ঢাকা ০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতা: হীরকের রাজা ভগবান!

পুলক ঘটক
  • সময় ০২:৫৭:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪
  • / 76

পুলক ঘটক

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতায় বাংলাদেশে সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার আর তুলনা হয় না! অতীতে সরাসরি সামরিক শাসনামলেও এমন অবস্থা হয়নি।

ইউনূস সরকার প্রথমে দলীয় বিবেচনায় তালিকা করে দুই দফায় মোট ৬৬ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করেছিল। আরও ১১৮ জন সাংবাদিকের সচিবালয়ে প্রবেশ কার্ড বাতিল করেছে।

এবারে যাদের অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল করেছে, তাদের মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক বা সমমর্যাদার সাংবাদিক আছেন ২২জন। ছোটখাটো প্রতিষ্ঠানের বা অনলাইনের সম্পাদক আছেন ৯ জন। তাছাড়া বাকি সবাই একদম মাঠের রিপোর্টার।

এমন কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত নিউজ এজেন্সি এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)’র বাংলাদেশ ব্যুরো প্রধানের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশনও বাতিল করা হয়েছে। বাতিল হয়েছে ঢাকায় কর্মরত রিপোর্টারদের প্রিয় সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র সভাপতি, সাবেক সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, বিদেশী মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ওকাব-এর সাধারণ সম্পাদকসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ মিডিয়া ব্যক্তিত্বের কার্ড।

আর কতজনের কার্ড বাতিল হবে জানা নেই। তবে বিশেষভাবে সরকার সমর্থক হিসেবে পরিচিত ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো পত্রিকায় কর্মরত একজনেরও সচিবালয়ে প্রবেশ কার্ড বাতিল হয়নি। জামায়াত এবং বিএনপি’র মিডিয়া এক্টিভিস্ট হিসেবে যারা সুপরিচিত তাদেরও কার্ড বাতিল হয়নি। নিশ্চয় এই সরকারের দলীয়করণ বা রাজনীতিকরণের এজেন্ডা নেই! এদের পক্ষপাত বলতে কিছু নেই! হীরকের রাজা ভগবান।

সচিবালয়ে প্রবেশের এই কার্ড বাতিল পেশাগত কাজের সুযোগ-হরণ মাত্র। এরচেয়ে বড় ব্যাপার আছে, যা একদম প্রাণঘাতি। দেশের দেড় শতাধিক সাংবাদিককে হত্যা মামলার আসামী করা হয়েছে – যে মামলায় শাস্তি মৃত্যুদন্ড। ‘মিটিকুলাসলি ডিজাইনড’ আন্দোলনের সময় রিপোর্টাররা দায়িত্ব পালনকালে তাদের গাড়ি ভেঙেছে এবং বহু সাংবাদিককে ধরে ধরে পিটিয়েছে বর্তমান ক্ষমতাধরদের মাঠের কর্মীরা। এরপর ৫ ও ৬ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের নামে একাধিক গণমাধ্যমের কার্যালয় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। অনেকগুলো মিডিয়া ভাঙচুর এবং নজিরবিহিন লুটপাট করেছে। এরপর আরেকটি শ্রেণীকে দিয়ে করেছে প্রতিষ্ঠান দখল, অফিস দখল এবং পদ দখল।

সাংবাদিকতা ও সাংবাদিক দমনের এমন ভয়াবহ রেকর্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনো ঘটেনি। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ঘটেনি, জিয়ার শাসনামলে ঘটেনি, এরশাদের শাসনামলে ঘটেনি, খালেদার শাসনে ঘটেনি, মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক আমলে ঘটেনি এবং হাসিনার শাসনামলে এমন ঘটেনি।

এবার দুইটি পেশার লোকজনের উপর সবচেয়ে বেশি আঘাত এসেছে – ১. সাংবাদিক এবং ২. পুলিশ। সচিবালয়ে এবং বিচারালয়েও আঘাত এসেছে, নির্লজ্জ দলীয়করণ হচ্ছে। কিন্তু গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের কেন্দ্র সাংবাদিকতা পেশায় কর্মরতদের চেয়ে বেশি আর কেউ মনে হয় বিপদে নেই।

যারা এখন ইউনূস সরকারের অত্যাচার, নির্যাতন ও নিবর্তনমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করছে না, তারা অতীতেও প্রতিবাদ করেনি। আওয়ামী লীগ আমলে এবং তার আগে বিএনপি ও সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সাংবাদিকতার উপর যে কোনো আঘাতের প্রতিবাদে স্বোচ্চার ছিলাম আমরা অল্পকিছু মানুষ। একাধারে সমালোচনা লিখেছি এবং রাজপথেও দাঁড়িয়েছি। অথচ সুবিধা পাওয়ার জন্য এই সাংবাদিকতা পেশার অনেকেই এখন প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ‘ফ্যাসিবাদী’ ট্যাগ দিচ্ছে। ১৯৭১ সালে সাংবাদিকতা পেশার আল-বদররা যেভাবে বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকদের চিনিয়ে দিয়েছিল এখনো তাই হচ্ছে। তবে এখন হচ্ছে একদম গণহারে।

আগে আমরা যারা আওয়ামী শাসনামলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার উপর যে কোনো আঘাতে প্রতিবাদী ছিলাম, তাদেরকেই এখন কিছু লোক বলছে দালাল; আর নিজেরা করছে প্রকাশ্য অথবা গোপন দালালী –ভয়ে অথবা সুবিধা প্রাপ্তির আশায়।

অনেকেই নিজেদের চরিত্র ও রাজনৈতিক পরিচয় উন্মোচিত করছে – যারা নিজেদের দাবি করতো “নিরপেক্ষ” হিসেবে। এখনো তারা এমন দাবি করতে লজ্জা পায় না, যদিও তাদের কথা ও কর্ম সবই পক্ষপাতমূলক।

মানুষের চরিত্রে এতো বাটপারি দেখলে খারাপ লাগে। আমি জ্ঞানতঃ কখনো নিজেকে নিরপেক্ষ দাবি করিনি। সবসময় সৎ থাকার চেষ্টা করেছি, যা বিশ্বাস করি তা বলেছি। “যা বলে তা বিশ্বাস করে না এবং যা বিশ্বাস করে তা বলে না,” এমন চরিত্রের মানুষ কিভাবে সুখ পায় বুঝতে পারি না! হে মানুষ, সহজ ও সত্যবাদী মানুষ হও। সত্যনিষ্ঠ মানুষ প্রতিবাদী হয়।

পুলক ঘটক, সিনিয়র সাংবাদিক
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ

 

শেয়ার করুন

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতা: হীরকের রাজা ভগবান!

সময় ০২:৫৭:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতায় বাংলাদেশে সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার আর তুলনা হয় না! অতীতে সরাসরি সামরিক শাসনামলেও এমন অবস্থা হয়নি।

ইউনূস সরকার প্রথমে দলীয় বিবেচনায় তালিকা করে দুই দফায় মোট ৬৬ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করেছিল। আরও ১১৮ জন সাংবাদিকের সচিবালয়ে প্রবেশ কার্ড বাতিল করেছে।

এবারে যাদের অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল করেছে, তাদের মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক বা সমমর্যাদার সাংবাদিক আছেন ২২জন। ছোটখাটো প্রতিষ্ঠানের বা অনলাইনের সম্পাদক আছেন ৯ জন। তাছাড়া বাকি সবাই একদম মাঠের রিপোর্টার।

এমন কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত নিউজ এজেন্সি এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)’র বাংলাদেশ ব্যুরো প্রধানের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশনও বাতিল করা হয়েছে। বাতিল হয়েছে ঢাকায় কর্মরত রিপোর্টারদের প্রিয় সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র সভাপতি, সাবেক সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, বিদেশী মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ওকাব-এর সাধারণ সম্পাদকসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ মিডিয়া ব্যক্তিত্বের কার্ড।

আর কতজনের কার্ড বাতিল হবে জানা নেই। তবে বিশেষভাবে সরকার সমর্থক হিসেবে পরিচিত ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো পত্রিকায় কর্মরত একজনেরও সচিবালয়ে প্রবেশ কার্ড বাতিল হয়নি। জামায়াত এবং বিএনপি’র মিডিয়া এক্টিভিস্ট হিসেবে যারা সুপরিচিত তাদেরও কার্ড বাতিল হয়নি। নিশ্চয় এই সরকারের দলীয়করণ বা রাজনীতিকরণের এজেন্ডা নেই! এদের পক্ষপাত বলতে কিছু নেই! হীরকের রাজা ভগবান।

সচিবালয়ে প্রবেশের এই কার্ড বাতিল পেশাগত কাজের সুযোগ-হরণ মাত্র। এরচেয়ে বড় ব্যাপার আছে, যা একদম প্রাণঘাতি। দেশের দেড় শতাধিক সাংবাদিককে হত্যা মামলার আসামী করা হয়েছে – যে মামলায় শাস্তি মৃত্যুদন্ড। ‘মিটিকুলাসলি ডিজাইনড’ আন্দোলনের সময় রিপোর্টাররা দায়িত্ব পালনকালে তাদের গাড়ি ভেঙেছে এবং বহু সাংবাদিককে ধরে ধরে পিটিয়েছে বর্তমান ক্ষমতাধরদের মাঠের কর্মীরা। এরপর ৫ ও ৬ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের নামে একাধিক গণমাধ্যমের কার্যালয় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। অনেকগুলো মিডিয়া ভাঙচুর এবং নজিরবিহিন লুটপাট করেছে। এরপর আরেকটি শ্রেণীকে দিয়ে করেছে প্রতিষ্ঠান দখল, অফিস দখল এবং পদ দখল।

সাংবাদিকতা ও সাংবাদিক দমনের এমন ভয়াবহ রেকর্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনো ঘটেনি। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ঘটেনি, জিয়ার শাসনামলে ঘটেনি, এরশাদের শাসনামলে ঘটেনি, খালেদার শাসনে ঘটেনি, মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক আমলে ঘটেনি এবং হাসিনার শাসনামলে এমন ঘটেনি।

এবার দুইটি পেশার লোকজনের উপর সবচেয়ে বেশি আঘাত এসেছে – ১. সাংবাদিক এবং ২. পুলিশ। সচিবালয়ে এবং বিচারালয়েও আঘাত এসেছে, নির্লজ্জ দলীয়করণ হচ্ছে। কিন্তু গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের কেন্দ্র সাংবাদিকতা পেশায় কর্মরতদের চেয়ে বেশি আর কেউ মনে হয় বিপদে নেই।

যারা এখন ইউনূস সরকারের অত্যাচার, নির্যাতন ও নিবর্তনমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করছে না, তারা অতীতেও প্রতিবাদ করেনি। আওয়ামী লীগ আমলে এবং তার আগে বিএনপি ও সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সাংবাদিকতার উপর যে কোনো আঘাতের প্রতিবাদে স্বোচ্চার ছিলাম আমরা অল্পকিছু মানুষ। একাধারে সমালোচনা লিখেছি এবং রাজপথেও দাঁড়িয়েছি। অথচ সুবিধা পাওয়ার জন্য এই সাংবাদিকতা পেশার অনেকেই এখন প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ‘ফ্যাসিবাদী’ ট্যাগ দিচ্ছে। ১৯৭১ সালে সাংবাদিকতা পেশার আল-বদররা যেভাবে বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকদের চিনিয়ে দিয়েছিল এখনো তাই হচ্ছে। তবে এখন হচ্ছে একদম গণহারে।

আগে আমরা যারা আওয়ামী শাসনামলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার উপর যে কোনো আঘাতে প্রতিবাদী ছিলাম, তাদেরকেই এখন কিছু লোক বলছে দালাল; আর নিজেরা করছে প্রকাশ্য অথবা গোপন দালালী –ভয়ে অথবা সুবিধা প্রাপ্তির আশায়।

অনেকেই নিজেদের চরিত্র ও রাজনৈতিক পরিচয় উন্মোচিত করছে – যারা নিজেদের দাবি করতো “নিরপেক্ষ” হিসেবে। এখনো তারা এমন দাবি করতে লজ্জা পায় না, যদিও তাদের কথা ও কর্ম সবই পক্ষপাতমূলক।

মানুষের চরিত্রে এতো বাটপারি দেখলে খারাপ লাগে। আমি জ্ঞানতঃ কখনো নিজেকে নিরপেক্ষ দাবি করিনি। সবসময় সৎ থাকার চেষ্টা করেছি, যা বিশ্বাস করি তা বলেছি। “যা বলে তা বিশ্বাস করে না এবং যা বিশ্বাস করে তা বলে না,” এমন চরিত্রের মানুষ কিভাবে সুখ পায় বুঝতে পারি না! হে মানুষ, সহজ ও সত্যবাদী মানুষ হও। সত্যনিষ্ঠ মানুষ প্রতিবাদী হয়।

পুলক ঘটক, সিনিয়র সাংবাদিক
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ