ও সামনে বসে ছিলেন। বক্তব্যের বিভিন্ন পর্যায়ে সবাই হাততালি দিচ্ছিলেন।
ওসি তার বক্তব্যে বলেন, ‘৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মূল মাস্টারমাইন্ড আমাদের আদর্শ তারেক রহমান। তার নির্দেশে ঢাকাকে ছয়টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। এই ছয় সেক্টরের লোকজনই নতুন করে স্বাধীন করেছে।’
বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওসি বলেন, ‘বিএনপি বৃহত্তর একটি দল। দলমত, গ্রুপ থাকতেই পারে। দল যাকে নির্বাচনের জন্য প্রতীক দেবে, তার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবাই কাজ করবেন।’
ওসি আহসান হাবিব খান বলেন, ‘আমাদের কিছু বিএনপির লোক আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে গেছেন। ওয়ার্ডভিত্তিক একটা লিস্ট আমি চাই। অপরাধ ঘটলে সবকিছু থানার ওসির পক্ষে সম্ভব না। কিছু দায়িত্ব আপনাদেরও নিতে হবে। সে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। যে লোকটা সৎ এবং যোগ্য, তাকে দিলে সুনাম হবে, বিএনপির সুনাম হবে। সেটা করতে হবে। চাঁদাবাজি করা যাবে না।’
ওসি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে গেছে। কিন্তু তার দোসররা আছে। যারা সাধারণ মানুষকে ১৬ বছর টর্চার করেছিল, নির্যাতন করেছিল, মেরে ফেলছে…সে মামলা করতে আগ্রহী। কিন্তু মামলা নিচ্ছে না পুলিশ। আমি তাদের পরামর্শ দেবো। প্রয়োজনে কোর্টে আলাপ করবো, মামলাটি কীভাবে স্টাবলিশড করা যায়।’
বক্তব্যের শুরুতে ওসি বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়ার বীর সন্তান শহীদ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আমি আমার বক্তব্য শুরু করছি।’ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়। ২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর রাতে কার্যকর হয়েছিল তার মৃত্যুদণ্ড।
নিজের দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি আহসান হাবিব খান বলেন, ‘সভায় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ছিলেন। সেখানে অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়ে গেছে। আমি বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। আমরা জনগণের পুলিশ হতে চাই। কিন্তু ভুল হয়ে গেছে।’
ওসির এ ধরনের বক্তব্য অপেশাদার বলে মনে করেন অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মো. রাসেল। তিনি বলেন, ‘ওসির বক্তব্যটি এখনও শুনিনি। যদি আবেগের বশে ওসি এসব কথা বলে থাকেন, তবে সেটি হবে অপেশাদার আচরণ। ওসির বক্তব্য শুনে ও যাচাই করে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’