১২:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুর্নীতিতে বুদ কুমিল্লার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী নাসরুল্লাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সময় ০৪:১২:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫
  • / 88

দুর্নীতিতে বুদ কুমিল্লার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী নাসরুল্লাহ

কুমিল্লা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসরুল্লাহর বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও তিনি বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ রয়েছে, গত পাঁচ বছরে কুমিল্লা অঞ্চলে ৫ হাজার কোটি টাকার টেন্ডারের কাজ হয়েছে, যার প্রতিটিতেই তিনি ১০ শতাংশ কমিশন নিয়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ৯ম গ্রেডের কর্মকর্তা হয়েও তিনি ৫ম গ্রেডের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে চাকরি করছেন। সিন্ডিকেট গঠন করে দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য এবং টেন্ডার জালিয়াতির মতো অনিয়মের মাধ্যমে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী এই প্রকৌশলী এখনো কিভাবে চাকরি করে যাচ্ছেন এবং বেপোরোয়াভাবে কাজও করছেন, সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন খোদ তার অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাই।

সিন্ডিকেটে করে ৫ বছরে দুর্নীতি, নিয়োগ, টেন্ডারসহ নানা কুকর্মের তথ্য বাংলা অ্যাফেয়ার্সের হাতে এসেছে। এত কিছুর পরেও আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী এ প্রকৌশলী আছেন বহাল তাবিয়তে। প্রশ্ন উঠেছে তাঁর শক্ত খুঁটির জোর নিয়েও।

২০২০ সালের ২০ অক্টোবর নাসরুল্লাহ’র আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ব্যক্তিগত স্টাফ কামাল হোসেনের মাধ্যমে কুমিল্লা বদলি হয়ে আসেন। এসেই স্থানীয় ঠিকাদারদের জানিয়ে দেন ‘৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে কুমিল্লায় এসেছি, মন্ত্রীর সিন্ডিকেট সদস্য হয়েছি’।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০২১ সালের অক্টোবরে দেশের ৩০টি জেলায় পাইপলাইন স্থাপন, গভীর নলকূপ স্থাপন, ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণ ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের জন্য ১,৮৮২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

কুমিল্লা জেলায় এই প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যার টেন্ডার আইডি ৯২১৩৯৭।

এই টেন্ডারে প্রথম লোয়েস্ট দরদাতা ছিলেন মেসার্স জিলানী ট্রেডার্স, যাঁরা ২৩ কোটি ৪৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা দর প্রস্তাব দেন। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা নোয়াব, যাঁদের দর ছিল ২৩ কোটি ৫১ লাখ ৪৫ হাজার ১২৭ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন গোপালগঞ্জের মনির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশন, যাঁরা ২৫ কোটি ৬৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪১ টাকা দর প্রস্তাব দেন।

কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে নির্বাহী প্রকৌশলী দরপত্রের শর্ত লঙ্ঘন করে তৃতীয় লোয়েস্ট দরদাতা গোপালগঞ্জের ঠিকাদার কামাল হোসেন এবং কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা আবুল কালাম আজাদকে কাজ পাইয়ে দেন। এই অনিয়ম নিশ্চিত করতে নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকল্প পরিচালকের কাছে সিএস পাঠান, যাতে প্রকল্পের ব্যয় ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা বেশি দেখানো হয়।

তদন্তে জানা গেছে, কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আনোয়ার ফাউন্ডেশন নির্ধারিত টার্নওভার মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি এবং ভুয়া পেমেন্ট সার্টিফিকেট তৈরি করে ই-জিপিতে জমা দেয়। এই সিন্ডিকেট দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা লুটপাট করে নিজেদের পকেট ভারী করেছে।

এদিকে, দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পরিচালিত একটি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে সম্প্রতি জামালপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদকে ওএসডি করা হয়েছে। অথচ একই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ রয়ে গেছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

তদন্তে জানা গেছে, নাসরুল্লাহ পূর্ব সরকারের এক মন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন, যার ফলে ৯ম গ্রেডের কর্মকর্তা হয়েও তিনি ৫ম গ্রেডের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিসিএস ক্যাডার পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও তিনি বিসিএস ক্যাডার পোস্ট পেয়েছেন, এমনকি টাকার বিনিময়ে আরও ১৬ জন নন-ক্যাডার কর্মকর্তাকে ক্যাডার পদে পদায়নের মাস্টারমাইন্ডও তিনি।

কুমিল্লা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এই প্রকৌশলী দুর্নীতির এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যা অনেকের কাছেই অলৌকিক মনে হতে পারে। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে আড়াই কোটি টাকার কাজ শেষ করে তিনি দেখিয়েছেন অবিশ্বাস্য দক্ষতা!

একজন ঠিকাদার, যিনি নাম প্রকাশ করতে না করার শর্তে জানান, যে প্রকল্পের আওতায় ১০০টি গভীর নলকূপ ও ১০০টি আয়রন রিমুভাল প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছিল। বাস্তবে এ কাজ সম্পন্ন করতে অন্তত ছয় মাস সময় লাগার কথা, কিন্তু কুমিল্লায় সেটি মাত্র সাত দিনেই শেষ দেখানো হয়! এ প্রকল্পটি ছিল ২০২১-২০২২ অর্থবছরের পল্লী অঞ্চলে পানি সরবরাহ প্রকল্পের অংশ, যার দরপত্র আইডি ছিল ৭০৮৬৪২ এবং প্যাকেজ নম্বর ভিডব্লিউএসপি-১৯৯৮/৫।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, কার্যাদেশ পাওয়ার চার দিনের মাথায় কাজ শুরু না হলেও, মেসার্স রুদ্র কনস্ট্রাকশন নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করা হয়। বিষয়টি তখন তদন্ত হয়নি, তবে এখন অনেক ঠিকাদার এই প্রকৌশলীর বিচারের দাবি জানাচ্ছেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর জনরোষের ভয়ে নাসরুল্লাহর অন্যতম সহযোগী ঠিকাদার কামাল আত্মগোপনে চলে গেলেও নির্বাহী প্রকৌশলী নাসরুল্লাহ বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারে থাকা কুমিল্লার এক উপদেষ্টার ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় নাসরুল্লাহ এখনও অক্ষত। যদিও একাধিক ব্যক্তি এ তথ্যের সত্যতা মৌখিকভাবে স্বীকার করেছেন, তবে কেউই প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং স্থানীয় ঠিকাদারদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা দাবি তুলছেন, যেমনভাবে জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদকে ওএসডি করা হয়েছে, তেমনি কুমিল্লার প্রকৌশলী নাসরুল্লাহর বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। তবে কুমিল্লায় নাসরুল্লাহর নেতৃত্বে দুর্নীতির যে চিত্র উঠে এসেছে, তাতে তদন্ত করে তার বিচার না হলে জনসাধারণের মধ্যে আরও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

শেয়ার করুন

দুর্নীতিতে বুদ কুমিল্লার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী নাসরুল্লাহ

সময় ০৪:১২:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

কুমিল্লা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসরুল্লাহর বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও তিনি বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ রয়েছে, গত পাঁচ বছরে কুমিল্লা অঞ্চলে ৫ হাজার কোটি টাকার টেন্ডারের কাজ হয়েছে, যার প্রতিটিতেই তিনি ১০ শতাংশ কমিশন নিয়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ৯ম গ্রেডের কর্মকর্তা হয়েও তিনি ৫ম গ্রেডের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে চাকরি করছেন। সিন্ডিকেট গঠন করে দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য এবং টেন্ডার জালিয়াতির মতো অনিয়মের মাধ্যমে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী এই প্রকৌশলী এখনো কিভাবে চাকরি করে যাচ্ছেন এবং বেপোরোয়াভাবে কাজও করছেন, সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন খোদ তার অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাই।

সিন্ডিকেটে করে ৫ বছরে দুর্নীতি, নিয়োগ, টেন্ডারসহ নানা কুকর্মের তথ্য বাংলা অ্যাফেয়ার্সের হাতে এসেছে। এত কিছুর পরেও আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী এ প্রকৌশলী আছেন বহাল তাবিয়তে। প্রশ্ন উঠেছে তাঁর শক্ত খুঁটির জোর নিয়েও।

২০২০ সালের ২০ অক্টোবর নাসরুল্লাহ’র আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ব্যক্তিগত স্টাফ কামাল হোসেনের মাধ্যমে কুমিল্লা বদলি হয়ে আসেন। এসেই স্থানীয় ঠিকাদারদের জানিয়ে দেন ‘৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে কুমিল্লায় এসেছি, মন্ত্রীর সিন্ডিকেট সদস্য হয়েছি’।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০২১ সালের অক্টোবরে দেশের ৩০টি জেলায় পাইপলাইন স্থাপন, গভীর নলকূপ স্থাপন, ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণ ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের জন্য ১,৮৮২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

কুমিল্লা জেলায় এই প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যার টেন্ডার আইডি ৯২১৩৯৭।

এই টেন্ডারে প্রথম লোয়েস্ট দরদাতা ছিলেন মেসার্স জিলানী ট্রেডার্স, যাঁরা ২৩ কোটি ৪৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা দর প্রস্তাব দেন। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা নোয়াব, যাঁদের দর ছিল ২৩ কোটি ৫১ লাখ ৪৫ হাজার ১২৭ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন গোপালগঞ্জের মনির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশন, যাঁরা ২৫ কোটি ৬৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪১ টাকা দর প্রস্তাব দেন।

কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে নির্বাহী প্রকৌশলী দরপত্রের শর্ত লঙ্ঘন করে তৃতীয় লোয়েস্ট দরদাতা গোপালগঞ্জের ঠিকাদার কামাল হোসেন এবং কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা আবুল কালাম আজাদকে কাজ পাইয়ে দেন। এই অনিয়ম নিশ্চিত করতে নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকল্প পরিচালকের কাছে সিএস পাঠান, যাতে প্রকল্পের ব্যয় ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা বেশি দেখানো হয়।

তদন্তে জানা গেছে, কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আনোয়ার ফাউন্ডেশন নির্ধারিত টার্নওভার মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি এবং ভুয়া পেমেন্ট সার্টিফিকেট তৈরি করে ই-জিপিতে জমা দেয়। এই সিন্ডিকেট দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা লুটপাট করে নিজেদের পকেট ভারী করেছে।

এদিকে, দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পরিচালিত একটি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে সম্প্রতি জামালপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদকে ওএসডি করা হয়েছে। অথচ একই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ রয়ে গেছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

তদন্তে জানা গেছে, নাসরুল্লাহ পূর্ব সরকারের এক মন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন, যার ফলে ৯ম গ্রেডের কর্মকর্তা হয়েও তিনি ৫ম গ্রেডের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিসিএস ক্যাডার পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও তিনি বিসিএস ক্যাডার পোস্ট পেয়েছেন, এমনকি টাকার বিনিময়ে আরও ১৬ জন নন-ক্যাডার কর্মকর্তাকে ক্যাডার পদে পদায়নের মাস্টারমাইন্ডও তিনি।

কুমিল্লা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এই প্রকৌশলী দুর্নীতির এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যা অনেকের কাছেই অলৌকিক মনে হতে পারে। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে আড়াই কোটি টাকার কাজ শেষ করে তিনি দেখিয়েছেন অবিশ্বাস্য দক্ষতা!

একজন ঠিকাদার, যিনি নাম প্রকাশ করতে না করার শর্তে জানান, যে প্রকল্পের আওতায় ১০০টি গভীর নলকূপ ও ১০০টি আয়রন রিমুভাল প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছিল। বাস্তবে এ কাজ সম্পন্ন করতে অন্তত ছয় মাস সময় লাগার কথা, কিন্তু কুমিল্লায় সেটি মাত্র সাত দিনেই শেষ দেখানো হয়! এ প্রকল্পটি ছিল ২০২১-২০২২ অর্থবছরের পল্লী অঞ্চলে পানি সরবরাহ প্রকল্পের অংশ, যার দরপত্র আইডি ছিল ৭০৮৬৪২ এবং প্যাকেজ নম্বর ভিডব্লিউএসপি-১৯৯৮/৫।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, কার্যাদেশ পাওয়ার চার দিনের মাথায় কাজ শুরু না হলেও, মেসার্স রুদ্র কনস্ট্রাকশন নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করা হয়। বিষয়টি তখন তদন্ত হয়নি, তবে এখন অনেক ঠিকাদার এই প্রকৌশলীর বিচারের দাবি জানাচ্ছেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর জনরোষের ভয়ে নাসরুল্লাহর অন্যতম সহযোগী ঠিকাদার কামাল আত্মগোপনে চলে গেলেও নির্বাহী প্রকৌশলী নাসরুল্লাহ বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারে থাকা কুমিল্লার এক উপদেষ্টার ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় নাসরুল্লাহ এখনও অক্ষত। যদিও একাধিক ব্যক্তি এ তথ্যের সত্যতা মৌখিকভাবে স্বীকার করেছেন, তবে কেউই প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং স্থানীয় ঠিকাদারদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা দাবি তুলছেন, যেমনভাবে জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদকে ওএসডি করা হয়েছে, তেমনি কুমিল্লার প্রকৌশলী নাসরুল্লাহর বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। তবে কুমিল্লায় নাসরুল্লাহর নেতৃত্বে দুর্নীতির যে চিত্র উঠে এসেছে, তাতে তদন্ত করে তার বিচার না হলে জনসাধারণের মধ্যে আরও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।