ড. ইউনূসের নতুন পরিকল্পনা
জিরো পয়েন্টে নয়, দৃষ্টি এখন বঙ্গভবনে
- সময় ০৪:৫১:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪
- / 75
ঘটনাবহুল ১০ নভেম্বরের এই দিনে, সবার দৃষ্টি গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট (নূর হোসন) হলেও সেখান থেকে দৃষ্টি চলে যাচ্ছে বঙ্গভবনে। কারণ ড. ইউনূস সরকার এক্ষেত্রে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনে একজন স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব, যিনি ১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগঠিত গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে শহীদ হয়েছিলেন। তাকে শ্রদ্ধা জানাতে ৯০ এর গণ আন্দোলনের পুরোধা প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা শফী আহমেদ এই প্রতিবেদককে বলেছিলন, নরসিংদীর কৃতি সন্তান এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা কবি শামসুর রাহমানের উদ্বৃতি দিয়ে, ‘বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়’। এরপর নানা প্রসঙ্গে বলেছিলেন অনেক কথা।
আওয়ামী লীগ করেও কেন আওয়ামী লীগের সমালোচনা করতেন শফী আহমেদ, এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও; যতবারই শফী আহমেদের সঙ্গে কথা হয়েছে দেখা হয়েছে। তিনি সব সময়ই বলছেন, দেশে গণতন্ত্র বলতে কিছু নেই। বিশেষ করে মৃত্যুর আগেও তিনি প্রতিবাদ করেছেন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিরোধী দলকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়ার জন্য দেশত্যাগী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি শফী আহমেদের আকুতি বারবার নাড়া দিয়েছে, রাজনৈতিক সচেতন মানুষকে।
আজ রোববার আবারও সেই শহীদ নূর হোসেন দিবস। এবারের প্রেক্ষাপটে সর্ম্পূণ ভিন্ন একটা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর সারাদেশ বিশেষ করে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট (নূর হোসেন চত্ত্বর) কে ঘিরে নানা সংঘাতের আশঙ্কায় বাংলাদেশ। বৈশষ্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এখনো পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান নিয়েছে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত বড় ধরণের কোনো সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি। সারাদেশ যেখানে তাকিয়ে রয়েছে গুলিস্তানের দিকে, ঠিক তখনি দৃষ্টি চলে যাচ্ছে বঙ্গভবনে।
কেননা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের আকার বাড়ছে। এতে পাঁচ থেকে সাতজন যুক্ত হতে পারেন।
রোববার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তারা শপথ নেবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরইমধ্যে তিনমাস পার করেছে ২১ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ। তাদের অনেকেই পালন করছেন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
এ নিয়ে রাজনীতিবিদদের প্রায়ই অভিযোগ, এক ব্যক্তি একইসঙ্গে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করায় সরকারের কাজে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হচ্ছে। তাই উপদেষ্টা পরিষদের পরিসর বাড়ানোরও দাবি তুলেছেন তারা।
অবশেষে উপদেষ্টা পরিষদের সংখ্যা বাড়ছে। সূত্র বলছে, নতুন মুখ যুক্ত করার পাশাপাশি কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব রদবদলের আলোচনা চলছে। নতুন মুখ হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন: আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) থেকে সদ্য পদত্যাগ করা আহ্বায়ক ও সাবেক সচিব এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী, ড. মঞ্জুরুল ইসলাম, মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মাঠ দখলের রাজনীতিতে ব্যর্থতা-সফলতাকে দূরে সরিয়ে রাখতেই বর্তমান ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার উপদেষ্টা পরিষদের আকার বাড়াচ্ছেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আকার বাড়িয়ে হলেও দেশে মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন করার যে দাবি রয়েছে, তা পূরণে কতটা সফল হবে এই সরকার; তা দেখার জন্য আরো কয়েকমাস অপেক্ষা করতে হবে বলেও মনে করেন সামরিক বাহিনীর একজন অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা, যিনি নিজেও রাজনৈতিক সচেতন মানুষ।