সুস্বাস্থ্যের সরল পথ:-০১
পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে প্রাকৃতিক চিকিৎসা

- সময় ০৪:৪১:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫
- / 61
আধুনিক সভ্যতা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে গেলেও, মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি দিন দিন বেড়েই চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, রাসায়নিক ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং কৃত্রিম জীবনধারার কারণে নতুন নতুন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। ইসলামিক জীবনব্যবস্থায় স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য যে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা অনুসরণ করলে আমরা সহজেই সুস্থতা অর্জন করতে পারি।
সুস্থতা সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের দিকনির্দেশনা
ইসলাম শুধু আত্মার নয়, শরীরেরও কল্যাণ নিশ্চিত করেছে। মহান আল্লাহ বলেন। “তিনিই সেই সত্তা, যিনি আমাকে খাওয়ান এবং পানি পান করান। আর আমি যখন অসুস্থ হই, তখন তিনিই আমাকে সুস্থ করেন।” (সূরা আশ-শু’আরা: ৭৯-৮০)
রাসুলুল্লাহ (সা.) সুস্থ থাকার জন্য কিছু বিশেষ অভ্যাস ও খাদ্য গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন, যা আধুনিক বিজ্ঞানও স্বীকার করে। তিনি বলেছেন, “তোমাদের শরীরেরও তোমাদের ওপর হক আছে।” (সহিহ বুখারি)
অপর এক হাদিসে হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্নিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন মহান আল্লাহ তায়ালা এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার কোন চিগিৎসা নেই। (সহী বোখারী-৫২৭৬) এ থেকে বোঝা যায়, সুস্থ জীবনধারা বজায় রাখা শুধু প্রয়োজনীয় নয়, বরং এটি ইসলামের শিক্ষা ও আমানত।
প্রাকৃতিক খাদ্য গ্রহণের নির্দেশনা
আজকের যুগে ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ কুরআন ও হাদিসে বারবার বিশুদ্ধ ও প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেন, “হে মানুষ! তোমরা পৃথিবীর বৈধ হালাল ও পবিত্র বস্তু আহার কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরন করো না, নিসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা বাকারা: ১৬৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও বিশুদ্ধ ও প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণ করতেন, যেমন মধু: “মধুতে মানুষের জন্য আরোগ্য রয়েছে।” (সূরা নাহল: ৬৯)। কালোজিরা: “কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের চিকিৎসা।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৮৭)। যয়তুন তেল: “এটি খাবার ও ঔষধ উভয়ই।” (তিরমিজি, হাদিস: ১৮৫২) খেজুর: “যে ব্যক্তি সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, তাকে সারা দিন কোনো বিষ ও জাদু ক্ষতি করতে পারবে না।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৬৮)

বিশুদ্ধ পানি ও পানির গুরুত্ব
পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করা সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “উন্নত চিকিৎসার অন্যতম উপায় হলো প্রচুর পানি পান করা।” আজকের যুগে বিশুদ্ধ পানি দূষিত হওয়ার কারণে পেটের রোগ, কিডনির সমস্যা ও ত্বকের নানা রোগ বেড়ে গেছে। তাই ইসলাম পানির বিশুদ্ধতা রক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।
পরিচ্ছন্নতা ও রোগ প্রতিরোধ
ইসলামে পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অর্ধেক বলা হয়েছে। “নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিদের ভালোবাসেন।” (সূরা বাকারা: ২২২)
পরিচ্ছন্নতার কিছু সুন্নত পদ্ধতি: ওযু ও গোসল করা, দাঁত ও মুখ পরিষ্কার রাখা (মিসওয়াক করা), নখ ও চুল কেটে পরিচ্ছন্ন থাকা, ঘরবাড়ি ও চারপাশ পরিস্কার রাখা এগুলো মেনে চললে সংক্রামক রোগ থেকে অনেকাংশে মুক্ত থাকা যায়।
রোজা ও সুস্থতা, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, নিয়মিত উপবাস বা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। অথচ ইসলাম ১৪০০ বছর আগেই রোজার মাধ্যমে সুস্থ থাকার শিক্ষা দিয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “রোজা রাখো, তাহলে সুস্থ থাকবে।” (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৪৫১) রোজার উপকারিতা: শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর হয়, মেটাবলিজম উন্নত হয়, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।

মানসিক সুস্থতার জন্য নামাজ ও ধ্যান
আধুনিক জীবনের দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ ও মানসিক অস্থিরতার জন্য ইসলাম এক দুর্দান্ত সমাধান দিয়েছে নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও ধ্যান (তাসবীহ)।
মহান আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণেই অন্তর শান্তি পায়।” (সূরা রাদ: ২৮)। মানসিক শান্তির জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “নামাজ আমার চোখের শীতলতা।” (নাসাঈ, হাদিস: ৩৯৪০) আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত নামাজ ও সেজদা করলে মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও ডোপামিন হরমোন বৃদ্ধি পায়, যা দুশ্চিন্তা কমায়।
আধুনিক ও প্রাচীন চিকিৎসার সমন্বয়
আজকের যুগে বিজ্ঞান ও ইসলামিক চিকিৎসা পদ্ধতির সমন্বয় করলে সবচেয়ে কার্যকর সমাধান পাওয়া সম্ভব। প্রাকৃতিক ওষুধ ও খাদ্য গ্রহণ (মধু, কালোজিরা, হারবাল চা ইত্যাদি), পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, (নিয়মিত ওযু, গোসল, পোশাক পরিষ্কার রাখা), প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ (বিশুদ্ধ পানি পান, হালাল খাবার গ্রহণ, রোজা পালন), জরুরি প্রয়োজনে আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণ (যেমন: অস্ত্রোপচার, জীবনরক্ষাকারী ওষুধ)
সুস্থতা ও আরোগ্য মহান আল্লাহর দান, তবে তিনি আমাদের জন্য কিছু নিয়ম নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যা অনুসরণ করলে আমরা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারি। আধুনিক চিকিৎসার সীমাবদ্ধতা ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে আমাদের উচিত প্রাকৃতিক ও ইসলামী পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়া।
“তাই সুস্থতার সরল পথ হলো ইসলামিক জীবনযাত্রা ও প্রাকৃতিক চিকিৎসার সমন্বয়।
(চলবে…)