০১:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিজেকে নির্দোষ দাবি করে প্রচার চালাচ্ছেন টিউলিপ

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০২:২০:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫
  • / 18

টিউলিপ সিদ্দিক

নিজেকে নির্দোষ দাবি করে প্রচার চালাচ্ছেন ব্রিটেনের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। দেশটির ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ এ কাজ চাতুরতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে নিয়োগ করেছেন আইনজীবী। সেই আইনজীবীদের তরফে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদককে) একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এমন তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

ওই চিঠিতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাকে ‘লক্ষ্যবস্তু বানানো’ এবং তার বিরুদ্ধে ‘ভিত্তিহীন’ প্রচারণার অভিযোগ তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগগুলো ‘মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক’। তদন্তকারীদের পক্ষ থেকে অভিযোগের বিষয়ে টিউলিপকে কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। অথচ সেগুলো গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের দুর্নীতির সঙ্গে তার জড়িত থাকার প্রমাণ সামনে আসে। এতে দলের ভেতরে বাইরে চাপে পড়েন টিউলিপ। শেষমেশ বাধ্য হয়ে লেবার মন্ত্রিসভার ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

ওই পদে তার কাজ ছিল যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া। কিন্তু মন্ত্রী নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ায় দেশ-বিদেশে কোণঠাসা হয়ে পড়েন টিউলিপ; পদত্যাগের পরও এর প্রভাব বিদ্যমান। সে সঙ্গে শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। সেসব তদন্তে নামে দুদক। প্রাথমিকভাবে যার প্রায় সব কটিরই বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পায় সংস্থাটি। এখনও তদন্ত চলমান।

দুদকের কাছে লেখা চিঠিতে টিউলিপের আইনজীবী স্টিফেনসন হারউড উল্লেখ করেন, টিউলিপ সিদ্দিক কোনোভাবেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তিতে জড়িত ছিলেন না। যদিও ২০১৩ সালে ক্রেমলিনে একটি চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একই ছবিতে তাকে দেখা গেছে। রাষ্ট্রীয় সফরে কোনো রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের পরিবারের সদস্যদেরও আমন্ত্রণ জানানো অস্বাভাবিক কিছু নয়। কোনো আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে তার জানা নেই।

দুদক
দুদক

আরও বলা হয়, ২০০৪ সালে লন্ডন কিংস ক্রস এলাকায় উপহার হিসেবে পাওয়া সাত লাখ পাউন্ডের ফ্ল্যাটটি কোনো না কোনোভাবে আত্মসাতের ফল বলে যে দাবি করা হয়েছে, তা ‘অযৌক্তিক’। এটি মোটেই সত্য নয়। কারণ এটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুক্তির ১০ বছর আগের ঘটনা।

গণমাধ্যমে দুদকের ব্রিফিংকে ‘‘যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অগ্রহণযোগ্য চেষ্টা’’ হিসেবে চিঠিতে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়, দুদক বা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তার(টিউলিপ) কাছে কোনো অভিযোগ ন্যায্য, যথাযথ এবং স্বচ্ছভাবে, অথবা আদৌ কোনো পর্যায়েই তুলে ধরা হয়নি। আমরা চাই টিউলিপের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক অভিযোগ বানানো এবং তার সুনাম নষ্টের জন্য মিডিয়া ব্রিফিং ও প্রকাশ্য বক্তব্য প্রদান অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। দুদককে অবিলম্বে এবং ২৫ মার্চ ২০২৫ এর মধ্যে টিউলিপের চিঠির জবাব তুলে ধরতে হবে। নইলে উত্তর দেওয়ার মতো কোনো বৈধ প্রশ্ন নেই বলে আমরা ধরে নেব।

দুদকের পক্ষ থেকেও চিঠির একটি জবাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক আওয়ামী লীগের ‘দুর্নীতি থেকে লাভবান হয়েছেন’। হাসিনার শাসনামল সম্পর্কে টিউলিপের অজ্ঞতার দাবি ‘বিশ্বাস করা কঠিন’। বিষয়টি নিয়ে দুদকের পাল্টা চিঠিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে টিউলিপ সিদ্দিকের মতো একজন রাজনীতিবিদ কীভাবে সরলতার কারণে নির্দোষ থাকার দাবি করেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বিবিসিকে বলেছেন, এসব অভিযোগ কোনোভাবেই ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন’ নয়। দুর্নীতির প্রমাণ আছে এমন দলিলের ওপর ভিত্তি করেই তদন্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের আদালতে চলমান প্রক্রিয়া নিয়ে টিউলিপের বিব্রত হওয়া উচিত নয়। তার বাংলাদেশে এসে এই মামলা মোকাবিলা করা এবং যথাসম্ভব আইনি সহায়তা পাওয়ার বিষয়টিকে আমি স্বাগত জানাব।

শেয়ার করুন

নিজেকে নির্দোষ দাবি করে প্রচার চালাচ্ছেন টিউলিপ

সময় ০২:২০:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

নিজেকে নির্দোষ দাবি করে প্রচার চালাচ্ছেন ব্রিটেনের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। দেশটির ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ এ কাজ চাতুরতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে নিয়োগ করেছেন আইনজীবী। সেই আইনজীবীদের তরফে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদককে) একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এমন তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

ওই চিঠিতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাকে ‘লক্ষ্যবস্তু বানানো’ এবং তার বিরুদ্ধে ‘ভিত্তিহীন’ প্রচারণার অভিযোগ তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগগুলো ‘মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক’। তদন্তকারীদের পক্ষ থেকে অভিযোগের বিষয়ে টিউলিপকে কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। অথচ সেগুলো গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের দুর্নীতির সঙ্গে তার জড়িত থাকার প্রমাণ সামনে আসে। এতে দলের ভেতরে বাইরে চাপে পড়েন টিউলিপ। শেষমেশ বাধ্য হয়ে লেবার মন্ত্রিসভার ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

ওই পদে তার কাজ ছিল যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া। কিন্তু মন্ত্রী নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ায় দেশ-বিদেশে কোণঠাসা হয়ে পড়েন টিউলিপ; পদত্যাগের পরও এর প্রভাব বিদ্যমান। সে সঙ্গে শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। সেসব তদন্তে নামে দুদক। প্রাথমিকভাবে যার প্রায় সব কটিরই বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পায় সংস্থাটি। এখনও তদন্ত চলমান।

দুদকের কাছে লেখা চিঠিতে টিউলিপের আইনজীবী স্টিফেনসন হারউড উল্লেখ করেন, টিউলিপ সিদ্দিক কোনোভাবেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তিতে জড়িত ছিলেন না। যদিও ২০১৩ সালে ক্রেমলিনে একটি চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একই ছবিতে তাকে দেখা গেছে। রাষ্ট্রীয় সফরে কোনো রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের পরিবারের সদস্যদেরও আমন্ত্রণ জানানো অস্বাভাবিক কিছু নয়। কোনো আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে তার জানা নেই।

দুদক
দুদক

আরও বলা হয়, ২০০৪ সালে লন্ডন কিংস ক্রস এলাকায় উপহার হিসেবে পাওয়া সাত লাখ পাউন্ডের ফ্ল্যাটটি কোনো না কোনোভাবে আত্মসাতের ফল বলে যে দাবি করা হয়েছে, তা ‘অযৌক্তিক’। এটি মোটেই সত্য নয়। কারণ এটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুক্তির ১০ বছর আগের ঘটনা।

গণমাধ্যমে দুদকের ব্রিফিংকে ‘‘যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অগ্রহণযোগ্য চেষ্টা’’ হিসেবে চিঠিতে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়, দুদক বা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তার(টিউলিপ) কাছে কোনো অভিযোগ ন্যায্য, যথাযথ এবং স্বচ্ছভাবে, অথবা আদৌ কোনো পর্যায়েই তুলে ধরা হয়নি। আমরা চাই টিউলিপের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক অভিযোগ বানানো এবং তার সুনাম নষ্টের জন্য মিডিয়া ব্রিফিং ও প্রকাশ্য বক্তব্য প্রদান অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। দুদককে অবিলম্বে এবং ২৫ মার্চ ২০২৫ এর মধ্যে টিউলিপের চিঠির জবাব তুলে ধরতে হবে। নইলে উত্তর দেওয়ার মতো কোনো বৈধ প্রশ্ন নেই বলে আমরা ধরে নেব।

দুদকের পক্ষ থেকেও চিঠির একটি জবাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক আওয়ামী লীগের ‘দুর্নীতি থেকে লাভবান হয়েছেন’। হাসিনার শাসনামল সম্পর্কে টিউলিপের অজ্ঞতার দাবি ‘বিশ্বাস করা কঠিন’। বিষয়টি নিয়ে দুদকের পাল্টা চিঠিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে টিউলিপ সিদ্দিকের মতো একজন রাজনীতিবিদ কীভাবে সরলতার কারণে নির্দোষ থাকার দাবি করেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বিবিসিকে বলেছেন, এসব অভিযোগ কোনোভাবেই ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন’ নয়। দুর্নীতির প্রমাণ আছে এমন দলিলের ওপর ভিত্তি করেই তদন্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের আদালতে চলমান প্রক্রিয়া নিয়ে টিউলিপের বিব্রত হওয়া উচিত নয়। তার বাংলাদেশে এসে এই মামলা মোকাবিলা করা এবং যথাসম্ভব আইনি সহায়তা পাওয়ার বিষয়টিকে আমি স্বাগত জানাব।