নেতিবাচক ধারায় রাজস্ব আদায়
- সময় ১০:১৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 19
জুলাই মাসজুড়ে আন্দোলন ও আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল রাজস্ব আদায়ে এখনো তার প্রভাব রয়ে গেছে। রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির খবর চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেই এসেছিল; চার মাসেও এ ধারা থেকে বের না হওয়ার তথ্য এল এবার।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) প্রকাশ হওয়া হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ০৩ শতাংশ কম রাজস্ব আহরণ করতে পেরেছে, যেখানে আগের বছর একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
একমাস আগেই প্রথম প্রান্তিক তথা জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ শতাংশ কম রাজস্ব আদায় করতে পারার তথ্য এসেছিল। ওই সময় রাজস্ব আদায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা কম হয়েছিল।
একমাস বিবেচনায় গত অর্থবছরের অক্টোবর থেকে চলতি অর্থবছরের অক্টোবরে রাজস্ব আদায় শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ বাড়লেও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসা যায়নি।
আমদানি, রপ্তানি ও উৎপাদনসহ অর্থনীতির সকল সূচক যখন ধীরগতিতে চলছে, তখন এসবের বিপরীতে রাজস্ব আহরণ কম হওয়ার ধারা অব্যাহত রয়েছে।
রাজস্ব খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এক লাখ এক হাজার ২৮১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে অঙ্কটা ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৩৩৬ কোটি।
অর্থাৎ, গত অর্থবছরের তুলনায় এবার প্রথম চার মাসে ১ হাজার ৫৫ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় কম করতে পেরেছে এনবিআর; যা শতাংশের হিসাবে ১ দশমিক ০৩ শতাংশ কম।
এই চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সময় পার হয়েছে ক্ষমতার পালাবদলের মাস অগাস্টে। ওই মাসে তিন দিন সরকারবিহীন ছিল দেশ, যা এর আগে দেশে কখনও দেখা যায়নি।
সরকার পতনের পর পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটির সদস্যরা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ায় ব্যবসার পরিবেশ ছিল নাজুক। ব্যবসায়ীরা শুল্কায়ন করেও মাল খালাস ও গুদামে বা উৎপাদনস্থলে আনার সাহস করছিলেন না। যার প্রতিফলন দেখা গেছে অগাস্ট মাসের রাজস্ব আদায়ে। এ মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ রাজস্ব আদায় কম হয়েছে।
আন্দোলনের মাস জুলাইয়েও ‘অস্থির’সময় দেখেছে দেশ। সংঘাত, কারফিউ ও ইন্টারনেট ব্লাকআউটের ফলে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম প্রায় ১০ দিনের জন্য স্থবির ছিল। উৎপাদন ও সরবরাহও ব্যহত হওয়ায় এ মাসে রাজস্ব আদায় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ১২ শতাংশ কম হয়েছে।
সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আদায়ের পরিস্থিতি অবশ্য তুলনামূলক ভালো ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক হতে শুরু করার পর এ সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ০৩ শতাংশ।
আমদানি ও আয়করে এনবিআর প্রবৃদ্ধি দেখলেও মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের ভোগ কমে যাওয়ায় মূল্য সংযোজন কর আদায় কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। এর ফলে মাস বিবেচনায় অক্টোবরের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে সামান্য।
আন্দোলন, সংঘাত, ক্ষমতার পালাবদলের পাশাপাশি বন্যার কারণে সৃষ্ট অস্থিরতা ও সংকটের ধাক্কা কাটিয়ে জুলাই-অগাস্টের পর সেপ্টেম্বরে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের নিচে নেমে এলেও আবার তা বেড়ে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছে।
পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।