জাহাজে সেভেন মার্ডার: বেঁচে যাওয়া জুয়েলের শেষ আকুতি
- সময় ১১:১১:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 47
চাঁদপুরের মেঘনা নদীর হাইমচর উপজেলার ইশানবালা এলাকায় এমভি আল-বাখেরা নামে সারবাহী একটি জাহাজে দুর্বৃত্তরা আক্রমণ চালিয়ে ৭ জনকে গলাকেটে ও মাথা থেতলে হত্যা করেছে। জাহাজে থাকা ৮ জনের মাঝে বেঁচে যাওয়া একজন সুকানি জুয়েল রানা (২৮)। তাকে জাহাজ থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হলে সেখানে থাকা নৌপুলিশকে তিনি কিছু একটা লিখে বলার চেষ্টা করছিলেন। কারণ তার শ্বাসনালী কেটে যাওয়ায় তিনি কিছু বলতে পারছিলেন না।
এদিকে তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর হওয়ায় লেখা শেষের আগেই তাকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স চাঁদপুর সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম ইকবাল বলেন, আমরা আহত জুয়েলের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি; কিন্তু তিনি কথা বলতে পারেননি। শুধু একটি কাগজে তার নাম আর একটি মুঠোফোন নম্বর দিয়ে যান। আর শেষ দিকে “আমি স” লেখার পর অ্যাম্বুলেন্সটি চাঁদপুর থেকে চলে যায়। আমাদের ধারণা, জুয়েল হয়তো কিছু একটা জানেন বলে বলার চেষ্টা করেছেন। তবে এখনো কোনো তথ্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আহত জুয়েল রানাকে রাত পৌনে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাকে নাক, কান ও গলা বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।
ঢামেকের মেডিকেল অফিসার সিরাজ সালেক বলেন, জুয়েল রানার শ্বাসনালী কেটে যাওয়ায় সেখানে একটি টিউব যুক্ত করা হয়েছে। তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন।
জুয়েল রানার ভাই সেকেন খালাসী বলেন, তাদের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে। জুয়েল চার বছর ধরে ওই জাহাজে সুকানির কাজ করছিলেন।
এর আগে সোমবার বেলা তিনটার পর পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করে কোস্ট গার্ড ও পুলিশ। আর রক্তাক্ত অবস্থায় ৩ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর পর তাদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ৭ জনে। জাহাজে খুন হওয়া ৫ জনই তাদের নিজ নিজ কেবিনে ছিলেন এবং সেখানে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ফরিদপুর সদরের কিবরিয়া (জাহাজের মাস্টার), নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সালাউদ্দিন (ইঞ্জিনচালক), জাহাজের সুকানি আমিনুল মুন্সী, স্টাফ সজিবুল ইসলাম, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার আমিনুল মুন্সী (লস্কর)।
এ নামগুলো ছবি দেখে শনাক্ত করেছেন অন্য জাহাজের মাস্টার ও সুকানিরা। একমাত্র জীবিত থাকা সুকানি জুয়েলের (২৮) পরিচয় নিশ্চিত করেন চাঁদপুর কোস্টগার্ড কমান্ডার লেফটেন্যান্ট ফজলুল হক।
২৫০ শয্যা চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, সবাইকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ জন্য একজন ছাড়া বাকিরা রক্তক্ষরণে মারা যান। জুয়েল নামের একজনের শ্বাসনালি কাটার পরও তিনি শ্বাস নিতে পারায় তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
কোস্টগার্ড কমান্ডার ফজলুল হক জানান, সোমবার দুপুরে চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে এমভি আল-বাখেরা নামে পণ্যবাহী একটি জাহাজ থেকে ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় আরও ৩ জনকে। এরপর আহতদের হাসপাতালে পাঠানোর পর আহতদের ২ জন মারা যান।
কোস্টগার্ড কমাডার জানান, জাহাজটি নোঙর করা ছিল। চট্টগ্রাম থেকে সার নিয়ে জাহাজটি সিরাজগঞ্জের পথে যাচ্ছিল। নিহতদের শরীরে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গলা ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে নৌ-পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, দুপুরে পণ্যবাহী নৌযানটির পাঁচ কক্ষ থেকে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাদের দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়। মরদেহের একাধিক জনেরই গলাকাটা এবং কারো মাথা থেঁতলে দেওয়া। জাহাজের সার ছিল। তবে সেগুলো খোয়া যায়নি। ধারণা করা যাচ্ছে ঘটনাটি ডাকাতি নয়। শত্রুতা থেকে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
এদিকে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মোহসীন উদ্দিনও ঘটনাস্থলে যান। তিনি এই ঘটনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি ডাকাতি না অন্য কোনো দুর্বৃত্তায়ন তা বলতে পারছি না। জাহাজটিতে মোট ৮ জন ছিলেন বলে জেনেছি। যে একজন বেঁচে আছেন, তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আমরা কিছু জানতে পারিনি।
জেলা প্রশাসক বলেন, অনেক সময় নিজেদের নিজেদের মধ্যেও তো ঘটনা ঘটে যায়। এটা এমনও কি না সেটাও সংশ্লিষ্টরা যারা তদন্ত করবেন তারা দেখবেন। নৌযানটির মালিক মেসার্স এইচপি এন্টারপ্রাইজ। এ ঘটনায় নদী এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।