পুড়িয়ে পুলিশ মারার ‘কৃতিত্ব’ নেয়া বিএনপি নেতা বললেন ‘স্লিপ অব টাং’
- সময় ০৯:১৬:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারি ২০২৫
- / 27
‘সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে যদি ১৫ জন পুলিশ নিহত না হতো, তাহলে বাংলাদেশের পুলিশের মেরুদণ্ড ভাঙতো না। আমরা সিরাজগঞ্জে আন্দোলন করে, বাংলাদেশের পুলিশের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে ২০২৪ সালের আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেছি।’ এসব কথা বলেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নবনিযুক্ত সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইদুর রহমান ওরফে বাচ্চু।
গত বৃহস্পতিবার শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়িতে মিল্ক ভিটার উদ্যোগে প্রাথমিক সমবায় সমিতির সদস্যদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় এই বক্তব্য দেন তিনি। অবশ্য এই বক্তব্য ঘিরে আলোচনা-সমালোচনার পর একে ‘স্লিপ অব টাং’ বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি।
গত ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন চলাকালে এনায়েতপুর থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাকসহ ১৩ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সেইসঙ্গে অস্ত্র লুট ও থানা ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুই পুলিশ সদস্য মারা যান।
বিএনপি নেতা সাইদুর ওই ঘটনায় কৃতিত্ব দাবি করে গত বৃহস্পতিবার শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়িতে মিল্ক ভিটার উদ্যোগে প্রাথমিক সমবায় সমিতির সদস্যদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন। এই বক্তব্যের ভিডিও তিনি তার নিজের ফেসবুকেও পোস্ট করেছিলেন। ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এরপর থেকে ফেসবুকে পোস্ট করা সেই ভিডিও আর দেখা যাচ্ছে না।
ওই ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করে অনেকের মন্তব্য ছিল এ রকম, ‘কারা পুলিশ হত্যা করেছিল, সেটা সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমানের মুখেই শুনুন। অথচ এই পুলিশ হত্যা মামলায় সাবেক মন্ত্রী প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল লতিফ বিশ্বাস এখন জেলে।’
এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার রাতে নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় সাইদুর রহমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার মিল্ক ভিটার এক অনুষ্ঠানে আমার দেওয়া বক্তব্য বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। এরপরও আমি যদি আমার “স্লিপ অব টাং” বা “হঠাৎ মুখ ফসকে” অতিরিক্ত কিছু বের হয়ে থাকে, সেজন্য আমি গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি।’
সাইদুর রহমান আরও বলেন, ‘ওই বক্তব্যে আমি বলেছিলাম, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে ১৫ জন পুলিশ নিহত হয়েছেন। সেই নিহতের মধ্য দিয়ে পুলিশের মেরুদণ্ডটা ভেঙে গেছে। মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়ার কারণে সারা দেশের আন্দোলন ত্বরান্বিত হয়েছে। দুঃখের সঙ্গে বলতে চাই, হীন উদ্দেশ্য সফল করার লক্ষ্যে আমার বক্তব্য বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করেছে। এর তীব্র নিন্দা-প্রতিবাদ জানাই।’
এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৫ পুলিশ সদস্যকে হত্যা, অস্ত্র লুট ও থানা ভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার ২১ দিন পর ২৫ আগস্ট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল মালেক বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের চার নেতাকে আসামি করে মামলা করেন। এই মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ছয় হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে চার কোটি টাকা। এই মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ৫ জানুয়ারি গ্রেফতার দেখিয়ে সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, সমবায়মন্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ বিশ্বাসকে কারাগারে পাঠানো হয়।