০১:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

থানাগুলোতে ছাত্রলীগ নেতাদের তালিকা তৈরি করছে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সময় ০৩:৪৩:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫
  • / 93

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

নিষিদ্ধঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নজরদারিতে রাখতে সারা দেশের থানাগুলোতে বিশেষ তৎপরতা চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে প্রতিটি থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, এটি কোনো হয়রানি বা মামলার উদ্দেশ্যে নয়, বরং রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, সামাজিক কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা পর্যবেক্ষণের জন্য নেওয়া হয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করতে পারেন। তারা সংগঠিত হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। সেই আশঙ্কায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জেলা পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে সব থানার তালিকা সংগ্রহ করে সদর দপ্তরে পাঠানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মুখপাত্র) ইনামুল হক সাগর বলেন, মামলার আসামিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ পুলিশের নিয়মিত কাজের অংশ। তবে ছাত্রলীগের তালিকা সংক্রান্ত চিঠি সম্পর্কে জেলা পুলিশ সুপাররা বিস্তারিত জানাতে পারবেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও বেশিরভাগ এখনও ধরা পড়েননি। গত ২৩ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং একটি শাস্তিযোগ্য সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।

এরপর থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও হামলার অসংখ্য মামলা হয়েছে। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া কেউ গ্রেপ্তার হননি। পুলিশের ধারণা, আত্মগোপনে থাকা নেতারা সংগঠিত হয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেন।

এ কারণে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রতিটি থানাকে ছাত্রলীগ নেতাদের তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একটি চিঠিতে থানা পর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতাদের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর (যদি থাকে), রাজনৈতিক পরিচয়, অতীত ও বর্তমান কার্যক্রমের বিবরণ এবং কোনো জিডি বা মামলা আছে কিনা—এসব তথ্য জরুরি ভিত্তিতে পাঠাতে বলা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, “নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে, যার মধ্যে ছাত্রলীগও রয়েছে।”

চট্টগ্রাম রেঞ্জের এক পুলিশ সুপার জানান, “নির্দেশনা অনুযায়ী ছাত্রলীগ নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে এটি কোনো দমন-পীড়নের অংশ নয়, বরং নিরাপত্তার স্বার্থে করা হচ্ছে।”

অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের পর সংগঠনটির পুনর্গঠন বা বিকল্প শক্তি তৈরির সম্ভাবনা পর্যবেক্ষণ করছে পুলিশ। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ঠেকাতে আগেভাগেই ছাত্রলীগ নেতাদের গতিবিধি নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, “রাষ্ট্রের জন্য কেউ হুমকি হলে পুলিশ তালিকা করবে, ব্যবস্থা নেবে—এটা স্বাভাবিক। এটা শুধু কোনো নির্দিষ্ট দলের জন্য নয়, বরং যেকোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের জন্যই প্রযোজ্য।”

শেয়ার করুন

থানাগুলোতে ছাত্রলীগ নেতাদের তালিকা তৈরি করছে পুলিশ

সময় ০৩:৪৩:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫

নিষিদ্ধঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নজরদারিতে রাখতে সারা দেশের থানাগুলোতে বিশেষ তৎপরতা চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে প্রতিটি থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, এটি কোনো হয়রানি বা মামলার উদ্দেশ্যে নয়, বরং রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, সামাজিক কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা পর্যবেক্ষণের জন্য নেওয়া হয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করতে পারেন। তারা সংগঠিত হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। সেই আশঙ্কায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জেলা পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে সব থানার তালিকা সংগ্রহ করে সদর দপ্তরে পাঠানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মুখপাত্র) ইনামুল হক সাগর বলেন, মামলার আসামিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ পুলিশের নিয়মিত কাজের অংশ। তবে ছাত্রলীগের তালিকা সংক্রান্ত চিঠি সম্পর্কে জেলা পুলিশ সুপাররা বিস্তারিত জানাতে পারবেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও বেশিরভাগ এখনও ধরা পড়েননি। গত ২৩ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং একটি শাস্তিযোগ্য সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।

এরপর থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও হামলার অসংখ্য মামলা হয়েছে। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া কেউ গ্রেপ্তার হননি। পুলিশের ধারণা, আত্মগোপনে থাকা নেতারা সংগঠিত হয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেন।

এ কারণে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রতিটি থানাকে ছাত্রলীগ নেতাদের তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একটি চিঠিতে থানা পর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতাদের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর (যদি থাকে), রাজনৈতিক পরিচয়, অতীত ও বর্তমান কার্যক্রমের বিবরণ এবং কোনো জিডি বা মামলা আছে কিনা—এসব তথ্য জরুরি ভিত্তিতে পাঠাতে বলা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, “নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে, যার মধ্যে ছাত্রলীগও রয়েছে।”

চট্টগ্রাম রেঞ্জের এক পুলিশ সুপার জানান, “নির্দেশনা অনুযায়ী ছাত্রলীগ নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে এটি কোনো দমন-পীড়নের অংশ নয়, বরং নিরাপত্তার স্বার্থে করা হচ্ছে।”

অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের পর সংগঠনটির পুনর্গঠন বা বিকল্প শক্তি তৈরির সম্ভাবনা পর্যবেক্ষণ করছে পুলিশ। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ঠেকাতে আগেভাগেই ছাত্রলীগ নেতাদের গতিবিধি নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, “রাষ্ট্রের জন্য কেউ হুমকি হলে পুলিশ তালিকা করবে, ব্যবস্থা নেবে—এটা স্বাভাবিক। এটা শুধু কোনো নির্দিষ্ট দলের জন্য নয়, বরং যেকোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের জন্যই প্রযোজ্য।”