ঢাকা ১০:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পালানোর পর নীরবতা ভেঙে যা বললেন বাশার আল আসাদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • সময় ০৯:৩৫:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 33

পালিয়ে যাওয়া সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ

বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। গত ৮ ডিসেম্বর দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যান তিনি। এর এক সপ্তাহ পর নীরবতা ভেঙেছেন। এমনকি একটি বিবৃতিও দিয়েছেন বাশার আল আসাদ।

সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বাশার আল আসাদ বলেন, দামেস্ক পতনের পর তার দেশ ছাড়ার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু পশ্চিম সিরিয়ায় রাশিয়ার ঘাঁটিতে হামলার পর দেশটির সামরিক বাহিনী তাকে সরিয়ে নেয়। সিরিয়ার প্রেসিডেন্সি পরিচালিত টেলিগ্রাম চ্যানেলে তিনি এ কথা জানান। এর মাধ্যমে এক সপ্তাহ পর প্রথমবারের মতো নীরাবতা ভাঙলেন তিনি।

তিনি বলেন, বিদ্রোহীরা রাজধানীতে হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টা পর ৮ ডিসেম্বর সকালে তিনি দামেস্ক ত্যাগ করেন। তিনি রাশিয়ান মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে লাতাকিয়ার উপকূলীয় প্রদেশের হামিমিম বিমান ঘাঁটিতে আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ারও পরিকল্পনা করেছিলেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, সেই রাতে রাশিয়ান ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা হয়। এরপর রাশিয়ানরা তাকে মস্কোতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমি দেশত্যাগ করিনি।

বাশারবিহীন সিরিয়া
বাশারবিহীন সিরিয়া

বাশার বলেন, সংঘর্ষ চলাকালে কোনো সময়েই আমি পদত্যাগ বা আশ্রয় নেওয়ার কথা ভাবিনি। এমনকি কোনো ব্যক্তি বা দলের দ্বারা এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়াই ছিল একমাত্র পদক্ষেপ।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, যখন রাষ্ট্র সন্ত্রাসের কবলে পড়ে এবং অর্থবহ অবদান রাখার ক্ষমতা হারিয়ে যায়, তখন যে কোনো অবস্থান উদ্দেশ্যহীন হয়ে যায়।

এর আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, বাশার প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আশ্রয় চেয়েছিলেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার ভয়ে তা প্রত্যাখ্যান করে আবুধাবি। পরে তার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেন পুতিন। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ কাতারে বিদ্রোহীদের সঙ্গে চুক্তি করে আসাদকে মস্কোতে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেন।

আসাদের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল জালালি জানান, পালানোর রাতেও আসাদ পরিস্থিতি নিয়ে তাদের বিভ্রান্ত করেছিলেন। আগের রাতেও শেষ ফোনালাপে তিনি বলেছিলেন, ‘আগামীকাল দেখা যাবে’।

উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যের এক সময়ের অন্যতম শক্তিশালী দেশ সিরিয়া। তবে আজকের সিরিয়া যুদ্ধ, ধ্বংসযজ্ঞ আর মানবিক সংকটের আরেক নাম। ৫৪ বছরের একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে যখন বাশার আল আসাদ ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালেন, যখন সিরিয়া একটি নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হলো।

১৯৭০ সালে হাফেজ আল আসাদ, বাশারের বাবা, সিরিয়ার ক্ষমতা দখল করেন। তিনি সিরিয়ার বাথ পার্টির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন এবং সামরিক বাহিনীতে তার শক্তিশালী অবস্থানের কারণে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেন। তার শাসন ছিল কেন্দ্রীভূত এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণের প্রতীক। হাফেজ আল আসাদের হাত ধরে সিরিয়ায় বাথ পার্টির শাসনযুগ শুরু হয়, যা একাধারে সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা এবং ভয়াবহ দমননীতির প্রতীক হয়ে ওঠে।

শেয়ার করুন

পালানোর পর নীরবতা ভেঙে যা বললেন বাশার আল আসাদ

সময় ০৯:৩৫:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। গত ৮ ডিসেম্বর দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যান তিনি। এর এক সপ্তাহ পর নীরবতা ভেঙেছেন। এমনকি একটি বিবৃতিও দিয়েছেন বাশার আল আসাদ।

সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বাশার আল আসাদ বলেন, দামেস্ক পতনের পর তার দেশ ছাড়ার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু পশ্চিম সিরিয়ায় রাশিয়ার ঘাঁটিতে হামলার পর দেশটির সামরিক বাহিনী তাকে সরিয়ে নেয়। সিরিয়ার প্রেসিডেন্সি পরিচালিত টেলিগ্রাম চ্যানেলে তিনি এ কথা জানান। এর মাধ্যমে এক সপ্তাহ পর প্রথমবারের মতো নীরাবতা ভাঙলেন তিনি।

তিনি বলেন, বিদ্রোহীরা রাজধানীতে হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টা পর ৮ ডিসেম্বর সকালে তিনি দামেস্ক ত্যাগ করেন। তিনি রাশিয়ান মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে লাতাকিয়ার উপকূলীয় প্রদেশের হামিমিম বিমান ঘাঁটিতে আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ারও পরিকল্পনা করেছিলেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, সেই রাতে রাশিয়ান ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা হয়। এরপর রাশিয়ানরা তাকে মস্কোতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমি দেশত্যাগ করিনি।

বাশারবিহীন সিরিয়া
বাশারবিহীন সিরিয়া

বাশার বলেন, সংঘর্ষ চলাকালে কোনো সময়েই আমি পদত্যাগ বা আশ্রয় নেওয়ার কথা ভাবিনি। এমনকি কোনো ব্যক্তি বা দলের দ্বারা এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়াই ছিল একমাত্র পদক্ষেপ।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, যখন রাষ্ট্র সন্ত্রাসের কবলে পড়ে এবং অর্থবহ অবদান রাখার ক্ষমতা হারিয়ে যায়, তখন যে কোনো অবস্থান উদ্দেশ্যহীন হয়ে যায়।

এর আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, বাশার প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আশ্রয় চেয়েছিলেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার ভয়ে তা প্রত্যাখ্যান করে আবুধাবি। পরে তার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেন পুতিন। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ কাতারে বিদ্রোহীদের সঙ্গে চুক্তি করে আসাদকে মস্কোতে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেন।

আসাদের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল জালালি জানান, পালানোর রাতেও আসাদ পরিস্থিতি নিয়ে তাদের বিভ্রান্ত করেছিলেন। আগের রাতেও শেষ ফোনালাপে তিনি বলেছিলেন, ‘আগামীকাল দেখা যাবে’।

উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যের এক সময়ের অন্যতম শক্তিশালী দেশ সিরিয়া। তবে আজকের সিরিয়া যুদ্ধ, ধ্বংসযজ্ঞ আর মানবিক সংকটের আরেক নাম। ৫৪ বছরের একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে যখন বাশার আল আসাদ ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালেন, যখন সিরিয়া একটি নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হলো।

১৯৭০ সালে হাফেজ আল আসাদ, বাশারের বাবা, সিরিয়ার ক্ষমতা দখল করেন। তিনি সিরিয়ার বাথ পার্টির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন এবং সামরিক বাহিনীতে তার শক্তিশালী অবস্থানের কারণে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেন। তার শাসন ছিল কেন্দ্রীভূত এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণের প্রতীক। হাফেজ আল আসাদের হাত ধরে সিরিয়ায় বাথ পার্টির শাসনযুগ শুরু হয়, যা একাধারে সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা এবং ভয়াবহ দমননীতির প্রতীক হয়ে ওঠে।