মোদির বার্তা নিয়ে ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব
- সময় ১১:০১:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 37
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে নতুন মোড় নিতে পারে এই সফরে। আলোচনায় প্রাধান্য পাবে সাম্প্রতিক বিষয়াদি। পাশাপাশি থাকবে ভারতের সঙ্গে চুক্তিগুলোর বিষয়েও বিস্তর আলোচনা। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্ত্রি আগামী ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফরে আসছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রতিবেশী দেশটির উচ্চ পর্যায়ের এটিই প্রথম সফর। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়েই তিনি সফরে আসছেন। ভারত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহের কথা আগেই ব্যক্ত করেছে। ঢাকা ও দিল্লির সম্পর্কের উত্তাল অবস্থার মধ্যে মিস্ত্রির এই সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সফরকালে প্রথাগত ইস্যুগুলোর চেয়ে সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্ত্রির সঙ্গে ৯ কিংবা ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বৈঠক হতে পারে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ ভালো সম্পর্ক চায়। তবে এটা হতে হবে আদান-প্রদানমূলক। হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্রম মিস্ত্রি ১০ ডিসেম্বর ঢাকা সফর করবেন বার্ষিক ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ (এফওসি)-তে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে। তবে উভয় দেশে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অচলাবস্থা সৃষ্টির কারণে এবারের সফর গুরুত্ব বহন করছে।
আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন অফিসে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় মঙ্গলবার ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে প্রতিবাদপত্র হস্তান্তর করা হয়েছে। আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। দেশদ্রোহিতার অভিযোগে সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ গ্রেফতারের ঘটনায় ভারতের বিভিন্ন গ্রুপ বিক্ষোভ করছে। চিন্ময়ের জামিন নাকচ হওয়ার পর তার সমর্থকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষকালে দুর্বৃত্তরা বিশিষ্ট আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করে। এসব ঘটনায় উভয় দেশে তীব্র উত্তেজনা চলছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, ভারতের মিডিয়ায় অপপ্রচার করা হচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য অপপ্রচার ক্ষতিকর। এদিকে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করায় অন্তর্বর্তী সরকারে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের এক ভার্চুয়াল ইভেন্টে যোগ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এসব নিয়ে বিস্মিত প্রধান উদেষ্টার দপ্তর।
ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের এমন উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যেও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্ত্রির আসন্ন সফর নিয়ে উভয়পক্ষ উচ্চাশা ব্যক্ত করছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘উভয় দেশের পররাষ্ট্র সচিবরা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করবেন। এই আলোচনা দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করবে বলে আশা করি।’ এদিকে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করেছিল ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়াজ হামিদুল্লার সঙ্গে বৈঠকের পর প্রণয় ভার্মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের মধ্যে বহুমুখী সম্পর্ক বিরাজমান। ফলে এই বিস্তৃত সম্পর্ককে একটি ইস্যু কিংবা এজেন্ডায় সীমিত করা যায় না। আমরা একটি ইতিবাচক, স্থিতিশীল, গঠনমূলক সম্পর্ক বিনির্মাণ ও তাকে এগিয়ে নিতে কাজ করছি। আমরা পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতাকে পরস্পরের স্বার্থে ব্যবহারে আমরা কাজ করছি। শান্তি, নিরাপত্তা, উন্নয়নের অভিন্ন প্রত্যাশা পূরণে আমরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।’
উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে নির্বাচন ও সংস্কার প্রসঙ্গ অনানুষ্ঠানিকভাবে হলেও কোনো না কোনো পর্যায়ে আলোচিত হওয়া স্বাভাবিক। তবে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ইস্যু ভারতের তরফে উত্থাপন করা হতে পারে। অপরদিকে বাংলাদেশের তরফে ভারতে বসে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধে আবারও আহ্বান জানানো হতে পারে। প্রথাগত ইস্যুর মধ্যে বাংলাদেশের তরফে পানিবণ্টন, বাণিজ্য ও সীমান্ত হত্যার উদ্বেগগুলো ঠাঁই পেতে পারে। ভারত নিরাপত্তা ইস্যুতে তাদের প্রত্যাশার কথা জানাতে পারে।