দোকান-সুপারশপে ‘ইসরায়েলি পণ্য’ না রাখতে হুমকি | Bangla Affairs
১০:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দোকান-সুপারশপে ‘ইসরায়েলি পণ্য’ না রাখতে হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সময় ০৫:০৬:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫
  • / 27

দোকান-সুপারশপে ‘ইসরায়েলি পণ্য’ না রাখতে হুমকি

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলছে বিক্ষোভ ও সমাবেশ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য শহরে কয়েকটি দোকান, সুপারশপ ও রেস্তোরাঁয় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার পাশাপাশি দোকানগুলোতে ‘ইসরায়েলি পণ্য’ বিক্রি না করতে চাপ সৃষ্টি করে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

দোকানে গিয়ে লিফলেট বিতরণ, হুমকি

জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের দোকান ও সুপারশপগুলোতে ‘ইসরায়েলি পণ্য’ সরিয়ে ফেলতে বলা হচ্ছে। কিছু ব্যক্তি দোকানে গিয়ে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ছবিসহ লিফলেট দিয়ে সতর্ক করে যাচ্ছেন—যদি ওই পণ্য না সরানো হয়, তাহলে ভাঙচুরের মুখে পড়তে হবে।

তবে তালিকাভুক্ত অনেক পণ্যের প্রকৃত উৎস নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেক বিদেশি পণ্য ইসরায়েলি নয়, তবুও ভুল তথ্যে এসব পণ্য সরিয়ে ফেলতে বাধ্য করা হচ্ছে। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে অনুরোধ জানিয়েছেন—সত্যতা যাচাই না করে এমন তালিকা ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে।

নিরাপত্তাহীনতায় ব্যবসায়ীরা

রাজধানীর ওয়ারী এলাকার একটি সুপারশপের ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ৮ এপ্রিল (মঙ্গলবার) কিছু টিনএজ যুবক দোকানে এসে হুমকি দিয়ে গেছে। তারা বলেন, যত ইসরায়েলি পণ্য আছে তা চলতি সপ্তাহের মধ্যে সরিয়ে ফেলতে হবে, নইলে দোকান চালাতে দেবে না।

তিনি আরও জানান, আশপাশের আরও তিনটি সুপারশপেও একই ধরনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় তারা নিজেদের ও দোকানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

পুলিশের অবস্থান

ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান, এখনো এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া না গেলেও পুলিশ সতর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, বিক্ষোভের নামে কেউ বিশৃঙ্খলা বা ভাঙচুর ঘটানোর চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর জানান, ইতোমধ্যে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দোকান ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ ও ছবি পর্যালোচনা করে আরও জড়িতদের খুঁজে বের করা হচ্ছে।

বাটার বক্তব্য

আন্তর্জাতিক জুতা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাটা তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও হামলার প্রতিক্রিয়ায় একটি বিবৃতি দিয়েছে। বাটার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি কোনোভাবেই ইসরায়েলি মালিকানাধীন নয় এবং চলমান সংঘাতের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা আরও জানায়, বাটা একটি পারিবারিক মালিকানাধীন কোম্পানি, যার উৎপত্তি চেক প্রজাতন্ত্রে।

সরকারের আশ্বাস

বিদেশি ব্র্যান্ডের দোকানে হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। যারা এসব বিশৃঙ্খলায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন

দোকান-সুপারশপে ‘ইসরায়েলি পণ্য’ না রাখতে হুমকি

সময় ০৫:০৬:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলছে বিক্ষোভ ও সমাবেশ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য শহরে কয়েকটি দোকান, সুপারশপ ও রেস্তোরাঁয় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার পাশাপাশি দোকানগুলোতে ‘ইসরায়েলি পণ্য’ বিক্রি না করতে চাপ সৃষ্টি করে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

দোকানে গিয়ে লিফলেট বিতরণ, হুমকি

জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের দোকান ও সুপারশপগুলোতে ‘ইসরায়েলি পণ্য’ সরিয়ে ফেলতে বলা হচ্ছে। কিছু ব্যক্তি দোকানে গিয়ে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ছবিসহ লিফলেট দিয়ে সতর্ক করে যাচ্ছেন—যদি ওই পণ্য না সরানো হয়, তাহলে ভাঙচুরের মুখে পড়তে হবে।

তবে তালিকাভুক্ত অনেক পণ্যের প্রকৃত উৎস নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেক বিদেশি পণ্য ইসরায়েলি নয়, তবুও ভুল তথ্যে এসব পণ্য সরিয়ে ফেলতে বাধ্য করা হচ্ছে। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে অনুরোধ জানিয়েছেন—সত্যতা যাচাই না করে এমন তালিকা ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে।

নিরাপত্তাহীনতায় ব্যবসায়ীরা

রাজধানীর ওয়ারী এলাকার একটি সুপারশপের ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ৮ এপ্রিল (মঙ্গলবার) কিছু টিনএজ যুবক দোকানে এসে হুমকি দিয়ে গেছে। তারা বলেন, যত ইসরায়েলি পণ্য আছে তা চলতি সপ্তাহের মধ্যে সরিয়ে ফেলতে হবে, নইলে দোকান চালাতে দেবে না।

তিনি আরও জানান, আশপাশের আরও তিনটি সুপারশপেও একই ধরনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় তারা নিজেদের ও দোকানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

পুলিশের অবস্থান

ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান, এখনো এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া না গেলেও পুলিশ সতর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, বিক্ষোভের নামে কেউ বিশৃঙ্খলা বা ভাঙচুর ঘটানোর চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর জানান, ইতোমধ্যে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দোকান ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ ও ছবি পর্যালোচনা করে আরও জড়িতদের খুঁজে বের করা হচ্ছে।

বাটার বক্তব্য

আন্তর্জাতিক জুতা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাটা তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও হামলার প্রতিক্রিয়ায় একটি বিবৃতি দিয়েছে। বাটার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি কোনোভাবেই ইসরায়েলি মালিকানাধীন নয় এবং চলমান সংঘাতের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা আরও জানায়, বাটা একটি পারিবারিক মালিকানাধীন কোম্পানি, যার উৎপত্তি চেক প্রজাতন্ত্রে।

সরকারের আশ্বাস

বিদেশি ব্র্যান্ডের দোকানে হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। যারা এসব বিশৃঙ্খলায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।