থার্টি ফার্স্টে আতশবাজির সংস্কৃতি কোথা থেকে আসলো
- সময় ১০:১৫:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 25
থার্টি ফার্স্ট নাইট, অর্থাৎ ইংরেজি বছরের শেষ রাত, সারা বিশ্বে এক অনন্য উদযাপনের উপলক্ষ। আতশবাজি, ফানুস ওড়ানো, এবং বিভিন্ন রকম উৎসবমুখর কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষ নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। কিন্তু এই আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানোর রীতি কোথা থেকে এলো?
আতশবাজির ইতিহাস প্রায় ২০০০ বছর পুরনো। এর জন্মস্থান চীন, যেখানে খ্রিস্টপূর্ব ২০০ সালের দিকে বাঁশ পোড়ানোর মাধ্যমে আতশবাজির মতো শব্দ ও আলো তৈরি করা হতো।
চীনারা বিশ্বাস করত, এই শব্দ ও আলো দিয়ে তারা দুষ্ট আত্মাকে তাড়াতে পারবে। পরবর্তীতে, নবম শতকে, যখন চীনারা গানপাউডার আবিষ্কার করল, তখন এর ব্যবহার আরও উন্নত হয়ে আতশবাজিতে রূপ নেয়।
মধ্যযুগে, এই প্রযুক্তি ইউরোপে পৌছে যায় বণিকদের মাধ্যমে। ইউরোপে রাজকীয় অনুষ্ঠান ও যুদ্ধ জয়ের উদযাপনে আতশবাজি ব্যবহৃত হতো।
ফানুস ওড়ানোর রীতির শিকড়ও চীনে। খ্রিস্টপূর্ব ২০০ সালে চীনের সামরিক কৌশলী ঝুগে লিয়াং প্রথম ফানুস ব্যবহার করেন। তিনি সামরিক সংকেত পাঠানোর জন্য বাতাসে ফানুস ওড়াতেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি সৌন্দর্য ও প্রার্থনার প্রতীক হয়ে ওঠে।
চীনের ল্যাম্প ফেস্টিভ্যাল বা ফানুস উৎসবের মাধ্যমে এই সংস্কৃতি জনপ্রিয়তা লাভ করে। চীনা অভিবাসীদের মাধ্যমে ফানুস ওড়ানোর রীতি এশিয়া এবং পরবর্তীতে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
থার্টি ফার্স্ট নাইটের উদযাপনে আতশবাজি এবং ফানুস ব্যবহারের সূচনা হয় ইউরোপে। মধ্যযুগে নববর্ষ উদযাপন ছিল একটি বড় উৎসব। আতশবাজি ও আলো ছিল সেই উদযাপনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
১৮ শতকে ইংল্যান্ডে আতশবাজি বড় আকারে জনপ্রিয় হয়। ১৯ শতকে এই রীতি যুক্তরাষ্ট্রে এবং অন্যান্য উপনিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। আধুনিক সময়ে এটি শুধু পশ্চিমা দেশেই নয়, এশিয়ার দেশগুলোতেও বিশেষভাবে জনপ্রিয়। বাংলাদেশে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের ধারা মূলত গত কয়েক দশকের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ১৯৯০-এর দশক থেকে শহুরে তরুণ সমাজ এই উৎসব পালন শুরু করে। গণমাধ্যম এবং বৈশ্বিক সংস্কৃতির প্রভাব এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঢাকায় থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের অংশ হিসেবে আতশবাজি এবং ফানুস ওড়ানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানো বিভিন্ন সম্প্রদায়ে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে। চীনে এটি প্রার্থনার প্রতীক, ভারতে দীপাবলির অংশ এবং পশ্চিমা বিশ্বে এটি আনন্দ ও উদযাপনের প্রতীক।
বাংলাদেশে এই রীতিগুলো কখনো কখনো সমালোচনার মুখোমুখি হয়। অনেকেই এটিকে অপচয় ও পরিবেশ দূষণের কারণ হিসেবে দেখেন। আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানোর আনন্দের পাশাপাশি এর পরিবেশগত প্রভাবও বড় একটি বিষয়। আতশবাজি থেকে বায়ুদূষণ এবং শব্দদূষণ হয়, যা পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ফানুস ওড়ানোর ক্ষেত্রে, ব্যবহৃত কাগজ ও ধাতব তার বাতাস ও জমিতে আবর্জনা সৃষ্টি করে। এসব কারণে অনেক দেশ আতশবাজি ও ফানুস ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে। থার্টি ফার্স্ট নাইটের আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানোর রীতির শিকড় চীন থেকে শুরু হয়ে পশ্চিমা ও এশীয় সংস্কৃতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি এখন একটি বৈশ্বিক সংস্কৃতির অংশ।