জায়েদ খান VS জাতীয় পার্টি ডিগবাজিতে সমান সমান
- সময় ১০:৫৭:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪
- / 275
জায়েদ খান, নানা কারনেই বেশ আলোচিত একটি চরিত্র। বড় পর্দায় দর্শক না পেলেও সাড়ে ছয় ইঞ্চির স্ক্রিনে তিনি আছেন দাপটের সাথে। ক্যামেরা দেখলেই তাঁর মুখে খই ফোটে! শোবিজে তাঁর খবর নেই। কখনো ডিগবাজি দিয়ে, কখনো কথার খই ফুটিয়ে নিজেই খবর তৈরি করেন।
একইভাবে রাজনীতির মাঠে ডিগবাজিতে যুগ যুগ ধরে আধিপত্য ধরে রেখেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলটির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ডিগবাজির জন্য বারবার সমালোচিত হয়েছেন।
এরশাদ গত হয়েছেন। দলের হাল ধরেছেন তার ভাই জি এম কাদের। সবশেষ দ্বাদশ নির্বাচনে তার নেতৃত্বেই দল পরিচালিত হয়েছে। সেই নির্বাচনও ছিলো নাটকীয়তায় ভরা।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন বড় একটি অংশ সেই নির্বাচন বয়কট করেন। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের বিভিন্ন সভা সমাবেশে নির্বাচনে যাবেন না, পরিবেশ নেই ইত্যাদি বলে বেড়াচ্ছিলেন। কণ্ঠ মিলিয়ে যাচ্ছিলেন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
তবে দলের প্রধান পৃষ্টপোষক রওশন এরশাদ প্রথম থেকেই বল আসছিলেন, যেকোনো পরিস্থিতে তাঁর দল নির্বাচনে যাবে। তাঁরা নির্বাচনমুখী দল। দলে প্রধান পৃষ্ঠপোষক আর চেয়ারম্যানের এখতিয়ার নিয়ে দ্বন্দ্ব মাঝেমধ্যেই প্রকাশ্য হয়। দর কষাকষি করে শেষ মুহুর্তে দলটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।
চিত্রনাট্যের আরেক পর্বে নতুন ক্লাইমেক্স তৈরি করে ইসিতে পাল্টাপাল্টি চিঠি। রওশন এরশাদ চিঠি দিয়ে বললেন, জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে যাচ্ছেন এবং তিনিই দলীয় মনোনয়ন দেবেন। জিএম কাদের পাল্টা চিঠিতে বললেন, মনোনয়ন দেওয়ার এখতিয়ার তাঁর ভাবির নেই।
আবার জায়েদ খানের আলোচনায় ফিরে আসি। ঠিক এই জায়গাতেই তিনি জাতীয় পার্টির কাছে হেওে গেছেন। আপাতদৃষ্টিতে তিনি সরল; এককথার মানুষ। যা বলার সরাসরি বলেন। ফলে জায়েদ খান প্রেডিক্টেবল। কিন্তু জাতীয় পার্টি আনপ্রেডিক্টেবল।
২০১৪ সালের নির্বাচনের কথাই ধরা যাক। হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ তখন জীবিত। প্রথমে তিনি বললেন, নির্বাচনে যাবেন না। নির্বাচনে গেলে জনগণ তাঁকে ‘থুতু’ দেবে। এরপর ভর্তি হলেন হাসপাতালে। ফিরে এসে বললেন, ‘নির্বাচনে যাব। নির্বাচনে না গেলে জনগণ আমাদের থুতু দেবে!’
২০১৮ সালেও একই অবস্থা। যাব, যাব না, যাব, যাব না। এই করে তলে তলে চালিয়ে গেলেন দর কষাকষি। ২০১৪ সালে কয়েকজন মন্ত্রণালয় বাগিয়েছিলেন তাঁরা। খেতাব পেয়েছিলেন গৃহপালিত বিরোধী দলের। এরশাদ নিজে হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হন। কিন্তু ২০১৮ সালে কয়েকজন এমপি ছাড়া দৃশ্যমান তেমন কিছু পাননি।
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সামরিক শাসক হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করার পর ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করে সরাসরি রাজনীতিতে নাম লেখান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরপর ’৯০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় বিচরণ করেন তিনি।
সে সময় আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ সকল দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। কিন্তু ’৯১ সালে দেশে আবারও সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু হওয়ার পর রাজনীতিতে গুরুত্ব বাড়তে থাকে তার।
সে সময় বৃহৎ দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোটের রাজনৈতিক সমীকরণে এরশাদ জড়িয়ে পড়েন।
প্রবীণ রাজনীতিকরা বলছেন, রাজনীতিতে আসার পর থেকে নানা নাটকীয়তা তৈরি করেছেন এরশাদ। ’৯০-এর দশকের শেষদিকে রাজনীতিতে যখন জোটের বিষয়টি সামনে আসে, তখনই নিজের দামদর তুলতে শুরু করেন তিনি। বিশেষ করে, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভিন্ন মামলা ব্যবহার করা হয়েছে।
১৯৯৯ সালের শেষ দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় জোটে যোগ দেন এরশাদ। এই জোট স্থায়িত্ব হয়নি বেশিদিন। ২০০১ সালে জনতা টাওয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে গ্রেফতার হন তিনি। অস্থিরতা তৈরি হলে বেরিয়ে যান জোট থেকে।
চারদলীয় জোটে থাকা-না থাকার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ভেঙে যায় তার নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে একটি অংশ থেকে যায় চারদলীয় জোটে।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটে যোগ দেন এরশাদ। এরপর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আবারও মহাজোট ছাড়ার বিষয়টি বিভিন্ন বক্তব্যে তুলে ধরেন তিনি।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে এরশাদ মহাজোট ত্যাগ করে নির্বাচন না করার ঘোষণা করেছিলেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের ৩ তারিখ আত্মহত্যার ঘোষণা দেন।
প্রায় ২৪ ঘণ্টা অজ্ঞাতবাসে থাকার পর ঢাকায় সফররত ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং তার বারিধারার বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। এরপর এরশাদ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কথা জানান সাংবাদিকদের।
এর আগে ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৪টি আসনে জয়ী হয়। তিনি ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন।
গত ৫ আগষ্ট আন্দোলনের মুখে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এরপর আবারো সুর পাল্টাতে শুরু করেছে জাতীয় পার্টি। দলটির নেতারা বলছেন, এতোদিন তাদেরকে ব্ল্যাক মেইল করে তাদেরকে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। দলটি নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের বেশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।