দীর্ঘায়ুর রহস্য
- সময় ০৮:১৮:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ জুলাই ২০২৪
- / 261
বিশ্ববিখ্যাত সংগীতশিল্পী মাইকেল জ্যাকসন কমপক্ষে ১৫০ বছর বেঁচে থাকতে তৈরি করেছিলেন অক্সিজেন চেম্বার। সেখানেই ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলেছিলেন তিনি। সঙ্গে থাকতো ডজনখানেক চিকিৎসক। কিন্তু মাত্র ৫০ বছর বয়সেই তার জীবন প্রদীপ নিভে যায়।
তবে পৃথিবীতে এমনও জাতি রয়েছে; যারা কিনা স্বাভাবিক নিয়মেই ৮৫ বছরের বেশি সময় বাঁচে। বাড়তি কোন আয়োজন নয়; কেবলমাত্র খাবার ও দৈনিন্দিন জীবনের কিছু আচারে পরিবর্তণ করে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গড় আয়ু ভোগ করছেন তারা।
ওয়ার্ল্ড পপিউলেশন রিভিউ ও ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য মতে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গড় আয়ু হংকংয়ের ৮৫ দশমিক ২৯ বছর। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জাপানের গড় আয় ৮৫ দশমিক শূন্য ৩ বছর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, জাপানের লোকেরা ৭৫ বছর পর্যন্ত কোন ধরনের দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াই বাঁচতে পারেন। জাপানের নারীরা পুরুষদের চেয়ে আরো বেশি দিন বাঁচে। পুরুষদের গড় আয়ু ৮১ দশমিক ৯১ বছর এবং নারীদের গড় আয়ু ৮৮ দশমিক শূন্য ৯ বছর।
কিন্তু জাপানিদের দীর্ঘ জীবন লাভের রহস্যটা কী ? তারা কী তবে স্বর্গের অমৃতসুধা পান করতে পেরেছে নাকি নিজেদের ক্লোনিং করতে পারছে ?
বিজ্ঞানীরা জাপানিদের এই দীর্ঘায়ূর কারণ হিসেবে তাদের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কথা বলছেন। অনেক জাপানি আছেন যারা সারাজীবন কাটিয়ে দেন সামুদ্রিক কাঁচা মাছ, আঠালো ভাত আর সয়াসসের মিশ্রণে তৈরি সুশি নামের এক ধরনের খাবার ও শাকসবজি খেয়ে।
বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, জাপানিদের প্রচলিত এই ডায়েটের ফলে পশ্চিমাদেশের তুলনায় জাপানিরা ২৫ ভাগ কম ক্যালরি খাবার গ্রহণ করেন। শুধু এই কারণেই অন্য দেশের তুলনায় জাপানিরা ৮ ভাগ গড় আয়ু বেশি পেয়ে থাকে।
এই খাদ্যাভ্যাসের কারনে জাপানিদের লিভারের কার্যকারিতা এবং স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কম পড়ে।
পশ্চিমা বিশ্ব থেকে শুরু করে সারা পৃথিবীর মানুষ যেখানে মাংস খেতে ব্যাকুল সেখানে জাপানিদেও প্লেটে থাকে মাছ বেশি। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২ ভাগ জাপানি হলেও তারা পৃথিবীর মোট মাছের ১০ ভাগ খেয়ে থাকে।
জাপান হচ্ছে একটি দ্বীপদেশ যার চারপাশ মহাসাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত। তাই এখানকার মানুষ সবসময় প্রচুর সী-ফুড খাওয়ার সুবিধা পায়। কিছু খাদ্যবিদদের মতে, জাপানি খাদ্য নির্ভর করে প্রধানত শস্যের উপর। সঙ্গে থাকে শাকসবজি কিংবা সামুদ্রিক শৈবাল।
সামুদ্রিক শৈবাল বা সমুদ্রের বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ জাপানীদের প্রিয় খাবার। তারা সাধারণত সামুদ্রিক শৈবাল স্যুপ বা সালাদ হিসেবে খায়। ধারণা করা হয় বছরে ১ লাখ টন সামুদ্রিক শৈবাল শুধু জাপানীরাই খায়।
সুশি জাপানের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার; যা জাপানের সীমানা পেরিয়ে সারা বিশ্বের রসনায় সগৌরবে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। এটি এতটাই সর্বজনীন হয়ে উঠেছে যে প্রতিবছর ১৮ জুন আন্তর্জাতিক সুশি দিবস পালন করা হয়।
জাপানিদের অতি সাধারণ এক পানীয় চা। জাপানের বেশির ভাগ মানুষ ‘গ্রিন টি’ বেশ আগ্রহ নিয়ে পান করে। গ্রিন টি স্বাদে সাধারণ চা হতে আলাদা হলেও এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
জাপানিদের প্রতি বেলার খাবারে অন্তত চারটি সবজি অতি সাধারণ ব্যাপার। বিভিন্ন স্যুপ বা সালাদ আকারে জাপানিরা সবজি খায় ভাতের চেয়েও বেশি। যা তাদের তারুণ্য ধরে রাখে।
জাপানের ওকিনাওয়া অঞ্চলের বাড়িগুলোতে আদা, হলুদ, রসুনসহ বিভিন্ন ভেষজের গাছ থাকে। তাই জাপানিরা রোগে, অসুস্থতায় বাজারের কেনা ওষুধের চেয়ে প্রাকৃতিক ভেষজ গাছের উপরই বেশি নির্ভর করে থাকে।
শুধু খাবার-দাবার নয়, জাপানিরা জীবনযাত্রার ব্যাপারেও বেশ সচেতন। জাপানের জনগণ জাতি হিসেবে অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও পরিশ্রমী। পরিশ্রমের কারনে তাদের রোগবালাই কম হয়। বার্ধক্যও দেরিতে আসে।
জাপানের মানুষ হাসিখুশি থাকতে পছন্দ করে যা তাদের হার্টকে নিরাপদ রাখার অন্যতম কৌশল।
জাপানের মানুষদের বয়স বাড়তে থাকলেও যাবতীয় মানসিক চাপের মুখোমুখি পড়তে হয় না। কেননা তাদের সংস্কৃতিই সে রকম।