নির্বাচন কমিশন: আ. লীগের পথেই ইউনূস প্রশাসন!
- সময় ০৭:১৮:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
- / 138
নির্বাচন কমিশন নিয়োগে আওয়ামী লীগ সরকার সবশেষ যে পদ্ধতি গ্রহণ করেছিল, সেটি তখন দেশব্যাপী বিতর্কিত হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা কয়েকটি দল বিরোধীতাও করেছিলেন তখন। সেই বিতর্কিত পদ্ধতিই এবার অনুসরণ করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এমনটাই মনে করেন নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে কাজ করা বিশ্লেষকরা।
আওয়ামী লীগ ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো একটি সার্চ কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়। তবে, তৎকালীন বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ ছিল – সরকার সার্চ কমিটিকে ব্যবহার করে নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়োগ দিচ্ছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০২২ সালে আইনটি করেছিল শেখ হাসিনার সরকার। এটি কিছুটা স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি দিলেও, অনেকেই অভিযোগ করেন – এই আইন সরকারকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দেয়। আইনটি পাসের পরপরই বিরোধীদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল।
এই দুই কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়েই বিতর্ক রয়েছে। দেশে-বিদেশে এ নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি।
চলতি বছরের আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে যে কমিশন গঠন করা হয়, তারা অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন কমিশন গঠন সংক্রান্ত আইনের সংস্কারকে।
তবে সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন আগে তা নিয়ে বিএনপি ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মধ্যে মতবিভেদ ক্রমশ স্পষ্ট হতে থাকে।
এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক মাসের মাথায় পাঁচই সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ও অন্য চার কমিশনার পদত্যাগ করেন।
এই অবস্থায় সংস্কার ছাড়াই আওয়ামী লীগের দেখানো পথেই হেঁটে নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সম্পন্ন করলো ইউনূস প্রশাসন। এর ফলে “সংস্কার কমিশন গঠনটাই অনেকখানি অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে অতীতে এই আইন নিয়ে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর আপত্তি থাকলেও এবার তারা এই কমিশন গঠনের সাধুবাদ জানিয়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে, বিএনপি ও জামায়াতের প্রস্তাবিত নাম থেকেই সিইসিসহ কমিশনের একাধিক সদস্যকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
বিতর্ক এখানেই শেষ না; প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি চট্টগ্রামের কুতুবদিয়া এলাকার সন্তান। সেক্ষেত্রে একটি বিশেষ অঞ্চলকে প্রাধান্য দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগ সরকারের উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রেও রয়েছে। সেক্ষেত্রে এই কমিশনের অধীনে শেষ পর্যন্ত সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব হবে কি না- তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।
এরমধ্যেই প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ পুরো কমিশন নিয়েই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ (জানিপপ)-এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড.নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।
তিনি সরাসরি অভিযোগ করে বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন, বিপ্লব পরবর্তী সময়ে আমরা যেভাবে প্রত্যাশা করেছিলাম নির্বাচন কমিশন নিয়ে। সেটি পূরণ হয়নি। মূলত এটিও অন্তর্বতীকালীন সরকারের মতো চট্টগ্রাম সমিতির অংশ হিসাবেই প্রতিয়মান হয়েছে।
এদিকে, সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনো প্রার্থীর নির্বাচন না হওয়া না ভোট ফিরিয়ে আনা ও অর্থের উৎসের স্বচ্ছতা নিশ্চিতসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে নির্বাচন সংস্কার কমিশন।
সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সরাসরি হওয়ার কথা আলোচনা হয়েছে। সব নির্বাচন প্রত্যক্ষ হওয়ার কথা বলেছেন কেউ কেউ। স্থানীয় সরকার সরকার নির্বাচন নির্দলীয় হওয়ার কথা হয়েছে, সংসদীয় পদ্ধতিতে যেন না হয়।
এই পদ্ধতিও আওয়ামী লীগের আমলেই করা হয়েছিল, যদিও সেগুলো পরিপূর্ণভাবে মানা হয়নি। ফলে আওয়ামী লীগের আমলে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল দেশ ও দেশের বাইরে থেকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন পথে অনুষ্ঠিত হবে? সেটা কি আওয়ামী লীগের দেখানো পথেই হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
তবে দেশের সাধারণ নাগরিক ও ভোটাররা একটি অবাদ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা করেছেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই ভোটদানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এই ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার দায়িত্বও নিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। কাজটা খুব সহজ হবে না বলেও মনে করেন ভোটাররা।
উল্লেখ্য, নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) বাকি চার নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আজ শপথ নিয়েছেন।
রোববার (নভেম্বর ২৪) দুপুর দেড়টার পর তারা সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে শপথ নেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক সচিব এ এম এম মো. নাসির উদ্দীন। তার সঙ্গে চার নির্বাচন কমিশনারের নামও ঘোষণা করা হয়।
তারা হলেন—সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমান মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব বেগম তাহমিদা আহমেদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাদের নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।