পাকিস্তানের কান্না, দূরে সরে যাচ্ছে প্রতিবেশীরা!
- সময় ১১:১৩:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারি ২০২৫
- / 22
রাষ্ট্র হিসাবে পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের পর থেকে কখনোই চূড়ান্ত পর্যায়ের সমৃদ্ধি দেখাতে পারেনি। খোদ নিজ দেশেই ৪৭ পরবর্তী সময় থেকে ২০২৫ এ দাঁড়িয়ে পৃথিবীর বুকে গর্ব করার মতো শুধু পারমাণবিক শক্তির বড়াই করে যাচ্ছে দেশটি।
স্বৈরশাসকদের যাঁতাকলে পিষ্ঠ দেশটির সেনাবাহিনীর ছড়ি ঘুরানোর কারণে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সুযোগ থাকলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে বিবাদ বাঁচিয়ে রেখে সেনারা স্বার্থ উদ্ধারে সিদ্ধহস্ত বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এছাড়া, সম্পদের সুষম বন্টন নীতিতে বিশ্বাসী না হওয়ায়, টিকেয়ে রাখতে পারেনি পূর্ব পাকিস্তানকে। জন্ম নিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের। একাত্তরের পরাজয়ের পর থেকে আজ অবদি পাকিস্তানকে অভিশপ্ত জাতি হিসাবেই জানে বাংলাদেশের মানুষ। তখন পূর্ব পাকিস্তান হারানোর বেদনায় নীল পশ্চিম পাকিস্তানিরা এখন আসেপাশের প্রতিবেশীকে হারাতে বসেছে। মূলত পাকিস্তানের আগ্রাসী নীতি এবং অহংকারের কারণেই প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো দূরে সরে যাচ্ছে। ফলে পাকিস্তানের চোখে কান্নার ভাঁজ।
পাকিস্তান; দক্ষিণ এশিয়ার একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশ। যার ভৌগলিক অবস্থান এটিকে মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগস্থলে নিয়ে এসেছে।
দেশটির উত্তরে চীন, পশ্চিমে আফগানিস্তান ও ইরান, পূর্বে ভারত এবং দক্ষিণে আরব সাগর অবস্থিত। রাজনৈতিকভাবে, পাকিস্তান একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হলেও অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা, দুর্বল অর্থনীতি এবং কূটনৈতিক সংকটের কারণে এটি ক্রমেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কের অবনতি এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে।
ভারতের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে উত্তেজনাপূর্ণ। জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে দ্বন্দ্ব, উগ্রপন্থার মদতদানের অভিযোগ এবং সীমানা লঙ্ঘন- এসব বিষয় নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিশ্বাসের অভাব চরমে পৌছেছে।
২০১৯ সালে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনা কার্যত বন্ধ। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের এই পরিস্থিতি শুধুমাত্র দুই দেশের নয়, গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
আগস্ট ২০২১-এ, তালেবান যখন আফগানিস্তানে ক্ষমতা গ্রহণ করে সেই বিজয় উদযাপন করেছিল পাকিস্তান। কেননা দীর্ঘ সময় ধরে তালেবানদের নিজেদের মাটি ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল পাকিস্তান।
কিন্তু তালেবান সরকারের সাথে সেই ‘বন্ধুত্ব’ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। মাত্র তিন বছরের মাথায় গত ডিসেম্বরে দুই দেশ পাল্টাপাল্টি হামলা চালায়। যাতে অর্ধ শতাধিক সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়।
ডুরান্ড লাইন- আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যকার সীমানা, যা বৃটিশ ঔপনিবেশিক যুগে নির্ধারিত। কিন্তু কোনো আফগান সরকার এটিকে স্বীকৃতি দেয়নি। নব্বইয়ের দশকে তালেবানও ডুরান্ড লাইনকে মেনে নেয়নি।
বর্তমান তালেবান সরকারও পূর্বসূরিদের মতো একই অবস্থান বজায় রেখেছে। এই সীমানা পাখতুন জনগোষ্ঠীকে বিভক্ত করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে একটি আবেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই সীমান্ত নিয়েই নতুন করে দ্বন্ধে জড়িয়েছে দেশ দুটি। পাশাপাশি আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানের পর উজ্জীবিত হয়েছে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) ও। তারা পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও পুলিশের ওপর কয়েক দফায় সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। আর তাদের আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে।
আরেক প্রতিবেশী ইরানের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত সমস্যা এবং নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ বেড়েছে। বেলুচিস্তান অঞ্চলে সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং ইরানের অভিযোগ পাকিস্তান-ইরান সম্পর্কের মধ্যে নতুন দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছে।
ইরান ও চীন অর্থনৈতিক করিডোরের মাধ্যমে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করলেও কার্যত এই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমেনি।
সবশেষ গত নভেম্বরে পাকিস্তান ও ইরানের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি হামলা চালানো হয়। এতে বেশ কয়েকজন নিহতও হয়।
একমাত্র প্রতিবেশী চীনের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক বরাবরই ঘনিষ্ঠ। তবে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের ক্ষোভ এবং সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা চীনের বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিরাপত্তাজনিত সমস্যাগুলি চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যতকেও অনিশ্চিত করে তুলেছে।
এ অবস্থায় ফের বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে পাকিস্তান; যাদের সাথে ১৯৭১ সালে যুদ্ধে হেরেছিল দেশটি। বাংলাদেশের নতুন সরকার ক্ষমতাগ্রহণের পর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে ইসলামাবাদ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের কোন সীমান্ত নেই; তারপরেও ভারতকে চাপে ফেলতে এই কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে বাংলাদেশের জনগনের বড় অংশের আপত্তি রয়েছে।