০৩:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্পের কু-নজরে ভারত!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • সময় ১০:৪৪:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫
  • / 30

ট্রাম্পের কু-নজরে ভারত!

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ভারত। আর অপরদিকে, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে বাণিজ্যিক সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন, আর তাতে শুরু হয়েছে এক নতুন বাণিজ্য যুদ্ধ।

মুক্তবাজার অর্থনীতি এক দেশের ওপর অন্য দেশের বাণিজ্য নির্ভরশীলতা তৈরি করেছে। এতে আবার হুমকির মুখে পড়ছেন নিজস্ব উদ্যোক্তারা। নিজস্ব সেসব উদ্যোক্তাদের রক্ষা করতে এক দেশ অন্য দেশের ওপর চড়া শুল্ক আরোপ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ইতিহাস বহু পুরনো। তবে বর্তমানে উভয় দেশের মধ্যে বাড়ছে বাণিজ্যিক টানাপোড়েন।

ট্রাম্পের কু-নজরে ভারত!
ট্রাম্পের কু-নজরে ভারত!

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ভারতসহ কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এটি যৌক্তিক নয়।

শুধু হুঁশিয়ারি দিয়ে বসে থাকার মত লোক ডোনাল্ড ট্রাম্প নয়। তাইতো ভারতসহ কয়টি দেশের সঙ্গে বানিজ্যে ২ এপ্রিল থেকে পারস্পারিক শুল্কনীতি কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে যে পরিমান শুল্ক আরোপ করা হয়; সমপরিমাপ শুল্ক বসাবে যুক্তরাষ্ট্র।

দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের শুল্ক নীতির সমালোচনা করে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতকে ট্রারিফ কিং বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, কিছু মার্কিন পণ্যের উপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসিয়েছে ভারত। যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।

দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ বাজারকে রক্ষা করার জন্য উচ্চ শূল্ক নীতি অনুসরন করে আসছে দিল্লী। ফলে বিদেশি পণ্যের দাম বেড়ে যায়। যা স্থানীয় উৎপাদকদের জন্য সুবিধাজনক। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র মনে কওে, এতে মার্কিন পণ্য ভারতের বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না।

ট্রাম্পের হুশিয়ারি পর তাকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে মোটরবাইক, হুইস্কিসহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশ কিছু পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে ভারত। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি পরিমাণ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস কেনা এবং নতুন বাণিজ্য আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মোদি সরকার। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না।

ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের শেষ চেষ্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রী। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, ট্রাম্প প্রশাসনকে বোঝানো, যাতে ভারতকে এ শুল্ক নীতির আওতার বাইরে রাখা হয়।

কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন নাছোরবান্দা। সম্প্রতি ট্রাম্প এক ভাষণে মজার ছলে জানান, এক এপ্রিল থেকে শুল্ক নীতি কার্যকর করার কথা ভেবেছিলাম কিন্তু এতে এপ্রিল ফুলের মত শোনা যেতে পারে। তাই ২ এপ্রিল থেকে নতুন শুল্ক নীতি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, যদি কোন দেশ আমাদের পণ্য আমদানিতে বাঁধা দেয়, তাহলে আমরাও তাদের জন্য একইরকম বাঁধা তৈরি করব। এই নীতিকে তিনি টিট ফর ট্যাট বা প্রতিশোধমূলক শুল্কনীতি হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।

ভারতে এখনো এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে এই শুল্ক নীতির ফলে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পণ্য ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। যা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। যার ফলে ভারতকে নতুন বাণিজ্য কৌশল নিতে হতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই অবস্থার ফলে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নতুন চুক্তি করতে হবে। নতুবা নিজের বাজার রক্ষা করতেন বিকল্প পথ খুঁজতে হবে।

শেয়ার করুন

ট্রাম্পের কু-নজরে ভারত!

সময় ১০:৪৪:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ভারত। আর অপরদিকে, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে বাণিজ্যিক সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন, আর তাতে শুরু হয়েছে এক নতুন বাণিজ্য যুদ্ধ।

মুক্তবাজার অর্থনীতি এক দেশের ওপর অন্য দেশের বাণিজ্য নির্ভরশীলতা তৈরি করেছে। এতে আবার হুমকির মুখে পড়ছেন নিজস্ব উদ্যোক্তারা। নিজস্ব সেসব উদ্যোক্তাদের রক্ষা করতে এক দেশ অন্য দেশের ওপর চড়া শুল্ক আরোপ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ইতিহাস বহু পুরনো। তবে বর্তমানে উভয় দেশের মধ্যে বাড়ছে বাণিজ্যিক টানাপোড়েন।

ট্রাম্পের কু-নজরে ভারত!
ট্রাম্পের কু-নজরে ভারত!

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ভারতসহ কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এটি যৌক্তিক নয়।

শুধু হুঁশিয়ারি দিয়ে বসে থাকার মত লোক ডোনাল্ড ট্রাম্প নয়। তাইতো ভারতসহ কয়টি দেশের সঙ্গে বানিজ্যে ২ এপ্রিল থেকে পারস্পারিক শুল্কনীতি কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে যে পরিমান শুল্ক আরোপ করা হয়; সমপরিমাপ শুল্ক বসাবে যুক্তরাষ্ট্র।

দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের শুল্ক নীতির সমালোচনা করে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতকে ট্রারিফ কিং বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, কিছু মার্কিন পণ্যের উপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসিয়েছে ভারত। যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।

দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ বাজারকে রক্ষা করার জন্য উচ্চ শূল্ক নীতি অনুসরন করে আসছে দিল্লী। ফলে বিদেশি পণ্যের দাম বেড়ে যায়। যা স্থানীয় উৎপাদকদের জন্য সুবিধাজনক। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র মনে কওে, এতে মার্কিন পণ্য ভারতের বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না।

ট্রাম্পের হুশিয়ারি পর তাকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে মোটরবাইক, হুইস্কিসহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশ কিছু পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে ভারত। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি পরিমাণ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস কেনা এবং নতুন বাণিজ্য আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মোদি সরকার। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না।

ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের শেষ চেষ্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রী। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, ট্রাম্প প্রশাসনকে বোঝানো, যাতে ভারতকে এ শুল্ক নীতির আওতার বাইরে রাখা হয়।

কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন নাছোরবান্দা। সম্প্রতি ট্রাম্প এক ভাষণে মজার ছলে জানান, এক এপ্রিল থেকে শুল্ক নীতি কার্যকর করার কথা ভেবেছিলাম কিন্তু এতে এপ্রিল ফুলের মত শোনা যেতে পারে। তাই ২ এপ্রিল থেকে নতুন শুল্ক নীতি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, যদি কোন দেশ আমাদের পণ্য আমদানিতে বাঁধা দেয়, তাহলে আমরাও তাদের জন্য একইরকম বাঁধা তৈরি করব। এই নীতিকে তিনি টিট ফর ট্যাট বা প্রতিশোধমূলক শুল্কনীতি হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।

ভারতে এখনো এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে এই শুল্ক নীতির ফলে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পণ্য ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। যা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। যার ফলে ভারতকে নতুন বাণিজ্য কৌশল নিতে হতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই অবস্থার ফলে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নতুন চুক্তি করতে হবে। নতুবা নিজের বাজার রক্ষা করতেন বিকল্প পথ খুঁজতে হবে।