ঢাকা ০৪:১২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বশিরে বিভ্রান্তি, ফারুকীর হুঁশিয়ারি

দুই উপেদষ্টা নিয়ে বিপাকে সরকার!

উৎপল দাস
  • সময় ০৫:৪২:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪
  • / 96

বশির এবং ফারুকী

৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকার নিয়ে নানা সমালোচনা থাকলেও এবার বিপাকে পরেছে নতুন দুই উপদেষ্টাকে নিয়েই। সদ্য শপথ নেয়া ইউনূস সরকারের দুই উপদেষ্টার মধ্যে রয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন এবং সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তাদের মধ্যে সবচে বেশি সমালোচিত হচ্ছেন ফারুকী। যদিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতারাই এখন বলছেন এমন উপদেষ্টা তারা চাননি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম অভিযোগ করে বলেছেন, খুনি হাসিনার তেলবাজরাও উপদেষ্টা হচ্ছেন। তার এই স্ট্যাটাসের পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে ইতিবাচক হিসাবে নিলেও তাকে নিয়ে খোদ ট্রল করছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অনেক নেতকর্মী।

সারজিস কোটা
সারজিস কোটা

এমনকি যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন, তারাই এখন সারজিস আলমের স্ট্যাটাসকে ব্যঙ্গ করছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা মনে করছেন, এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। অনেকেই বলছেন, যে কোটা প্রথা বিলুপ্তির জন্য; দেশের এত বড় পট পরিবর্তন এবং সেখানে নেতৃত্ব দেয়া সারজিস আলমই যখন এই কোটা উপদেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তখন বুঝার আর বাকি নেই কিছুই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলমের পাশাপাশি প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, যশোরে বিএনপির প্রতিবাদ শুরু করেছে। এছাড়া বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফুটে উঠেছে তীব্র পতিক্রিয়া।

যদিও বাণিজ্য উপদেষ্টা তার নিজের প্রথম কর্মদিবসেই নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। সেখ বশির উদ্দিন তার বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, শুরু থেকেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চেতনার পক্ষে ছিলেন। আর এখন কোনো রাজনৈতিক দল, কোম্পানি ও আত্মীয়-স্বজন কারও প্রতিনিধিত্ব করছেন না। বরং সকলের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করতে চান। আজ সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভার গ্রহণের পরে একথা বলেন তিনি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সোহান শাহ নামের (৩০) এক যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামির তালিকায় নাম রয়েছে ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’ নামের এক ব্যক্তির। নামটি আংশিকভাবে মিলে যায় গতকাল রোববার অর্ন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা হওয়া ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিনের সঙ্গে। এমনকি সেখ বশিরের বাবার নামের সঙ্গে আসামি তালিকায় থাকা ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’র বাবার নামের আংশিক মিল রয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’ নাম দিয়ে সেখ বশির উদ্দিনকে আসামি করা হয়েছে কি না। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, নামের আংশিক সংগতি ও অসংগতি থাকলেও তিনি নিশ্চিত নন, মামলাটি তাঁর নামে হয়েছে কি না।

সেখ বশির উদ্দিন
সেখ বশির উদ্দিন

অন্যদিকে পুলিশ বলছে, শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া ও সেখ বশির উদ্দিন একই ব্যক্তি কি না, তারা খতিয়ে দেখছে।

মামলার বাদী নিহত সোহান শাহর মা সুফিয়া বেগম বলেছেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ তাঁর ছেলে হত্যার জন্য দায়ী। আসামি কারা করেছে, তা তিনি বলতে পারবেন না। কারা নাম দিয়েছে, তা–ও তিনি বলতে পারবেন না। তিনি তাঁর ছেলে হত্যার ন্যায়বিচার চান।

সোহান হত্যা মামলাটি গত ১৮ অক্টোবর রাজধানীর রামপুরা থানায় রেকর্ড হয়। মামলার নথিপত্র বলছে, এতে মোট ৫৭ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে।

মামলার ৫৭ জন আসামির মধ্যে ৪৯ নম্বর তালিকায় নাম রয়েছে শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়ার। পরিচয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি আওয়ামী লীগ নেতা। বাবার নাম শেখ আকিজ উদ্দিন ভূঁইয়া।

মামলার ৪৮ নম্বরে আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে শেখ আফিল উদ্দিন ভূঁইয়া। পরিচয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি সাবেক সংসদ সদস্য, যশোর-১। বাবার নাম শেখ আকিজ উদ্দিন ভূঁইয়া।

প্রয়াত সেখ আকিজ উদ্দিন আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একটি আকিজ। সেখ আকিজের ছেলেদের মধ্যে সেখ আফিল উদ্দিন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।

সেখ আকিজের সন্তানেরা আলাদাভাবে ব্যবসা করেন। সেখ বশির উদ্দিন আকিজ–বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে গতকাল শপথ নেন সেখ বশির উদ্দিন। তার পর থেকে মামলার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে।

মামলার বিষয়টি নিয়ে আজ সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চেয়েছিলেন সেখ বশিরের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমি খুব ভালো জানি না। আমাদের লিগ্যাল টিম বিষয়টি দেখছে। ওখানে (মামলার এজাহার) আমার নামের, আবার বাবার নামের কিছু সংগতি আছে, কিছু অসংগতি আছে। এটা আসলেই আমি কি না, আমি নিশ্চিত নই। নিশ্চিত হলে লিগ্যালি ফেস (আইনিভাবে মোকাবিলা) করা হবে।’

উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে বিভিন্নজনের মন্তব্যের বিষয়ে সেখ বশির বলেন, ‘যাঁরা আন্দোলন করেছেন, তাঁদের আবেগের সঙ্গে আমার দ্বিমত নেই। তবে আমার ধারণা, ওনারা মিস ইনফরমড (ভুল তথ্য পাওয়া)। ওনাদের তথ্যের ভিত্তি সঠিক নয়।’

মামলার এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন সোহান শাহ। তাঁর গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলায়। তিনি ভারগো গার্মেন্টস কারখানায় মেকানিক্যাল বিভাগের প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করতেন। গত ১৯ জুলাই রাজধানীর রামপুরা সিএনজি স্টেশনের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন সোহান শাহ।

মামলায় বলা হয়, সেদিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগসহ অন্যরা ছাত্র–জনতার আন্দোলনে নির্বিচার গুলি চালায়। তখন সোহান শাহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে সোহান শাহকে স্থানীয় ফারাজী হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন ওই হাসপাতালের মালিক ইমন ফারাজীর নির্দেশে (মামলার ১৯ নম্বর আসামি) তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। পরে সোহান শাহকে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এরপর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২৩ আগস্ট ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। সেখানেই গত ২৪ আগস্ট তিনি মারা যান।

মামলার তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ সেপ্টেম্বর সোহান শাহর মা সুফিয়া বেগম ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে একটি নালিশি মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে সেই মামলা থানায় রেকর্ড করা হয়।

মামলায় হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারী হিসেবে মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সাইফুজ্জামান শিখর দেশত্যাগী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব ছিলেন। তাঁর বাবা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সংসদ সদস্য ছিলেন।

সোহান শাহ হত্যা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দেশত্যাগী শেখ হাসিনাকে। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন ও সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম।

মামলায় নাম থাকা শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া ও সেখ বশির উদ্দিন একই ব্যক্তি কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল পুলিশের কাছে। রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান আকন্দ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছেলেকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সুফিয়া বেগম নামের এক নারী ঢাকার আদালতে একটি নালিশি মামলা করেন। আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য নির্দেশ দেন। সেই মামলায় শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া নামের এক ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে।

ওসি বলেন, ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া বর্তমান উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন কি না, সেটি তাঁরা খতিয়ে দেখছেন।’ তিনি আরও বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এনে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলা সদরের আলতাফ হোসেন মহিলা কলেজ রোডের বাড়িতে গিয়ে আজ সুফিয়া বেগমকে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, তিনি মামলা করেছেন। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ তাঁর ছেলেকে মেরেছে। সুফিয়া বেগমের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, মামলার আসামির তালিকা কে ঠিক করেছেন? জবাবে তিনি বলেন, আসামি কারা হয়েছে, কে করেছে, তা তিনি বলতে পারবেন না।

মামলা করার সময় তাঁর সঙ্গে কে কে ছিলেন, তা জানতে চাইলে সুফিয়া বেগম বলেন, তা তিনি জানেন না।

তবে বাংলা অ্যাফেয়ার্সের চোখে সেখ বশির উদ্দিন এবং মামলার আসামি শেখ বশির উদ্দিন বলা হলেও একটি অসঙ্গতির প্রমাণ মিলেছে। উইকিপিডিয়া অনুসারে আকিজ-বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে যার নাম লেখা রয়েছে, তিনি সেখ বশির উদ্দিন। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে নাম লেখা রয়েছে ‘শেখ বশির উদ্দিন।’ খোদ সরকারের ওয়েবসাইটেই বাণিজ্য উপদেষ্টার নাম লেখা রয়েছে মামলার আসামির নামের সাথে সঙ্গতি রেখেই। এখন প্রশ্ন তুলে একজন বলেছেন, সরকারি ওয়েবসাইটে যেভাবে নাম লেখা রয়েছে শেখ বশিরউদ্দিন হিসাবে। নবীন আহমেদ নামের একজন বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন, সরকারি ওয়েবসাইটে যেভাবে বাণিজ্য উপদেষ্টার নাম লেখা রয়েছে, তাতে সন্দেহ আরো দানা বাধছে। কেননা, সরকারি ওয়েবসাইটে যেটা প্রকাশ করা হচ্ছে, সেটাকেই সঠিক হিসাবে গণ্য করা হবে। যেহেতু অন্তবর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনাতেই ওয়েবসাইট আপডেট করা হয়েছে। সেখানে একজন উপদেষ্টার নামের বানান যদি সঠিক ভাবে প্রকাশ করা না হয়, তাহলে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রয়েছে। তিনি সরাসরি বলেন, তাহলে কি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিজেই জানে না তার উদেষ্টার সঠিক নাম! বিস্ময় প্রকাশ করে নবীন বলেন, এটা কখনোই কাম্য নয়। সময় নিয়ে হলেও সঠিক তথ্য মানুষের সামনে প্রচার ও প্রকাশ করা উচিত। এমন ছোট ভুলের জন্য হলেও সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়া দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী আকিজ–বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেখ বশির উদ্দিনের বিরুদ্ধে বঙ্গভবনের সামনে মশাল মিছিল করেছে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা।
একই সঙ্গে রোববার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় শপথ অনুষ্ঠান শেষে সেখ বশিরের বিরুদ্ধে তারা মশাল মিছিল করেন তারা।

মশাল মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা বশির উদ্দিনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তারা উপদেষ্টা পরিষদে সেখ বশিরের জায়গা পাওয়া মানে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া চলছে। তারা অবিলম্বে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সেখ বশিরকে সরিয়ে দেয়ার দাবি জানান।

মশাল মিছিলে অংশ নেয়া গণপরিষদের এক কর্মী বলেন, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আফিল উদ্দিনের ভাইকে উপদেষ্টা পরিষদে কোনোভাবে মেনে নেয়া হবে না। কিসের ভিত্তিতে হাজারো প্রাণের বিনিময়ে আসা অন্তর্বর্তী সরকারে বশির উদ্দিনের ঠাঁই হলো, তা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন।

তিন উপদেষ্টা

এর আগে, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন নতুন তিন উপদেষ্টাকে শপথ পাঠ করান।
শুধু যে বাণিজ্য উদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বা শেখ বশির উদ্দিনকে নিয়েই বিপাকে রয়েছে বর্তমান সরকার তেমনটা নয়। সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীকে নিয়েও বিপাকে পরেছে ড. ইউনূসের সরকার।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ গতকাল রাতেই মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (১০ নভেম্বর) রাত সোয়া ১০টায় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি বটতলা এলাকা থেকে শুরু হয়ে শহীদ সালাম-বরকত হল ঘুরে পুনরায় বটতলায় এসে শেষ হয়। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়ামের সঞ্চালনায় শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান লিমন বলেন, মুজিব এবং মুজিববাদকে পুঁজি করে ফ্যাসিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠা ও গণহত্যা চালানো হয়েছে সেই ফ্যাসিস্ট আদর্শের প্রতি সহানুভূতিশীল কাউকে অভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্র জনতার সরকারে অন্তর্ভুক্তি সরাসরি শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি।

জাবিতে প্রতিবাদ
জাবিতে প্রতিবাদ

মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান শাহরিয়ার বলেন, প্রায় দুই হাজার ভাইয়ের রক্তের বিনিময়ে আমরা এই সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছি। আপনারা দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করার কাজ করবেন। যেভাবে আপনারা ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছেন, অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগকে এই বাংলার মাটিতে নিষিদ্ধ করতে হবে। যারা আমার ভাইদের আহত করেছে, শহীদ করেছে, তাদেরকে অতিদ্রুত বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এর বদলে ফ্যাসিবাদের কোনও দোসরকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হলে আমরা এর কঠিন জবাব দেবো।

সমাপনী বক্তব্যে ৪৯ ব্যাচের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মেহরাব সিফাত বলেন, শহীদের রক্তস্রোতের বিনিময়ে আমরা যে সরকার পেয়েছি, তার মাধ্যমে দেশের একটি বৃহৎ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখি। জাতীয় ঐক্যের এ সময়ে ফ্যাসিবাদপ্রেমী মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে উপদেষ্টা ঘোষণা করা হয়েছে। যারা বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিবাদের গুণকীর্তন করেছে, তাদেরকে কোনোভাবেই ক্ষমতায় দেখতে চাই না। পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত ব্যক্তি ছাড়া কাউকে দায়িত্বে আনা যাবে না।

তবে ফারুকীকে নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (আমির সৈয়দ রেজাউল করিম চরমোনাই) পক্ষ থেকে। দলটির পক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ ও সেক্রেটারি মাওলানা মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম রোববার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, সমকামিতা, লিভ-টুগেদার ও পরকিয়াকে প্রমোটকারী চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীকে উপদেষ্টার পদ থেকে প্রত্যাহার করতে হবে।

ইমলামী আন্দোলন
ইমলামী আন্দোলন

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, রুচি ও চিন্তা ভ্রষ্ট কোন মানুষকে উপদেষ্টা দেখতে চায় না দেশবাসী। ফারুকীর মতো অসুস্থ মানসিকতার লোককে উপদেষ্টা বনানোর জন্য হাজার হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দেয়নি। জীবন দিয়েছে দেশপ্রেমিক আদর্শ নাগরিকদের মাধ্যমে একটি নতুন কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য। সেই আদর্শ নাগরিকদের মাধ্যমেই পরিচালিত হবে বাংলাদেশ। আওয়ামী সুবিধাভোগী, দোসর ফারুকী দেশের নাগরিক হলেও উচ্ছিষ্টভোগী বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়নের ব্যস্ত থেকেছে। চলচ্চিত্র নির্মাতা হয়েও জাতীয় চেতনা, বোধ, বিশ্বাস ও জাতিসত্তাকে ধারণ করে নাটক-সিনেমার মাধ্যমে সুস্থ ধারার বিনোদন দিতে যে ব্যর্থ হয়েছে সে কিভাবে উপদেষ্টা হয়, তা আমাদের বোধগম্য নয়। এজন্য আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো অতিসত্বর মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীকে উপদেষ্টা থেকে প্রত্যাহার করুন। যাকে তাকে ধরে এনে উপদেষ্টা বানাবেন না। উপদেষ্টা বানানোর আগে দেখবেন দেশ, জাতি-মানবতার জন্য তার কি অবদান রয়েছে।
নেতৃদ্বয় আরও বলেন অশ্লীলতা প্রসারকারী মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী কোন বিবেচনায় উপদেষ্টা হলেন? জুলাই বিপ্লবের সময়ে ‍উনি ফ্যাসিবাদ বিরোধী স্টাটাস দিছিলেন তাই? তাহলে যারা ফ্যাসিবাদের আমলে নির্যাতিত, দেশান্তরী হয়েছেন তাদেরকেও ধরে এনে উপদেষ্টা বানান!
একই প্রশ্ন শেখ বশির উদ্দিনের ক্ষেত্রেও। সেও আওয়ামী লীগ আমলে সুবিদাভোগী। তাকে কোন বিবেচনায় উপদেষ্টা করা হলো?
যাকে আপনার ভালো লাগে, যার সাথে আপনাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে তাকে রাষ্ট্রীয় পদে পদায়িত করার জন্য জনতা রাজপথে লড়াই করেনি।
উপদেষ্টা নিয়োগে লোক বাছাই করে কারা? কে কোন বিবেচনায় উপদেষ্টা হলেন তা দেশবাসী জানতে চায়।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা নয়ন সাহা বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে জানান, মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীর মত চিহ্নিত শাহবাগী আওয়ামী লীগার হয়ে গেল উপদেষ্টা। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যার অন্যতম আসামী শেখ বশির উদ্দিনও উপদেষ্টা হলেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেদেরকে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভাবেন কিন্তু তাদের কাজকর্ম বলে দেয় আওয়ামী লীগের জন্য মাঠ গোছানোর কাজই তারা করে যাচ্ছেন। সমন্বয়ক সারজিস আলম এগুলো নিয়ে কথা না বলে তিনি বিষয়টাকে এড়িয়ে গিয়ে বলতে চাইছেন উপদেষ্টা শুধু চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে আসছে কেন, উত্তরবঙ্গ থেকে নেই কেন? অথচ এগুলো ফাও আলাপ, কথা হবে উপদেষ্টা পরিষদে আওয়ামী লীগার আসে কেন?

কয়েকদিন যাবৎ বিভিন্ন ইস্যুতে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীরা বিএনপির ঘাড়ে বন্দুক রেখে নিজেরা সাধু সাজতে চাইছেন। বাংলাদেশের সরকার চালাচ্ছে উপদেষ্টারা, সকল ক্ষমতা উপদেষ্টাদের হাতে এবং উপদেষ্টা নিয়োগেও দেখা গেল আওয়ামী লীগার ঢুকছে। অথচ এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমর্থকরা রাষ্ট্রপতি অপসারণ ইস্যু ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবীর ক্ষেত্রে বিএনপির মতামত চায়।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন বলেছেন, বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে না; অনেকে এর সমালোচনা করেছেন। শেখ মুজিবর রহমানের বাকশাল বাতিল করে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীকে জীবন দান করেছে, দেশে বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। বিএনপি নামক দলটি এইদেশের একমাত্র পরীক্ষিত গণতন্ত্রের পক্ষের দল সেই বিএনপি কেন আরেকটা দলকে নিষিদ্ধের দাবী করবে? এখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ দাবী করে ভবিষ্যৎ সমালোচনার স্থায়ী বদনাম কেন ঘাড়ে নেবে বিএনপি? মূলত বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীরা এটাই চাইছে, বিএনপির ঘাড়ে বন্দুক রেখে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে নিজেরা সাধু সাজবে।

আন্দোলনকারীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলে গণভোটের আয়োজন করুক। জনগণ ভোট দিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগ থাকবে কিনা? এরপর বিএনপি যদি বলে গণভোট মানি না, কেবল তখনই আপনি বলতে পারবেন বিএনপি আওয়ামী লীগকে রক্ষা করতে চাইছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করে তারপর সেই ফাঁদে বিএনপিকে ফেলে আপনারা আজীবন ক্ষমতার মসনদে বসবেন, এত সুখ আপনাদের মনে মনে। এমনটাই মনে করেন নয়ন সাহা।

তবে, গতকাল সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। পরে জানা যায়, তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। শপথ অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় ফারুকী বলেছিলেন, ‘আমি কখনোই কোনো পদ কিংবা কোনো চেয়ারে বসব, এটা ভাবিনি। কিন্তু প্রফেসর ইউনূসের সহকর্মী হওয়াটা টেম্পটিং (লোভনীয়), না বলাটা মুশকিল।’ উপদেষ্টা হওয়া নিয়ে চলচ্চিত্রবিষয়ক মার্কিন গণমাধ্যম ভারাইটির সঙ্গেও কথা বলেছেন ফারুকী। এক দীর্ঘ প্রতিবেদনে ফারুকীর প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে গণমাধ্যমটি।

‘আমি প্রাথমিকভাবে সংশয়ে ছিলাম (উপদেষ্টা হওয়া নিয়ে)। বাংলাদেশ যেহেতু একটা পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আমার হৃদয় বলছিল, “একটা চেষ্টা করে দেখা যাক, কিছু পরিবর্তন করা যায় কি না।”

এ ছাড়া নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে কাজেরও লোভও কাজ করছিল, যিনি এখন অন্তর্বর্তী সরকারে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে আমি রাজি হয়েছি।’

দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে কোরীয় নির্মাতা লি চ্যাং-ডংও তাঁকে প্রভাবিত করেছে বলেন জানান ফারুকী। ‘গ্রিন ফিশ’, ‘ওয়েসিস’, ‘সিক্রেট সানশাইন’ নির্মাতা লি ২০০৩-২০০৪ পর্যন্ত কোরিয়ার সংস্কৃতি ও পর্যটনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

ফারুকী বলেন, ‘(দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে) এ ছাড়া আমি আমার অন্যতম প্রিয় নির্মাতা লি চ্যাং-ডংয়ের থেকেও সাহস পেয়েছি। মনে হয়েছে, ঠিক আছে। তিনি যদি আবার ফিরে এসে নিজের স্বাধীন চিন্তা অব্যাহত রাখতে পারেন, আমি হয়তো পারব।’
তবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ায় সিনেমা নিয়ে খুব বেশি কিছু করার নেই বলেও মনে করিয়ে দিয়েছেন ‘ডুব’ নির্মাতা। ফারুকীর ভাষ্যে, ‘আমাদের সরকারব্যবস্থায় চলচ্চিত্র নিয়ে সংস্কৃতিমন্ত্রীর খুব কমই করার আছে। তবে আমি চেষ্টা করব শিল্প একাডেমিতে একটা ছাপ রাখে যেটা আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনে।’

তবে, ফারুকী গতকালের অবস্থান পরিবর্তন করে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। যেখানে তিনি গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। আজকের দিনেই এসে হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় কুরুচিপূর্ণ তথ্য শেয়ারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

সোমবার (১১ নভেম্বর) সচিবালয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রথম দিন যোগ দিয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার শিল্প-সংস্কৃতি চর্চায় বাধা হবে না। তবে যারা শিল্প চর্চা করছে তাদেরও সচেতন হতে হবে। কুরুচিপূর্ণ, জঘন্য তথ্য যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন, তাহলে সমস্যা হবে। বিপ্লবের চেতনা বুঝতে হবে। তিনি বলেন, নাটক হচ্ছে, যাত্রা হচ্ছে কেউ তা বন্ধ করেনি। অন্তর্বর্তী সরকার শিল্প-সংস্কৃতি চর্চায় বাধা হবে না। তবে যারা শিল্প চর্চা করছে তাদেরও সচেতন হতে হবে।

মোস্তাফা ফারুকী
মোস্তাফা ফারুকী

সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা আরও বলেন, বিগত সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে যা বলা হচ্ছে, এ বিষয়ে কিছু বলার নেই। ২০১৩ সালে আমাকে বলা হতো জামায়াত-শিবির। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে তখন বলেছিলাম, এই চেতনা দিয়ে কী করব। সে সময় আমাকে শিবির বলা হয়েছিল। কেউ মনে করে জামায়াতি, কেউ বিএনপি, কেউ আওয়ামী লীগ। কিন্তু আমি কারো লোক নই। আমি আমার। আমি কারও প্রতি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দিইনি।

নিজের কাজ সম্পর্কে ফারুকী বলেন, একা কোনো কিছু করা সম্ভব না। সবাইকে নিয়ে কাজ করব। এখানে বাজেট কম। তবে আমার টিম ভালো। নতুন বাংলাদেশের ন্যারেটিভ ফিল্ম ছাড়া পূরণ করা সম্ভব না। দৃশ্যমান পরিবর্তন কীভাবে সম্ভব এক বছর মেয়াদি পরিকল্পনা করব। এরপর প্রধান উপদেষ্টাকে জানাব। আশা করি সহযোগিতা দিবে।

ফারুকী আরও বলেন, গতকাল (রোববার) পর্যন্ত উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে ‘না’-তে ছিলাম। পরে এসে হ্যাঁ বললাম। কারণ, আমি দেশের জন্য কিছু করতে চাই। সবচেয়ে বড় কথা হলো, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে চাই। ব্যক্তিগত কাজের সূত্রে আগে থেকেই তার কাজের ধরনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বলেও জানান তিনি।

 

শেয়ার করুন

বশিরে বিভ্রান্তি, ফারুকীর হুঁশিয়ারি

দুই উপেদষ্টা নিয়ে বিপাকে সরকার!

সময় ০৫:৪২:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকার নিয়ে নানা সমালোচনা থাকলেও এবার বিপাকে পরেছে নতুন দুই উপদেষ্টাকে নিয়েই। সদ্য শপথ নেয়া ইউনূস সরকারের দুই উপদেষ্টার মধ্যে রয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন এবং সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তাদের মধ্যে সবচে বেশি সমালোচিত হচ্ছেন ফারুকী। যদিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতারাই এখন বলছেন এমন উপদেষ্টা তারা চাননি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম অভিযোগ করে বলেছেন, খুনি হাসিনার তেলবাজরাও উপদেষ্টা হচ্ছেন। তার এই স্ট্যাটাসের পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে ইতিবাচক হিসাবে নিলেও তাকে নিয়ে খোদ ট্রল করছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অনেক নেতকর্মী।

সারজিস কোটা
সারজিস কোটা

এমনকি যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন, তারাই এখন সারজিস আলমের স্ট্যাটাসকে ব্যঙ্গ করছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা মনে করছেন, এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। অনেকেই বলছেন, যে কোটা প্রথা বিলুপ্তির জন্য; দেশের এত বড় পট পরিবর্তন এবং সেখানে নেতৃত্ব দেয়া সারজিস আলমই যখন এই কোটা উপদেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তখন বুঝার আর বাকি নেই কিছুই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলমের পাশাপাশি প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, যশোরে বিএনপির প্রতিবাদ শুরু করেছে। এছাড়া বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফুটে উঠেছে তীব্র পতিক্রিয়া।

যদিও বাণিজ্য উপদেষ্টা তার নিজের প্রথম কর্মদিবসেই নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। সেখ বশির উদ্দিন তার বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, শুরু থেকেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চেতনার পক্ষে ছিলেন। আর এখন কোনো রাজনৈতিক দল, কোম্পানি ও আত্মীয়-স্বজন কারও প্রতিনিধিত্ব করছেন না। বরং সকলের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করতে চান। আজ সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভার গ্রহণের পরে একথা বলেন তিনি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সোহান শাহ নামের (৩০) এক যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামির তালিকায় নাম রয়েছে ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’ নামের এক ব্যক্তির। নামটি আংশিকভাবে মিলে যায় গতকাল রোববার অর্ন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা হওয়া ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিনের সঙ্গে। এমনকি সেখ বশিরের বাবার নামের সঙ্গে আসামি তালিকায় থাকা ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’র বাবার নামের আংশিক মিল রয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’ নাম দিয়ে সেখ বশির উদ্দিনকে আসামি করা হয়েছে কি না। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, নামের আংশিক সংগতি ও অসংগতি থাকলেও তিনি নিশ্চিত নন, মামলাটি তাঁর নামে হয়েছে কি না।

সেখ বশির উদ্দিন
সেখ বশির উদ্দিন

অন্যদিকে পুলিশ বলছে, শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া ও সেখ বশির উদ্দিন একই ব্যক্তি কি না, তারা খতিয়ে দেখছে।

মামলার বাদী নিহত সোহান শাহর মা সুফিয়া বেগম বলেছেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ তাঁর ছেলে হত্যার জন্য দায়ী। আসামি কারা করেছে, তা তিনি বলতে পারবেন না। কারা নাম দিয়েছে, তা–ও তিনি বলতে পারবেন না। তিনি তাঁর ছেলে হত্যার ন্যায়বিচার চান।

সোহান হত্যা মামলাটি গত ১৮ অক্টোবর রাজধানীর রামপুরা থানায় রেকর্ড হয়। মামলার নথিপত্র বলছে, এতে মোট ৫৭ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে।

মামলার ৫৭ জন আসামির মধ্যে ৪৯ নম্বর তালিকায় নাম রয়েছে শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়ার। পরিচয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি আওয়ামী লীগ নেতা। বাবার নাম শেখ আকিজ উদ্দিন ভূঁইয়া।

মামলার ৪৮ নম্বরে আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে শেখ আফিল উদ্দিন ভূঁইয়া। পরিচয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি সাবেক সংসদ সদস্য, যশোর-১। বাবার নাম শেখ আকিজ উদ্দিন ভূঁইয়া।

প্রয়াত সেখ আকিজ উদ্দিন আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একটি আকিজ। সেখ আকিজের ছেলেদের মধ্যে সেখ আফিল উদ্দিন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।

সেখ আকিজের সন্তানেরা আলাদাভাবে ব্যবসা করেন। সেখ বশির উদ্দিন আকিজ–বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে গতকাল শপথ নেন সেখ বশির উদ্দিন। তার পর থেকে মামলার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে।

মামলার বিষয়টি নিয়ে আজ সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চেয়েছিলেন সেখ বশিরের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমি খুব ভালো জানি না। আমাদের লিগ্যাল টিম বিষয়টি দেখছে। ওখানে (মামলার এজাহার) আমার নামের, আবার বাবার নামের কিছু সংগতি আছে, কিছু অসংগতি আছে। এটা আসলেই আমি কি না, আমি নিশ্চিত নই। নিশ্চিত হলে লিগ্যালি ফেস (আইনিভাবে মোকাবিলা) করা হবে।’

উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে বিভিন্নজনের মন্তব্যের বিষয়ে সেখ বশির বলেন, ‘যাঁরা আন্দোলন করেছেন, তাঁদের আবেগের সঙ্গে আমার দ্বিমত নেই। তবে আমার ধারণা, ওনারা মিস ইনফরমড (ভুল তথ্য পাওয়া)। ওনাদের তথ্যের ভিত্তি সঠিক নয়।’

মামলার এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন সোহান শাহ। তাঁর গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলায়। তিনি ভারগো গার্মেন্টস কারখানায় মেকানিক্যাল বিভাগের প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করতেন। গত ১৯ জুলাই রাজধানীর রামপুরা সিএনজি স্টেশনের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন সোহান শাহ।

মামলায় বলা হয়, সেদিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগসহ অন্যরা ছাত্র–জনতার আন্দোলনে নির্বিচার গুলি চালায়। তখন সোহান শাহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে সোহান শাহকে স্থানীয় ফারাজী হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন ওই হাসপাতালের মালিক ইমন ফারাজীর নির্দেশে (মামলার ১৯ নম্বর আসামি) তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। পরে সোহান শাহকে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এরপর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২৩ আগস্ট ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। সেখানেই গত ২৪ আগস্ট তিনি মারা যান।

মামলার তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ সেপ্টেম্বর সোহান শাহর মা সুফিয়া বেগম ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে একটি নালিশি মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে সেই মামলা থানায় রেকর্ড করা হয়।

মামলায় হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারী হিসেবে মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সাইফুজ্জামান শিখর দেশত্যাগী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব ছিলেন। তাঁর বাবা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সংসদ সদস্য ছিলেন।

সোহান শাহ হত্যা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দেশত্যাগী শেখ হাসিনাকে। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন ও সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম।

মামলায় নাম থাকা শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া ও সেখ বশির উদ্দিন একই ব্যক্তি কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল পুলিশের কাছে। রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান আকন্দ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছেলেকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সুফিয়া বেগম নামের এক নারী ঢাকার আদালতে একটি নালিশি মামলা করেন। আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য নির্দেশ দেন। সেই মামলায় শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া নামের এক ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে।

ওসি বলেন, ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া বর্তমান উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন কি না, সেটি তাঁরা খতিয়ে দেখছেন।’ তিনি আরও বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এনে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলা সদরের আলতাফ হোসেন মহিলা কলেজ রোডের বাড়িতে গিয়ে আজ সুফিয়া বেগমকে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, তিনি মামলা করেছেন। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ তাঁর ছেলেকে মেরেছে। সুফিয়া বেগমের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, মামলার আসামির তালিকা কে ঠিক করেছেন? জবাবে তিনি বলেন, আসামি কারা হয়েছে, কে করেছে, তা তিনি বলতে পারবেন না।

মামলা করার সময় তাঁর সঙ্গে কে কে ছিলেন, তা জানতে চাইলে সুফিয়া বেগম বলেন, তা তিনি জানেন না।

তবে বাংলা অ্যাফেয়ার্সের চোখে সেখ বশির উদ্দিন এবং মামলার আসামি শেখ বশির উদ্দিন বলা হলেও একটি অসঙ্গতির প্রমাণ মিলেছে। উইকিপিডিয়া অনুসারে আকিজ-বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে যার নাম লেখা রয়েছে, তিনি সেখ বশির উদ্দিন। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে নাম লেখা রয়েছে ‘শেখ বশির উদ্দিন।’ খোদ সরকারের ওয়েবসাইটেই বাণিজ্য উপদেষ্টার নাম লেখা রয়েছে মামলার আসামির নামের সাথে সঙ্গতি রেখেই। এখন প্রশ্ন তুলে একজন বলেছেন, সরকারি ওয়েবসাইটে যেভাবে নাম লেখা রয়েছে শেখ বশিরউদ্দিন হিসাবে। নবীন আহমেদ নামের একজন বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন, সরকারি ওয়েবসাইটে যেভাবে বাণিজ্য উপদেষ্টার নাম লেখা রয়েছে, তাতে সন্দেহ আরো দানা বাধছে। কেননা, সরকারি ওয়েবসাইটে যেটা প্রকাশ করা হচ্ছে, সেটাকেই সঠিক হিসাবে গণ্য করা হবে। যেহেতু অন্তবর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনাতেই ওয়েবসাইট আপডেট করা হয়েছে। সেখানে একজন উপদেষ্টার নামের বানান যদি সঠিক ভাবে প্রকাশ করা না হয়, তাহলে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রয়েছে। তিনি সরাসরি বলেন, তাহলে কি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিজেই জানে না তার উদেষ্টার সঠিক নাম! বিস্ময় প্রকাশ করে নবীন বলেন, এটা কখনোই কাম্য নয়। সময় নিয়ে হলেও সঠিক তথ্য মানুষের সামনে প্রচার ও প্রকাশ করা উচিত। এমন ছোট ভুলের জন্য হলেও সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়া দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী আকিজ–বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেখ বশির উদ্দিনের বিরুদ্ধে বঙ্গভবনের সামনে মশাল মিছিল করেছে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা।
একই সঙ্গে রোববার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় শপথ অনুষ্ঠান শেষে সেখ বশিরের বিরুদ্ধে তারা মশাল মিছিল করেন তারা।

মশাল মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা বশির উদ্দিনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তারা উপদেষ্টা পরিষদে সেখ বশিরের জায়গা পাওয়া মানে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া চলছে। তারা অবিলম্বে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সেখ বশিরকে সরিয়ে দেয়ার দাবি জানান।

মশাল মিছিলে অংশ নেয়া গণপরিষদের এক কর্মী বলেন, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আফিল উদ্দিনের ভাইকে উপদেষ্টা পরিষদে কোনোভাবে মেনে নেয়া হবে না। কিসের ভিত্তিতে হাজারো প্রাণের বিনিময়ে আসা অন্তর্বর্তী সরকারে বশির উদ্দিনের ঠাঁই হলো, তা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন।

তিন উপদেষ্টা

এর আগে, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন নতুন তিন উপদেষ্টাকে শপথ পাঠ করান।
শুধু যে বাণিজ্য উদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বা শেখ বশির উদ্দিনকে নিয়েই বিপাকে রয়েছে বর্তমান সরকার তেমনটা নয়। সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীকে নিয়েও বিপাকে পরেছে ড. ইউনূসের সরকার।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ গতকাল রাতেই মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (১০ নভেম্বর) রাত সোয়া ১০টায় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি বটতলা এলাকা থেকে শুরু হয়ে শহীদ সালাম-বরকত হল ঘুরে পুনরায় বটতলায় এসে শেষ হয়। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়ামের সঞ্চালনায় শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান লিমন বলেন, মুজিব এবং মুজিববাদকে পুঁজি করে ফ্যাসিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠা ও গণহত্যা চালানো হয়েছে সেই ফ্যাসিস্ট আদর্শের প্রতি সহানুভূতিশীল কাউকে অভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্র জনতার সরকারে অন্তর্ভুক্তি সরাসরি শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি।

জাবিতে প্রতিবাদ
জাবিতে প্রতিবাদ

মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান শাহরিয়ার বলেন, প্রায় দুই হাজার ভাইয়ের রক্তের বিনিময়ে আমরা এই সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছি। আপনারা দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করার কাজ করবেন। যেভাবে আপনারা ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছেন, অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগকে এই বাংলার মাটিতে নিষিদ্ধ করতে হবে। যারা আমার ভাইদের আহত করেছে, শহীদ করেছে, তাদেরকে অতিদ্রুত বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এর বদলে ফ্যাসিবাদের কোনও দোসরকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হলে আমরা এর কঠিন জবাব দেবো।

সমাপনী বক্তব্যে ৪৯ ব্যাচের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মেহরাব সিফাত বলেন, শহীদের রক্তস্রোতের বিনিময়ে আমরা যে সরকার পেয়েছি, তার মাধ্যমে দেশের একটি বৃহৎ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখি। জাতীয় ঐক্যের এ সময়ে ফ্যাসিবাদপ্রেমী মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে উপদেষ্টা ঘোষণা করা হয়েছে। যারা বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিবাদের গুণকীর্তন করেছে, তাদেরকে কোনোভাবেই ক্ষমতায় দেখতে চাই না। পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত ব্যক্তি ছাড়া কাউকে দায়িত্বে আনা যাবে না।

তবে ফারুকীকে নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (আমির সৈয়দ রেজাউল করিম চরমোনাই) পক্ষ থেকে। দলটির পক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ ও সেক্রেটারি মাওলানা মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম রোববার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, সমকামিতা, লিভ-টুগেদার ও পরকিয়াকে প্রমোটকারী চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীকে উপদেষ্টার পদ থেকে প্রত্যাহার করতে হবে।

ইমলামী আন্দোলন
ইমলামী আন্দোলন

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, রুচি ও চিন্তা ভ্রষ্ট কোন মানুষকে উপদেষ্টা দেখতে চায় না দেশবাসী। ফারুকীর মতো অসুস্থ মানসিকতার লোককে উপদেষ্টা বনানোর জন্য হাজার হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দেয়নি। জীবন দিয়েছে দেশপ্রেমিক আদর্শ নাগরিকদের মাধ্যমে একটি নতুন কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য। সেই আদর্শ নাগরিকদের মাধ্যমেই পরিচালিত হবে বাংলাদেশ। আওয়ামী সুবিধাভোগী, দোসর ফারুকী দেশের নাগরিক হলেও উচ্ছিষ্টভোগী বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়নের ব্যস্ত থেকেছে। চলচ্চিত্র নির্মাতা হয়েও জাতীয় চেতনা, বোধ, বিশ্বাস ও জাতিসত্তাকে ধারণ করে নাটক-সিনেমার মাধ্যমে সুস্থ ধারার বিনোদন দিতে যে ব্যর্থ হয়েছে সে কিভাবে উপদেষ্টা হয়, তা আমাদের বোধগম্য নয়। এজন্য আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো অতিসত্বর মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীকে উপদেষ্টা থেকে প্রত্যাহার করুন। যাকে তাকে ধরে এনে উপদেষ্টা বানাবেন না। উপদেষ্টা বানানোর আগে দেখবেন দেশ, জাতি-মানবতার জন্য তার কি অবদান রয়েছে।
নেতৃদ্বয় আরও বলেন অশ্লীলতা প্রসারকারী মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী কোন বিবেচনায় উপদেষ্টা হলেন? জুলাই বিপ্লবের সময়ে ‍উনি ফ্যাসিবাদ বিরোধী স্টাটাস দিছিলেন তাই? তাহলে যারা ফ্যাসিবাদের আমলে নির্যাতিত, দেশান্তরী হয়েছেন তাদেরকেও ধরে এনে উপদেষ্টা বানান!
একই প্রশ্ন শেখ বশির উদ্দিনের ক্ষেত্রেও। সেও আওয়ামী লীগ আমলে সুবিদাভোগী। তাকে কোন বিবেচনায় উপদেষ্টা করা হলো?
যাকে আপনার ভালো লাগে, যার সাথে আপনাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে তাকে রাষ্ট্রীয় পদে পদায়িত করার জন্য জনতা রাজপথে লড়াই করেনি।
উপদেষ্টা নিয়োগে লোক বাছাই করে কারা? কে কোন বিবেচনায় উপদেষ্টা হলেন তা দেশবাসী জানতে চায়।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা নয়ন সাহা বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে জানান, মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীর মত চিহ্নিত শাহবাগী আওয়ামী লীগার হয়ে গেল উপদেষ্টা। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যার অন্যতম আসামী শেখ বশির উদ্দিনও উপদেষ্টা হলেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেদেরকে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভাবেন কিন্তু তাদের কাজকর্ম বলে দেয় আওয়ামী লীগের জন্য মাঠ গোছানোর কাজই তারা করে যাচ্ছেন। সমন্বয়ক সারজিস আলম এগুলো নিয়ে কথা না বলে তিনি বিষয়টাকে এড়িয়ে গিয়ে বলতে চাইছেন উপদেষ্টা শুধু চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে আসছে কেন, উত্তরবঙ্গ থেকে নেই কেন? অথচ এগুলো ফাও আলাপ, কথা হবে উপদেষ্টা পরিষদে আওয়ামী লীগার আসে কেন?

কয়েকদিন যাবৎ বিভিন্ন ইস্যুতে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীরা বিএনপির ঘাড়ে বন্দুক রেখে নিজেরা সাধু সাজতে চাইছেন। বাংলাদেশের সরকার চালাচ্ছে উপদেষ্টারা, সকল ক্ষমতা উপদেষ্টাদের হাতে এবং উপদেষ্টা নিয়োগেও দেখা গেল আওয়ামী লীগার ঢুকছে। অথচ এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমর্থকরা রাষ্ট্রপতি অপসারণ ইস্যু ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবীর ক্ষেত্রে বিএনপির মতামত চায়।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন বলেছেন, বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে না; অনেকে এর সমালোচনা করেছেন। শেখ মুজিবর রহমানের বাকশাল বাতিল করে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীকে জীবন দান করেছে, দেশে বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। বিএনপি নামক দলটি এইদেশের একমাত্র পরীক্ষিত গণতন্ত্রের পক্ষের দল সেই বিএনপি কেন আরেকটা দলকে নিষিদ্ধের দাবী করবে? এখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ দাবী করে ভবিষ্যৎ সমালোচনার স্থায়ী বদনাম কেন ঘাড়ে নেবে বিএনপি? মূলত বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীরা এটাই চাইছে, বিএনপির ঘাড়ে বন্দুক রেখে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে নিজেরা সাধু সাজবে।

আন্দোলনকারীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলে গণভোটের আয়োজন করুক। জনগণ ভোট দিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগ থাকবে কিনা? এরপর বিএনপি যদি বলে গণভোট মানি না, কেবল তখনই আপনি বলতে পারবেন বিএনপি আওয়ামী লীগকে রক্ষা করতে চাইছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করে তারপর সেই ফাঁদে বিএনপিকে ফেলে আপনারা আজীবন ক্ষমতার মসনদে বসবেন, এত সুখ আপনাদের মনে মনে। এমনটাই মনে করেন নয়ন সাহা।

তবে, গতকাল সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। পরে জানা যায়, তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। শপথ অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় ফারুকী বলেছিলেন, ‘আমি কখনোই কোনো পদ কিংবা কোনো চেয়ারে বসব, এটা ভাবিনি। কিন্তু প্রফেসর ইউনূসের সহকর্মী হওয়াটা টেম্পটিং (লোভনীয়), না বলাটা মুশকিল।’ উপদেষ্টা হওয়া নিয়ে চলচ্চিত্রবিষয়ক মার্কিন গণমাধ্যম ভারাইটির সঙ্গেও কথা বলেছেন ফারুকী। এক দীর্ঘ প্রতিবেদনে ফারুকীর প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে গণমাধ্যমটি।

‘আমি প্রাথমিকভাবে সংশয়ে ছিলাম (উপদেষ্টা হওয়া নিয়ে)। বাংলাদেশ যেহেতু একটা পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আমার হৃদয় বলছিল, “একটা চেষ্টা করে দেখা যাক, কিছু পরিবর্তন করা যায় কি না।”

এ ছাড়া নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে কাজেরও লোভও কাজ করছিল, যিনি এখন অন্তর্বর্তী সরকারে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে আমি রাজি হয়েছি।’

দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে কোরীয় নির্মাতা লি চ্যাং-ডংও তাঁকে প্রভাবিত করেছে বলেন জানান ফারুকী। ‘গ্রিন ফিশ’, ‘ওয়েসিস’, ‘সিক্রেট সানশাইন’ নির্মাতা লি ২০০৩-২০০৪ পর্যন্ত কোরিয়ার সংস্কৃতি ও পর্যটনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

ফারুকী বলেন, ‘(দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে) এ ছাড়া আমি আমার অন্যতম প্রিয় নির্মাতা লি চ্যাং-ডংয়ের থেকেও সাহস পেয়েছি। মনে হয়েছে, ঠিক আছে। তিনি যদি আবার ফিরে এসে নিজের স্বাধীন চিন্তা অব্যাহত রাখতে পারেন, আমি হয়তো পারব।’
তবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ায় সিনেমা নিয়ে খুব বেশি কিছু করার নেই বলেও মনে করিয়ে দিয়েছেন ‘ডুব’ নির্মাতা। ফারুকীর ভাষ্যে, ‘আমাদের সরকারব্যবস্থায় চলচ্চিত্র নিয়ে সংস্কৃতিমন্ত্রীর খুব কমই করার আছে। তবে আমি চেষ্টা করব শিল্প একাডেমিতে একটা ছাপ রাখে যেটা আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনে।’

তবে, ফারুকী গতকালের অবস্থান পরিবর্তন করে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। যেখানে তিনি গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। আজকের দিনেই এসে হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় কুরুচিপূর্ণ তথ্য শেয়ারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

সোমবার (১১ নভেম্বর) সচিবালয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রথম দিন যোগ দিয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার শিল্প-সংস্কৃতি চর্চায় বাধা হবে না। তবে যারা শিল্প চর্চা করছে তাদেরও সচেতন হতে হবে। কুরুচিপূর্ণ, জঘন্য তথ্য যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন, তাহলে সমস্যা হবে। বিপ্লবের চেতনা বুঝতে হবে। তিনি বলেন, নাটক হচ্ছে, যাত্রা হচ্ছে কেউ তা বন্ধ করেনি। অন্তর্বর্তী সরকার শিল্প-সংস্কৃতি চর্চায় বাধা হবে না। তবে যারা শিল্প চর্চা করছে তাদেরও সচেতন হতে হবে।

মোস্তাফা ফারুকী
মোস্তাফা ফারুকী

সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা আরও বলেন, বিগত সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে যা বলা হচ্ছে, এ বিষয়ে কিছু বলার নেই। ২০১৩ সালে আমাকে বলা হতো জামায়াত-শিবির। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে তখন বলেছিলাম, এই চেতনা দিয়ে কী করব। সে সময় আমাকে শিবির বলা হয়েছিল। কেউ মনে করে জামায়াতি, কেউ বিএনপি, কেউ আওয়ামী লীগ। কিন্তু আমি কারো লোক নই। আমি আমার। আমি কারও প্রতি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দিইনি।

নিজের কাজ সম্পর্কে ফারুকী বলেন, একা কোনো কিছু করা সম্ভব না। সবাইকে নিয়ে কাজ করব। এখানে বাজেট কম। তবে আমার টিম ভালো। নতুন বাংলাদেশের ন্যারেটিভ ফিল্ম ছাড়া পূরণ করা সম্ভব না। দৃশ্যমান পরিবর্তন কীভাবে সম্ভব এক বছর মেয়াদি পরিকল্পনা করব। এরপর প্রধান উপদেষ্টাকে জানাব। আশা করি সহযোগিতা দিবে।

ফারুকী আরও বলেন, গতকাল (রোববার) পর্যন্ত উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে ‘না’-তে ছিলাম। পরে এসে হ্যাঁ বললাম। কারণ, আমি দেশের জন্য কিছু করতে চাই। সবচেয়ে বড় কথা হলো, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে চাই। ব্যক্তিগত কাজের সূত্রে আগে থেকেই তার কাজের ধরনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বলেও জানান তিনি।