পাঁচ লাখ পর্যটকে মুখরিত সমুদ্রসৈকত | Bangla Affairs
০৩:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাঁচ লাখ পর্যটকে মুখরিত সমুদ্রসৈকত

এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার
  • সময় ০৯:৩৯:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 54

পাঁচ লাখ পর্যটকে মুখরিত সমুদ্রসৈকত

কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই কক্সবাজারে। আজ শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সমুদ্রনগরে  এসেছেন কমপক্ষে পাঁচ লাখ পর্যটক। সাড়ে পাঁচশো হোটেলে গাদাগাদি করে সাড়ে তিন লাখ পর্যটকের ঠাঁই হলে ও অন্তত দেড়লাখ পর্যটক সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ি ও বিভিন্ন হোটেলে হোটেলে রুম পেতে ঘুরছেন হন্য হয়ে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ১ হাজার টাকার রুম ভাড়া এক লাফে ৪/৫ হাজার টাকা নিচ্ছে। পর্যটকদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হোটেল মালিক কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠলে ও পর্যটকদের কেউ প্রতিবাদ করছেন না। কারণ অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে হলে ও তারা রুম পাওয়া এ মূহুর্তে সোনার চাবি পাওয়া বলে মনে করছেন।

হোটেল মালিক নেতা আবদুর রহমান জানিয়েছেন, হোটেল সংকটের অন্যতম কারণ স্কয়ার কোম্পানিসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই ছোট বড় ৩৮০ টি হোটেল বুকিং কনফার্ম করেছেন। যে কারণে রুমের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

শহরের পৌরসভা, সমুদ্র সৈকত ও কক্সবাজার উপজেলা সদর, ঝিলংজার লিংকরোড়,ইনানী পাটোয়ারটেক,দরিয়া নগর হিমছড়ি ও কলাতলীর বিশাল বিস্তীর্ণ অঞ্চল যানজট আর যানজট লেগেছে এ সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেনি ইজিবাইক, টমটম, সিএনজি চালকরা। দ্বিগুণের বেশি ভাড়া আদায় করছে তারা। এমনকি এক কিলোমিটার যেতে সময় লেগে যাচ্ছে এক ঘন্টার ও বেশী। এসব নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের।

সিএনজি অটোরিকশা সমিতির কক্সবাজারস্থ সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রিপন বলেন, এ মূহুর্তে শহরে ও পাশ্ববর্তী পর্যটন এলাকায় ১৫ হাজার ইজিবাইক বা টমটম ও আড়াই হাজার সিএনজি বা অটো এই ছোট শহরে অবস্থান করছে। এর বাইরে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, বাস আছে সহস্রাধিক। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে জায়গা না হওয়ায় ১২ থেকে দেড় হাজার যাত্রীবাহী পার্কিং করেছে সড়কের উপরে সব মিলিয়ে এক ত্রাহি অবস্থা বিরাজ করছে কক্সবাজারে।

কক্সবাজার হোটেল–মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার থেকে হোটেল–মোটেল ও কটেজের শতভাগ কক্ষ বুকিং রয়েছে। আগামী ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ৯৫ ভাগ হোটেল অগ্রিম বুকিং হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকরা বেড়াতে এসেছেন কক্সবাজারে। আগত পর্যটকদের বেশিরভাগ কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়িয়েছেন।এখন অন্যন্য পর্যটন স্পট যেমন,সাফারীপার্ক, ন্যশনাল পার্ক, রামু বুদ্ধ বিহার প্যাগোড়া, দরিয়া নগর, হিমছড়ি,ইনানী পাটোয়ার টেক, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জিরোপয়েন্ট, মার্থিং এর কূপ, মহেশখালী অদিনাথ মন্দির, শুটকি পল্লী, নাইক্ষ্যছড়ি লেক,গয়াল প্রজননকেন্দ্র ও ঘুমধূমের কুমিরচাষ দেখতে পরিবার–পরিজন এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বেড়াতে আসা নারী, পুরুষ শিশু পর্যটকরা মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।সেন্টমার্টিন যাতায়াত বন্ধ থাকায় এসব পর্যন স্পটে বাড়ছে প্রচন্ড চাপ।

পাঁচ লাখ পর্যটকে মুখরিত সমুদ্রসৈকত
পাঁচ লাখ পর্যটকে মুখরিত সমুদ্রসৈকত

এদিকে সমুদ্র সৈকতে গোসল এবং ঘোড়া, বীচবাইক, জেটস্কি চড়ে আনন্দ আর হৈ–হুল্লোড় করছেন পর্যটকের পদচারণায় পুরো সমুদ্র সৈকত কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে।এমনকি পর্যটন জোন কলাতলীতেও তিল ধারণের ঠাঁই নেই।

কলাতলী–মেরিন ড্রাইভ হোটেল–রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি মুকিম খান বলেন, ‘পর্যটন মৌসুম বহু আগে শুরু হলেও সেন্টমার্টিন পর্যটক গমন নিষেধ থাকা সত্বেও পর্যটন ব্যবসা এখন জমজমাট । গত পহেলা ফেব্রুয়ারী থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায় সরকারের নির্বাহী আদেশে।

কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, এখন কক্সবাজার পর্যটকদের দখলে। পাঁচ লাখ পর্যটক যদি গড়ে নূন্যতম পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে তা হলে কক্সবাজার পর্যটন ব্যবসায়ীদের আয় দৈনিক ২৫ কোটি টাকা। তাই এ খাতের আয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অটোরিকশা শ্রমিক ও হোটেল ব্যবসায়ীদের পকেটে যাচ্ছে।

পর্যটক ছাড়া কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা অচল।তাদের প্রতি আমাদের শতভাগ যত্নবান থাকতে হবে।এ সময় স্থানীয়দের যাতায়াতসহ নানা কারণে সাময়িক অসুবিধা হতে পারে। এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।

কক্সবাজার হোটেল–মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, ‘বহু চাহিদা থাকলেও সেন্টমার্টিনের আকর্ষণ পর্যটকদের কাছে অন্য রকম। এ কারণে আগ্রহ থাকলেও অনেক পর্যটক এবছর কক্সবাজারে আসছেন না। তবে ভারতে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ বন্ধ থাকায় সেই শূন্যতা অনেকটা পূরণ হয়েছে। ভারত যেতে না পেরে অনেকে কক্সবাজারে বেড়াতে আসছেন।’

এদিকে বর্তমানে কক্সবাজার আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর নিরাপত্তা জোর রাখা হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা ও থানা পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বলয় রাখা হয়েছে।

কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটক হুমাইরা রশীদ বলেন, আমরা বন্ধুরা মিলে কক্সবাজারে ভ্রমণে এসেছি। রুম বুকিং না দিয়ে এখানে এসে বিপদে পড়েছি। কোনও রুম পাচ্ছি না। কটেজে কিছু রুম খালি আছে এগুলো মানসম্মত নয় এবং দামও বেশি।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক পারভেজ চৌধুরী বলেন, সন্তানদের বিনোদন দিতে কক্সবাজারে আসা। তাই তাদের সময় দিতে পরিবার নিয়ে এসেছি। সমুদ্র পাড়ে এসে এক সঙ্গে এত মানুষ দেখে ভালো লাগছে।তবে সন্ধ্যার পর সবক্ষেত্রে শুনসান নিরবতা বাচ্চাদের বিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় তারা কিছুটা হলে ও হতাশ।

আজ (শুক্রবার ) সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সৈকতের কলাতলী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট ও লাবনী পয়েন্টে পর্যটককে ভরা। শুধু এই তিন পয়েন্ট ছাড়া অন্য পয়েন্টগুলোতে চোখে পড়ার মত ভিড় ছিল। আগত পর্যটকরা বালিয়াড়িতে দাঁড়িয়ে ঘোড়ায় চড়ে, ওয়াটার বাইক ও বিচ বাইকে চড়ে সমুদ্র দর্শনে মেতেছেন। কিছু পর্যটক নোনা জলে স্নান করতে নেমে আনন্দ উপভোগ করছেন।এর বাইরে শিল্প ও বানিজ্য মেলা চলছে সেখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে চলে যাই ঝাউতলায় রেডিয়েন্ট ফিশ এ্যকোরিয়ামে।সেখানে সাগর তলের রহস্যদেখে অনেক ভাল লেগেছে।

কক্সবাজার পর্যটক সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর হোসাইন বলেন, লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত কক্সবাজার। আগত পর্যটকদের সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত। কোনও পর্যটক হয়রানি অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।

টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিওনের পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের টহল আরও দুইগুণ বাড়ানো হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি কক্সবাজার জেলা পুলিশও কাজ করছে বলে জানান সুপার মো. রহমত উল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও র‌্যাবসহ সব আইন–শৃঙ্খলাবাহিনী সমন্বিতভাবে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে। সেই সঙ্গে সাদা পোশাকে রাতদিন গোয়েন্দা নজরদারিও রাখা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটকরা কক্সবাজারের অতিথি তাদের যথাযত সম্মান, সমাদর করা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ পর্যটন ব্যবসায়ীদের নৈতিক দায়িত্ব। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মাঠে রয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তারপর ও ছিনতাইকারীসহ অতি মোনাফালোভী ব্যবসায়ীদের সনাক্ত করতে মাঠে রয়েছে পর্যাপ্ত গোয়েন্দা নজরদারি। অপরাধী যতবড় শক্তিশালী হোক শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তিনি পর্যটকদের উদ্দেশ্যে বলেন,আপনাদের অভিযোগ ছোট বা বড় হোক যে কোন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের সহযোগিতা নিন

শেয়ার করুন

পাঁচ লাখ পর্যটকে মুখরিত সমুদ্রসৈকত

সময় ০৯:৩৯:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই কক্সবাজারে। আজ শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সমুদ্রনগরে  এসেছেন কমপক্ষে পাঁচ লাখ পর্যটক। সাড়ে পাঁচশো হোটেলে গাদাগাদি করে সাড়ে তিন লাখ পর্যটকের ঠাঁই হলে ও অন্তত দেড়লাখ পর্যটক সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ি ও বিভিন্ন হোটেলে হোটেলে রুম পেতে ঘুরছেন হন্য হয়ে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ১ হাজার টাকার রুম ভাড়া এক লাফে ৪/৫ হাজার টাকা নিচ্ছে। পর্যটকদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হোটেল মালিক কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠলে ও পর্যটকদের কেউ প্রতিবাদ করছেন না। কারণ অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে হলে ও তারা রুম পাওয়া এ মূহুর্তে সোনার চাবি পাওয়া বলে মনে করছেন।

হোটেল মালিক নেতা আবদুর রহমান জানিয়েছেন, হোটেল সংকটের অন্যতম কারণ স্কয়ার কোম্পানিসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই ছোট বড় ৩৮০ টি হোটেল বুকিং কনফার্ম করেছেন। যে কারণে রুমের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

শহরের পৌরসভা, সমুদ্র সৈকত ও কক্সবাজার উপজেলা সদর, ঝিলংজার লিংকরোড়,ইনানী পাটোয়ারটেক,দরিয়া নগর হিমছড়ি ও কলাতলীর বিশাল বিস্তীর্ণ অঞ্চল যানজট আর যানজট লেগেছে এ সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেনি ইজিবাইক, টমটম, সিএনজি চালকরা। দ্বিগুণের বেশি ভাড়া আদায় করছে তারা। এমনকি এক কিলোমিটার যেতে সময় লেগে যাচ্ছে এক ঘন্টার ও বেশী। এসব নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের।

সিএনজি অটোরিকশা সমিতির কক্সবাজারস্থ সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রিপন বলেন, এ মূহুর্তে শহরে ও পাশ্ববর্তী পর্যটন এলাকায় ১৫ হাজার ইজিবাইক বা টমটম ও আড়াই হাজার সিএনজি বা অটো এই ছোট শহরে অবস্থান করছে। এর বাইরে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, বাস আছে সহস্রাধিক। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে জায়গা না হওয়ায় ১২ থেকে দেড় হাজার যাত্রীবাহী পার্কিং করেছে সড়কের উপরে সব মিলিয়ে এক ত্রাহি অবস্থা বিরাজ করছে কক্সবাজারে।

কক্সবাজার হোটেল–মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার থেকে হোটেল–মোটেল ও কটেজের শতভাগ কক্ষ বুকিং রয়েছে। আগামী ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ৯৫ ভাগ হোটেল অগ্রিম বুকিং হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকরা বেড়াতে এসেছেন কক্সবাজারে। আগত পর্যটকদের বেশিরভাগ কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়িয়েছেন।এখন অন্যন্য পর্যটন স্পট যেমন,সাফারীপার্ক, ন্যশনাল পার্ক, রামু বুদ্ধ বিহার প্যাগোড়া, দরিয়া নগর, হিমছড়ি,ইনানী পাটোয়ার টেক, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জিরোপয়েন্ট, মার্থিং এর কূপ, মহেশখালী অদিনাথ মন্দির, শুটকি পল্লী, নাইক্ষ্যছড়ি লেক,গয়াল প্রজননকেন্দ্র ও ঘুমধূমের কুমিরচাষ দেখতে পরিবার–পরিজন এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বেড়াতে আসা নারী, পুরুষ শিশু পর্যটকরা মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।সেন্টমার্টিন যাতায়াত বন্ধ থাকায় এসব পর্যন স্পটে বাড়ছে প্রচন্ড চাপ।

পাঁচ লাখ পর্যটকে মুখরিত সমুদ্রসৈকত
পাঁচ লাখ পর্যটকে মুখরিত সমুদ্রসৈকত

এদিকে সমুদ্র সৈকতে গোসল এবং ঘোড়া, বীচবাইক, জেটস্কি চড়ে আনন্দ আর হৈ–হুল্লোড় করছেন পর্যটকের পদচারণায় পুরো সমুদ্র সৈকত কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে।এমনকি পর্যটন জোন কলাতলীতেও তিল ধারণের ঠাঁই নেই।

কলাতলী–মেরিন ড্রাইভ হোটেল–রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি মুকিম খান বলেন, ‘পর্যটন মৌসুম বহু আগে শুরু হলেও সেন্টমার্টিন পর্যটক গমন নিষেধ থাকা সত্বেও পর্যটন ব্যবসা এখন জমজমাট । গত পহেলা ফেব্রুয়ারী থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায় সরকারের নির্বাহী আদেশে।

কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, এখন কক্সবাজার পর্যটকদের দখলে। পাঁচ লাখ পর্যটক যদি গড়ে নূন্যতম পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে তা হলে কক্সবাজার পর্যটন ব্যবসায়ীদের আয় দৈনিক ২৫ কোটি টাকা। তাই এ খাতের আয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অটোরিকশা শ্রমিক ও হোটেল ব্যবসায়ীদের পকেটে যাচ্ছে।

পর্যটক ছাড়া কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা অচল।তাদের প্রতি আমাদের শতভাগ যত্নবান থাকতে হবে।এ সময় স্থানীয়দের যাতায়াতসহ নানা কারণে সাময়িক অসুবিধা হতে পারে। এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।

কক্সবাজার হোটেল–মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, ‘বহু চাহিদা থাকলেও সেন্টমার্টিনের আকর্ষণ পর্যটকদের কাছে অন্য রকম। এ কারণে আগ্রহ থাকলেও অনেক পর্যটক এবছর কক্সবাজারে আসছেন না। তবে ভারতে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ বন্ধ থাকায় সেই শূন্যতা অনেকটা পূরণ হয়েছে। ভারত যেতে না পেরে অনেকে কক্সবাজারে বেড়াতে আসছেন।’

এদিকে বর্তমানে কক্সবাজার আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর নিরাপত্তা জোর রাখা হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা ও থানা পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বলয় রাখা হয়েছে।

কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটক হুমাইরা রশীদ বলেন, আমরা বন্ধুরা মিলে কক্সবাজারে ভ্রমণে এসেছি। রুম বুকিং না দিয়ে এখানে এসে বিপদে পড়েছি। কোনও রুম পাচ্ছি না। কটেজে কিছু রুম খালি আছে এগুলো মানসম্মত নয় এবং দামও বেশি।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক পারভেজ চৌধুরী বলেন, সন্তানদের বিনোদন দিতে কক্সবাজারে আসা। তাই তাদের সময় দিতে পরিবার নিয়ে এসেছি। সমুদ্র পাড়ে এসে এক সঙ্গে এত মানুষ দেখে ভালো লাগছে।তবে সন্ধ্যার পর সবক্ষেত্রে শুনসান নিরবতা বাচ্চাদের বিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় তারা কিছুটা হলে ও হতাশ।

আজ (শুক্রবার ) সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সৈকতের কলাতলী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট ও লাবনী পয়েন্টে পর্যটককে ভরা। শুধু এই তিন পয়েন্ট ছাড়া অন্য পয়েন্টগুলোতে চোখে পড়ার মত ভিড় ছিল। আগত পর্যটকরা বালিয়াড়িতে দাঁড়িয়ে ঘোড়ায় চড়ে, ওয়াটার বাইক ও বিচ বাইকে চড়ে সমুদ্র দর্শনে মেতেছেন। কিছু পর্যটক নোনা জলে স্নান করতে নেমে আনন্দ উপভোগ করছেন।এর বাইরে শিল্প ও বানিজ্য মেলা চলছে সেখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে চলে যাই ঝাউতলায় রেডিয়েন্ট ফিশ এ্যকোরিয়ামে।সেখানে সাগর তলের রহস্যদেখে অনেক ভাল লেগেছে।

কক্সবাজার পর্যটক সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর হোসাইন বলেন, লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত কক্সবাজার। আগত পর্যটকদের সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত। কোনও পর্যটক হয়রানি অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।

টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিওনের পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের টহল আরও দুইগুণ বাড়ানো হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি কক্সবাজার জেলা পুলিশও কাজ করছে বলে জানান সুপার মো. রহমত উল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও র‌্যাবসহ সব আইন–শৃঙ্খলাবাহিনী সমন্বিতভাবে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে। সেই সঙ্গে সাদা পোশাকে রাতদিন গোয়েন্দা নজরদারিও রাখা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটকরা কক্সবাজারের অতিথি তাদের যথাযত সম্মান, সমাদর করা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ পর্যটন ব্যবসায়ীদের নৈতিক দায়িত্ব। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মাঠে রয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তারপর ও ছিনতাইকারীসহ অতি মোনাফালোভী ব্যবসায়ীদের সনাক্ত করতে মাঠে রয়েছে পর্যাপ্ত গোয়েন্দা নজরদারি। অপরাধী যতবড় শক্তিশালী হোক শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তিনি পর্যটকদের উদ্দেশ্যে বলেন,আপনাদের অভিযোগ ছোট বা বড় হোক যে কোন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের সহযোগিতা নিন