ঢাকা ০৯:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পপির পৈত্রিক সম্পত্তির বিরোধের নেপথ্যে এক ‘খলনায়ক’

বিশেষ প্রতিনিধি
  • সময় ০৯:১২:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 433

পপির পৈত্রিক সম্পত্তির বিরোধের নেপথ্যে এক ‘খলনায়ক’

চিত্রনাট্যে খলনায়ক এবং চিত্রনায়িকার দ্বন্ধ যেন আজন্ম; সেই খলনায়কের তাড়া থেকে ব্যক্তি জীবনেও বাঁচতে পারছে না ঢাকাইয়া সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। এবারে যে খলনায়ক চিত্রনায়িকাকে দৌড়ের উপর রেখেছেন তিনি তার পরিবারেই বড় হয়েছেন।
পপির দাবি, তার এক পালিত ভাই রয়েছে; যিনি কিনা তার ভাই ও বোনদের মধ্যে দ্বন্ধ বাঁধিয়ে দিয়েছেন। পালিত ওই ভাইয়ের নাম মিয়া আরাফাত হোসেন সামীর। ২০০০ সালে সামীরকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসেন মা মরিয়াম বেগম মেরী। এরপর থেকে পরিবারের সাথে কখনো খুলনায় আবার কখনো ঢাকায় বেড়ে উঠেছেন এই সামীর।

পপি বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে জানান, সামীর তার আপন ভাই না, সে তার বাসা থেকে ২০১৯ এর রমজানের সময় ২০ লাখ টাকা চুরিও করেছিল। এ বিষয়ে তিনি রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে তিন লাখ টাকা ফেরত দিয়েছিল। এরপর তাকে হত্যা করার জন্যও সামীর চেষ্টা চালিয়েছে। এ বিষয়গুলো তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীকে জানান।

তিনি আরো বলেন, পালিত ছোট ভাই হিসাবে এতদিন ক্ষমা করেছি। এখন আর সুযোগ নেই। খেয়ালির সঙ্গে মিলেই এখন খুলনার সব সম্পত্তি নেয়ার পাঁয়তারা করছে সামীর।
সম্প্রতি এই চিত্রনায়িকা স্বামী সন্তান নিয়ে প্রকাশ্যে এসেছেন। তার স্বামী ব্যবসায়ী আদনান উদ্দিন কামালকে নিয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি খুলনা গিয়েছিলেন বিদ্যুৎ ও পানির বিল সংক্রান্ত একটি শুনানিতে অংশ নিতে।

ওই দিন খুলনায় তাদের পারিবারিক একটি সম্পত্তি নিয়ে ছোট বোন ফিরোজা পারভীন ও ভাই মিয়া মুরাদ হোসেন দিপুর বিরোধের বিষয়টি সামনে আসে। ওয়াসা ভবনে দুই বোনের দেখাদেখি হলে কোনো কথা হয়নি। এমনটাই দাবি করেছেন সাদিকা পারভীন পপির ছোট বোন ফিরোজা পারভীন খেয়ালী নিজেই।

যদিও ওইদিন রাত সাড়ে আটটার মধ্যে ছোট ভাই মিয়া মিয়া মুরাদ হোসেন দিপুকে সঙ্গে নিয়ে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন ফিরোজা পারভীন।
সাধারণ ডায়েরিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে খুলনার সোনাঙাঙ্গায় শিববাড়ি এলাকায় তার ওপর আক্রমণ চালিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে চারজন। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
সোমবার দুপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আদনান উদ্দিন কামাল, সাদিকা পারভীন পপি, কল্লোল মজুমদার, ড্রাইভার শিপন মিলে আমার ওপর আক্রমণ করে। এরপর তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আমার মা-ভাইসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকির পাশাপশি মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। ফিরোজা দাবি করেন, মারামারি সিসিটিভির ফুটেজও তার কাছে রয়েছে।
সাধারণ ডায়েরী করার পর তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সোনাডাঙ্গা থানার এস আই (নিরস্ত্র) মো.গোলাম মোস্তফাকে। এ বিষয়ে জানতে তাকে ফোন করা হলে, তিনি বলেন এখনো জিডির কপি তিনি বুঝে পাননি। যদিও গতকাল ৪ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করে এস আই খালিদকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এস আই খালিদ জানিয়েছেন, জিডির বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করার জন্য অনুমতি চেয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) খুলনা চীফ মেট্রোপলিন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রার্থনা করেছেন। আদালতের পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা তদন্ত কাজ এগিয়ে নিতে চান তিনি।

সিসিটিভির ফুটেজ পেয়েছেন কিনা, এ প্রসঙ্গে এস আই খালিদ বলেন চিত্রনায়িকা পপির ছোট ভাই দিপু আমাকে একটি ফুটেজ দেখিয়েছেন; কিন্তু সেটি আমার কাছে দিয়ে যাননি। আদালতের নির্দেশনা ছাড়া এই ফুটেজ আমি রাখতেও পারি না।

চিত্র নায়িকা পপির ব্যক্তিগত সহকারী কল্লোল মজুমদার বলেছেন, মারামারির কোনো ঘটনাই ঘটেনি। পপি তার ক্রয়কৃত পৈত্রিক সম্পত্তিতে বিদ্যুৎ এবং পানির বিল সংক্রান্ত বিষয়গুলো সমাধানের জন্য খুলনা গিয়েছিলেন। সেখানে তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

ফিরোজা পারভীন খেয়ালী জিডিতে উল্লেখ করেছেন, ম্যানেজার কল্লোলসহ নায়িকা পপি, তার স্বামী এবং ড্রাইভার মিলে তাকে আহত করেছে। এ বিষয়ে তিনি সুবিচার প্রত্যাশা করেন।
একই সঙ্গে ২০০৮ সালে নায়িকা পপি তার বাবা মিয়া আমির হোসেন (প্রয়াত) এবং মরিয়ম বেগম মেরীর কাছ থেকে জোরপূর্বক ১২ কাঠার মধ্যে ৬ কাঠা জমি লিখে নেন। কিন্তু সাদিকা পারভীন পপির দাবি, তিনি খুলনার সোনাডাঙ্গা শিববাড়ি এলাকার ইকবাল রোডে ৬ কাঠা জমি ১২ লাখ ৩৮ হাজার টাকার বিনিময়ে কিনেছেন। যার দলিল নাম্বার: কাঠা। দলিল নাম্বার: ৪৯০৩/০৮।
নিজের নামে বাড়িতে বিদ্যুৎ এবং ওয়াসার সংযোগ স্থাপনের পর থেকেই পুরো বিল দিতে হচ্ছে সাদিকা পারভীন পপিকে।

পপির ক্রয়সূত্রে জমির সাইনবোর্ড
পপির ক্রয়সূত্রে জমির সাইনবোর্ড

এ বিষয়ে খুলনা ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক মো. খাদেমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক পত্রে শুনানিতে ডাকেন নায়িকাকে পপিকে। সেখানে উপস্থিত হয়ে নায়িকা পপি জমির মালিক হিসাবে সব কাগজপত্র জমা দেন, তার নামেই বিল হচ্ছে এটাও নিশ্চিত করেছে।

পপির ছোটবোন ফিরোজা পারভীন খেয়ালী এবং আপন ভাই মিয়া মিয়া মুরাদ হোসেন দিপুও পপির আগেই দেখা করেন ওয়াসাতে। দুই পক্ষের কথা শুনে খাদেমুল ইসলাম বলেন, সম্পত্তির এবং মিটার যারা নামে তার নামেই বিল হচ্ছে, এক্ষেত্রে চিত্র নায়িকা সাদিকা পারভীন পুরো বাড়ির ওয়াসার বিল দেয়া হচ্ছে। যা তিনি পরিশোধও করে যাচ্ছেন। আদালাতের মাধ্যমে মালিকানার বিষয়টি শেষ করে আসার অনুরোধ করেন খুলনা ওয়াসার খাদেমুল ইসলাম। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে আলাদা মিটার আলাদা করার জন্য আবেদন করেছেন সাদিকা পারভীন পপি। কিন্তু সেখানেও বিদ্যুৎ অফিসের লোকজকে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমি ঢাকায় থাকি; পারিবারিক এই সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করেছি, এখন যেহেতু বিষয়টা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে; আদালতেই সুরাহা হোক।
উল্লেখ্য, নায়িকা পপি পরিবারের সবচে বড় সন্তান। তার আরো তিন বোন এবং এক ছোট ভাই আছেন। যাদের মধ্যে বোনদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী একজন, এরপর খেয়ালী ও ছোট ভাই দিপু খুলনায় থাকেন তার মায়ের সঙ্গে। আরেক বোন ঢাকায় ঘর সংসার নিয়ে ব্যস্ত।

কিন্তু ফিরোজা পারভীন খেয়ালী দাবি করেছেন, তারা ছয় ভাই-বোন। কিন্তু দালিলিক কাগজে মিয়া আমির হোসেন (প্রয়াত) এবং মরিয়ম বেগম মেরী দম্পত্তির পাঁচ সন্তানের কথা উল্লেখ করা আছে। তাহলে কে এই ষষ্ঠ সন্তান, তার ভূমিকা কি এই পারিবারিক ইস্যুতে। বিষয়টি নিয়ে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এক সময়ে জনপ্রিয় চিত্র নায়িকা সাদিকা পারভীন পপির ভক্তরা।

পপির ছোট ভাই হিসাবে পরিচয়দানকারী মিয়া আরাফাত হোসেন সামীরের পাসপোর্ট এবং জাতীয় পরিচয় পত্র বাংলা অ্যাফেয়ার্সের হাতে এসেছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, তার জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টে (বিপি-০৮***৬) সামীরের জন্ম তারিখ ৪ মে। কিন্তু জাতীয় পরিচয় পত্রে জন্মসাল ২০০০ সাল থাকলেও পাসর্পোটে লেখা আছে ২০০৭ সাল। এছাড়া নায়িকা পপির পারবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের পিছনে ইন্ধন দেয়ার অভিযোগ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন সামীর।

এসব অভিযোগের বিষয়ে মিয়া আরাফাত হোসেন সামীরকে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে, থানায় সাধারণ ডায়েরী করা নায়িকা পপির ছোট বোন ফিরোজা পারভীন খেয়ালী বলেছেন, সামীর তার আপন ছোট ভাই। তার পিতা মারা গেছেন গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি। জোর করে নায়িকা পপি ২০০৮ সালে ৬ কাঠা জমি লিখে নেয়। এ সময় পপিকে সরাসরি সহয়তা করেছিল কৌতুক অভিনেতা সাজু খাদেম। ৫ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) খেয়ালী বলেন, এই সব কিছুর পেছন থেকে কাজ করেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় চলচ্চিত্রাভিনেতা আলমগীর ও জায়েদ খান।

শেয়ার করুন

পপির পৈত্রিক সম্পত্তির বিরোধের নেপথ্যে এক ‘খলনায়ক’

সময় ০৯:১২:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চিত্রনাট্যে খলনায়ক এবং চিত্রনায়িকার দ্বন্ধ যেন আজন্ম; সেই খলনায়কের তাড়া থেকে ব্যক্তি জীবনেও বাঁচতে পারছে না ঢাকাইয়া সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। এবারে যে খলনায়ক চিত্রনায়িকাকে দৌড়ের উপর রেখেছেন তিনি তার পরিবারেই বড় হয়েছেন।
পপির দাবি, তার এক পালিত ভাই রয়েছে; যিনি কিনা তার ভাই ও বোনদের মধ্যে দ্বন্ধ বাঁধিয়ে দিয়েছেন। পালিত ওই ভাইয়ের নাম মিয়া আরাফাত হোসেন সামীর। ২০০০ সালে সামীরকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসেন মা মরিয়াম বেগম মেরী। এরপর থেকে পরিবারের সাথে কখনো খুলনায় আবার কখনো ঢাকায় বেড়ে উঠেছেন এই সামীর।

পপি বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে জানান, সামীর তার আপন ভাই না, সে তার বাসা থেকে ২০১৯ এর রমজানের সময় ২০ লাখ টাকা চুরিও করেছিল। এ বিষয়ে তিনি রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে তিন লাখ টাকা ফেরত দিয়েছিল। এরপর তাকে হত্যা করার জন্যও সামীর চেষ্টা চালিয়েছে। এ বিষয়গুলো তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীকে জানান।

তিনি আরো বলেন, পালিত ছোট ভাই হিসাবে এতদিন ক্ষমা করেছি। এখন আর সুযোগ নেই। খেয়ালির সঙ্গে মিলেই এখন খুলনার সব সম্পত্তি নেয়ার পাঁয়তারা করছে সামীর।
সম্প্রতি এই চিত্রনায়িকা স্বামী সন্তান নিয়ে প্রকাশ্যে এসেছেন। তার স্বামী ব্যবসায়ী আদনান উদ্দিন কামালকে নিয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি খুলনা গিয়েছিলেন বিদ্যুৎ ও পানির বিল সংক্রান্ত একটি শুনানিতে অংশ নিতে।

ওই দিন খুলনায় তাদের পারিবারিক একটি সম্পত্তি নিয়ে ছোট বোন ফিরোজা পারভীন ও ভাই মিয়া মুরাদ হোসেন দিপুর বিরোধের বিষয়টি সামনে আসে। ওয়াসা ভবনে দুই বোনের দেখাদেখি হলে কোনো কথা হয়নি। এমনটাই দাবি করেছেন সাদিকা পারভীন পপির ছোট বোন ফিরোজা পারভীন খেয়ালী নিজেই।

যদিও ওইদিন রাত সাড়ে আটটার মধ্যে ছোট ভাই মিয়া মিয়া মুরাদ হোসেন দিপুকে সঙ্গে নিয়ে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন ফিরোজা পারভীন।
সাধারণ ডায়েরিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে খুলনার সোনাঙাঙ্গায় শিববাড়ি এলাকায় তার ওপর আক্রমণ চালিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে চারজন। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
সোমবার দুপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আদনান উদ্দিন কামাল, সাদিকা পারভীন পপি, কল্লোল মজুমদার, ড্রাইভার শিপন মিলে আমার ওপর আক্রমণ করে। এরপর তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আমার মা-ভাইসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকির পাশাপশি মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। ফিরোজা দাবি করেন, মারামারি সিসিটিভির ফুটেজও তার কাছে রয়েছে।
সাধারণ ডায়েরী করার পর তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সোনাডাঙ্গা থানার এস আই (নিরস্ত্র) মো.গোলাম মোস্তফাকে। এ বিষয়ে জানতে তাকে ফোন করা হলে, তিনি বলেন এখনো জিডির কপি তিনি বুঝে পাননি। যদিও গতকাল ৪ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করে এস আই খালিদকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এস আই খালিদ জানিয়েছেন, জিডির বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করার জন্য অনুমতি চেয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) খুলনা চীফ মেট্রোপলিন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রার্থনা করেছেন। আদালতের পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা তদন্ত কাজ এগিয়ে নিতে চান তিনি।

সিসিটিভির ফুটেজ পেয়েছেন কিনা, এ প্রসঙ্গে এস আই খালিদ বলেন চিত্রনায়িকা পপির ছোট ভাই দিপু আমাকে একটি ফুটেজ দেখিয়েছেন; কিন্তু সেটি আমার কাছে দিয়ে যাননি। আদালতের নির্দেশনা ছাড়া এই ফুটেজ আমি রাখতেও পারি না।

চিত্র নায়িকা পপির ব্যক্তিগত সহকারী কল্লোল মজুমদার বলেছেন, মারামারির কোনো ঘটনাই ঘটেনি। পপি তার ক্রয়কৃত পৈত্রিক সম্পত্তিতে বিদ্যুৎ এবং পানির বিল সংক্রান্ত বিষয়গুলো সমাধানের জন্য খুলনা গিয়েছিলেন। সেখানে তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

ফিরোজা পারভীন খেয়ালী জিডিতে উল্লেখ করেছেন, ম্যানেজার কল্লোলসহ নায়িকা পপি, তার স্বামী এবং ড্রাইভার মিলে তাকে আহত করেছে। এ বিষয়ে তিনি সুবিচার প্রত্যাশা করেন।
একই সঙ্গে ২০০৮ সালে নায়িকা পপি তার বাবা মিয়া আমির হোসেন (প্রয়াত) এবং মরিয়ম বেগম মেরীর কাছ থেকে জোরপূর্বক ১২ কাঠার মধ্যে ৬ কাঠা জমি লিখে নেন। কিন্তু সাদিকা পারভীন পপির দাবি, তিনি খুলনার সোনাডাঙ্গা শিববাড়ি এলাকার ইকবাল রোডে ৬ কাঠা জমি ১২ লাখ ৩৮ হাজার টাকার বিনিময়ে কিনেছেন। যার দলিল নাম্বার: কাঠা। দলিল নাম্বার: ৪৯০৩/০৮।
নিজের নামে বাড়িতে বিদ্যুৎ এবং ওয়াসার সংযোগ স্থাপনের পর থেকেই পুরো বিল দিতে হচ্ছে সাদিকা পারভীন পপিকে।

পপির ক্রয়সূত্রে জমির সাইনবোর্ড
পপির ক্রয়সূত্রে জমির সাইনবোর্ড

এ বিষয়ে খুলনা ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক মো. খাদেমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক পত্রে শুনানিতে ডাকেন নায়িকাকে পপিকে। সেখানে উপস্থিত হয়ে নায়িকা পপি জমির মালিক হিসাবে সব কাগজপত্র জমা দেন, তার নামেই বিল হচ্ছে এটাও নিশ্চিত করেছে।

পপির ছোটবোন ফিরোজা পারভীন খেয়ালী এবং আপন ভাই মিয়া মিয়া মুরাদ হোসেন দিপুও পপির আগেই দেখা করেন ওয়াসাতে। দুই পক্ষের কথা শুনে খাদেমুল ইসলাম বলেন, সম্পত্তির এবং মিটার যারা নামে তার নামেই বিল হচ্ছে, এক্ষেত্রে চিত্র নায়িকা সাদিকা পারভীন পুরো বাড়ির ওয়াসার বিল দেয়া হচ্ছে। যা তিনি পরিশোধও করে যাচ্ছেন। আদালাতের মাধ্যমে মালিকানার বিষয়টি শেষ করে আসার অনুরোধ করেন খুলনা ওয়াসার খাদেমুল ইসলাম। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে আলাদা মিটার আলাদা করার জন্য আবেদন করেছেন সাদিকা পারভীন পপি। কিন্তু সেখানেও বিদ্যুৎ অফিসের লোকজকে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমি ঢাকায় থাকি; পারিবারিক এই সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করেছি, এখন যেহেতু বিষয়টা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে; আদালতেই সুরাহা হোক।
উল্লেখ্য, নায়িকা পপি পরিবারের সবচে বড় সন্তান। তার আরো তিন বোন এবং এক ছোট ভাই আছেন। যাদের মধ্যে বোনদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী একজন, এরপর খেয়ালী ও ছোট ভাই দিপু খুলনায় থাকেন তার মায়ের সঙ্গে। আরেক বোন ঢাকায় ঘর সংসার নিয়ে ব্যস্ত।

কিন্তু ফিরোজা পারভীন খেয়ালী দাবি করেছেন, তারা ছয় ভাই-বোন। কিন্তু দালিলিক কাগজে মিয়া আমির হোসেন (প্রয়াত) এবং মরিয়ম বেগম মেরী দম্পত্তির পাঁচ সন্তানের কথা উল্লেখ করা আছে। তাহলে কে এই ষষ্ঠ সন্তান, তার ভূমিকা কি এই পারিবারিক ইস্যুতে। বিষয়টি নিয়ে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এক সময়ে জনপ্রিয় চিত্র নায়িকা সাদিকা পারভীন পপির ভক্তরা।

পপির ছোট ভাই হিসাবে পরিচয়দানকারী মিয়া আরাফাত হোসেন সামীরের পাসপোর্ট এবং জাতীয় পরিচয় পত্র বাংলা অ্যাফেয়ার্সের হাতে এসেছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, তার জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টে (বিপি-০৮***৬) সামীরের জন্ম তারিখ ৪ মে। কিন্তু জাতীয় পরিচয় পত্রে জন্মসাল ২০০০ সাল থাকলেও পাসর্পোটে লেখা আছে ২০০৭ সাল। এছাড়া নায়িকা পপির পারবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের পিছনে ইন্ধন দেয়ার অভিযোগ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন সামীর।

এসব অভিযোগের বিষয়ে মিয়া আরাফাত হোসেন সামীরকে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে, থানায় সাধারণ ডায়েরী করা নায়িকা পপির ছোট বোন ফিরোজা পারভীন খেয়ালী বলেছেন, সামীর তার আপন ছোট ভাই। তার পিতা মারা গেছেন গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি। জোর করে নায়িকা পপি ২০০৮ সালে ৬ কাঠা জমি লিখে নেয়। এ সময় পপিকে সরাসরি সহয়তা করেছিল কৌতুক অভিনেতা সাজু খাদেম। ৫ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) খেয়ালী বলেন, এই সব কিছুর পেছন থেকে কাজ করেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় চলচ্চিত্রাভিনেতা আলমগীর ও জায়েদ খান।