নিজেদের গঠিত র্যাব কেন বিলুপ্তি চায় বিএনপি!
- সময় ১১:৩৬:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 42
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, সংক্ষেপে র্যাব। ২০০৪ সালে পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করে তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। ঐ বছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এলিট ফোর্স র্যাবের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
মূলত দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমন এবং আইনশৃঙ্খলার মানোন্নয়নে গঠন করা হয়েছিল র্যাব। আত্মপ্রকাশের পর র্যাবের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইয়ে র্যাবের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কয়েকটি আলোচিত হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য র্যাব যুক্তরাষ্ট্রে গোয়েন্দা সংস্থারও সহযোগিতা নেয়।
সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থি দমনের পাশাপাশি জঙ্গিবাদ দমনেও র্যাবের সাফল্য ঈর্ষণীয়। কিন্তু এরপরেও কেন নিজেদের গঠিত র্যাব বিলুপ্তি চায় বিএনপি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, র্যাব প্রতিষ্ঠার পরবর্তী দুই যুগে বিভিন্ন সময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা গুমের অনেক ঘটনা বাহিনীটিকে বিতর্কে ফেলেছে।
নারায়ণগঞ্জে সাত খুন, কক্সবাজারে এক কাউন্সিলর হত্যা, ঝালকাঠিতে এক স্কুল শিক্ষার্থীর পায়ে গুলি করার ঘটনা দেশ জুড়ে বেশ আলোচিত হয়েছে।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাব এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় অভিযোগ আনা হয়েছিল, র্যাব এবং অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ৬০০টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ৬০০-রও বেশি লোকের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, এবং নির্যাতনের জন্য দায়ী।
সবশেষ গত জুলাইতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়ার অভিযোগ উঠেছিল র্যাবের বিরুদ্ধে। যদিও সরকার পতনের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, গুলি নয় টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়েছিল।
গত ৫ আগষ্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ফের আলোচনায় এসেছে র্যাবের ভূমিকা। গুমসংক্রান্ত ঘটনা তদন্তে সরকার একটি কমিশনও গঠন করেছে। নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে এক হাজার ছয় শর বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। ৩৮৩টি অভিযোগ যাচাই করে কমিশন জানিয়েছে, এর মধ্যে ১৭২টি অভিযোগই এসেছে র্যাবের বিরুদ্ধে।
শুধু তাই না; র্যাব বিলুপ্তি চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানিয়েছেন ২০১১ সারে ঝালকাঠির রাজাপুরে র্যাবের গুলিতে পা হারানো তখনকার কিশোর লিমন হোসেন।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষাপটে র্যাব তাদের নাম, লোগো ও পোশাক পরিবর্তনের পরিকল্পনা করছে এবং বাহিনীর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নতুন আইনের খসড়া তৈরি করছে বলে জানা গেছে।
বর্তমানে এই বাহিনীর জন্য আলাদা কোনো আইন নেই। এটি পরিচালিত হয় পুলিশ অধ্যাদেশ অনুসারে। কিন্তু সংস্কার নয়, বিএনপির মতো অনেক মানবাধিকার কর্মীও এই বাহিনীর বিলুপ্তি চান।