ঢাকা ১০:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীর বেশি বয়সে বিয়ে হলে কী হয়?

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০৯:৫৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
  • / 31

বিয়ে

বিয়ের জন্য নারী ও পুরুষ উভয়কে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হয়। এবং উভয়কে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়। নারীর ক্ষেত্রে এটি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। নারীর তলপেটে জরায়ুর দুই পাশে দুটো ডিম্বাশয় থাকে। এদের কাজ হলো ডিম্বাণু তৈরী এবং হরমোন নিঃসরণ করা। মূলত ডিম্বাশয়ের উপর বহুলাংশে নির্ভর করে নারীর প্রজনন ক্ষমতা এবং যৌ×নজীবন।

বিয়ের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে মনে রাখতে হবে:

১. সন্তানধারণ: একজন মেয়ে শিশু নির্দিষ্ট সংখ্যক ডিম্বাণু নিয়ে জন্মায়। আর এটাই কিন্তু পরবর্তী জীবনে তার সন্তানধারণের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। জন্মের পর নারীর শরীরে নূতন করে কোনো ডিম্বাণু তৈরি হয় না। প্রতি মাসে ঋতুচক্রের মাধ্যমে ডিম্বাণু নিঃসরিত হয়। ফলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডিম্বাণুর পরিমাণ এবং গুণগত মান কমতে থাকে। এতে নারীর সন্তানধারণ ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। আমেরিকার এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে – এই ডিম্বাণুর হ্রাস প্রক্রিয়া শুরু হয় ৩২ বছর বয়স থেকে।

নারীর বয়স ৩৭ পার হলে এই সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। তখন স্বাভাবিকভাবে নারীর সন্তানধারণের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। সন্তানধারণ করতে আগ্রহী হলে এই বয়সের নারীটিকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়। এমনকি প্রাকৃতিক নিয়মে গর্ভসঞ্চার অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। ফলে কৃত্রিম উপায়ে গর্ভধারণের পরিকল্পনা করতে হয়। এটা সবার জন্য সম্ভব নয়। শারীরিক যোগ্যতার পাশাপাশি এই চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। এক্ষেত্রে আইভিএফ বা টেস্টটিউব বেবি গ্রহণ পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা যায়। এসব পদ্ধতি সবসময় সফল নাও হতে পারে।

২. গর্ভধারণজনিত জটিলতা: অধিক বয়সে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশি থাকে। জন্মগত ত্রুটি বা অটিস্টিক শিশু জন্মের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। গর্ভজনিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। এসব রোগের প্রভাবে মা ও গর্ভস্থ শিশুর ঝুঁকি অনেক বৃদ্ধি পায়।

নারী-পুরুষ
নারী-পুরুষ

৩. প্রসবকালীন জটিলতা: নারীর প্রসবপথ তৈরি হয় নরম মাংস, তরুণাস্থি এবং শ্রোণিচক্রের হাড়ের সমন্বয়ে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই তরুণাস্থি সংকোচন-প্রসারণ এবং শ্রোণিচক্রের অস্থিসন্ধির নড়াচড়ার ক্ষমতা কমতে থাকে। ফলে বেশি বয়সে গর্ভবতীদের বিলম্বিত প্রসবের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ত্রিশ এবং তদূর্ধ্ব বছর বয়সের নারী যারা প্রথম গর্ভবতী হন তাদের ক্ষেত্রে এই বিলম্বিত প্রসব হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এসব মিলে সিজারিয়ান ডেলিভারির ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৪. যৌ*নজীবন: গবেষণায় দেখা গিয়েছে – হরমোনের প্রভাবে বিশ থেকে তিরিশ বছর বয়সে নারী তার যৌ*ন সম্পর্ককে চমৎকার উপভোগ করেন। চল্লিশ বছর থেকে নারীর যৌ*ন-আকাঙ্ক্ষা হ্রাস পেতে থাকে। কারণ তখন হরমোন তৈরির ক্ষমতা কমতে থাকে।

৫. বয়সজনিত অসুখ: বয়স বৃদ্ধির সাথে নারীর জরায়ুর টিউমার হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে – ৪০ বছরের পর প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ৪০ জনেরই এই টিউমার হতে পারে। নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যে এই টিউমারের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এছাড়াও বয়সজনিত অন্যান্য সাধারণ অসুখ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ,থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি বাড়তে থাকে।

অবশ্যই নারীকে যোগ্য ও স্বনির্ভর হতে হবে। তার জীবনে পড়াশোনা, চাকুরি বা ক্যারিয়ার অতীব প্রয়োজনীয় একটা বিষয়। পাশাপাশি বিয়ে, সন্তানধারণ এবং সন্তানপালনের মতো বিষয়গুলো নারীজীবনের একটা অপরিহার্য অংশ। তাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিজ্ঞানসম্মত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্যদিকে বিয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য শুধু সন্তান জন্মদান নয়। একটা দম্পতির মাঝে মানসিক বোঝাপড়া, পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব/কর্তব্যবোধ এবং জীবনকে ভাগ করে নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো রয়েছে। সর্বোপরি জীবন যার সিদ্ধান্ত তার।

লেখক: বিলকিস বেগম চৌধুরী

অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান,

স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিদ্যা বিভাগ, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ

শেয়ার করুন

নারীর বেশি বয়সে বিয়ে হলে কী হয়?

সময় ০৯:৫৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

বিয়ের জন্য নারী ও পুরুষ উভয়কে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হয়। এবং উভয়কে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়। নারীর ক্ষেত্রে এটি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। নারীর তলপেটে জরায়ুর দুই পাশে দুটো ডিম্বাশয় থাকে। এদের কাজ হলো ডিম্বাণু তৈরী এবং হরমোন নিঃসরণ করা। মূলত ডিম্বাশয়ের উপর বহুলাংশে নির্ভর করে নারীর প্রজনন ক্ষমতা এবং যৌ×নজীবন।

বিয়ের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে মনে রাখতে হবে:

১. সন্তানধারণ: একজন মেয়ে শিশু নির্দিষ্ট সংখ্যক ডিম্বাণু নিয়ে জন্মায়। আর এটাই কিন্তু পরবর্তী জীবনে তার সন্তানধারণের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। জন্মের পর নারীর শরীরে নূতন করে কোনো ডিম্বাণু তৈরি হয় না। প্রতি মাসে ঋতুচক্রের মাধ্যমে ডিম্বাণু নিঃসরিত হয়। ফলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডিম্বাণুর পরিমাণ এবং গুণগত মান কমতে থাকে। এতে নারীর সন্তানধারণ ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। আমেরিকার এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে – এই ডিম্বাণুর হ্রাস প্রক্রিয়া শুরু হয় ৩২ বছর বয়স থেকে।

নারীর বয়স ৩৭ পার হলে এই সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। তখন স্বাভাবিকভাবে নারীর সন্তানধারণের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। সন্তানধারণ করতে আগ্রহী হলে এই বয়সের নারীটিকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়। এমনকি প্রাকৃতিক নিয়মে গর্ভসঞ্চার অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। ফলে কৃত্রিম উপায়ে গর্ভধারণের পরিকল্পনা করতে হয়। এটা সবার জন্য সম্ভব নয়। শারীরিক যোগ্যতার পাশাপাশি এই চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। এক্ষেত্রে আইভিএফ বা টেস্টটিউব বেবি গ্রহণ পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা যায়। এসব পদ্ধতি সবসময় সফল নাও হতে পারে।

২. গর্ভধারণজনিত জটিলতা: অধিক বয়সে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশি থাকে। জন্মগত ত্রুটি বা অটিস্টিক শিশু জন্মের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। গর্ভজনিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। এসব রোগের প্রভাবে মা ও গর্ভস্থ শিশুর ঝুঁকি অনেক বৃদ্ধি পায়।

নারী-পুরুষ
নারী-পুরুষ

৩. প্রসবকালীন জটিলতা: নারীর প্রসবপথ তৈরি হয় নরম মাংস, তরুণাস্থি এবং শ্রোণিচক্রের হাড়ের সমন্বয়ে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই তরুণাস্থি সংকোচন-প্রসারণ এবং শ্রোণিচক্রের অস্থিসন্ধির নড়াচড়ার ক্ষমতা কমতে থাকে। ফলে বেশি বয়সে গর্ভবতীদের বিলম্বিত প্রসবের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ত্রিশ এবং তদূর্ধ্ব বছর বয়সের নারী যারা প্রথম গর্ভবতী হন তাদের ক্ষেত্রে এই বিলম্বিত প্রসব হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এসব মিলে সিজারিয়ান ডেলিভারির ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৪. যৌ*নজীবন: গবেষণায় দেখা গিয়েছে – হরমোনের প্রভাবে বিশ থেকে তিরিশ বছর বয়সে নারী তার যৌ*ন সম্পর্ককে চমৎকার উপভোগ করেন। চল্লিশ বছর থেকে নারীর যৌ*ন-আকাঙ্ক্ষা হ্রাস পেতে থাকে। কারণ তখন হরমোন তৈরির ক্ষমতা কমতে থাকে।

৫. বয়সজনিত অসুখ: বয়স বৃদ্ধির সাথে নারীর জরায়ুর টিউমার হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে – ৪০ বছরের পর প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ৪০ জনেরই এই টিউমার হতে পারে। নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যে এই টিউমারের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এছাড়াও বয়সজনিত অন্যান্য সাধারণ অসুখ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ,থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি বাড়তে থাকে।

অবশ্যই নারীকে যোগ্য ও স্বনির্ভর হতে হবে। তার জীবনে পড়াশোনা, চাকুরি বা ক্যারিয়ার অতীব প্রয়োজনীয় একটা বিষয়। পাশাপাশি বিয়ে, সন্তানধারণ এবং সন্তানপালনের মতো বিষয়গুলো নারীজীবনের একটা অপরিহার্য অংশ। তাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিজ্ঞানসম্মত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্যদিকে বিয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য শুধু সন্তান জন্মদান নয়। একটা দম্পতির মাঝে মানসিক বোঝাপড়া, পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব/কর্তব্যবোধ এবং জীবনকে ভাগ করে নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো রয়েছে। সর্বোপরি জীবন যার সিদ্ধান্ত তার।

লেখক: বিলকিস বেগম চৌধুরী

অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান,

স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিদ্যা বিভাগ, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ