জালিয়াতির মাধ্যমে উচ্চ আদালত থেকে জামিন
- সময় ১১:৩২:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি ২০২৫
- / 29
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর ভুষুটারি গ্রামের দাদন ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মেনা (৫৫) ও তার স্ত্রী রুমী বেগম (৩২) হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত পাঁচ আসামি উচ্চ আদালত থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়েছেন। এ মামলার মূল চার্জশিট, জেলা জজ আদালত থেকে জামিন নামঞ্জুরের আদেশের কপিসহ অনেক ভুয়া কাগজ তৈরি করে উচ্চ আদালতে দাখিল করে জামিন নেন তারা। আসামিরা হলেন নাগেশ্বরীর বানিয়াপাড়ার বেলাল হোসেন, ভুষুটারি গ্রামের মাইদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম, হরিরপাট গ্রামের রমজান আলী এবং বামনডাঙ্গা থানার পাটেশ্বরী গ্রামের আ. ওহাব। এরই মধ্যে জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ায় তাদের জামিন বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর নজরুল ইসলাম দম্পতি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই ফজর আলী নাগেশ্বরী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন। তদন্ত করে ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর দাখিলকৃত এ মামলার চার্জশিটে ৯ জনকে আসামি করা হয়। চার্জশিটভুক্ত ৯ আসামির মধ্যে স্বপন সরকার, রাশেদ মাহমুদ, আরিফ মিয়া ও ভোলা মিয়া ছাড়া বাকি ৫ আসামি জামিন চেয়ে আবেদন করলে গত ২৫ নভেম্বর কুড়িগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ তা নাকচ করেন। এরপর এসব আসামি হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
দায়েরকৃত আবেদনে, মামলার প্রকৃত চার্জশিট দাখিল করা হয়নি। চার্জশিটে দুজন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ছিল। কিন্তু ওই জবানবন্দি বাদ দিয়ে নকল চার্জশিট প্রস্তুত করে জামিন আবেদনের সঙ্গে দাখিল করা হয়। জেলা জজ আদালতের আদেশের কপিও নকল করা হয়েছে। এই আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১৮ ডিসেম্বর পাঁচ আসামিকে ৬ মাসের জামিন দেন।
এরপর বাদীর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) মো. মাসুদ রানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তথ্য গোপন করে জাল কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে জামিন নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তা যাচাই করে দেখতে বলা হয়। সে অনুযায়ী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলে এই মামলার মূল চার্জশিট ও জেলা জজ আদালতের জামিন নাকচের আদেশের কপি তুলে আনেন। মূল কাগজপত্রের সঙ্গে হাইকোর্টে দাখিলকৃত জামিন আবেদনের নথির সঙ্গে কোনো মিল নেই। অনেক কাগজই জাল ও তথ্য গোপন করে তৈরি করা হয়েছে।
ডিএজি মাসুদ রানা বলেন, মামলার চার্জশিটে দুজনের স্বীকারোক্তি ছিল। আসামিরা পাওনা টাকা আদায় নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে নজরুল ও তার স্ত্রীকে খুন করেন। কিন্তু এই চার্জশিট পরিবর্তন করে তথ্য গোপন করে হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। হাইকোর্টে দাখিলকৃত চার্জশিটে কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ছিল না। এ ছাড়া জেলা জজ আদালত থেকে তাদের জামিন নাকচ করার আদেশের কপিও নকলভাবে তৈরি করা হয়েছে। ওই আদেশের কপিতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি উল্লেখ ছিল। এখন প্রকৃত ঘটনা সংশ্লিষ্ট বেঞ্চকে জানানো হয়েছে। আগামী রোববার এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে শোয়ার ঘর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ ও এলাকাবাসী তখন জানিয়েছিল, রাতের খাবার খেয়ে নজরুল ইসলাম মেনা তার দ্বিতীয় স্ত্রী রুমী বেগম ও দেড় বছরের শিশু রিফাতকে পাশের ঘরে রেখে নিজের রুমে কাজ করছিল। রাতের কোনো একসময় তাদের হত্যা করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরের দিন সকালে শিশুটির কান্না শুনে প্রতিবেশীরা সেখানে গিয়ে তাদের মরদেহ দেখতে পায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে।
পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানায়, নিহত মেনা ও তার স্ত্রী রুমী বেগমের গলার বাম পাশে আঘাত ও জখমের চিহ্ন রয়েছে। রুমী বেগমের মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়েছে। পরে ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে নিহতের বড় ভাই ফজর আলী নাগেশ্বরী থানায় অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন।