ঢাকা ০৯:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানের কাছে পাওনা ৪ হাজার মিলিয়ন ডলার!

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০৫:৪১:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪
  • / 255

বাংলাদেশ পাকিস্তান

স্বাধীন বাংলাদেশ যাত্রা শুরু হয়েছিল মাত্র ১৮ ডলার দিয়ে। পাকিস্তানিরা চলে যাওয়ার
আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঢাকা অফিসে এই ডলার রেখে; বাকি সবই তারা নিয়ে যায়।
কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংক নয়; পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স বন্দরনগরী চট্টগ্রামে
তাদের অ্যাকাউন্টে রেখে যায় মাত্র ১১৭ টাকা। এমন ভাবেই সবক্ষেত্রে ফাঁকা করে নিয়ে
যায় পাকিস্তান।

অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশের প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার পাকিস্তানের
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা ছিল, যা এখনো ফেরত আসেনি। ১৯৭০ সালে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ
পূর্ব পাকিস্তান পুর্ণগঠনে বিভিন্ন দাতা সংস্থা এই অর্থ সহায়তা করেছিলো। বলা হয়ে থাকে,
ওই ঘূর্ণিঝড়ে পূর্ব পাকিস্তানের ১০ লাখ লোক মারা গিয়েছিলেন।

স্বাধীনতা পূর্ব এবং স্বাধীনতাকালেও এভাবেই পূর্ব বাংলাকে দাবিয়ে রাখতে নানা পদক্ষেপ
নেয় পাকিস্তান সরকার। পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশ, দীর্ঘ ২৪ বছর পশ্চিম
এভাবেই পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক অর্থনৈতিক নীতির শিকার হয়েছিল।

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পাকিস্তান দুটি অংশে বিভক্ত হয় – পূর্ব ও পশ্চিম
পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ছিল পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৬ শতাংশ,
অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো প্রায়শই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের
অনুকূলে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার বৈদেশিক
বাণিজ্য এবং ঋণ নীতির মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করে। পূর্ব পাকিস্তান মোট
রপ্তানি আয়ের ৫৪.৭ শতাংশ অর্জন করলেও আমদানির ক্ষেত্রে প্রাপ্য বরাদ্দ পায়নি।

বৈদেশিক সাহায্যের ক্ষেত্রেও পূর্ব পাকিস্তানকে ন্যায্য অংশ না দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান তার
উপর একতরফাভাবে সুবিধা নিয়েছিল।

১৯৭০ সালের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, পাকিস্তান সৃষ্টির পর ১৯৪৭
থেকে ১৯৭০ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত তৎকালীন পাকিস্তান বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে
২৪৪৬ কোটি ১১ লাখ ৮ হাজার টাকা অর্জন করে। অন্যদিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান
অর্জন করে ২৮৫৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ সময় পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে পূর্ব
পাকিস্তান আমদানি করে ৪১২ কোটি ৯৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা বেশি অর্জন করেছে।

অথচ ওই সময়ে পশ্চিম পাকিস্তান আমদানি করে ৪৮৬১ কোটি ৬৩ লাখ ৫ হাজার টাকার
পণ্য। পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আমদানি করা হয় মাত্র ২৩৩৫ কোটি ৩৯ লাখ ৫১ হাজার
টাকার পণ্য। সুতরাং বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সমতার ভিত্তিতে হিসাব করা হলে
বৈদেশিক বাণিজ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ২৯৩৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া উচিত
ছিল।

স্বাধীনতার পর মুদ্রামানের ৬৪ শতাংশ হ্রাসের কারণে ১৯৭৪ সালে সেটা দাঁড়ায় ৫০০০
কোটি টাকা। এ হিসাবের সঙ্গে দুটি দেশের উন্নয়ন-ব্যয়সহ মুক্তিযুদ্ধকালীন ক্ষয়ক্ষতি ধরা
হলে পাওনা আরও বেড়ে যায়।

বিশ্বব্যাংকের একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান
থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার স্থানান্তরিত হয়েছে। এর মধ্যে
বড় অংশ ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য, রপ্তানি আয়, কর ও শুল্ক। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান এই বিপুল
পরিমাণ অর্থ থেকে কোনো সুবিধা পায়নি।

শুধু বৈদেশিক বাণিজ্য ক্ষেত্রেই পূর্ব পাকিস্তানের ২৯৩৯ কোটি টাকার পাওনা থাকার কথা।
কিন্তু পাকিস্তান স্বাধীনতার পর থেকেই ক্ষতিপূরণ কিংবা পাওনা সম্পদের জন্য কোনো
ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়নি।

বাংলাদেশের প্রায় ২০০ কোটি ডলার পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা ছিল, যা এখনো
ফেরত আসেনি।

মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানের কাছে প্রাপ্য সম্পদ ও
ক্ষতিপূরণের দাবি তোলে। বাংলাদেশের দাবি ছিল প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা, যা মুক্তিযুদ্ধের
ধ্বংসযজ্ঞ এবং পাকিস্তান আমলে হওয়া বৈষম্যের কারণে পাওনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রচণ্ড
ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। কারখানা, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল এবং সরকারি ভবনসমূহ ধ্বংস
হয়। ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, শিক্ষাবিদ সহ দেশের মেধাবী অংশের বড় একটি অংশ
পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নিধন হয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কাঠামো
ভেঙে পড়ে।

মুক্তিযুদ্ধ শেষে পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে যে পরিমাণ সম্পদ ধ্বংস করেছে এবং সম্পদ
নষ্ট করেছে তার আর্থিক মূল্যও পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনার একটি অংশ
হিসেবে গণ্য করা হয়।

ঢাকায় জাতিসংঘের কার্যক্রম পরিচালনা কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধে সরকারি ও
বেসরকারি খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১.২ বিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশ সরকারের
হিসাবে ১২৪৯ কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে সম্পদ বণ্টন ও ঋণ দায়িত্ব
ভাগ করার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখিত আছে। ১৯৭৮ ও ১৯৮৩ সালের ভিয়েনা
কনভেনশন অনুযায়ী, নতুন রাষ্ট্রের উত্তরাধিকারী হিসেবে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে
সম্পর্কিত সম্পত্তির ওপর অধিকার রাখে।

ভিয়েনা কনভেনশনের ১৭ ও ১৮ ধারায় পূর্ববর্তী রাষ্ট্রের ঋণ ও সম্পদের অধিকার
স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এসব আন্তর্জাতিক কনভেনশনের
আলোকে বাংলাদেশের পাওনা মেটানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

১৯৭৪ সালে ভুট্টোর ঢাকা সফরকালে এই ইস্যুতে আলোচনা শুরু হলেও, তা কোনো
সুনির্দিষ্ট সমাধানে পৌঁছায়নি। বাংলাদেশ সরকারের দাবি ছিল প্রায় ৪ হাজার মিলিয়ন ডলার
সম্পদ ও ক্ষতিপূরণ, যার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যাংক-বিমা, এবং স্থাবর-অস্থাবর
সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ভুট্টো প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, পরে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন।
তবে, সেটা যে সময় ক্ষেপণের কৌশল ছাড়া আর কিছুই ছিল না, তা পরবর্তীতে পরিষ্কার
হয়ে ওঠে।

শেয়ার করুন

পাকিস্তানের কাছে পাওনা ৪ হাজার মিলিয়ন ডলার!

সময় ০৫:৪১:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪

স্বাধীন বাংলাদেশ যাত্রা শুরু হয়েছিল মাত্র ১৮ ডলার দিয়ে। পাকিস্তানিরা চলে যাওয়ার
আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঢাকা অফিসে এই ডলার রেখে; বাকি সবই তারা নিয়ে যায়।
কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংক নয়; পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স বন্দরনগরী চট্টগ্রামে
তাদের অ্যাকাউন্টে রেখে যায় মাত্র ১১৭ টাকা। এমন ভাবেই সবক্ষেত্রে ফাঁকা করে নিয়ে
যায় পাকিস্তান।

অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশের প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার পাকিস্তানের
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা ছিল, যা এখনো ফেরত আসেনি। ১৯৭০ সালে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ
পূর্ব পাকিস্তান পুর্ণগঠনে বিভিন্ন দাতা সংস্থা এই অর্থ সহায়তা করেছিলো। বলা হয়ে থাকে,
ওই ঘূর্ণিঝড়ে পূর্ব পাকিস্তানের ১০ লাখ লোক মারা গিয়েছিলেন।

স্বাধীনতা পূর্ব এবং স্বাধীনতাকালেও এভাবেই পূর্ব বাংলাকে দাবিয়ে রাখতে নানা পদক্ষেপ
নেয় পাকিস্তান সরকার। পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশ, দীর্ঘ ২৪ বছর পশ্চিম
এভাবেই পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক অর্থনৈতিক নীতির শিকার হয়েছিল।

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পাকিস্তান দুটি অংশে বিভক্ত হয় – পূর্ব ও পশ্চিম
পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ছিল পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৬ শতাংশ,
অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো প্রায়শই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের
অনুকূলে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার বৈদেশিক
বাণিজ্য এবং ঋণ নীতির মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করে। পূর্ব পাকিস্তান মোট
রপ্তানি আয়ের ৫৪.৭ শতাংশ অর্জন করলেও আমদানির ক্ষেত্রে প্রাপ্য বরাদ্দ পায়নি।

বৈদেশিক সাহায্যের ক্ষেত্রেও পূর্ব পাকিস্তানকে ন্যায্য অংশ না দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান তার
উপর একতরফাভাবে সুবিধা নিয়েছিল।

১৯৭০ সালের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, পাকিস্তান সৃষ্টির পর ১৯৪৭
থেকে ১৯৭০ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত তৎকালীন পাকিস্তান বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে
২৪৪৬ কোটি ১১ লাখ ৮ হাজার টাকা অর্জন করে। অন্যদিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান
অর্জন করে ২৮৫৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ সময় পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে পূর্ব
পাকিস্তান আমদানি করে ৪১২ কোটি ৯৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা বেশি অর্জন করেছে।

অথচ ওই সময়ে পশ্চিম পাকিস্তান আমদানি করে ৪৮৬১ কোটি ৬৩ লাখ ৫ হাজার টাকার
পণ্য। পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আমদানি করা হয় মাত্র ২৩৩৫ কোটি ৩৯ লাখ ৫১ হাজার
টাকার পণ্য। সুতরাং বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সমতার ভিত্তিতে হিসাব করা হলে
বৈদেশিক বাণিজ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ২৯৩৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া উচিত
ছিল।

স্বাধীনতার পর মুদ্রামানের ৬৪ শতাংশ হ্রাসের কারণে ১৯৭৪ সালে সেটা দাঁড়ায় ৫০০০
কোটি টাকা। এ হিসাবের সঙ্গে দুটি দেশের উন্নয়ন-ব্যয়সহ মুক্তিযুদ্ধকালীন ক্ষয়ক্ষতি ধরা
হলে পাওনা আরও বেড়ে যায়।

বিশ্বব্যাংকের একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান
থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার স্থানান্তরিত হয়েছে। এর মধ্যে
বড় অংশ ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য, রপ্তানি আয়, কর ও শুল্ক। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান এই বিপুল
পরিমাণ অর্থ থেকে কোনো সুবিধা পায়নি।

শুধু বৈদেশিক বাণিজ্য ক্ষেত্রেই পূর্ব পাকিস্তানের ২৯৩৯ কোটি টাকার পাওনা থাকার কথা।
কিন্তু পাকিস্তান স্বাধীনতার পর থেকেই ক্ষতিপূরণ কিংবা পাওনা সম্পদের জন্য কোনো
ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়নি।

বাংলাদেশের প্রায় ২০০ কোটি ডলার পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা ছিল, যা এখনো
ফেরত আসেনি।

মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানের কাছে প্রাপ্য সম্পদ ও
ক্ষতিপূরণের দাবি তোলে। বাংলাদেশের দাবি ছিল প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা, যা মুক্তিযুদ্ধের
ধ্বংসযজ্ঞ এবং পাকিস্তান আমলে হওয়া বৈষম্যের কারণে পাওনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রচণ্ড
ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। কারখানা, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল এবং সরকারি ভবনসমূহ ধ্বংস
হয়। ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, শিক্ষাবিদ সহ দেশের মেধাবী অংশের বড় একটি অংশ
পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নিধন হয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কাঠামো
ভেঙে পড়ে।

মুক্তিযুদ্ধ শেষে পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে যে পরিমাণ সম্পদ ধ্বংস করেছে এবং সম্পদ
নষ্ট করেছে তার আর্থিক মূল্যও পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনার একটি অংশ
হিসেবে গণ্য করা হয়।

ঢাকায় জাতিসংঘের কার্যক্রম পরিচালনা কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধে সরকারি ও
বেসরকারি খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১.২ বিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশ সরকারের
হিসাবে ১২৪৯ কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে সম্পদ বণ্টন ও ঋণ দায়িত্ব
ভাগ করার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখিত আছে। ১৯৭৮ ও ১৯৮৩ সালের ভিয়েনা
কনভেনশন অনুযায়ী, নতুন রাষ্ট্রের উত্তরাধিকারী হিসেবে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে
সম্পর্কিত সম্পত্তির ওপর অধিকার রাখে।

ভিয়েনা কনভেনশনের ১৭ ও ১৮ ধারায় পূর্ববর্তী রাষ্ট্রের ঋণ ও সম্পদের অধিকার
স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এসব আন্তর্জাতিক কনভেনশনের
আলোকে বাংলাদেশের পাওনা মেটানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

১৯৭৪ সালে ভুট্টোর ঢাকা সফরকালে এই ইস্যুতে আলোচনা শুরু হলেও, তা কোনো
সুনির্দিষ্ট সমাধানে পৌঁছায়নি। বাংলাদেশ সরকারের দাবি ছিল প্রায় ৪ হাজার মিলিয়ন ডলার
সম্পদ ও ক্ষতিপূরণ, যার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যাংক-বিমা, এবং স্থাবর-অস্থাবর
সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ভুট্টো প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, পরে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন।
তবে, সেটা যে সময় ক্ষেপণের কৌশল ছাড়া আর কিছুই ছিল না, তা পরবর্তীতে পরিষ্কার
হয়ে ওঠে।