দেশবাসীকে খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের ঈদ শুভেচ্ছা | Bangla Affairs
০৭:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশবাসীকে খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের ঈদ শুভেচ্ছা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সময় ০৮:৩৩:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ মার্চ ২০২৫
  • / 18

লন্ডনে ঈদ পালন করছেন বেগম খালেদা জিয়া

লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘লন্ডনে ঈদুল ফিতর উদযাপন হচ্ছে। আপনারা জানেন, ম্যাডাম উনার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের বাসায় আছেন। ঈদের দিনটি উনি বাসায় আপনজনদের নিয়ে একান্তে কাটাচ্ছেন।”

‘‘বাসায় দুই পুত্রবধূ (ডা. জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শামিলা রহমান) আছেন… আছেন তিন নাতনি (ব্যারিস্টার জায়মা রহমান, জাফিয়া রহমান, জাহিয়া রহমান)। ম্যাডামকে ঘিরে ঈদের সব আয়োজন তারাই সাজিয়েছেন।কারণ দীর্ঘদিন বছর পর ম্যাডাম তার আপনজনদের সাথে ঈদ করতে যাচ্ছে। বুঝতেই পারছেন এখানে অনেক আবেগ জড়িত।”

খালেদা জিয়ার লন্ডনে এটি তৃতীয় ঈদ উদযাপন। এবার দশ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ঈদ পালন করছেন। এর আগে ২০১৭ সালে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়ে ছেলের বাসায় ঈদুল আজহা উদযাপন করেছিলেন। এরও আগে এক-এগারোর পরে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে প্রায় আট বছর পর লন্ডনে পরিবারের সদস‌্যদের সা‌থে ঈদ উদযাপন করেছিলেন।

খালেদা জিয়া কেমন আছেন জানতে চাইলে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘‘তিনি এই মুহূর্তে আগের চেয়ে অনেকটা ভালো আছেন। আগে চাইতে তিনি বলতে পারেন আলহামদুলিল্লাহ উনি মাচ বেটার।”

জাহিদ বলেন, ‘‘ম্যাডাম দেশবাসীসহ দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবও দেশবাসীদের আপনাদের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, যে কোনো মূল্যে পলাতক স্বৈরাচার আর তাদের দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করার মাধ্যমে দেশে আইন ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করাই হোক এবারের ঈদে আমাদের অঙ্গীকার।

রোববার গণমাধ্যমে প্রেরিত ঈদ শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, ত্যাগ-তাকওয়া আর সংযমের শিক্ষা গ্রহণের মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর ব্যক্তি, পরিবার সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনকে সুন্দর ও পরিশুদ্ধ করার পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর বিশ্বজনীন ঐক্য, সংহতি, সহমর্মিতা এবং অনাবিল আনন্দের বার্তা নিয়ে এলো পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর প্রতি জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও মোবারকবাদ। ঈদ মুবারক।

ব্যক্তি জীবনকে পরিশুদ্ধ ও সংযমী করে গড়ার লক্ষ্যে মোমিন মুসলমানেরা মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর হৃদয় আনন্দে উপচে পড়া ঈদুল ফিতর সমাগত হয়।

তিনি বলেন, বীর জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়ে দীর্ঘ দেড় দশক পর গুম, খুন, অপহরণের ভয়হীন-স্বাধীন সার্বভৌম এক গণতান্ত্রিক পরিবেশে দেশের আপামর জনগণ এ বছর পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে। এবারের ঈদ আনন্দে তাই যোগ হয়েছে উচ্ছ্বাস-উৎসাহ উদ্দীপনার এক নতুন মাত্রা।

তবে মানুষের মনে পবিত্র আনন্দ-উচ্ছ্বাসের এমন এক বাধাহীন ঊর্মিমুখর সময়েও অনেক মায়েদের মনে আনন্দ নেই। অনেক পরিবারে নেই উৎসবের আমেজ। কারণ ফ্যাসিবাদের দীর্ঘ দেড় দশকের গুম, খুন, অপহরণ, জুলুম নির্যাতনে সন্তান স্বজনহারা লাখো পরিবারে নেমে এসেছিলো জাহেলিয়াতের অন্ধকার। শুধুমাত্র জুলাই-আগস্টেই পলাতক স্বৈরাচারের পতনের শেষ দিনগুলোতে প্রাণ হারিয়েছেন নানা শ্রেণী পেশার হাজারো মানুষ। ছাত্র-যুবক-কৃষক-শ্রমিক-রাজনৈতিক কর্মী কিংবা নিরীহ পথচারী এমনকি নারী শিশু বৃদ্ধ পর্যন্ত ফ্যাসিস্টের বুলেট থেকে রক্ষা পায়নি। আহত হয়েছেন ২০ সহস্রাধিক মানুষ।

ফ্যাসিবাদ পতন আন্দোলনে হতাহতদের পরিবারগুলোতে আজ তাই ঈদ উৎসবের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস নেই। ঈদের দিনেও হয়তো সন্তানহারা কোনো মায়ের চোখে অশ্রু। এই আনন্দঘন সময়েও স্বজনদের হৃদয়ে আপনজন হারানোর নিঃশব্দ কান্না। মাফিয়া চক্রের নির্মমতায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত প্রিয় মানুষটির কাছে বসেই অনেককে ঈদ আনন্দের এই দিনটি কাটাতে হচ্ছে আশা নিরাশা আর হতাশায়।

ঈদুল ফিতর নির্মল আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মর্মবাণী মানবজাতির কাছে পৌঁছে যায় তা হচ্ছে ‘সকলের তরে সকলে আমরা’। এই মর্মবাণী মানসিক কদর্য, অন্যায়, অবিচার ও নিষ্ঠুর সামাজিক অসাম্যকে অতিক্রম করে এক নিবিড় ভ্রাতৃত্ববোধের প্রেরণা জাগায়। আর এই প্রেরণায় উদ্দীপ্ত হয়ে সমাজের অপেক্ষাকৃত দরিদ্র, অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষের প্রতি সাহায্য ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া মুসলমান হিসাবে আমাদের কর্তব্য।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দীর্ঘ দেড় দশক ধরে ফ্যাসিবাদী শাসন চালাতে গিয়ে যারা মানুষের ঈদ উৎসবের আনন্দকে ধ্বংস করে দিয়েছে, যারা অস্ত্রের জোরে মায়েদের বুক থেকে তাদের প্রিয় সন্তানদের কেড়ে নিয়েছে, যারা দেশের অসংখ্য অগণিত সন্তানকে পিতৃহারা-মাতৃহারা করেছে, এই বাংলাদেশে তাদের বিচার হতেই হবে। যে কোনও মূল্যে পলাতক স্বৈরাচার আর তাদের দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করার মাধ্যমে দেশে আইন ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করে সন্তানহারা মায়েদের মনে স্বজন হারা শোকসন্তপ্ত পরিবারে একটু হলেও সান্ত্বনার বার্তা দেয়া হবে। এবারের ঈদে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অভিঘাত সত্বেও ঈদ আমাদের জাতীয় জীবনের সংস্কৃতির দ্যোতক, আবহমানকাল থেকে শুভেচ্ছা ও আনন্দের আদান প্রদান।

ঈদুল ফিতরের দিনে আমি আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করি বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য।

উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো রাজকীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য লন্ডন পৌঁছান, হিথ্ররো আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে সরাসরি তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ডেভেনশায়ার প্লেসে ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’ এ ভর্তি করা হয়।

১৭ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন এই হাসপাতালে অধ্যাপক জন প্যাট্টিক কেনেডির তত্ত্বাবধায়ননে। এরপর লন্ডন ক্লিনিকে তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রস এর তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন থাকবেন খালেদা জিয়া।

৭৯ বছর বয়সি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।

২০১৫ সালে লন্ডনে ঈদের পর ২৫ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন নেতা-কর্মীদের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ওই অনুষ্ঠানে মায়ের পাশে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানও ছিলেন।

২০১৮ সালে বিএনপির চেয়ারপারসনকে একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হয়ে পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। করোনা সময়কালে সরকার তাকে বিশেষ কারামুক্তি দেয়। কারাবন্দি অবস্থায় চারটি ঈদে কেটেছে কারাগারে ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।

শেয়ার করুন

দেশবাসীকে খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের ঈদ শুভেচ্ছা

সময় ০৮:৩৩:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ মার্চ ২০২৫

লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘লন্ডনে ঈদুল ফিতর উদযাপন হচ্ছে। আপনারা জানেন, ম্যাডাম উনার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের বাসায় আছেন। ঈদের দিনটি উনি বাসায় আপনজনদের নিয়ে একান্তে কাটাচ্ছেন।”

‘‘বাসায় দুই পুত্রবধূ (ডা. জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শামিলা রহমান) আছেন… আছেন তিন নাতনি (ব্যারিস্টার জায়মা রহমান, জাফিয়া রহমান, জাহিয়া রহমান)। ম্যাডামকে ঘিরে ঈদের সব আয়োজন তারাই সাজিয়েছেন।কারণ দীর্ঘদিন বছর পর ম্যাডাম তার আপনজনদের সাথে ঈদ করতে যাচ্ছে। বুঝতেই পারছেন এখানে অনেক আবেগ জড়িত।”

খালেদা জিয়ার লন্ডনে এটি তৃতীয় ঈদ উদযাপন। এবার দশ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ঈদ পালন করছেন। এর আগে ২০১৭ সালে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়ে ছেলের বাসায় ঈদুল আজহা উদযাপন করেছিলেন। এরও আগে এক-এগারোর পরে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে প্রায় আট বছর পর লন্ডনে পরিবারের সদস‌্যদের সা‌থে ঈদ উদযাপন করেছিলেন।

খালেদা জিয়া কেমন আছেন জানতে চাইলে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘‘তিনি এই মুহূর্তে আগের চেয়ে অনেকটা ভালো আছেন। আগে চাইতে তিনি বলতে পারেন আলহামদুলিল্লাহ উনি মাচ বেটার।”

জাহিদ বলেন, ‘‘ম্যাডাম দেশবাসীসহ দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবও দেশবাসীদের আপনাদের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, যে কোনো মূল্যে পলাতক স্বৈরাচার আর তাদের দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করার মাধ্যমে দেশে আইন ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করাই হোক এবারের ঈদে আমাদের অঙ্গীকার।

রোববার গণমাধ্যমে প্রেরিত ঈদ শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, ত্যাগ-তাকওয়া আর সংযমের শিক্ষা গ্রহণের মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর ব্যক্তি, পরিবার সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনকে সুন্দর ও পরিশুদ্ধ করার পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর বিশ্বজনীন ঐক্য, সংহতি, সহমর্মিতা এবং অনাবিল আনন্দের বার্তা নিয়ে এলো পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর প্রতি জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও মোবারকবাদ। ঈদ মুবারক।

ব্যক্তি জীবনকে পরিশুদ্ধ ও সংযমী করে গড়ার লক্ষ্যে মোমিন মুসলমানেরা মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর হৃদয় আনন্দে উপচে পড়া ঈদুল ফিতর সমাগত হয়।

তিনি বলেন, বীর জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়ে দীর্ঘ দেড় দশক পর গুম, খুন, অপহরণের ভয়হীন-স্বাধীন সার্বভৌম এক গণতান্ত্রিক পরিবেশে দেশের আপামর জনগণ এ বছর পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে। এবারের ঈদ আনন্দে তাই যোগ হয়েছে উচ্ছ্বাস-উৎসাহ উদ্দীপনার এক নতুন মাত্রা।

তবে মানুষের মনে পবিত্র আনন্দ-উচ্ছ্বাসের এমন এক বাধাহীন ঊর্মিমুখর সময়েও অনেক মায়েদের মনে আনন্দ নেই। অনেক পরিবারে নেই উৎসবের আমেজ। কারণ ফ্যাসিবাদের দীর্ঘ দেড় দশকের গুম, খুন, অপহরণ, জুলুম নির্যাতনে সন্তান স্বজনহারা লাখো পরিবারে নেমে এসেছিলো জাহেলিয়াতের অন্ধকার। শুধুমাত্র জুলাই-আগস্টেই পলাতক স্বৈরাচারের পতনের শেষ দিনগুলোতে প্রাণ হারিয়েছেন নানা শ্রেণী পেশার হাজারো মানুষ। ছাত্র-যুবক-কৃষক-শ্রমিক-রাজনৈতিক কর্মী কিংবা নিরীহ পথচারী এমনকি নারী শিশু বৃদ্ধ পর্যন্ত ফ্যাসিস্টের বুলেট থেকে রক্ষা পায়নি। আহত হয়েছেন ২০ সহস্রাধিক মানুষ।

ফ্যাসিবাদ পতন আন্দোলনে হতাহতদের পরিবারগুলোতে আজ তাই ঈদ উৎসবের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস নেই। ঈদের দিনেও হয়তো সন্তানহারা কোনো মায়ের চোখে অশ্রু। এই আনন্দঘন সময়েও স্বজনদের হৃদয়ে আপনজন হারানোর নিঃশব্দ কান্না। মাফিয়া চক্রের নির্মমতায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত প্রিয় মানুষটির কাছে বসেই অনেককে ঈদ আনন্দের এই দিনটি কাটাতে হচ্ছে আশা নিরাশা আর হতাশায়।

ঈদুল ফিতর নির্মল আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মর্মবাণী মানবজাতির কাছে পৌঁছে যায় তা হচ্ছে ‘সকলের তরে সকলে আমরা’। এই মর্মবাণী মানসিক কদর্য, অন্যায়, অবিচার ও নিষ্ঠুর সামাজিক অসাম্যকে অতিক্রম করে এক নিবিড় ভ্রাতৃত্ববোধের প্রেরণা জাগায়। আর এই প্রেরণায় উদ্দীপ্ত হয়ে সমাজের অপেক্ষাকৃত দরিদ্র, অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষের প্রতি সাহায্য ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া মুসলমান হিসাবে আমাদের কর্তব্য।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দীর্ঘ দেড় দশক ধরে ফ্যাসিবাদী শাসন চালাতে গিয়ে যারা মানুষের ঈদ উৎসবের আনন্দকে ধ্বংস করে দিয়েছে, যারা অস্ত্রের জোরে মায়েদের বুক থেকে তাদের প্রিয় সন্তানদের কেড়ে নিয়েছে, যারা দেশের অসংখ্য অগণিত সন্তানকে পিতৃহারা-মাতৃহারা করেছে, এই বাংলাদেশে তাদের বিচার হতেই হবে। যে কোনও মূল্যে পলাতক স্বৈরাচার আর তাদের দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করার মাধ্যমে দেশে আইন ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করে সন্তানহারা মায়েদের মনে স্বজন হারা শোকসন্তপ্ত পরিবারে একটু হলেও সান্ত্বনার বার্তা দেয়া হবে। এবারের ঈদে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অভিঘাত সত্বেও ঈদ আমাদের জাতীয় জীবনের সংস্কৃতির দ্যোতক, আবহমানকাল থেকে শুভেচ্ছা ও আনন্দের আদান প্রদান।

ঈদুল ফিতরের দিনে আমি আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করি বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য।

উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো রাজকীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য লন্ডন পৌঁছান, হিথ্ররো আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে সরাসরি তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ডেভেনশায়ার প্লেসে ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’ এ ভর্তি করা হয়।

১৭ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন এই হাসপাতালে অধ্যাপক জন প্যাট্টিক কেনেডির তত্ত্বাবধায়ননে। এরপর লন্ডন ক্লিনিকে তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রস এর তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন থাকবেন খালেদা জিয়া।

৭৯ বছর বয়সি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।

২০১৫ সালে লন্ডনে ঈদের পর ২৫ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন নেতা-কর্মীদের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ওই অনুষ্ঠানে মায়ের পাশে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানও ছিলেন।

২০১৮ সালে বিএনপির চেয়ারপারসনকে একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হয়ে পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। করোনা সময়কালে সরকার তাকে বিশেষ কারামুক্তি দেয়। কারাবন্দি অবস্থায় চারটি ঈদে কেটেছে কারাগারে ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।