তুলসিপুরে অর্ধ শতাব্দীর ঘোড়ার হাট

- সময় ১০:৫২:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারি ২০২৫
- / 61
একসময় গ্রামবাংলার মানুষের পণ্য পরিবহন এবং যাতায়াতের প্রধান বাহন ছিল ঘোড়ার গাড়ি। সেসময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসতো ঘোড়ার হাট। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঘোড়ার কদর কমে যাওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে ঘোড়ার হাটগুলোও। তবে ঐতিহ্য ধরে রেখে দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে এখনো দেশের সবচেয়ে বড় ঘোড়ার হাট বসছে জামালপুর সদর উপজেলার রশিদপুর ইউনিয়নের তুলসিপুর গ্রামে।
জামালপুর শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এ হাটের অবস্থান। প্রতি বৃহস্পতিবার এ হাট বসে। এদিনে ঘোড়া কেনাবেচা করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকার ও ক্রেতার আগমন ঘটে।
বর্তমানে দেশের যে কয়েকটি ঘোড়ার হাট রয়েছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো এবং বড় হাট হচ্ছে এটি। স্থানীয়দের পাশাপাশি ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, শেরপুর, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা আসেন ঘোড়া কেনাবেচা করতে।
হাটে ঘোড়ার শক্তি পরীক্ষা করারও ব্যবস্থা রয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা এর নাম দিয়েছেন ‘রিমান্ড’। এজন্য হাটের ভেতর তৈরি করা হয়েছে বালু ও পানির রাস্তা। সেই রাস্তায় ১০-১৫ জন মানুষ উঠিয়ে ঘোড়ার গাড়ি ছুটানো হয়। যে ঘোড়া বালু ও পানির মধ্যে গাড়ি টেনে নিতে সক্ষম হয় সেই ঘোড়ার শক্তি বেশি বলে বিবেচিত হয়। এছাড়া শক্তি পরীক্ষার জন্য ঘোড়াকে উচু পাড় বেয়ে ওঠানামা করানো হয়।
রিমান্ডে যে ঘোড়া সবচেয়ে বেশি শক্তি দেখাতে পারে সে ঘোড়ার দামও তত বেশি। জাতভেদে প্রতিটি ঘোড়া পাঁচ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা দামে বিক্রি হয়। টাট্টু, খাসি, ঘুড়িসহ বিভিন্ন জাতের ঘোড়া এখানে পাওয়া যায়।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতা আসেন এই হাট থেকে ঘোড়া কিনতে। তবে থাকা-খাওয়াসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকলে ঘোড়া বেচা কেনা আরো বাড়তে পারে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।
এই হাটে ঘোড়ার পাশাপাশি এখানে কেনা বেচা হয় ঘোড়ার গাড়ি, লাগামসহ নানা সরঞ্জাম। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা রংয়ের ঘোড়া ও ঘোড়ার বাচ্চা নিয়ে এ বাজারে আসেন মালিকেরা। দামে সস্তা পাওয়ায় আশে পাশের জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকার ও ঘোড়সওয়ার এ হাট থেকে কিনে নেন পছন্দের ঘোড়াটি । এছাড়াও বাজারের সময় চলে ঘোড়ার শক্তি প্রদর্শনের মহড়া। যা দেখতে ভীর করে অনেকেই।

এই বাজারের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে আশে পাশের শতাধিক বাসিন্দার। ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ি কেনা বেচা করে সংসার চলে তাদের।
ঘোড়া বিক্রি করতে আসা কালাম, বাবুল, করিম বলেন, ‘এবার বাজারই ভালো না। একবারেই দাম কম। ভালো দাম পেলে ঘোড়া বিক্রি করে দেবো।’
গাড়িতে করে হাটে ঘোড়া নিয়ে আসেন শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রতি হাটেই ঘোড়া নিয়ে আসি। সারাদিন বেচাকেনা বেশ ভালো হয়।’
হাটে পান-সিগারেট বিক্রি করেন নাছির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বহু আগে থেকেই কলেজ মাঠে ঘোড়ার হাট বসছে। সেই সুবাদে এখানে আমার বেচাকেনাও ভালো।’
হাটে জামালপুরের পাশাপাশি সিলেট, ঢাকা, গাজীপুর, নেত্রকোনা, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা আসেন বলে জানান হাট পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য মিজানুর রহমান।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন, ৫০ বছর ধরে হাটটি বসছে। প্রতি হাটে আমাদের চিকিৎসকরা থাকেন। ঘোড়ার কোনো চিকিৎসা লাগলে তাৎক্ষণিকভাবে দেওয়া হয়। এছাড়া ঘোড়া লালন-পালনে যত রকম কারিগরি সহযোগিতা দরকার, আমাদের প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে দেওয়া হচ্ছে।