ঢাকা ০১:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুন রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ: বেড়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি

নুরুল বশর, উখিয়া (কক্সবাজার)
  • সময় ০৬:৫৪:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারি ২০২৫
  • / 35

রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ

মিয়ানমারের রাখাইন (আরাকান) রাজ্যে আরাকান আর্মির অবস্থান শক্তিশালী হওয়ায় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বেড়েছে গত কয়েকমাসে।
বিশেষ করে গত ৮ ডিসেম্বর রোহিঙ্গা অধ্যুষিত মংডু শহরের পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সেটি আরও জোরদার হয়েছে। নতুন করে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণের কারণে বেড়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। পুরো কক্সবাজারই এখন সেই ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং এর আশপাশে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের ছড়াছড়ি। যা আতঙ্ক বাড়িয়েছে স্থানীয়রদেরও। পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, সাম্প্রতিক সংকটের সঙ্গে জটিল হবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোর ব্যবস্থা করা। এছাড়া তারা চাইলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনটাও দ্রুত সময়ে হয়ে যেতো। এসব না হওয়ায় নতুন সমীকরণ মোকাবেলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদেন চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এমনিতেই পুরাতন রোহিঙ্গাদের নিয়ে নানা হুমকি রয়েছে। তারমধ্যে নতুন রোহিঙ্গা আসছে। আবার তাঁদের অবাধ বিচরণ স্থানীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। নতুন যারা আসছে তাদেরও কাঁটাতারে সুরক্ষিত করা উচিত।

উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য (কুতুপালং) হেলাল উদ্দিন বলেন, নতুন করে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গারা, তাদের আগে আসার আত্মীয়স্বজনের কাছে আশ্রয় নিচ্ছে।

এছাড়া বিভিন্নভাবে নতুন রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের গ্রামে ঢুকে পড়ছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আরও বড় হুমকির মুখে পড়তে হবে প্রশাসনকে। তবে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন করে কাউকে আশ্রয়ের ঘোষণা না দিলেও; অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের আওতায় আনার কথা বলছে শরণার্থী কমিশন। এজন্য চাওয়া হয়েছে সরকারের অনুমোদন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আরাকান আর্মি মংডু কেন্দ্রিক আক্রমণ জোরদার করার পর থেকেই বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ কিছুটা বেড়েছে। কারণ, মংডু রোহিঙ্গা অধ্যুষিত শহর। সেখানে তাঁদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ
রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ

মিয়ানমারের সংঘাত ঘিরে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকেই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে। তাদের অবাধ বিচরণ ঠেকানোর কথা জানিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের আওতায় আনার কথা ভাবা হচ্ছে। এজন্য চাওয়া হয়েছে সরকারের অনুমোদন।

নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের কতটা শৃঙ্খলার মধ্যে রাখা যাবে তা নিয়েও আছে শঙ্কা। কেননা, অনেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, গত সাত বছরে আশ্রয়শিবিরগুলোতে মোট ৩ হাজার ৮২৩টি মামলাতে ৮ হাজার ৬৮৯ জন রোহিঙ্গাকে আসামি করা হয়। কিন্তু সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গার ভেতর থেকে আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা কঠিন। বেশির ভাগ আসামি আশ্রয়শিবিরের বাইরে উখিয়া ও টেকনাফের গহিন পাহাড়ের আস্তানায় অবস্থান করছে বলে জানায় পুলিশ।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিনারের কার্যালয়ের সর্বশেষ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬৪ হাজার ৭ শত ১৮ জন রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।

শেয়ার করুন

নতুন রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ: বেড়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি

সময় ০৬:৫৪:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারি ২০২৫

মিয়ানমারের রাখাইন (আরাকান) রাজ্যে আরাকান আর্মির অবস্থান শক্তিশালী হওয়ায় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বেড়েছে গত কয়েকমাসে।
বিশেষ করে গত ৮ ডিসেম্বর রোহিঙ্গা অধ্যুষিত মংডু শহরের পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সেটি আরও জোরদার হয়েছে। নতুন করে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণের কারণে বেড়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। পুরো কক্সবাজারই এখন সেই ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং এর আশপাশে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের ছড়াছড়ি। যা আতঙ্ক বাড়িয়েছে স্থানীয়রদেরও। পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, সাম্প্রতিক সংকটের সঙ্গে জটিল হবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোর ব্যবস্থা করা। এছাড়া তারা চাইলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনটাও দ্রুত সময়ে হয়ে যেতো। এসব না হওয়ায় নতুন সমীকরণ মোকাবেলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদেন চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এমনিতেই পুরাতন রোহিঙ্গাদের নিয়ে নানা হুমকি রয়েছে। তারমধ্যে নতুন রোহিঙ্গা আসছে। আবার তাঁদের অবাধ বিচরণ স্থানীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। নতুন যারা আসছে তাদেরও কাঁটাতারে সুরক্ষিত করা উচিত।

উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য (কুতুপালং) হেলাল উদ্দিন বলেন, নতুন করে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গারা, তাদের আগে আসার আত্মীয়স্বজনের কাছে আশ্রয় নিচ্ছে।

এছাড়া বিভিন্নভাবে নতুন রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের গ্রামে ঢুকে পড়ছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আরও বড় হুমকির মুখে পড়তে হবে প্রশাসনকে। তবে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন করে কাউকে আশ্রয়ের ঘোষণা না দিলেও; অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের আওতায় আনার কথা বলছে শরণার্থী কমিশন। এজন্য চাওয়া হয়েছে সরকারের অনুমোদন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আরাকান আর্মি মংডু কেন্দ্রিক আক্রমণ জোরদার করার পর থেকেই বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ কিছুটা বেড়েছে। কারণ, মংডু রোহিঙ্গা অধ্যুষিত শহর। সেখানে তাঁদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ
রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ

মিয়ানমারের সংঘাত ঘিরে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকেই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে। তাদের অবাধ বিচরণ ঠেকানোর কথা জানিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের আওতায় আনার কথা ভাবা হচ্ছে। এজন্য চাওয়া হয়েছে সরকারের অনুমোদন।

নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের কতটা শৃঙ্খলার মধ্যে রাখা যাবে তা নিয়েও আছে শঙ্কা। কেননা, অনেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, গত সাত বছরে আশ্রয়শিবিরগুলোতে মোট ৩ হাজার ৮২৩টি মামলাতে ৮ হাজার ৬৮৯ জন রোহিঙ্গাকে আসামি করা হয়। কিন্তু সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গার ভেতর থেকে আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা কঠিন। বেশির ভাগ আসামি আশ্রয়শিবিরের বাইরে উখিয়া ও টেকনাফের গহিন পাহাড়ের আস্তানায় অবস্থান করছে বলে জানায় পুলিশ।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিনারের কার্যালয়ের সর্বশেষ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬৪ হাজার ৭ শত ১৮ জন রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।