নদীতে ফুল ভাসিয়ে বৈসাবি উৎসব শুরু

- সময় ১১:১৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
- / 29
পাহাড়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবকে ভিন্নভাবে উদযাপন করে থাকে। এই উৎসবকে মারমারা বলে সাংগ্রাই, চাকমারা বিজু, ত্রিপুরারা বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, চাক, ম্রো, বমরা চাংক্রান নামে উদযাপন করেন। তবে সমতলের আদিবাসীদের কাছে এই উৎসব বৈসাবি নামে বেশ পরিচিত। এই উৎসবকে ঘিরে মুখরিত হয়ে উঠে পাহাড়ি জনপদ। পাহাড়ে বসবাসরত তঞ্চঙ্গ্যা, চাকমা ও অন্যান্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে এটি শুধুই উৎসব নয়, বরং আদিবাসী সম্প্রদায়ের আত্মপরিচয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক।
ভোর সকাল থেকেই জড়ো হন শত শত নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী ও শিশুরা। নিজ নিজ সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান পড়ে সাঙ্গু নদীর পাড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী, শিশুরা বিভিন্ন স্থান থেকে ফুল সংগ্রহ করে কলাপাতায় সাজানো ফুল নিয়ে সাঙ্গু নদীর তীরে জড়ো হন। মোমবাতি জ্বালিয়ে, ফুল অর্পণ করে অতীতের ভুলভ্রান্তি ক্ষমার প্রার্থণা করেন তারা।

সাংঙ্গু নদীর ঘাটে প্রার্থণা করেন অতীতের সব দুঃখ-কষ্ট যেন নদীর স্রোতের মতো ভেসে যায় এবং ভবিষ্যত দিনগুলোর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন তারা। ভোরের স্নিগ্ধ বাতাস আর নদীর স্বচ্ছ জলে ফুল বিসর্জন দিয়ে পুরোনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছে তঞ্চঙ্গ্যা ও চাকমা সম্প্রদায়ের মানুষ।
বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি—এই তিন পার্বত্য জেলায় বসবাসরত চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, চাক, ম্রো, খুমী, খেয়াং, বম, লুসাই, ম্রো ১১টি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব। উৎসবকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি জনপদে বইছে আনন্দের আমেজ। চাকমা ও তংচঙ্গ্যাদের মতে, অতীতের ভুলভ্রান্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থণা করে আগামীবছর যেন সবাই সুখে শান্তিতে থাকতে পারেন সেই প্রত্যাশায় মা-গঙ্গাদেবীর কাছে প্রার্থণা করেছেন তারা।
সন্ধ্যায় থেকে রেইছা হাইস্কুল মাঠে শুরু হবে তংচঙ্গ্যা ও চাকমা সম্প্রদায়ের ঘিলা খেলা উৎসব। এদিনে তংচঙ্গ্যা ও চাকমা সম্প্রদায়ের মানুষ আনন্দের মাতোয়ারা থাকে। পরেদিন পাজন রান্না দাওয়াতে অতিথিদের আপ্যায়ন করে থাকে। এদিনে প্রতিটি ঘরে ঘরে উৎসবের রং লেগে থাকে। ছোটরা বড় ও গুরুজনদের কাছে আশির্বাদ গ্রহনে পাশাপাশি প্রার্থনা করে থাকে।
বান্দরবান জেলা উৎসব উদযাপন পরিষদ জানিয়েছেন, আসন্ন সাংগ্রাই পোয়েকে সামনে রেখে আগামীকাল ১৩ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত সাপ্তাহব্যাপী নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। সাংগ্রাই লোকজ ক্রীড়া উৎসব, সাংগ্রাই বর্ণাঢ্য র্যালি, বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা, বুদ্ধস্নান, পাড়া ভিত্তিক পিঠা উৎসব, ঐতিহ্যবাহী বলী খেলা, তৈলাক্ত বাঁশ আরোহন, সর্বশেষ টানা তিনদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মৈত্রীয় পানি বর্ষণ বা জলকেলি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উৎসব উদযাপন পরিষদের সদস্যরা।
সাতকমল পাড়া আশিষ তংচঙ্গ্যা বলেন, ফুল ভাসানো মধ্য দিয়ে আজ থেকে বিজু উৎসব শুরু হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে এখন উৎসবের আমেজ। পাজন রান্না থেকে শুরু করে উৎসব শুরু হয়েছে’ এতে আমরা খুব উচ্ছ্বসিত ।

তরুনী হ্যাপী চাকমা বলেন, বছরজুড়ে অপেক্ষা করি এই দিনটির জন্য। আমাদের সংস্কৃতি, উৎসব, আনন্দ সবকিছু একসাথে মেলে ধরা হয় এই বিজুতে।
বিজু উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব নাজীত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, নদীতে ফুল বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বিজুর আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছে। উৎসবটি তিনদিন ধরে চলবে। এবছর আমরা অনেক বড় পরিসরে ও আনন্দঘন পরিবেশে উৎসব উদযাপন করছি।
বান্দরবান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম (ক্রাইম এন্ড অপস) বলেন, বিজু, বিষু, বৈসু, বৈসাবী ও সাংগ্রাইকে উৎসবকে ঘিরে প্রতিটি স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নিরাপত্তা প্রদান করা হয়েছে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রতিটি পথে সাদা পোশাকে টহল রয়েছে বলে জানান তিনি।