ঢাকা ০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জামাই-শ্বশুর গ্রুপের সংঘর্ষে নারীসহ আহত ১০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ফরিদপুর
  • সময় ০৪:৪৭:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 9

সংঘর্ষ (ফাইল ছবি)

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় জামাই ও শ্বশুরের পক্ষের লোকজনের সংঘর্ষে নারীসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) হামিরদী ইউনিয়নের মুনসুরাবাদ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এলাকাবাসী সূত্র জানায়, মুনসুরাবাদ গ্রামের ইলিয়াস মাতুব্বরের মেয়ে অন্তরা আক্তারের (১৮) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কারণে একই গ্রামের শামসুল হক মোল্লার ছেলে জাহিদ মোল্লার (৩৮) দুই বছর আগে বিয়ে হয়। জাহিদের আগে আরো দুই স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান রয়েছে।

বছর দুই আগে অন্তরাকে বিয়ে করেন জাহিদ। অন্তরা হন জাহিদের তৃতীয় স্ত্রী। এ বিয়ে মেনে নেননি অন্তরার বাবা ইলিয়াস মাতুব্বর।
জাহিদ মোল্লার বড় ভাই আলমগীর মোল্লা হামিরদী ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য।

অন্তরার বাবা ইলিয়াস মাতুব্বরের চাচাতো ভাই বাবর আলী মাতুব্বর হামিরদী ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য। একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী তারা। এ কারণে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। দুই পক্ষের মধ্যে অনেকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে ইলিয়াস মাতুব্বরকে একা পেয়ে জাহিদ মোল্লার চাচাতো ভাই রাসেল মোল্লা কটাক্ষ করে বলেন, ‘আমার ভাই জাহিদ তিন বিয়ে করেছে। আর একটা বিয়ে করিয়ে হালি (৪টি) পূরণ করব।’ এ বিষয়ে ইলিয়াস মাতুব্বর অপমানবোধ করে গ্রামে তার পক্ষের লোকজনকে জানায়। এ নিয়ে দুই পক্ষের তর্কবিতর্ক হয়।

মঙ্গলবার বিকেলে মুনসুরাবাদ বাজারে ইলিয়াস মাতুব্বরকে মারধর করে জামাই জাহিদ মোল্লার লোকজন। এ নিয়ে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে।

বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফের জামাই ও শ্বশুরপক্ষের লোকজন ঢাল, সড়কি, রামদা, ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। দুই ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। আহতদের দুজনকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একজন ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানা যায়। ভাঙ্গা থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে।

ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, সংঘর্ষে গুরুতর আহত ইলিয়াস মাতুব্বরের চাচাতো ভাই কামরুল মাতুব্বরের স্ত্রী চম্পা বেগম (৩০) ও ইলিয়াস মাতুব্বরের ভাই রিয়াজ মাতুব্বরকে (৪৩) ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ইলিয়াস মাতুব্বরের আরেক ভাই ইকলাস মাতুব্বর (৩৫) ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ইলিয়াস মাতুব্বরের ভাই ইকলাস মাতুব্বরের স্ত্রী লিজা বেগম বলেন, ‘আমার ভাসুরের (ইলিয়াস) মেয়ে অন্তরাকে আমাদের অমতে বিয়ে করে মোল্লা গোষ্ঠীর ছেলে জাহিদ। আমাদের পরিবার এটা মেনে নেয়নি। ওরা কিছুদিন ধরে আমাদের বাড়ির লোকজনকে দেখলেই বলে, আমাদের জাহিদকে আরো বিয়ে করাব। বিভিন্নভাবে বিদ্রুপ করে তারা। এ নিয়ে মনোমালিন্য চলছিল।’

ইকলাস মাতুব্বর বলেন, ‘জাহিদের ভাইয়েরা আমাদেরকে দেখলেই কটাক্ষ করে সব সময়। তারা জাহিদকে আরো বিয়ে করাবে- এ ধরনের খোঁচা মারা কথাবার্তা বলে। মঙ্গলবার আমার বড় ভাইকে দেখে তারা আবারও কটাক্ষ করে। ভাই এ ঘটনাটি মুরব্বিদের জানায়। মঙ্গলবার আত্মীয় বাড়ি থেকে ফেরার পথে জাহিদের লোকজন আমার ভাইকে মারধর করে। বুধবার সকালে মনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ডে জাহিদের লোকজন আমাদের ওপর হামলা ও মারধর করে। কুপিয়ে জখম করে।’

আলমগীর মোল্লা বলেন, ‘ইলিয়াস মাতুব্বরের মেয়ে স্বেচ্ছায় আমার ভাইকে বিয়ে করেছে। কিন্তু ইলিয়াস মাতুব্বর এ বিয়ে মেনে না নিয়ে আমাদের সঙ্গে বিরোধ চালিয়ে করছে। সামান্য বিষয় নিয়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।’

ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোকছেদুর রহমান বলেন, ‘জাহিদকে তার ভাইয়েরা আরো একটি বিয়ে করাবে- এ কথা জাহিদের স্ত্রীর বাবা ইলিয়াস মাতুব্বরের সামনে বলা নিয়ে কথা কাটাকাটি, মারামারি ও সর্বশেষ দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’

 

শেয়ার করুন

জামাই-শ্বশুর গ্রুপের সংঘর্ষে নারীসহ আহত ১০

সময় ০৪:৪৭:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় জামাই ও শ্বশুরের পক্ষের লোকজনের সংঘর্ষে নারীসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) হামিরদী ইউনিয়নের মুনসুরাবাদ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এলাকাবাসী সূত্র জানায়, মুনসুরাবাদ গ্রামের ইলিয়াস মাতুব্বরের মেয়ে অন্তরা আক্তারের (১৮) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কারণে একই গ্রামের শামসুল হক মোল্লার ছেলে জাহিদ মোল্লার (৩৮) দুই বছর আগে বিয়ে হয়। জাহিদের আগে আরো দুই স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান রয়েছে।

বছর দুই আগে অন্তরাকে বিয়ে করেন জাহিদ। অন্তরা হন জাহিদের তৃতীয় স্ত্রী। এ বিয়ে মেনে নেননি অন্তরার বাবা ইলিয়াস মাতুব্বর।
জাহিদ মোল্লার বড় ভাই আলমগীর মোল্লা হামিরদী ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য।

অন্তরার বাবা ইলিয়াস মাতুব্বরের চাচাতো ভাই বাবর আলী মাতুব্বর হামিরদী ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য। একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী তারা। এ কারণে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। দুই পক্ষের মধ্যে অনেকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে ইলিয়াস মাতুব্বরকে একা পেয়ে জাহিদ মোল্লার চাচাতো ভাই রাসেল মোল্লা কটাক্ষ করে বলেন, ‘আমার ভাই জাহিদ তিন বিয়ে করেছে। আর একটা বিয়ে করিয়ে হালি (৪টি) পূরণ করব।’ এ বিষয়ে ইলিয়াস মাতুব্বর অপমানবোধ করে গ্রামে তার পক্ষের লোকজনকে জানায়। এ নিয়ে দুই পক্ষের তর্কবিতর্ক হয়।

মঙ্গলবার বিকেলে মুনসুরাবাদ বাজারে ইলিয়াস মাতুব্বরকে মারধর করে জামাই জাহিদ মোল্লার লোকজন। এ নিয়ে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে।

বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফের জামাই ও শ্বশুরপক্ষের লোকজন ঢাল, সড়কি, রামদা, ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। দুই ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। আহতদের দুজনকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একজন ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানা যায়। ভাঙ্গা থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে।

ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, সংঘর্ষে গুরুতর আহত ইলিয়াস মাতুব্বরের চাচাতো ভাই কামরুল মাতুব্বরের স্ত্রী চম্পা বেগম (৩০) ও ইলিয়াস মাতুব্বরের ভাই রিয়াজ মাতুব্বরকে (৪৩) ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ইলিয়াস মাতুব্বরের আরেক ভাই ইকলাস মাতুব্বর (৩৫) ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ইলিয়াস মাতুব্বরের ভাই ইকলাস মাতুব্বরের স্ত্রী লিজা বেগম বলেন, ‘আমার ভাসুরের (ইলিয়াস) মেয়ে অন্তরাকে আমাদের অমতে বিয়ে করে মোল্লা গোষ্ঠীর ছেলে জাহিদ। আমাদের পরিবার এটা মেনে নেয়নি। ওরা কিছুদিন ধরে আমাদের বাড়ির লোকজনকে দেখলেই বলে, আমাদের জাহিদকে আরো বিয়ে করাব। বিভিন্নভাবে বিদ্রুপ করে তারা। এ নিয়ে মনোমালিন্য চলছিল।’

ইকলাস মাতুব্বর বলেন, ‘জাহিদের ভাইয়েরা আমাদেরকে দেখলেই কটাক্ষ করে সব সময়। তারা জাহিদকে আরো বিয়ে করাবে- এ ধরনের খোঁচা মারা কথাবার্তা বলে। মঙ্গলবার আমার বড় ভাইকে দেখে তারা আবারও কটাক্ষ করে। ভাই এ ঘটনাটি মুরব্বিদের জানায়। মঙ্গলবার আত্মীয় বাড়ি থেকে ফেরার পথে জাহিদের লোকজন আমার ভাইকে মারধর করে। বুধবার সকালে মনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ডে জাহিদের লোকজন আমাদের ওপর হামলা ও মারধর করে। কুপিয়ে জখম করে।’

আলমগীর মোল্লা বলেন, ‘ইলিয়াস মাতুব্বরের মেয়ে স্বেচ্ছায় আমার ভাইকে বিয়ে করেছে। কিন্তু ইলিয়াস মাতুব্বর এ বিয়ে মেনে না নিয়ে আমাদের সঙ্গে বিরোধ চালিয়ে করছে। সামান্য বিষয় নিয়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।’

ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোকছেদুর রহমান বলেন, ‘জাহিদকে তার ভাইয়েরা আরো একটি বিয়ে করাবে- এ কথা জাহিদের স্ত্রীর বাবা ইলিয়াস মাতুব্বরের সামনে বলা নিয়ে কথা কাটাকাটি, মারামারি ও সর্বশেষ দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’