তিনি কত না সরল ছিলেন! কত না প্রজ্ঞাবান ছিলেন!
- সময় ০৩:৫৩:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 27
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সদ্যপ্রয়াত ড. মনমোহন সিংয়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনে গিয়ে ড. মনমোহন সিংয়ের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা হাই কমিশনের শোক বইতেও শোকবার্তা লিখেছেন।
ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা সকাল সাড়ে ১১টায় বারিধারায় ভারতীয় হাইকমিশনে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস হাইকমিশনারের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলাপে তার দীর্ঘদিনের বন্ধু ড. মনমোহন সিংয়ের স্মৃতিচারণ করে বলেন, “তিনি কত না সরল ছিলেন! কত না প্রজ্ঞাবান ছিলেন!”
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, মনমোহন সিং ভারতকে বৈশ্বিক অর্থনীতির পরাশক্তি হিসাবে গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা পালন করেছেন।
ভারত তার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান জানাতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে। তার মৃত্যুতে ভারতের দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন স্তরের মানুষ শোক প্রকাশ করে।
দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর গত ২৬ ডিসেম্বর দিল্লির একটি হাসপাতালে ৯২ বছর বয়সে মারা যান মনমোহন সিং।
ভারতের অর্থনৈতিক সংস্কারের রূপকার মনমোহন সিং দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাকে ভারতের অর্থনৈতিক উদারীকরণের স্থপতি ও রূপান্তরমূলক অর্থনৈতিক সংস্কারের পথপ্রদর্শক বলা হয়।
ভারতের রক্ষণশীল অর্থনীতিকে তিনি ধাক্কা দেন। মুক্তবাজার অর্থনীতির সঙ্গে ভারতীয়দের পরিচয় করান তিনি। সেই নীতির ফলে ভারতের বাজারের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর প্রবেশ ঘটে। দেশটির অর্থনীতিতে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য তৈরি হয়।
তার দেখানো পথেই ভারতের পরবর্তী সরকারগুলো এগিয়ে যায়। মনমোহন সিংয়ের পর প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসা বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি সেই পথেই আরও জোর কদমে হাঁটছেন।
মনমোহন সিং ১৯৭১ সালে ভারত সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন। অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং রাজনীতিতে আসার আগে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন।
১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। কংগ্রেসের নরসিমা রাওয়ের সরকারে অর্থমন্ত্রী হিসাবে যোগ দেন তিনি।
২০০৪ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা (ইউপিএ) সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মনমোহন সিং। এরপর ২০১০ সালে পুনর্নির্বাচিত হয়ে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন।
ভারতের হাতে গোনা কয়েকজন রাজনীতিকের মধ্যে তিনি একজন, যিনি কোনও প্রকার তর্ক-বিতর্ক ও কেলেঙ্কারির বাইরে সাদাসিদে জীবন যাপন করে গেছেন।
দরিদ্র পরিবারের জন্ম নেওয়া মনমোহন সিং সততা ও বিনয় দিয়ে অগুনতি মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার দ্বিতীয় মেয়াদে মন্ত্রিসভার কয়েকজনের দুর্নীতির কারণে তার ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, তার বিরুদ্ধে কখনও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি।
১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের একটি বিদ্যুৎবিহীন কৃষিপ্রধান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মনমোহন সিং। বর্তমানে গ্রামটি পাকিস্তানে অবস্থিত। তিনি দরিদ্র পরিবারে নয় ভাইবোনের সঙ্গে বড় হন।
অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি চন্ডীগড়ের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটেনের ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করেন। পরে তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।