০১:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাহিদ-আখতারের নতুন দলে চমকের অপেক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সময় ০৯:০২:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 44

নাহিদ-আখতারের নতুন দলে চমকের অপেক্ষা

শেখ হাসিনা সরকারের পতনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতাদের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসছে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে, থাকছে চমকও। দল গঠনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত বিশ্বস্ত সূত্রগুলো জানিয়েছে, এক দফা আন্দোলনের ঘোষক ও তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আগামী ১৮ বা ১৯ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করে নতুন দলে যুক্ত হবেন। সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নাহিদ ইসলাম আহ্বায়ক এবং আখতার হোসেন সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন।

প্রাথমিকভাবে ২৪ ফেব্রুয়ারি দল ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে, তবে ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি নিয়েও আলোচনা চলছে। নাগরিক কমিটির ৭০ জন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩০ জনের সমন্বয়ে ৫১ বা ১০০ সদস্যের প্রাথমিক কমিটি ঘোষণা করা হবে, যা পর্যায়ক্রমে আরও বাড়বে।

নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেওয়া হবে, যেখানে জুলাই অভ্যুত্থানের দুই হাজার শহীদ পরিবারের সদস্য ও ৩১ হাজার আহত ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন। এর আগে, ২০ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন ছাত্র সংগঠন ঘোষণা করা হবে।

দলের নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আব্দুল হান্নান মাসুদ, মাহিন সরকার, সামান্তা শারমিন ও উমামা ফাতেমাসহ আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবেন। এছাড়া, রাফে সালমান রিফাত, আলী আহসান জোনায়েদ ও আরিফিন মোহাম্মদ হিজবুল্লাহর মতো ছাত্র নেতাদেরও নেতৃত্বে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।

শহীদ পরিবারগুলোর পরামর্শ ও চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই দলের কাঠামো গঠন করা হচ্ছে। ২৪-এর আন্দোলনে আহত যোদ্ধাদেরও গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা দেওয়া হবে। দল ঘোষণার পর জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বাড়ি (রংপুর) থেকে শহীদ ওয়াসিমের বাড়ি (চট্টগ্রাম) পর্যন্ত ১৫ দিনের লংমার্চ আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে বিভিন্ন দল-মতের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে এবং রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াগুলোও সংগ্রহ করা হবে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন

এদিকে, নতুন রাজনৈতিক দল গঠন হলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই কাজ করবে। এই দুটি সংগঠন ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও ২০২৪ সালের ছাত্রজনতার হত্যার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সক্রিয় থাকবে।

নতুন দলের নেতারা মনে করছেন, দেশের প্রচলিত দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতি জনগণের আস্থা কমে গেছে। একটি দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকেও জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
অপর দল নিজ দলের সংস্কার করতেও ব্যর্থ হয়েছে।

ফলে তরুণদের আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা হচ্ছে। ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪-এর চেতনার ভিত্তিতে দলের গঠনতন্ত্র তৈরি করা হয়েছে।

নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, “আমাদের প্রত্যাশা, নাহিদ ভাই দলের আহ্বায়ক হবেন এবং আখতার হোসেন ভাই সদস্য সচিবের দায়িত্ব নেবেন।”

জাতীয় নাগরিক কমিটি
জাতীয় নাগরিক কমিটি

নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা এস এম সুজা জানান, “একুশে ফেব্রুয়ারির পর দল গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।”

নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, “আমরা জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে চাই এবং নতুন রাজনৈতিক দল হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক ও বাহক।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, “পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর মতো কোনো আদর্শ চাপিয়ে দেওয়া হবে না। জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই আমাদের দল পরিচালিত হবে।”

নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। ২৪-এর আন্দোলনের তরুণ নেতৃত্ব এবার সরকার গঠনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দলটি গড়ে উঠলে দেশের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আসতে পারে।

শেয়ার করুন

নাহিদ-আখতারের নতুন দলে চমকের অপেক্ষা

সময় ০৯:০২:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

শেখ হাসিনা সরকারের পতনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতাদের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসছে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে, থাকছে চমকও। দল গঠনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত বিশ্বস্ত সূত্রগুলো জানিয়েছে, এক দফা আন্দোলনের ঘোষক ও তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আগামী ১৮ বা ১৯ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করে নতুন দলে যুক্ত হবেন। সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নাহিদ ইসলাম আহ্বায়ক এবং আখতার হোসেন সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন।

প্রাথমিকভাবে ২৪ ফেব্রুয়ারি দল ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে, তবে ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি নিয়েও আলোচনা চলছে। নাগরিক কমিটির ৭০ জন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩০ জনের সমন্বয়ে ৫১ বা ১০০ সদস্যের প্রাথমিক কমিটি ঘোষণা করা হবে, যা পর্যায়ক্রমে আরও বাড়বে।

নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেওয়া হবে, যেখানে জুলাই অভ্যুত্থানের দুই হাজার শহীদ পরিবারের সদস্য ও ৩১ হাজার আহত ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন। এর আগে, ২০ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন ছাত্র সংগঠন ঘোষণা করা হবে।

দলের নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আব্দুল হান্নান মাসুদ, মাহিন সরকার, সামান্তা শারমিন ও উমামা ফাতেমাসহ আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবেন। এছাড়া, রাফে সালমান রিফাত, আলী আহসান জোনায়েদ ও আরিফিন মোহাম্মদ হিজবুল্লাহর মতো ছাত্র নেতাদেরও নেতৃত্বে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।

শহীদ পরিবারগুলোর পরামর্শ ও চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই দলের কাঠামো গঠন করা হচ্ছে। ২৪-এর আন্দোলনে আহত যোদ্ধাদেরও গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা দেওয়া হবে। দল ঘোষণার পর জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বাড়ি (রংপুর) থেকে শহীদ ওয়াসিমের বাড়ি (চট্টগ্রাম) পর্যন্ত ১৫ দিনের লংমার্চ আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে বিভিন্ন দল-মতের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে এবং রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াগুলোও সংগ্রহ করা হবে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন

এদিকে, নতুন রাজনৈতিক দল গঠন হলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই কাজ করবে। এই দুটি সংগঠন ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও ২০২৪ সালের ছাত্রজনতার হত্যার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সক্রিয় থাকবে।

নতুন দলের নেতারা মনে করছেন, দেশের প্রচলিত দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতি জনগণের আস্থা কমে গেছে। একটি দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকেও জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
অপর দল নিজ দলের সংস্কার করতেও ব্যর্থ হয়েছে।

ফলে তরুণদের আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা হচ্ছে। ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪-এর চেতনার ভিত্তিতে দলের গঠনতন্ত্র তৈরি করা হয়েছে।

নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, “আমাদের প্রত্যাশা, নাহিদ ভাই দলের আহ্বায়ক হবেন এবং আখতার হোসেন ভাই সদস্য সচিবের দায়িত্ব নেবেন।”

জাতীয় নাগরিক কমিটি
জাতীয় নাগরিক কমিটি

নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা এস এম সুজা জানান, “একুশে ফেব্রুয়ারির পর দল গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।”

নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, “আমরা জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে চাই এবং নতুন রাজনৈতিক দল হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক ও বাহক।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, “পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর মতো কোনো আদর্শ চাপিয়ে দেওয়া হবে না। জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই আমাদের দল পরিচালিত হবে।”

নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। ২৪-এর আন্দোলনের তরুণ নেতৃত্ব এবার সরকার গঠনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দলটি গড়ে উঠলে দেশের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আসতে পারে।