নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে বসবে বিএনপি | Bangla Affairs
০৪:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত

নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে বসবে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সময় ০৮:৫৫:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
  • / 23

বিএনপি

জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্কার বার্তা না আসায় জনমনে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের ভাবনা জানতে এবং নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

গত সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, সাক্ষাতের জন্য মঙ্গলাবারই সময় চাওয়া হয়েছে।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, নির্বাচন এবং সংশ্লিষ্ট সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানাবে বিএনপি। দলটি মনে করে, প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার সরকার অধ্যাদেশ বা প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে এখনই বাস্তবায়ন করতে পারে।

সাক্ষাতের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তাও করছে বিএনপি।

সংস্কারের অবস্থান ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বৈঠকে বিএনপি পরিষ্কার করেছে, ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের সংবিধানিক কাঠামো পুনর্বহাল করতে চায় তারা। ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’, ‘সমাজতন্ত্র’ অর্থে ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’, এবং ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’– এই মূলনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দিয়েছে দলটি।

সালাহউদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন, বিএনপি বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যেতে চায় বলে যেসব গুঞ্জন ছড়ানো হচ্ছে, তা তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক বিভ্রান্তি। তিনি বলেন, “বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট—আমরা ২০১১ সালের আগের কাঠামো চাই, ১৯৭২ সালের নয়।”

পহেলা বৈশাখ ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি
স্থায়ী কমিটি বৈশাখ উদযাপনেও অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরার লক্ষ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা ও মহানগরে র‌্যালি, মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে বিএনপি। নেতারা মনে করেন, সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মোকাবিলায় নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চা ও প্রচার জরুরি।

ফিলিস্তিন সংহতি ও বিক্ষোভ কর্মসূচি
বৈঠকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান বর্বরতা ও গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। আগামী ১২ এপ্রিল রাজধানীতে আয়োজিত ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে বিএনপি একাত্মতা প্রকাশ করবে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয়ভাবে বৃহৎ জনসমাগম করে প্রতিবাদ জানানোর প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।

পিনাকী প্রসঙ্গ ও দলের অভ্যন্তরীণ আলোচনা
বৈঠকে বিদেশে অবস্থানরত ইউটিউবার পিনাকী ভট্টাচার্যের নেতিবাচক মন্তব্য এবং দলীয় নেতাদের কিছু অসংলগ্ন বক্তব্য নিয়েও আলোচনা হয়। নেতারা মনে করছেন, এসব বিষয়ে দলীয়ভাবে দিকনির্দেশনা থাকা দরকার, যাতে বিভ্রান্তি না ছড়ায় এবং দলের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ থাকে।

ভার্চুয়াল উপস্থিতি ও নেতারা
বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যুক্ত হন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও, যিনি বর্তমানে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা—ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীরবিক্রম) ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

শেয়ার করুন

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত

নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে বসবে বিএনপি

সময় ০৮:৫৫:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫

জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্কার বার্তা না আসায় জনমনে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের ভাবনা জানতে এবং নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

গত সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, সাক্ষাতের জন্য মঙ্গলাবারই সময় চাওয়া হয়েছে।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, নির্বাচন এবং সংশ্লিষ্ট সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানাবে বিএনপি। দলটি মনে করে, প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার সরকার অধ্যাদেশ বা প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে এখনই বাস্তবায়ন করতে পারে।

সাক্ষাতের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তাও করছে বিএনপি।

সংস্কারের অবস্থান ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বৈঠকে বিএনপি পরিষ্কার করেছে, ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের সংবিধানিক কাঠামো পুনর্বহাল করতে চায় তারা। ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’, ‘সমাজতন্ত্র’ অর্থে ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’, এবং ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’– এই মূলনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দিয়েছে দলটি।

সালাহউদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন, বিএনপি বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যেতে চায় বলে যেসব গুঞ্জন ছড়ানো হচ্ছে, তা তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক বিভ্রান্তি। তিনি বলেন, “বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট—আমরা ২০১১ সালের আগের কাঠামো চাই, ১৯৭২ সালের নয়।”

পহেলা বৈশাখ ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি
স্থায়ী কমিটি বৈশাখ উদযাপনেও অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরার লক্ষ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা ও মহানগরে র‌্যালি, মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে বিএনপি। নেতারা মনে করেন, সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মোকাবিলায় নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চা ও প্রচার জরুরি।

ফিলিস্তিন সংহতি ও বিক্ষোভ কর্মসূচি
বৈঠকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান বর্বরতা ও গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। আগামী ১২ এপ্রিল রাজধানীতে আয়োজিত ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে বিএনপি একাত্মতা প্রকাশ করবে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয়ভাবে বৃহৎ জনসমাগম করে প্রতিবাদ জানানোর প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।

পিনাকী প্রসঙ্গ ও দলের অভ্যন্তরীণ আলোচনা
বৈঠকে বিদেশে অবস্থানরত ইউটিউবার পিনাকী ভট্টাচার্যের নেতিবাচক মন্তব্য এবং দলীয় নেতাদের কিছু অসংলগ্ন বক্তব্য নিয়েও আলোচনা হয়। নেতারা মনে করছেন, এসব বিষয়ে দলীয়ভাবে দিকনির্দেশনা থাকা দরকার, যাতে বিভ্রান্তি না ছড়ায় এবং দলের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ থাকে।

ভার্চুয়াল উপস্থিতি ও নেতারা
বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যুক্ত হন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও, যিনি বর্তমানে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা—ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীরবিক্রম) ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।