ঢাকা ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পারমাণবিক বোমার দিকে হাঁটছে মিয়ানমার ?

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০৮:০৩:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪
  • / 252

সামরিক রাষ্ট্র মিয়ানমার নিয়ে আশপাশের দেশগুলোর উদ্বেগের শেষ নেই। নতুন করে যুক্ত হয়েছে, পারমাণবিক বোমা তৈরির উপাদান ইউরেনিয়াম বেচাকেনার খবর।

অনেকগুলো বিদেশি সংবাদমাধ্যমে বলাবলি হচ্ছে, মিয়ানমারে ইউরেনিয়ামের চোরাই ব্যবসা চলছে। প্রশ্ন উঠেছে, ব্যাপারটা কি ব্যবসাতেই সীমিত; নাকি রাষ্ট্র হিসেবে তাদের এ সংক্রান্ত কোনো কর্মসূচিও আছে ?

সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ বাংলা দৈনিক পত্রিকা ‘প্রথম আলো’-তে এ সংক্রান্ত একটি মতামত প্রকাশ করা হয়েছে। যেটি লিখেছেন ইতিহাস বিষয়ক গবেষক আলতাফ পারভেজ।

ওই মতামত কলামে তিনি দাবি করেন, মিয়ানমারে শান স্টেটসহ কয়েকটি জায়গায় ইউরেনিয়ামের খনি আছে – এ ধরনের একটি খবর বেশ আগে থেকেই প্রচারিত রয়েছে। দেশটিতে যেহেতু স্বর্ণের খনি রয়েছে; তাই সেসব স্বর্ণখনির উপজাত হিসেবেও ইউরেনিয়াম পায় তারা।

খনিজ হিসেবে ইউরেনিয়ামের প্রতি বিশ্বব্যাপী আকর্ষণের কারণ হলো পারমাণবিক বোমায় এর ব্যবহার উপযোগিতার কারণে।

মিয়ানমারের শান স্টেট গেরিলা উপদ্রæত এলাকা। এখানকার যে এলাকায় ইউরেনিয়ামের খনি আছে বলা হচ্ছে, সেটা ‘রেস্টোরেশন কাউন্সিল অব শান স্টেট’ দলের প্রভাবিত এলাকা। বহির্বিশ্বে এরা ‘আরসিএসএস’ নামে পরিচিত। এদের সশস্ত্র শাখার নাম শান স্টেট আর্মিদক্ষিণ।

অতীতে মিয়ানমারে বহুবার পারমাণবিক বোমা তৈরির ‘স্বপ্নে’র কথা শোনা গেছে। মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনী তাতমাদো এর ‘অ্যাটমিক ইউনিট’ বলে একটা বিভাগও ছিল এক সময়। পাশাপাশি এ কাজে উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার সহযোগিতার কথাও শোনা যায়। তবে দেশটির এ রকম কর্মসূচির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নও ছিল বরাবর।

তাছাড়া ২০১৬ সালে অং সান সু চির আমলে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা বন্ধে আন্তর্জাতিক এক উদ্যোগেও শামিল হয় মিয়ানমার। আবার বৈশ্বিক বর্জনের মুখে ২০২২ সালের অক্টোবরে রাশিয়া মিয়ানমারে ‘শান্তিপূর্ণ প্রয়োজনে’ একটা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করারও ঘোষণা দেয়।

স¤প্রতি যেসব বার্মা সেনা কর্মকর্তা মস্কোতে প্রশিক্ষণে গিয়েছেন, তাঁদের কেউ কেউ এ প্রযুক্তি নিয়ে লেখাপড়া করছেন বলেও সংবাদ আছে। এ রকম পটভূমিতে ইউরেনিয়াম বেচাকেনার সা¤প্রতিক খবর চারদিকে বাড়তি উদ্বেগ ছড়িয়েছে।

পারমাণবিক বোমা তৈরির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারকে নজরদারিতে রেখেছে Ñ ২০০৪ সালে প্রথম এ রকম খবর সামনে আসে। ওয়াশিংটনের সন্দেহ, উত্তর কোরিয়া বার্মার জেনারেলদের এ রকম কর্মসূচিতে সহযোগিতা করতে পারে।

২০০৮-এর নভেম্বরে জেনারেল শুয়ে মানের নেতৃত্বে মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনী বা তাতমাদোর ১৭ সদস্যের একটা দল পিয়ংইয়ং ও মাইয়োংঙ সফরে গেলে ওই সন্দেহ আরও বাড়ে। শেষোক্ত এলাকায় পর্বতের নিচে উত্তর কোরিয়া তাদের পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্রভান্ডার জমা রেখেছে বলে প্রচার রয়েছে।

২০১০-এ প্রথম তাতমাদোর একজন জেনারেল স্বীকার করেন, উত্তর কোরিয়া থেকে তারা এই প্রযুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেছেন।

তবে মিয়ানমার সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের পারমাণবিক বোমা তৈরির ইচ্ছা নেই, তবে ‘শান্তিপূর্ণ প্রয়োজনে’ এই প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধনের অধিকার অবশ্যই আছে। এই বিবৃতির পরও এ বিষয়ক সন্দেহ কমেনি আন্তর্জাতিক মহলে।

শেয়ার করুন

পারমাণবিক বোমার দিকে হাঁটছে মিয়ানমার ?

সময় ০৮:০৩:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪

সামরিক রাষ্ট্র মিয়ানমার নিয়ে আশপাশের দেশগুলোর উদ্বেগের শেষ নেই। নতুন করে যুক্ত হয়েছে, পারমাণবিক বোমা তৈরির উপাদান ইউরেনিয়াম বেচাকেনার খবর।

অনেকগুলো বিদেশি সংবাদমাধ্যমে বলাবলি হচ্ছে, মিয়ানমারে ইউরেনিয়ামের চোরাই ব্যবসা চলছে। প্রশ্ন উঠেছে, ব্যাপারটা কি ব্যবসাতেই সীমিত; নাকি রাষ্ট্র হিসেবে তাদের এ সংক্রান্ত কোনো কর্মসূচিও আছে ?

সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ বাংলা দৈনিক পত্রিকা ‘প্রথম আলো’-তে এ সংক্রান্ত একটি মতামত প্রকাশ করা হয়েছে। যেটি লিখেছেন ইতিহাস বিষয়ক গবেষক আলতাফ পারভেজ।

ওই মতামত কলামে তিনি দাবি করেন, মিয়ানমারে শান স্টেটসহ কয়েকটি জায়গায় ইউরেনিয়ামের খনি আছে – এ ধরনের একটি খবর বেশ আগে থেকেই প্রচারিত রয়েছে। দেশটিতে যেহেতু স্বর্ণের খনি রয়েছে; তাই সেসব স্বর্ণখনির উপজাত হিসেবেও ইউরেনিয়াম পায় তারা।

খনিজ হিসেবে ইউরেনিয়ামের প্রতি বিশ্বব্যাপী আকর্ষণের কারণ হলো পারমাণবিক বোমায় এর ব্যবহার উপযোগিতার কারণে।

মিয়ানমারের শান স্টেট গেরিলা উপদ্রæত এলাকা। এখানকার যে এলাকায় ইউরেনিয়ামের খনি আছে বলা হচ্ছে, সেটা ‘রেস্টোরেশন কাউন্সিল অব শান স্টেট’ দলের প্রভাবিত এলাকা। বহির্বিশ্বে এরা ‘আরসিএসএস’ নামে পরিচিত। এদের সশস্ত্র শাখার নাম শান স্টেট আর্মিদক্ষিণ।

অতীতে মিয়ানমারে বহুবার পারমাণবিক বোমা তৈরির ‘স্বপ্নে’র কথা শোনা গেছে। মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনী তাতমাদো এর ‘অ্যাটমিক ইউনিট’ বলে একটা বিভাগও ছিল এক সময়। পাশাপাশি এ কাজে উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার সহযোগিতার কথাও শোনা যায়। তবে দেশটির এ রকম কর্মসূচির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নও ছিল বরাবর।

তাছাড়া ২০১৬ সালে অং সান সু চির আমলে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা বন্ধে আন্তর্জাতিক এক উদ্যোগেও শামিল হয় মিয়ানমার। আবার বৈশ্বিক বর্জনের মুখে ২০২২ সালের অক্টোবরে রাশিয়া মিয়ানমারে ‘শান্তিপূর্ণ প্রয়োজনে’ একটা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করারও ঘোষণা দেয়।

স¤প্রতি যেসব বার্মা সেনা কর্মকর্তা মস্কোতে প্রশিক্ষণে গিয়েছেন, তাঁদের কেউ কেউ এ প্রযুক্তি নিয়ে লেখাপড়া করছেন বলেও সংবাদ আছে। এ রকম পটভূমিতে ইউরেনিয়াম বেচাকেনার সা¤প্রতিক খবর চারদিকে বাড়তি উদ্বেগ ছড়িয়েছে।

পারমাণবিক বোমা তৈরির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারকে নজরদারিতে রেখেছে Ñ ২০০৪ সালে প্রথম এ রকম খবর সামনে আসে। ওয়াশিংটনের সন্দেহ, উত্তর কোরিয়া বার্মার জেনারেলদের এ রকম কর্মসূচিতে সহযোগিতা করতে পারে।

২০০৮-এর নভেম্বরে জেনারেল শুয়ে মানের নেতৃত্বে মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনী বা তাতমাদোর ১৭ সদস্যের একটা দল পিয়ংইয়ং ও মাইয়োংঙ সফরে গেলে ওই সন্দেহ আরও বাড়ে। শেষোক্ত এলাকায় পর্বতের নিচে উত্তর কোরিয়া তাদের পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্রভান্ডার জমা রেখেছে বলে প্রচার রয়েছে।

২০১০-এ প্রথম তাতমাদোর একজন জেনারেল স্বীকার করেন, উত্তর কোরিয়া থেকে তারা এই প্রযুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেছেন।

তবে মিয়ানমার সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের পারমাণবিক বোমা তৈরির ইচ্ছা নেই, তবে ‘শান্তিপূর্ণ প্রয়োজনে’ এই প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধনের অধিকার অবশ্যই আছে। এই বিবৃতির পরও এ বিষয়ক সন্দেহ কমেনি আন্তর্জাতিক মহলে।