টেকনাফ উখিয়া সীমান্তে আতঙ্কিত স্থানীয়রা
- সময় ০৫:২৭:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 29
মিয়ানমারের রাখাইনে বিমান হামলা ও ভারী গোলা বিস্ফোরণে কাঁপছে টেকনাফ-উখিয়া সীমান্ত। এতে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন সীমান্তের বাসিন্দারা। শনিবার (৭ডিসেম্বর) ভোর থেকে একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে শোনা যায়। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আরো বেশ কিছু ঘটনা কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নতুন করে অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গিাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে অস্থিরতা থাকায় শঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় বাংলাদেশি নাগরিকরাও।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুটাউনের দক্ষিণ পাশের গ্রামগুলোতে রাতভর টানা ভারী ভারী গোলাবর্ষণ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলা ঘটনায় মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে সীমান্তের এপারে।
বিস্ফোরণের বিকট শব্দে টেকনাফের সীমান্তবর্তী এলাকা নাইটং, পৌরসভা, সদর, সাবরাং, শাহপরী দ্বীপ, হোয়াইক্যং, খারাংখালী, লম্বাবিল ও উলবনিয়া এলাকার বাসিন্দারা নিঘুম রাত কাটিয়েছেন। ফলে নতুন করে সীমান্ত জুড়ে আবারও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, গত কিছুদিন বন্ধ থাকার পর মিয়ানমার সীমান্তে নতুন করে আবারও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের বাণিজ্যিক শহর মংডু টাউনশিপের দক্ষিণের কয়েকটি গ্রামে সরকারি বাহিনী নতুন করে বিমান হামলা চালাচ্ছে বলে জানান তারা। এতে হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মিয়ানমার সীমান্তে নতুন করে বিমান হামলা করা হচ্ছে বলে জানান, সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন।
তিনি বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ও বাণিজ্যিক শহর মংডু টাউনশিপ এখনো কোনো বাহিনী দখলে নিতে পারেনি বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে শহরটি দখলে নিতে যুদ্ধ আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। যার রেষ বাংলাদেশে এসে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, মুংডু শহরের আশপাশের গ্রামগুলোতে যুদ্ধ চলছে। বিশেষ করে শহরের দক্ষিণ পাশে গ্রামগুলো থেকে এ বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে টেকনাফে। মর্টার শেল, শক্তিশালী গ্রেনেড ও বোমার শব্দে কেঁপে উঠেছে এ পারের বসতবাড়ি ও দালান কোঠা। লোকজন শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না। বিশেষ করে, শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে খুবই বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
সীমান্তের স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, সম্প্রতি বৃহস্পতিবার রাত ৮টার পর থেকে শুক্রবার ২টা পর্যন্ত মংডু শহরের দিক থেকে বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসতে থাকে। মনে হচ্ছে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের বাণিজ্যিক শহর মংডুতে সরকারি বাহিনী নতুন করে যুদ্ধ শুরু করেছে। বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে যুদ্ধবিমানের চক্কর দিতে দেখা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
টেকনাফ সীমান্তের মো. শাহিদ জানান মংডু টাউনশিপের দক্ষিণের উকিলপাড়া, কাজীপাড়া, সিকদারপাড়া, হারি পাড়া ও ফাতংজা এলাকায় সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হচ্ছে।
টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা নাছির উদ্দিন, বলেন, কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সারাদিন থেমে থেমে সীমান্তের ওপারে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। সারারাত ওপারের ভারী ভারী গোলার শব্দ ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ভয়ে সীমান্তের মানুষ ঘুমাতে পারেনি।
শাহপরীর দ্বীপের বাজারপাড়ার হামিদ উল্লাহ বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও সরকারি বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে প্রায় ১০ মাস ধরে এলাকার মানুষের চোখে ঘুম নেই। দিনের বেলা তো যেমন-তেমন, রাত হলেই এলাকার মানুষের দুশ্চিন্তা বাড়ে। এপারের বাসিন্দাদের সবসময় আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে।
রাতের বেলায় যুদ্ধ বিমানের উপর থেকে বোমা ফেলছে সরকারি বাহিনী। যুদ্ধবিমান ও বোমার শব্দে কেঁপে উঠেছে বাড়ি ঘর ও বসত ভিটা। গভীর রাতে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। সমগ্র এলাকা কেঁপে ওঠে।
টেকনাফ সদরের ৮নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এনামুল হক বলেন, থেমে থেমে গোলাগুলির পাশাপাশি মংডু শহর থেকে মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে। সবমিলিয়ে সীমান্তের মানুষগুলো ভালো নেই।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, টানা প্রায় ১০মাস ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে আরাকান আর্মিসহ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
ইতিমধ্যে মিয়ানমার আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপের আশপাশে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) বেশ কিছু সীমান্তচৌকি দখলে নিয়েছে। বর্তমানে মংডু শহরের অভ্যন্তরে থাকা দেশটির সেনাবাহিনী ও বিজিপির দুটি ব্যাটালিয়ান দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন আরাকান আর্মির সদস্যরা।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধ চলতেছে। ওই যুদ্ধে বিকট শব্দের পাশাপাশি টেকনাফ সীমান্তে ঘরবাড়ি কেঁপে উঠছে। এতে আমিও ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
সীমান্তে বাসিন্দাদের তথ্য মতে রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ এলাকা এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী এখন আকাশ যোগে হামলা করছে। আরাকান আর্মিও মংডু শহর পুরোপুরি দখল করতে পাল্টা হামলা করছেন।
ইউএনও আরও বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোনো অবৈধ অনুপ্রবেশকারী যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সীমান্ত এলাকায় কড়া নজরদারির পাশাপাশি টহল জোরদার রাখা হয়েছে।