ঢাকা ০৭:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুতুল ইস্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুদকের চিঠি

বিশেষ প্রতিনিধি
  • সময় ০৪:৪২:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
  • / 11

পুতুল ইস্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুদকের চিঠি

যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভা থেকে টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের পর; এবার বিতর্ক শুরু হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরেক নাতনি সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে নিয়ে। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক।
এবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’র মামলার আসামি হওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পদে থাকার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ পান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। দুদক বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে পুতুলকে নিয়োগ দেন।

এর আগে, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মেয়ে পুতুলের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের ১৪ কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়।

দুদকের মামলার অন্য আসামিরা হলেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান।

দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক বিবেচনায় রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ৬টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার স্বজনরা। যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলাটি করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা এবং আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন করে মা শেখ হাসিনার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থাকা অবস্থায় তার ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রকল্পের বরাদ্দবিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীদের প্রভাবিত করেছেন।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল

এতে আরও বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইনসম্মত পারিশ্রমিক না হওয়া সত্ত্বেও, আইনমতে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হয়ে ও অন্যকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ১৭ নম্বর প্লট সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্লটের বাস্তব দখলসহ রেজিস্ট্রি মূলে প্লট গ্রহণ করেন। প্রতারণামূলক অবৈধ পারিতোষিক দেওয়া ও নেওয়া এবং অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ ও বেআইনি অনুগ্রহ প্রদর্শনের মাধ্যমে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে দণ্ডযোগ্য অপরাধ করেছেন।

অন্য দিকে, পুতুলকে ডব্লিউএইচও এর পদ থেকে অপসারণের পক্ষে একটি পিটিশন ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। গত ১৩ জানুয়ারি বিশ্বের বৃহত্তম পিটিশন প্ল্যাটফর্ম চেঞ্জ ডট ওআরজি-তে পিটিশন ক্যাম্পেইনটি চালু করে মুক্ত, গণতান্ত্রিক এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য কাজ করা মানবাধিকার কর্মীদের প্ল্যাটফর্ম ‘অ্যাক্ট নাও বাংলাদেশ’।

পিটিশনের লিংক শেয়ার করে প্ল্যাটফর্মটি ফেসবুকে লিখেছে, দয়া করে স্বাক্ষর করুন এবং শেয়ার করুন! মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত শাসনব্যবস্থার অধীনে নীতিমালা সমর্থন দেওয়ার কারণে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ডব্লিউএইচও থেকে অপসারণের দাবিতে আমাদের সাথে যোগ দিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য নেতৃত্বে সততা এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য আমাদের আবেদনে স্বাক্ষর করুন।

শেয়ার করুন

পুতুল ইস্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুদকের চিঠি

সময় ০৪:৪২:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভা থেকে টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের পর; এবার বিতর্ক শুরু হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরেক নাতনি সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে নিয়ে। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক।
এবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’র মামলার আসামি হওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পদে থাকার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ পান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। দুদক বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে পুতুলকে নিয়োগ দেন।

এর আগে, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মেয়ে পুতুলের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের ১৪ কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়।

দুদকের মামলার অন্য আসামিরা হলেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান।

দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক বিবেচনায় রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ৬টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার স্বজনরা। যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলাটি করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা এবং আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন করে মা শেখ হাসিনার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থাকা অবস্থায় তার ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রকল্পের বরাদ্দবিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীদের প্রভাবিত করেছেন।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল

এতে আরও বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইনসম্মত পারিশ্রমিক না হওয়া সত্ত্বেও, আইনমতে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হয়ে ও অন্যকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ১৭ নম্বর প্লট সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্লটের বাস্তব দখলসহ রেজিস্ট্রি মূলে প্লট গ্রহণ করেন। প্রতারণামূলক অবৈধ পারিতোষিক দেওয়া ও নেওয়া এবং অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ ও বেআইনি অনুগ্রহ প্রদর্শনের মাধ্যমে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে দণ্ডযোগ্য অপরাধ করেছেন।

অন্য দিকে, পুতুলকে ডব্লিউএইচও এর পদ থেকে অপসারণের পক্ষে একটি পিটিশন ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। গত ১৩ জানুয়ারি বিশ্বের বৃহত্তম পিটিশন প্ল্যাটফর্ম চেঞ্জ ডট ওআরজি-তে পিটিশন ক্যাম্পেইনটি চালু করে মুক্ত, গণতান্ত্রিক এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য কাজ করা মানবাধিকার কর্মীদের প্ল্যাটফর্ম ‘অ্যাক্ট নাও বাংলাদেশ’।

পিটিশনের লিংক শেয়ার করে প্ল্যাটফর্মটি ফেসবুকে লিখেছে, দয়া করে স্বাক্ষর করুন এবং শেয়ার করুন! মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত শাসনব্যবস্থার অধীনে নীতিমালা সমর্থন দেওয়ার কারণে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ডব্লিউএইচও থেকে অপসারণের দাবিতে আমাদের সাথে যোগ দিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য নেতৃত্বে সততা এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য আমাদের আবেদনে স্বাক্ষর করুন।