০৩:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুন রাজধানী হচ্ছে খুলনা- চট্টগ্রাম!

আল আসকারী
  • সময় ১১:৩৩:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 53

নতুন রাজধানী হচ্ছে খুলনা-চট্টগ্রাম!

রাজধানী ঢাকা বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এখানের গতি পৃথিবীর অনান্য যে কোন রাজধানীর চেয়ে ধীর। এমন নানা সব আলোচনা রয়েছে চারশ’ বছরের বেশি পুরনো এই শহর নিয়ে।

এবার নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে; আর তা হলো ‘ঢাকা’ থেকে রাজধানী স্থানান্তরের। কিন্তু কোথায় গড়া হবে নতুন রাজধানী। বরিশাল, খুলনা, রংপুর, রাজশাহী না চট্টগ্রামে। তার আগে জেনে নেয়া যাক; কেন রাজধানী স্থানান্তরের প্রসঙ্গ আসলো।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গঠিত; অর্থনৈতিক পুন:নির্ধারণ টাস্ক ফোর্স রাজধানী স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের মতে, ঢাকার বর্তমান অবস্থা দেশের উন্নতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল আনুষ্ঠানিকভাবে ১৬১০ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের আমলে। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে ইসলাম খান চিশতি নামে একজন গভর্নর ঢাকাকে প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তখন এর নামকরণ করা হয় ‘জাহাঙ্গীরনগর’।

ঢাকার ইতিহাস আরও প্রাচীন। এই অঞ্চলে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা খ্রিস্টপূর্ব সময়কালের। তবে আধুনিক ঢাকা শহর হিসেবে এর বিকাশ মূলত মুঘল আমল থেকে শুরু হয়।

বর্তমানে ঢাকা শহর বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে একটি। ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরে প্রতি বর্গফুটে প্রায় ছয় হাজার ৩৭৮ জন বসবাস করেন।

এই ঘনত্বের কারণে ঢাকা শহরে যানজট, পরিবেশ দূষণ, আবাসন সংকট এবং অন্যান্য নাগরিক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ঢাকার জনসংখ্যার এই চাপ শহরের অবকাঠামো ও সম্পদের উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে।

রাজধানী সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাবের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, ঢাকার জনসংখ্যার চাপ। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ গ্রাম থেকে ঢাকায় আসছে কাজের সন্ধানে। এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে ঢাকার অবকাঠামো ভেঙে পড়ছে। দ্বিতীয়ত, যানজট। ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হয়, যা অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ।

তৃতীয়ত, পরিবেশ দূষণ। ঢাকার বায়ু ও পানি দূষণের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদ-ের চেয়ে অনেক বেশি। ঢাকায় বাতাসের মান ছিল ২৭৬ স্কোর। বায়ুর মান বিচারে এ মাত্রাকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়। এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পেতে রাজধানী সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

রাজধানী সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাবের পর প্রশ্ন উঠেছে, নতুন রাজধানী কোথায় হবে? বিশেষজ্ঞরা বেশ কয়েকটি স্থানের কথা বিবেচনা করছেন। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল বা দক্ষিণাঞ্চলের কিছু শহর। যেমন, রংপুর, বগুড়া, বা খুলনা।

এই অঞ্চলগুলো তুলনামূলকভাবে কম জনবহুল এবং উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও, নতুন রাজধানী স্থাপনের মাধ্যমে দেশের আঞ্চলিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব।

তবে রাজধানী স্থানান্তরের জটিলতাও কম না। প্রথমত, নতুন রাজধানী স্থাপনের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে। দ্বিতীয়ত, এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ এবং জটিল। তৃতীয়ত, ঢাকার অর্থনৈতিক গুরুত্ব কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

শেয়ার করুন

নতুন রাজধানী হচ্ছে খুলনা- চট্টগ্রাম!

সময় ১১:৩৩:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাজধানী ঢাকা বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এখানের গতি পৃথিবীর অনান্য যে কোন রাজধানীর চেয়ে ধীর। এমন নানা সব আলোচনা রয়েছে চারশ’ বছরের বেশি পুরনো এই শহর নিয়ে।

এবার নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে; আর তা হলো ‘ঢাকা’ থেকে রাজধানী স্থানান্তরের। কিন্তু কোথায় গড়া হবে নতুন রাজধানী। বরিশাল, খুলনা, রংপুর, রাজশাহী না চট্টগ্রামে। তার আগে জেনে নেয়া যাক; কেন রাজধানী স্থানান্তরের প্রসঙ্গ আসলো।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গঠিত; অর্থনৈতিক পুন:নির্ধারণ টাস্ক ফোর্স রাজধানী স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের মতে, ঢাকার বর্তমান অবস্থা দেশের উন্নতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল আনুষ্ঠানিকভাবে ১৬১০ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের আমলে। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে ইসলাম খান চিশতি নামে একজন গভর্নর ঢাকাকে প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তখন এর নামকরণ করা হয় ‘জাহাঙ্গীরনগর’।

ঢাকার ইতিহাস আরও প্রাচীন। এই অঞ্চলে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা খ্রিস্টপূর্ব সময়কালের। তবে আধুনিক ঢাকা শহর হিসেবে এর বিকাশ মূলত মুঘল আমল থেকে শুরু হয়।

বর্তমানে ঢাকা শহর বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে একটি। ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরে প্রতি বর্গফুটে প্রায় ছয় হাজার ৩৭৮ জন বসবাস করেন।

এই ঘনত্বের কারণে ঢাকা শহরে যানজট, পরিবেশ দূষণ, আবাসন সংকট এবং অন্যান্য নাগরিক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ঢাকার জনসংখ্যার এই চাপ শহরের অবকাঠামো ও সম্পদের উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে।

রাজধানী সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাবের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, ঢাকার জনসংখ্যার চাপ। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ গ্রাম থেকে ঢাকায় আসছে কাজের সন্ধানে। এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে ঢাকার অবকাঠামো ভেঙে পড়ছে। দ্বিতীয়ত, যানজট। ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হয়, যা অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ।

তৃতীয়ত, পরিবেশ দূষণ। ঢাকার বায়ু ও পানি দূষণের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদ-ের চেয়ে অনেক বেশি। ঢাকায় বাতাসের মান ছিল ২৭৬ স্কোর। বায়ুর মান বিচারে এ মাত্রাকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়। এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পেতে রাজধানী সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

রাজধানী সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাবের পর প্রশ্ন উঠেছে, নতুন রাজধানী কোথায় হবে? বিশেষজ্ঞরা বেশ কয়েকটি স্থানের কথা বিবেচনা করছেন। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল বা দক্ষিণাঞ্চলের কিছু শহর। যেমন, রংপুর, বগুড়া, বা খুলনা।

এই অঞ্চলগুলো তুলনামূলকভাবে কম জনবহুল এবং উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও, নতুন রাজধানী স্থাপনের মাধ্যমে দেশের আঞ্চলিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব।

তবে রাজধানী স্থানান্তরের জটিলতাও কম না। প্রথমত, নতুন রাজধানী স্থাপনের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে। দ্বিতীয়ত, এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ এবং জটিল। তৃতীয়ত, ঢাকার অর্থনৈতিক গুরুত্ব কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।