ঢাকা ০১:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাহাঙ্গীরনগর থেকে মুসলিম বাদ পড়ার ইতিহাস

বিশেষ প্রতিনিধি
  • সময় ০৫:০৫:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪
  • / 256

jahangirnagar-university www.ppbd.news

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, যা পরিচিত এ দেশের প্রথম ও একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে।

১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট ঢাকার মুঘল সম্রাটের নাম অনুসারে এর নামকরন করা হয়।

তবে শুরুতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সাথে মুসলিম শব্দটি যুক্ত ছিলো। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সালে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে

বর্তমান নামকরণ করা হয়। সাম্প্রতিক কালে এ নামটি ঘিরে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক ও আলোচনা।

বিশেষ করে ছাত্রশিবিরের একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে বিষয়টি উঠে আসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

ঢাকা শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে সাভারের সবুজময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে গড়ে উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।

বর্তমানের প্রায় ৬৯৭ একর জমিতে বিস্তৃত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে স্বচ্ছ পানির লেক, যেখানে শীতকালে দেখা মেলে অতিথি পাখির।

হাজারো লাল শাপলা, পাখিদের জলকলি এবং প্রজাপতি পার্কের প্রজাপতির মেলা – প্রকৃতির এমন সৌন্দর্যের জন্যই জাহাঙ্গীরনগর পরিচিত ‘প্রাকৃতিক লীলাভূমি’ নামে।

১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এস.এম আহসান আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন।

শুরুতে ১৫০ জন শিক্ষার্থী আর মাত্র ২১ জন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার শিক্ষার্থী এবং ৭০০ জনের অধিক শিক্ষক রয়েছেন এখানে।

ছয়টি অনুষদের অধীনে ৩৪টি বিভাগ এবং দুটি ইন্সটিটিউটের তত্ত্বাবধানে চলছে শিক্ষাদান ও গবেষণা কার্যক্রম।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশের প্রথম প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু করে গবেষণায় নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে।

এখানকার ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র দেশের বৃহত্তম বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, যা স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি পর্যায়ে গবেষণার সুযোগ করে দেয়।

 

বিভিন্ন দাবিতে সবসময় সরব এই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শুধু শিক্ষা নয়, দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবেও পরিচিত।

মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় নানা ধরনের নাটক, সংগীত, বিতর্ক ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এখানে গড়ে উঠেছে শতাধিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, যা শিক্ষার্থীদের মুক্তচিন্তার বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাস আন্দোলন-সংগ্রামে ভরপুর।

১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ১৯৯৮ সালে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন

এবং ১৯৯৯ সালের যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন – দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম আন্দোলনের অংশ হিসেবে

এসব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় গড়ে উঠেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে।

তবে বরাবরই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতে ইসলামির অঙ্গসংগঠণ ইসলামি ছাত্র শিবিরের প্রকাশ্য কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিলো।

সম্প্রতি ওই সংগঠনটি আবারো প্রকাশ্যে আসতে শুরু করলে; প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর বাঁধার মুখে পড়ে। এবং তখনই ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ পড়ার ইস্যুটি সামনে চলে আসে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলায় রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতাও।

যদিও এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়, তবে হলগুলোতে তীব্র সিট সংকট, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির আধুনিকতার অভাব ও নতুন

কিছু সময়োপযোগী বিভাগ চালু না হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা সমস্যার মুখোমুখি হন। এছাড়া, রাজনৈতিক দলাদলি ও সংঘর্ষ অনেক সময়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে নষ্ট করে।

শেয়ার করুন

জাহাঙ্গীরনগর থেকে মুসলিম বাদ পড়ার ইতিহাস

সময় ০৫:০৫:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, যা পরিচিত এ দেশের প্রথম ও একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে।

১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট ঢাকার মুঘল সম্রাটের নাম অনুসারে এর নামকরন করা হয়।

তবে শুরুতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সাথে মুসলিম শব্দটি যুক্ত ছিলো। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সালে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে

বর্তমান নামকরণ করা হয়। সাম্প্রতিক কালে এ নামটি ঘিরে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক ও আলোচনা।

বিশেষ করে ছাত্রশিবিরের একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে বিষয়টি উঠে আসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

ঢাকা শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে সাভারের সবুজময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে গড়ে উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।

বর্তমানের প্রায় ৬৯৭ একর জমিতে বিস্তৃত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে স্বচ্ছ পানির লেক, যেখানে শীতকালে দেখা মেলে অতিথি পাখির।

হাজারো লাল শাপলা, পাখিদের জলকলি এবং প্রজাপতি পার্কের প্রজাপতির মেলা – প্রকৃতির এমন সৌন্দর্যের জন্যই জাহাঙ্গীরনগর পরিচিত ‘প্রাকৃতিক লীলাভূমি’ নামে।

১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এস.এম আহসান আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন।

শুরুতে ১৫০ জন শিক্ষার্থী আর মাত্র ২১ জন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার শিক্ষার্থী এবং ৭০০ জনের অধিক শিক্ষক রয়েছেন এখানে।

ছয়টি অনুষদের অধীনে ৩৪টি বিভাগ এবং দুটি ইন্সটিটিউটের তত্ত্বাবধানে চলছে শিক্ষাদান ও গবেষণা কার্যক্রম।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশের প্রথম প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু করে গবেষণায় নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে।

এখানকার ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র দেশের বৃহত্তম বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, যা স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি পর্যায়ে গবেষণার সুযোগ করে দেয়।

 

বিভিন্ন দাবিতে সবসময় সরব এই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শুধু শিক্ষা নয়, দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবেও পরিচিত।

মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় নানা ধরনের নাটক, সংগীত, বিতর্ক ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এখানে গড়ে উঠেছে শতাধিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, যা শিক্ষার্থীদের মুক্তচিন্তার বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাস আন্দোলন-সংগ্রামে ভরপুর।

১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ১৯৯৮ সালে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন

এবং ১৯৯৯ সালের যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন – দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম আন্দোলনের অংশ হিসেবে

এসব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় গড়ে উঠেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে।

তবে বরাবরই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতে ইসলামির অঙ্গসংগঠণ ইসলামি ছাত্র শিবিরের প্রকাশ্য কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিলো।

সম্প্রতি ওই সংগঠনটি আবারো প্রকাশ্যে আসতে শুরু করলে; প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর বাঁধার মুখে পড়ে। এবং তখনই ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ পড়ার ইস্যুটি সামনে চলে আসে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলায় রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতাও।

যদিও এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়, তবে হলগুলোতে তীব্র সিট সংকট, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির আধুনিকতার অভাব ও নতুন

কিছু সময়োপযোগী বিভাগ চালু না হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা সমস্যার মুখোমুখি হন। এছাড়া, রাজনৈতিক দলাদলি ও সংঘর্ষ অনেক সময়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে নষ্ট করে।